#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৯
আজকে সকাল থেকেই একটু অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। ব্রেকফাস্ট করতে গিয়েই শুনলাম আজ রাদিফ ভাই আসবে। আমি তো ভুলেই গেছি। রাদিফ ভাই এর জন্য এখন আমার কেমন অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়!আমি কি ওনাকে ভালোবাসতে শুরু করলাম!! ছিহ না কি ভাবছি। কিন্তু আগে তো ওনার জন্য আমার কোনো কিছু অনুভব হতো না। আগে তো ওনার ফর্সা মুখের চাপ দাড়ির অবয়ব আমার কল্পনায় আসতো না।
কিন্তু এখন যেন আমি চোখ বন্ধ করলেই ঐ ফর্সা গোলগাল চেহারা, কাটা ভ্রু আর কপালের বাম সাইডের সেই ছোট্ট লাল তিল টা ভেসে উঠে। আমার এইসব ভাবনার মাঝে সাবিহা আমাকে কনুই দিয়ে ঠেলে কানের কাছে আস্তে করে বলে,,
“কিরে রাদিফ ভাই মানে তোর জামাই আসার কথা শুনে কি মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটেছে। তাই নাস্তা করা বাদ দিয়ে রাদিফ ভাই কে নিয়ে ভাবতে বসে গেছিস”।
আমি থতমত খেয়ে বললাম, ” ধুর আমি তো ভাবতেছি আমরা দুজন মিলে একটা ব্যবসা করবো। সামনের শরৎ এ কাশফুল চাষ করবো”
“হ্যাঁ। আইডিয়া টা কিন্তু অনেক ভালো জান। তারপর আমরা দুজন ও বড়লোক্স হয়ে যাবো” বলে খুশিতে আত্মহারা সাবিহা।
_____________
আমি মনে মনে ঠিক করে রেখছি যেহেতু আজ রাদিফ ভাই আসবে আমি রাদিফ ভাই কে কলেজে যাওয়ার ঘটনাটা বলবো। কে সেই ব্যক্তি যে আমাদের জন্য রিকশা পাঠায়??ভাড়া মিটিয়ে দেয়?
ক্লাসে ঢুকার পর থেকেই তন্ময় আর অনিমা দুজনেই ঝগড়া করেই যাচ্ছে। ওদের এসব ক্যাচাল থেকে বাচঁতে আমি ওদের তিনজন কে রেখে আরেক বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। পিছনে বেঞ্চে আমাকে বসতে দেখে রিমি আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তার দলের মেয়েদের কে বললো, “দেখ কালকে আমি সায়ান স্যারের সাথে কিসের সম্পর্ক ইঙ্গিত করায় সবাইকে দেখিয়ে বিবাহিত হওয়ার মিথ্যা নাটক করছে। যাতে ও ধোয়ার তুলসি পাতা নিজেকে প্রমাণ করতে পারে এইজন্য ” বলে সে অন্যদের সাথে হাসতে লাগলো।
“আমি ওর কথা শুনেও কিছু বলতেছিনা। ভেবেছিলাম আমি বিবাহিত জানলে হয়তো রিমি আমার পিছু ছেড়ে দেবে। কিন্তু ও তো বুঝলো না কিছু বরং উল্টো টা বুঝে বসলো।”
আজ কে সায়ান স্যার এর ক্লাস নেই। সরকারি ছুটির তিনদিন বন্ধ কলেজ। ছুটি শেষে কলেজের গেটে দাড়াতেই সায়ান স্যার আমাকে ডেকে উঠলো। আমি আর সাবিহা স্যারের কাছে যেতেই স্যার আমাকে বললো, “তুবা তোমার আব্বু বা জেঠুর নাম্বার টাহ দাওতো। কলেজের ডায়েরি তে লেখা ছিলো কিন্তু ঐটা এই মুহূর্তে পিয়ন পাচ্ছে না। তাই তোমাকে বললাম”।
” আমি স্যার কে জেঠু মনির নাম্বার দিলাম। বললাম স্যার কোনো সমস্যা?? আমরা কি কোনো অন্যায় করেছি??”আমি ঘাবড়ে গিয়ে স্যার কে জিজ্ঞেস করলাম।
স্যার আমাদের বললেন “না না তোমরা কোনো অন্যায় করো নি। আমি নাম্বার নিলাম অন্য একটা দরকারে”।
____________
কলেজ থেকে বাসায় গিয়ে শুনলাম রাদিফ ভাই এসেছে আরো প্রায় দুই ঘন্টা আগে। আর আজকে তো রাদিফ ভাই এর চামচা রিজবীর ঈদ লেগে গেছে। আমি আর সাবিহা যে যার রুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। রুম থেকে বের হয়ে যেই নিচে যাবো উপর থেকে দেখি রাদিফ ভাই সাবিহার ক্লাস নিচ্ছে। ওর অবস্থা তো এখন ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাচি টাইপ’।
আমি পরিবেশ গরম দেখে আর নিচে গেলাম নাহ। আবার সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। রুমের দরজা লক করে ড্রয়ার থেকে বিস্কিট এক প্যাকেট খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ব্যাস এখন আমি ঘুমিয়ে যাবো।
পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তারপর সন্ধ্যায় নিচে যাবো। আর আমি মাথামোটা কি চিন্তা করছি!! কলেজে যাওয়ার সময়ের অচেনা ছেলেটার কথা রাদিফ ভাই কে বলবো।
রাদিফ ভাই যদি এসব শুনে দেখা গেলো আমাকে আর সাবিহা কে বডিগার্ড ঠিক করে দেবে কলেজে যাওয়া আসা করার জন্য। নাহ বাবা তমাল ভাই ই ঠিক আছে।
এদিকে রাদিফ এর দুচোখ শুধু তার বউজান কে খুজছে। সাবিহা তো বললো দুজন এক সাথে ফিরেছে। পরে তার ছোট মা মানে তুবার মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে যে রুমে আছে। এরপর রাদিফ গিয়ে কিছুক্ষণ তার মায়ের সাথে কথা বললো। কারণ তার মা তার নানু বাড়িতে চলে গেছে। কথা বলে ওর এসাইনমেন্ট গুলা শেষ করতেছে। কিন্তু মাথার মধ্যে শুধু তার প্রেয়সীর কথা ঘুরতেছে।
রাদিফ জানে তার বউ তাকে ফোনে যত কিছুই বলুক না কেন সামনে এলে তাকে ভয় পাবে আগের মতো। ওর এই ভয়টা কমাতে হবে।
চারদিকে মাগরিব এর আজান দিচ্ছে। হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলাম অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজ পড়ে নিচে গেলাম। নিচে যেতেই সাবিহার কিল, থাপ্পড় কতগুলা খেলাম আর আমারে বললো ” জান তুই তোর জামাই টারে সামলা। আমাদের জীবন টা তেজপাতা করে এই কদিনে আবার। আর সাথে তো রিজবী শয়তানডা আছে” বলে সাবিহা হা হুতাশ করতে লাগলো।কিছুক্ষণ মায়ের বকা শুনলাম। আমি কোনো রকম নাস্তা টা করে রুমে যেতে পারলেই বাচি।
রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসার আগেই দেখলাম রাদিফ ভাই আমার বিছানায় বসে আছে। আর বাকাঁ হাসি দিয়ে বললো,,
“বেইব এখন কই পালাবা??!!”
চলবে……