আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-২২

0
770

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব২২
#Raiha_Zubair_Ripti

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে অধরা,পাশে তার মা বা দুজনেও। আশরাফুল রহমান মেয়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে-
-“ আমরা খুব শীগ্রই যাবো। তুমি ঠিকঠাক মতো পৌঁছে ফোন দিয়ে জানাবে কেমন?

অধরা মুচকি হাসলো। চোখের ইশারায় বুঝালো সে জানাবে। আয়েশা রহমান অধরার মাথায় হাত রাখে। কপালে চুমু খায়। এরমধ্যে ভেতর থেকে ইতালি যাওয়ার প্লেনের এনাউন্সমেন্ট কানে বাজে। অধরা ফোনে সময় দেখে নেয়। বেশি সময় নেই। বাবা মা কে দেশের মাটিতে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে ল্যাগেজ টা নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। আয়েশা রহমান আর আশরাফুল রহমান মেয়ের যাওয়ার পানে তাকালো। অধরা কে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণে চেয়ে রইলো। চোখের সীমানার বাহিরে চলে যেতেই তারা এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় চলে যায়।

অধরা প্লেনে নিজের জায়গায় ঠিকঠাক মতো বসে পড়ে। মিনিট কয়েক পর প্লেন যখন আকাশ পথে উড়াল দিলো তখন অধরা প্লেনের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। কুয়াশায় ঢাকা আবছা আকাশ টাকে খুব ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করলো। সব ইচ্ছে চাইলেও পূরণ করার সামর্থ্য থাকে না। ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখলো অধরা। চোখ টা বন্ধ করে নিলো মুহূর্ত গুনছে কখন ইতালির মাটিতে পা রাখবে। আর ভুলে যাবে অযৌক্তিক, ছন্নছাড়া, অনুভূতি।

চিত্রা সপরিবার সহকারে বাবা, চাচা, রায়ান বাদে শপিং মলে এসেছে। সামনে বিয়ে সেজন্য শপিং করতে। শপিং মলের সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে। মূলত তুষারের জন্য। তুষার আসা মাত্রই সবাই শপিং মলে ঢুকে যায়। চিত্রা ঠাই দাঁড়িয়ে রয়। তুষার গাড়ি থেকে নেমে চিত্রার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ যাওয়া যাক তাহলে?
চিত্রা মাথা নাড়ায়। তুষার চিত্রার হাত ধরে শপিং মলে ঢুকে।

যে যার মতো শপিং করছে,চিত্রার শপিং তুষার নিজে করবে জানিয়েছে। সেজন্য চিত্রা কে নিয়ে প্রথমে শাড়ির দোকানে গেলো। দোকান দার কে শাড়ি বের করতে বলে বউ ভাতের রিসেপশনে আর গায়ে হলুদে পড়বে এমন। দোকান দার প্রায় ১৪-১৫ টা শাড়ি তুষার চিত্রার সামনে রাখে। চিত্রা শাড়ি গুলোর দিকে একবার তাকায়। তুষার চিত্রা কে মন মতো পছন্দ করতে বলে। চিত্রা ভেবে পায় না কোনটা ছেড়ে কোনটা নিবে। তুষার চিত্রা কে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে-
-” এই দোকানের শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না? আচ্ছা চলো অন্য দোকানে যাওয়া যাক।
তুষারের কথা শুনে দোকানদারের মুখ টা চুপসে যায়। এতো গুলো শাড়ি তাও নাকি পছন্দ হচ্ছে না।চিত্রা দোকানদারের চুপসে যাওয়ার মুখের দিকে একবার চেয়ে বলে-
-” শাড়ি গুলো এতো সুন্দর যে আমি বিভ্রান্ত হচ্ছি কোনটা রেখে কোনটা নিবো সেটা ভেবে।

সত্যি শাড়ি গুলো মারাত্মক লেভেলের সুন্দর। তুষার মুচকি হেসে দোকানদার কে বলে সব গুলো শাড়ি প্যাক করে দিতে। চিত্রা তুষারের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আরে এতো শাড়ি দিতে বলছেন কেনো?
দোকান দার শাড়ি গুলো প্যাক করতে করতে বলে-
-“ আফা বারন করেন ক্যা ভাইরে৷ ভাই তো আপনের জন্য ই নিচ্ছে।

চিত্রা তুষারের দিকে তাকালো। তুষার ইশারায় বুঝালো চুপ থাকতে। চিত্রা চুপ হয়ে গেলো। টাকা বেশি হয়েছে তেনার, তাই খরচ করার মতো জায়গা পাচ্ছে না দেখে এখানে খরচ করছে। এমনটা ভেবে নিলো চিত্রা।

তুষার বিল পে করে চিত্রা কে নিয়ে লেহেঙ্গার দোকানে গেলো। ব্লাক কালারের একটা লেহেঙ্গায় চোখ আটকে যায় চিত্রার। বিয়েতে সে ব্লাক পড়তে চাচ্ছিল না কিন্তু এই ব্লাক কালারের লেহেঙ্গা টা থেকে চোখ সরানো দুষ্কর। ব্লাকের উপর গোল্ডেন কালারের কারুকাজ সত্যি মারাত্মক লাগছে।

এদিকে তুষার, রেড,ব্লু,অরেঞ্জ, টিয়া,গোল্ডেন সব কালারের লেহেঙ্গা নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখছে আর বলছে কোনটা নিবে। চিত্রা কে চুপ থাকতে দেখে তুষার চিত্রা কে বলে-
-“ কি হলো চয়েস করো কোনটা নিবে।
চিত্রা সামনে ঝুলতে থাকা ব্লাক কালারের লেহেঙ্গার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি ঐ ব্লাক লেহেঙ্গা টা নিবো।

তুষারের কপালে দু ভাজ পড়ে।
-“ তোমার না ব্লাক পছন্দ না?
-“ ভালোবাসার মানুষ টা যেখানে আস্ত ব্লাক লাভার সেখানে আমি হেটার্স হই কি করে।
-“ সত্যি ওটা নিবে?
-“ হ্যাঁ।

তুষার ব্লাক কালারের লেহেঙ্গা টা প্যাক করতে বলে দোকানদার কে। চিত্রা কে নিয়ে জুয়েলারির দোকানে গিয়ে নিজ পছন্দের কয়েকটা জুয়েলারি কিনে নেয় তুষার। বেশি নেয় নি,কারন তুষারের মা অলরেডি মেয়ে আর ছেলের বউয়ের জন্য জুয়েলারি বানিয়ে রেখেছেন। অতঃপর জুতা আর কসমেটিকস কিনে নিলো।

চিত্রা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুষারের কার্যকলাপ দেখলো। তার তো একা নিজের বিয়ে নয়। শুধু তারই শপিং করলো। চিত্রা কোমড়ে হাত গুঁজে বলে-
-“ আপনার শপিং কখন করবেন?
তুষার প্যাক গুলো এক এক করে গাড়ির ভেতরে রেখে গাড়িটা লক করে বলে-
-“ আমার শপিং করা আছে।
-“ কই আমাকে তো দেখানো দূরে থাক বলেন ও নি।
-“ এটা নিয়ে এখন তর্কাতর্কি না করে চলো ভেতরে ক্ষিদে পেয়েছে তো।

চয়নিকা বেগম, রিক্তা বেগম,তানিয়া বেগম,রিয়া নিজেদের মতো কেনাকাটা করছে। তৃষ্ণা ঘুরেঘুরে দেখছে। রাফি চট করে তৃষ্ণার হাত ধরে সাইডে নিয়ে একটা দোকানে ঢুকে। দোকানদার কে ডার্ক রেড কালারের লেহেঙ্গা বের করতে বলে। দোকানদার লেহেঙ্গা বের করে । তৃষ্ণা লেহেঙ্গার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ লেহেঙ্গা দিয়ে কি করবেন আপনি? এগুলো তো বিয়ের লেহেঙ্গা।

-“ হ্যাঁ তোমার আর আমার বিয়ের।
-” আমাদের বিয়ে হতে মাস কয়েক দেরি আছে। এখনই কিনে রাখবেন কেনো? আরো নতুন ডিজাইনের বের হবে তখন।

রাফি বিরক্ত হলো।
-“ অনুষ্ঠান পড়ে হবে কিন্তু কাবিন তো পরশুই হচ্ছে ব্রো আর চিতার বিয়ের দিন।

তৃষ্ণা অবাক হয়ে বলে-
-“ কাবিনের জন্য তাই বলে লেহেঙ্গা!
-“ হ্যাঁ, আমার ইচ্ছে এখন সেটাকে ফুলফিল করার রেসপন্সিবিলিটি তোমার।
-“ তা আপনিও কি শেরওয়ানী পড়বেন?
-“ হোয়াইট কালারের পাঞ্জাবি পড়বো।

রাফি লেহেঙ্গার প্যাক টা নিয়ে তৃষ্ণার হাতে ধরিয়ে দেয়। যেভাবেই হোক বিয়ে তাই বলে তারা সাজবে না এটা আবার হয় নাকি?

সবার কেনাকাটা শেষে মলের ফোর ফ্লোরে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে বসে সবাই। খাওয়া দাওয়া শেষ করে গাড়ির সামনে এসে দরজা খুলে প্যাক গুলো রাফির গাড়িতে দেয়। তৃষ্ণা আর তানিয়া বেগম তুষারের গাড়িতে উঠে বসে। তুষার চিত্রার খোলা চুল গুলো সবার অগোচরে কানে গুঁজে দিয়ে বলে-
-“ বাসায় পৌঁছে ফোন দিবে।
চিত্রা সম্মতি জানায়। রাফিকে ইশারায় বলে সাবধানে যাবি। রাফিও ফের সেম ইশারা দিয়ে বলে-
-“ তুমিও সাবধানে যাবে। অমূল্য রত্ন রয়েছে আমার তোমার গাড়িতে।

তুষার স্মিত হেঁসে রাফির কাঁধে একবার হাত রেখে চলে যায়। রাফি চিত্রা কে গাড়িতে বসতে বলে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালানো শুরু করে।

বাড়িতে আয়োজনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বিয়েতে মাঝারি আকারে হচ্ছে। খুব বড় ও না আবার খুব ছোট ও না। বাড়ির ছাঁদে পেন্ডেল সাজানো হয়েছে। চিত্রা সবেই পার্লার থেকে বাড়ি ফিরেছে। গায়ে তার লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি। শরীর জুড়ে তাজা ফুলের গয়না। সোফার এক কোনায় চোখ যেতেই দেখে রাতুল তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। চিত্রা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। বিষয় টা বাজে লাগছে তার। হাতে থাকা মুঠোফোন টা বেজে উঠায় চিত্রা ফোনটা মুখের সামনে ধরে দেখে তুষার ভিডিও ফোন দিয়েছে।

চিত্রা ফোনটা রিসিভ করে ব্যাক সাইড ক্যামেরা অন করে রুমে চলে যায়। তুষার হঠাৎ ক্যামেরার সামনে চিত্রা কে না দেখে বলে-
-” এই মেয়ে ক্যামেরার সামনে নেই কেনো তুমি?
চিত্রা ক্যামেরার সামনে নিজের মেহেদী রাঙা হাত টা নাড়িয়ে বলে-
-“ আপনি আমায় দেখার জন্য ফোন দিয়েছেন কিন্তু আমি তো দেখা দিবো না।
-“ কেনো?
-“ আমার ইচ্ছে তাই।
-“ ফেসই তো দেখতে চাচ্ছি কুইক সামনে আসো।
-“ নো নেভার।
-“ আমি চলে আসবো তাহলে।
-“ তাতে আমার কি?
-“ লজ্জায় ফেলে দিয়ে আসবো।
-“ কেটে দিবো কল তাহলে।
-” এই না। বলছি কি একটু আসো সামনে তোমাকে ফুলের সাজে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-“ বললাম না দেখা দিবো না।একদম কাল এসে দেখবেন।
-“ কালকের জন্য তুষার অপেক্ষা করতে পারবে না। তুষার চলে আসলো বলে।

কথাটা বলেই তুষার ফোন কেটে দেয়।

(হয়তো দু এক পর্বে গল্পটা শেষ হয়ে যাবে। আজ চেষ্টা করবো বোনাস পার্ট দেওয়ার। হ্যাপি রিডিং)

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে