আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব-১৫

0
687

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৫ (বোনাস পর্ব)
#Raiha_Zubair_Ripte

দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে শান। তার মা কে সে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। অগ্যতা না পেরে এবার রাগের বশে বলে ফেললো,,

” বাবা মুসলিম হতে পারলে আমি কেনো মুসলিম হতে পারবো না। বাবার র”ক্তই তো আমার শরীরে বইছে।

কথাটা কানে আসতেই অ্যাডেলা র”ক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় পিটারের দিকে।

” তোমার বাবার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে হয়ে গেছে আজ থেকে তেইশ বছর আগে। একজন মুসলিম ছেলে কে বিয়ে করে আমি যেই ভুল করছি তাই বলে সেই ভুল তুমি করবে?

” আমি তো কোনো ভুল করি নি মা। জন্ম অনুযায়ী তো আমার মুসলিম হবার কথা বাবা যেহেতু মুসলিম ছিলো। আমি তো তোমার মতো ভুল করি নি। তুমি খ্রিস্টান হয়েও মুসলিম ছেলে কে বিয়ে করেছিলে। আর আমি খ্রিস্টান থেকে মুসলিম হয়ে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছি। হ্যাভেনের বাবা খ্রিস্টান আমার বাবা না। আমাদের দু জনের বাবা ভিন্ন।

” জ্যাকেল্স কিন্তু কখনো তোমাকে সৎ ছেলে হিসেবে দেখেনি বরংনিজের বাবার মতোই ভালোবেসেছে।

” হ্যাঁ আমি তা কখনো অস্বীকার করি নি মা। উনি নিজের ছেলের মতোই আমায় দেখেছেন। কিন্তু র”ক্ত বলেও তো একটা কথা আছে।

” তুমি এনা কে বিয়ে করার জন্য শুধু মুসলিম হলে তাহলে বাহ!

” যখন মুসলিম হয়েছিলাম তখন তো এনা ছিলো না মা এ দেশে। যদি শুধু এনাকে বিয়ে করার জন্যই মুসলিম হতাম তাহলে দু বছর আগেই কি পারতাম না এসব ছেড়ে ছুড়ে এনার কাছে চলে যেতে?আমি তো তা করি নি। আর আমি বাবার থেকে ইন্সপ্যায়ার হয়েই মুসলিম হয়েছি নট এনার জন্য।

” তার মানে ঐ লোকটাই তোমায় হযবরল বুঝিয়ে মুসলিম বানিয়েছে।

” কোনো হযবরল বুঝায় নি বাবা। যা সত্যি তাই বুঝিয়েছিল।

” তাহলে চলে যাও তোমার বাবার কাছে। আমার কাছে থেকে কি লাভ। এগারো বছর আগে তোমার বাবা চলে গেছে এখন তুমি যাও।

” তুমি এনা কে মেনে নিবা না?

” এখনো আশা করছো আমি এনা কে মেনে নিবো কখনোই না।

” বেশ তাহলে বাবার কাছে চলে যাচ্ছি এ মুখ আর কখনো দেখবে না তুমি।

কথাটা বলে শান চলে আসে নিজ বাড়ি ছেড়ে। অ্যাডেলা শানের যাওয়ার দিকে তাকায়।

*

আব্রাহাম কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখে তার ছেলে বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে কে দেখে তড়িঘড়ি করে দরজার সামনে থেকে ছেলে কে ভেতরে আসতে বলল। শান ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে শরীর ছেড়ে দিলো। আব্রাহাম ছেলের সোজাসুজি বসে।

” কি হয়েছে শান। এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেনো?

শান চোখ খুলে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” বাবা মা জেনে গেছে আমি মুসলিম হয়েছি। এনা কে বিয়ে করেছি।

” তোমার মা কিছু বললো না?

” আমার মুখ দেখবে না তিনি। তাই চলে এসেছি।

” একা কেনো এনা কোথায়?

” এনার চাচার বাসায়। ওর বাবা মা সবাই আসবে কাল। এসে কোনো একটা ডিসিশন নিবে।

” তোমার কি আফসোস হচ্ছে মুসলিম হয়েছো বলে?

” না বাবা আফসোস হচ্ছে না বরং কষ্ট হচ্ছে জন্ম থেকে আমি মুসলিম হলে কি এমন হতো বলো তো।

” হাত মুখ ধুয়ে আসো খাওনি তো নিশ্চয়ই। আচ্ছা হ্যাভেন এখন কেমন আছে?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আগের থেকে এখন একটু হাত পা নাড়াতে পারে।

” ওহ ছেলেটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

” দেখে এসো।

” তোর মা আমার মুখ দেখবে না ভুলে গেছিস?

” আচ্ছা খাবার বারো আমি আসছি। ছোট মা কোথায়?

” শরীর ভালো না তাই শুয়ে আছে?

” সে-কি,কি হয়েছে ছোট আম্মুর?

” আর বলিস না প্রেশার লো।

” ওহ মুনিয়া কোথায়?

” স্টাডি রুমে বসে বই পড়ছে।

” এতো রাতে বই পড়ছে এখনো?

” হুমম সাহিত্য প্রেমিক হয়েছে।

” ওহ।

শান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে। আব্রাহাম ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে খাবার বারে।

শান ফ্রেশ হয়ে আসলে বাপ ছেলে মিলে খেয়ে নেয়। আব্রাহামের দ্বিতীয় স্ত্রী মারুয়ার রুমে সামনে গিয়ে দেখে শান তার ছোট মা ঘুমাচ্ছে। তাকে আর বিরক্ত না করে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। এখন একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন। তা না হলে মাইন্ড ফ্রেশ হবে না।

এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক একুশ বছরের তরুণী। হাতে তার ল্যাগেজ পাশেই তার বাবা মা। মেয়েটির মুখে লেগে আছে বিরক্তি। কতোক্ষণব্যাপী দাঁড়িয়ে আছে অথচ গাড়ির দেখা মিলছে না। এবার বাবার দিকে তাকিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,

” আব্বু কই তোমার ভাতিজা। এখনো আসতেছে না কেনো?

” আরমান ভাই তো বললো আরাভ রওনা দিয়েছে অনেক আগেই এখনো কেনো এলো না বুঝতেছি না।

কথাটা বলে এনামুল সামনে তাকাতেই দেখতে পেলেন তার ভাতিজা গাড়ি থেকে নেমে এদিকে আসতেছে। মেয়েকে চোখের ইশারায় দেখালো সেটা।

মেয়েটি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” পাক্কা পয়তাল্লিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আপনার কমনসেন্স নেই। এভাবে অচেনা জায়গায় তিন তিনটা বাচ্চাদের দাঁড় করিয়ে রাখতে।

আরাভ মেয়েটার কথা শুনে স্মিত হাসে তারা নাকি বাচ্চা আল্লাহ।

এনামুলের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,,

” কেমন আছেন চাচা?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো তোমরা।

” এই তো চলছে দিনকাল চলুন। এই ভো”টকা প্যাকেট এসো দাঁড়িয়ে থাকায় যতোটা শক্তি ক্ষয় হয়েছে পাতি লেবুর শরবত খাইয়ে তা পূরণ করে দিবো। আচ্ছা চাচা আপনার মেয়েকে কি ডায়েট করাতে পারে না। আপনার এক মেয়ে পিঁপড়ার তো আরেক মেয়ে হা”তির মতো।

কথাটা শুনে হেনা রেগে যায়। কতবড় সাহস এই হেনা কে কি-না হা”তি বলে। কোথায় মোটা আমি জাস্ট এনার থেকে হালকা গলুমলু তাই এভাবে হা”তি বলবে। এনা মুখে কিছু না বলে হনহন করে গাড়ির ভেতর গিয়ে বসে। আরাভ সেটা দেখে নৈঃশব্দ্যে হেসে ল্যাগেজ নিয়ে গাড়িতে রাখলো।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে