#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ ২
#পর্ব২( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ বিয়েটা ওর সাথে আপনার নয়। বিয়েটা আমার সাথে আপনার মিস চিত্রা ।
চিত্রা রাফির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো৷ রাফির কে বলা তার কথার প্রতিত্তোরে কিছু শুনবে বলে। কিন্তু আকস্মিক পাশ থেকে নিজের নাম সহ এমন কথা শুনে ঝড়ের বেগে পাশ ফিরে তাকায়। ক্যাফেতে ঢোকার সময় ধাক্কা খাওয়া সেই লোকটা। চিত্রা একবার রাফি তো আরেকবার সেই সুদর্শন পুরুষের দিকে তাকায়। সুদর্শন পুরুষ টা নড়েচড়ে বসে হাতের ইশারায় চিত্রা কে তার টেবিলে এসে বসতে বলে। চিত্রা কে নড়তে না দেখে রাফি বলে উঠে –
-“ ব্রো ডাকছে যান কুইক।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে পাশের টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে। পরিস্থিতি টা বিচ্ছিরি, এতক্ষণ অন্য এক ছেলেকে পাত্র ভেবে কি না কি বললো।
-“ আপনার সাথে আমার বিয়ে?
তুষার উপর নিচ মাথা নাড়ালো। যার মানে হ্যাঁ।
-“ নাম কি আপনার?
-“ তুষার খাঁন।
চিত্রা বিরক্ত হলো,
-” আশ্চর্য তুষার খেতে যাব কেনো? তুষার কি খাওয়া যায় নাকি?
চিত্রার কথা শুনে পাশের টেবিলে বসে থাকা রাফির বিষম উঠে যায়। তুষারের দিকে তাকিয়ে রাফি ফিক করে হেসে ফেলে। তুষার কটমট করে রাফির দিকে তাকায়। রাফির মুখ চুপসে যায়। কিছুটা আওয়াজ নিয়ে বলে-
-“ আপনাকে তুষার খেতে বলা হয় নি। ব্রো এর নাম তুষার খাঁন।
চিত্রা দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ওহ্ বলল। ফের তখনকার ধাক্কা খাওয়ার কথা মনে পড়লো। লোকটা ম্যানার্স জানে না। তখন যে ধাক্কা খেলো একটা মেয়ের সাথে কই সরি তো বললো না? উল্টা এটিটিউড দেখিয়ে চলে এলো।
তুষার চিত্রার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার পরখ করে নিলো। মেয়েটা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু একটা ভাবছে। তুষার টেবিলে টোকা দিয়ে বলে-
-“ এখানে নিশ্চয়ই কিছু ভাবার জন্য আসেন নি,আর ভাবার যদি কিছু থেকেই থাকে তাহলে বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাববেন।
চিত্রা অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো তুষারের দিকে। তুষার চিত্রার তাকানো কে পাত্তা না দিয়ে খাবারের ম্যানু কার্ড টা নেড়েচেড়ে বলে-
-“ কি খাবেন? চা কফি না কোল্ডিংস?
চিত্রা ম্যানু কার্ড টা তুষারের হাত থেকে ঝাড়া দিয়ে নিয়ে নেয়।
-“ বিরিয়ানি অর্ডার দিন।
তুষার ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে তাকালো। ক্যাফেতে বসে বিরিয়ানি খেতে চাচ্ছে! মেয়েটা কি জীবনে ক্যাফেতে আসে নি নাকি।
-“ এটা ক্যাফে নট রেস্টুরেন্ট।
চিত্রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে-
-“ সো হোয়াট? আমার বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে।
-“ বাসা থেকে কি খেয়ে আসেন নি?
তুষারের গম্ভীর কন্ঠ শুনে চিত্রা ভরকে গেলো, সত্যি সে খেয়ে আসে নি। তুষার ইশারায় রাফিকে কিছু বলল। রাফি বসা থেকে উঠে চলে গেলো। তুষার ওয়েটার কে ডেকে দুটো স্যান্ডউইচ আর দুটো কফি দিতে বলে। তুষার ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলে-
-“ মাস্ক খুলুন কুইক।
চিত্রা আশেপাশে তাকায়। সে যে মাস্ক পড়ে আছে সেটা ভুলেই গেছে। চিত্রা কে মাস্ক খুলতে না দেখে তুষার ফের বলে উঠে –
-“ কি হলো মাস্ক খুলছেন না কেনো? কোনো প্রবলেম?
চিত্রা ডানে বামে মাথা ঘুরায়। তার সমস্যা নেই। মাস্ক খুলে। তুষার চিত্রার মুখের দিকে তাকায়। না মেয়েটা বাবার বলা বর্ণনার থেকেও অসম্ভব সুন্দরী। তুষার স্মিত হাসলো। চিত্রা তুষারের হাসি দেখে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে মুখের সামনে ধরে। ফোনের স্কিনে নিজের ফেস দেখে নিলো। কই মুখে তো সমস্যা জাতীয় কোনো কিছু নজরে আসলো না। তাহলে এই লাফাঙ্গা হাসে কেনো? মুহূর্তে আবার মনে পড়লো এই পুরুষের জন্য লাফাঙ্গা ওয়ার্ড টা বেমানান লাগছে। চিত্রা নিজেকে প্রস্তুত করলো। এবার ডিরেক্টলি বিয়ে ভাঙার কথা বলবে। সেজন্য দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বলে-
-“ দেখুন….
-“ হ্যাঁ দেখছি আপনি দেখান।
কথাটা বলে তুষার ফোন চালানো বন্ধ করে চিত্রার দিকে মনোযোগ দেয়। চিত্রা তুষারকে নিজের দিকে এভাবে তাকাতে দেখে মনে মনে বলে- ছি ছি ছি এই ছেলে এভাবে তাকাচ্ছে কেনো?
-“ আমি এভাবে চেয়ে দেখতে বলি নি আমি কিছু কথা বলবো আপনি চুপচাপ শুনবেন। আমার কথা বলা শেষ হলে তারপর বলবেন তার আগে নয়।
তুষার মুখের সামনে এক আঙুল দিলো। চোখের ইশারায় কিছু বললো কিন্তু চিত্রা বুঝলো না। তুষারকে মুখের সামনে আঙুল দিতে দেখে বলে –
-“ গুড বয় এভাবেই মুখে আঙুল দিয়ে থাকবেন আমি যতক্ষণ না কথা শেষ করবো।
তুষার মুখের উপর থেকে আঙুল সরালো। ইশারায় মেয়েটাকে চুপ থাকতে বললো আর উল্টো সে বলছে এসব! মুখ থেকে বেরিয়ে এলো-
-“ ইস্টুপিট
ওয়েটার এসে স্যান্ডউইচ আর কফি দিয়ে যায়।
চিত্রার কান অব্দি গেলো না কথাটা।
-“ তা যা বলতে চাইছি শুনুন। আপনি বাসায় গিয়ে ডিরেক্টলি বলবেন পাত্রী আপনার পছন্দ হয় নি। পাত্রী দেখতে অসুন্দর কালো৷ চোখ টেরা,পাত্রীর বয়ফ্রেন্ড আছে। আর আমিও বাসায় গিয়ে বলবো আপনি দেখতে ভীষন মোটা, টাক ওয়ালা, ভুঁড়ি ওয়ালা। ঠিক আছে?
কথাটা বলে তুষারের দিকে তাকিয়ে দেখে তুষার আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর আশেপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
-“ আমি আপনাকে কি বলছি সব কি শুনেছেন?
-“ হ্যাঁ শুনলাম। এবার আমি বলি শুনুন।
চিত্রা আগ্রহ নিয়ে বলল-
-“ হু বলুন।
-“ এসব হযবরল মিথ্যা আমি বলতে পারবো না। আর না আমি বিয়ে ভাঙবো। রাজনীতি করি কিসে প্রফিট হবে আর কিসে লস হবে তা আমি ভালো করেই জানি। তাই আমি খাজানা মোটেও হাত ছাড়া করতে চাই না।
চিত্রা তুষারের কথার মানে বুঝলে না।
-“ মানে?
-“ মানে হচ্ছে এই যে বয়স আমার ২৮ হতে চললো বিয়েটা করা জরুরি।
-“ তো করুন না বিয়ে। না কে করছে?
-“ এই যে আপনিই তো না করছেন। বিয়ে ভাঙার বুদ্ধি দিচ্ছেন আমায়।
-“ আমার বিয়ে ভাঙার বুদ্ধি দিচ্ছি আপনার না।
-“ আশ্চর্য আপনার বিয়ে ভাঙলে তো আমার ও বিয়ে ভাঙবে। কারন বিয়ে টা তো আমার সাথে আপনার।
-“ মানে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন?
-“ অবশ্যই।
-“ বাট আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।
তুষার এবার সিরিয়াস হলো।
-“ হোয়াই?
-“ কারন টা হচ্ছে আপনার রাজনীতি।
-“ রাজনীতি নিয়ে সমস্যা কি? আমি রাজনীতি করবো ঘরের বাহিরে রুমের মধ্যে তো আর রাজনীতি করে বেড়াবো না।
চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ রুমে হোক আর বাহিরে রাজনীতিই তো করবেন। আমি সুস্থ ভাবে সংসার করতে চাই। বিয়ের পর কোনো রকম স্ট্রেস নিতে চাই না। আমার মা কে দেখেছি প্রতিটা মুহূর্তে বাবার জন্য চিন্তায় থাকতে। বাসার বাহিরে বাবা যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ গলায় শ্বাসরুদ্ধ করে থাকতে হয় আমাদের। আপনাকে বিয়ে করলে বাবার সাথে সাথে আমার আপনাকে নিয়ে ভয়ে থাকতে হবে। আমি চাই না এমন সম্পর্ক।
আপনি তো আর রাজনীতি ছাড়তে পারবেন না।
-“ সেটা ঠিক, আপনার জন্য আমি রাজনীতি ছাড়তে পারবো না। রাজনীতি আমাদের র’ক্তে মিশে আছে। আমরা ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি আমাদের ছাড়বে না।
-“ তাহলে আর কি বিয়ে টা ভাঙার চেষ্টা করুন।
-“ নো। বিয়ে আমি আপনাকেই করবো৷ আপনার পাশে থেকেই রাজনীতি করবো। আপনি নিজেই আমাকে সাপোর্ট করেন।
-“ কখনোই না। আমি ঘৃণা করি রাজনীতি কে।
-“ রাজনীতি করা তো খারাপ নয়, তাহলে ঘৃনা কেনো করবেন? আমার বাবা, দাদা,চাচা রাও রাজনীতি করে। কই তাদের ওয়াইফদের চোখে তো রাজনীতি নিয়ে এসব ধারনা দেখি না। আপনার বাবাও রাজনীতি করে আপনার মা ও নিশ্চয়ই এসব পোষণ করে না।
-“ কিন্তু আমি করি।
-“ জেদ করছেন কেনো? বিয়ের পর আপনি রিলাক্স মুডে থাকবেন। আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা করার কোনে দরকার নেই।
-“ বিয়েই করবো না আর চিন্তা তো দূরে থাকুক। এরা বউ, পরিবার দের সময় দিতে পারে না।
এরমধ্যে রাফি একটা প্যাকেট এনে টেবিলের সামনে রাখে। তুষার প্যাকেট থেকে বিরিয়ানি বের করে বলে-
-“ আচ্ছা প্যারা নিয়েন না আমি আপনাকে দিন রাত ২৪ ঘন্টার ২০ ঘন্টা সময় দিব আর ৪ ঘন্টা বাহিরে। এখন মাথা গরম না করে আগে বিরিয়ানি খান। মাথা ঠান্ডা হবে।
বিরিয়ানি দেখে চিত্রার জিবে জল চলে আসলো। খাবে কি খাবে না এটা নিয়ে দ্বিধায় পড়লো। রাফি তুষারকে আস্তে করে জানালো যে চাচা যেতে বলছে কুইক। মিটিং আছে। তুষার চিত্রা কে খেতে না দেখে বলে-
-“ খাবার টা না হয় বাসায় গিয়ে খাবেন। এখন বাসায় চলে যান। আর বিয়ে ভাঙার জন্য অযথা শরীরের এনার্জি ফুরিয়েন না। লাভের লাভ কিছুই হবে না। বিয়ে আমার সাথেই আপনারই হবে। ড্রাইভার আছে তো সাথে?
চিত্রা হুমম বলে। তুষার চিত্রা কে তার গাড়িতে উঠিয়ে নিজে চলে যায়।
চিত্রা বাসায় আসতেই চয়নিকা বেগম মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ছেলে কেমন?
চিত্রা টেবিলে বসে বিরিয়ানি খেতে খেতে বলে-
-“ ম্যানার্স জানে না মা।
-“ মানে?
-“ মানে হচ্ছে এই যে ছেলে টার মধ্যে ম্যানার্স বলতে কিছু নেই।
-“ আরে কিসের ম্যানার্স সেটা তো বলবি?
-“ ম্যানার্স মানে ম্যানার্স,শান্তি তে খেতে দাও। বিরক্ত করো না,দিল পে পাত্থার রাখকে এ বিরিয়ানি ঘার তাক লেকে আয়া। সো খাওয়ার সময় প্যারা দিয়ো না।
চয়নিকা বেগম বিরক্ত করলেন না। রুমে চলে গেলেন।
তুষার মিটিং সেরে বাসায় ফিরতেই ছোট বোন তৃষ্ণা বলে উঠে –
-“ ভাই ভাবি কে কেমন দেখলে?
তুষার সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে-
-“ এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আন আগে।
তৃষ্ণা উঠতেই দেখে অধরা আসছে। তাই নিজে না গিয়ে অধরা কে ডেকে বলে-
-“ অধরা আপু এক গ্লাস পানি দাও ভাইয়া কে।
অধরা তৃষ্ণার ডাক শুনে এক গ্লাস পানি এনে তুষারের হাতে দেয়। তুষার অধরার দিকে একবার তাকিয়ে পানির গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে পানি টুকু খায়। পানির গ্লাস টা সামনে থাকা টেবিলের উপর রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে যেতে বলে-
-“ অসম্ভব সুন্দরী সে।
( ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। গল্প নিয়ে গঠনা মূলক মন্তব্য করবেন। হ্যাপি রিডিং)
#চলবে?