#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_০৫
মেসেজ আর ছবিগুলো ওপেন করে দেখলাম আজকে ফুচকা খেতে গিয়ে যে ছবিগুলো তুলেছি সেগুলো। কিন্তু আজকের এই ছবিগুলো আমাকে কে পাঠিয়েছে!!??তাও আবার আননোন একটা আইডি থেকে। এরপর মেসেজ গুলোতে চোখ বুলিয়ে দেখলাম ঐ অচেনা ব্যক্তি লিখেছে,,
“তোমার চোখ গুলো ভিষণ মায়াবী। বয়সে আমার থেকে ছোট হবে তাই তুমি বললাম।”
আমি রিপ্লাই দিলাম,,কে আপনি?? আর এই ছবিগুলো কোথায় পেয়েছেন??!!
সাথে সাথেই রিপ্লাই এলো,, পেয়েছি আমার ফ্রেন্ড আনাস এর ফেসবুক আইডি থেকে। আর ওকে জিজ্ঞেস করলাম,, এরা কারা??ও বললো ওর কাজিন হও তোমরা সবাই।
আমি সাথে সাথে ফেসবুকে ডুকে দেখি সত্যি সত্যি আনাস ভাই আজকের ছবিগুলা আপলোড দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। যেহেতু ওনার আইডিতে পরিচিত কেউ ছাড়া অন্য কেউ নেই। ঐ পোস্ট এর নিচে একজনের কমেন্ট দেখলাম লিখেছে,,
“আনাস, সবুজ সুন্দরী টাকে বলিস আর কখনো যাতে সবুজ কালার না পড়ে কারণ তার সবুজ সৌন্দর্যের দ্যুতি তে আমার মতো অনেকে হার্ট অ্যাটাক করবে”।
এখানে সবুজ কালার জামা পড়েছি আমি তারমানে কি,, ঐ আননোন ব্যক্তি টা কি উনি।
আমি তাই ঐ নাম্বারে রিপ্লাই দিলাম,,
” আচ্ছা আপনি মনে হয় ফেসবুক এ হার্ট অ্যাটাক করা ব্যক্তি,, তাই না??!
বললো,,
“হ্যাঁ। আমার না ” ডুবেছি আমি তোমার প্রেমের অনন্ত মায়ায়” গানটা অনেক প্রিয়। আজ আমি এই গানের সার্থকতা বুঝছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,,
“আপনি আমার নাম্বার পাইলেন কই”??!!
বললো,, ” আনাস থেকে নিছি”।
আমি সাথে সাথে নিচে গেলাম,, আনাস ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতে তানিশা আপু বলল আনাস ভাই ফোনে কথা বলতেছে। আমি আনাস ভাইয়ের কাছে যেতেই আনাস ভাই ফোনে বলতেছে,,
“রাদিফ,,দেখ আমি তো ছবিগুলা টা এমনিতেই মেমোরিজ হিসেবে দিলাম। একটু দুষ্টামি করেই হয়তো রাতুল কমেন্ট টা করছে। ও তো জানে এরা সবাই আমার ছোট বোন যে। তুই ব্যাপার টা এতো সিরিয়াসলি নিস নাহ। আমি রাতুল কে বলবো কমেন্ট টা ডিলেট করতে।”
আমি বুঝলাম ফোনের অপরপাশে রাদিফ ভাই আছে। বুঝলাম আমার বিপদ অতি নিকটে। অপরপাশ থেকে রাদিফ ভাই কি বললো জানিনা। আমি আস্তে করেই আনাস ভাইয়ের পিছন থেকে কেটে পড়লাম।
_______________________
ড্রয়িংরুমে এসে দেখলাম আব্বু, জেঠু মনি,আর মেজো চাচ্চু বাজারে লিস্ট করতেছে। কালকে দাদা ভাইয়ের মৃত্যু বার্ষিকী তে মানুষ কে খাওয়ানোর জন্য। আমি যেতেই দাদি আমাকে বললো,,
“তুবা, কিচেন থেকে তোর বড় মা ডেকে আন তো”
আমি কিচেনে গিয়ে বড় মা কে বললাম যে তাকে ড্রয়িংরুমে ডাকছে।
সাবিহাদের কাউকে দেখছিনা। সাবা আপুর রুমে গিয়ে দেখলাম ইরহাম ভাই বাদে সবাই এখানে গল্প করছে।
আমি গিয়ে বসলাম। আনাস ভাই এতক্ষণ রাদিফ ভাইয়ের কথাগুলো বলতেছে সবাই কে।
রাদিফ ভাই নাকি আনাস ভাইয়ের সাথে অনেক রাগারাগি করছে ছবি গুলো আপলোড দেওয়া তে
আমি গিয়ে বসতেই সাবিহা আর ইরা বললো,,
“আরে তোমরা জানো নাহ,,রাদিফ ভাই ছবি গুলো দেওয়া তে এমনি এমনি রাগ করে নাই। মূলত নিজের বউ আছে না ছবি গুলাতে,, সেজন্য এত রাগ করতেছে”। বলেই দুজন আড়চোখে আমার দিকে চাইলো।
অনামিকা মুচকি হেসে বললো,,
” আরে তোরা দুজনের মতো বেক্কেল আর বেয়াদব এর একটাও নাই। একজন স্ত্রী র সামনে তার স্বামী সমালোচনা করতেছিস। ছেহ!! কি অন্যায়!!
আর আমি অসহায় দৃষ্টিতে তমাল ভাই আর আনাস ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“তোমরা দুজন এদের কে কিছু বলবা না!! দেখতেছো না ওরা আমার মতো এইরকম একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে কিভাবে রোস্ট করতেছে। এরা সবাই একদলে হয়ে গেছে”।
___________
এদিকে রাদিফ তো রেগে আগুন। একে ভার্সিটির এসাইনমেন্ট গুলো এখনো কমপ্লিট করতে পারে নাই। তারউপর এসাইনমেন্ট গুলা কালকের মধ্যেই জমা দিতে হবে। আবার এই দিকে তুবা কে একের পর এক কল, মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ও ফোন তুলছেই না।
আনাসের বন্ধু রাতুলের সব রাগ যেন তুবার উপর পড়ছে। তাই তাকে কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু নো রেসপন্স।
রাদিফ যেখানে নিজের প্রেয়সীর দিকে কারো নজর শ্য করতে পারেনা সেখানে পাবলিক্যালি একজন তাকে উদ্দেশ্য করে এইভাবে বললো। কবে বুঝবে এই মেয়ে আমাকে??
শেষে ও না পেরে তার মায়ের ফোনে ফোন দেয়। কিন্তু ওর মাও ফোন ধরে নাই। তখন ওর ছোট ফুফির কাছে
দেয়। অবশেষে ছোট ফুফি ধরলো ফোন।
” হ্যালো রাদিফ,,কেমন আছিস আব্বু”?? ছোট ফুফি
“আসসালামু আলাইকুম ফুফি,,কেমন আছো তোমরা সবাই??” রাদিফ
“ওয়ালাইকুমুসসালাম। আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি সবাই। কালকে আয়োজনের জন্য সবাই ব্যস্ত আছি একটু”। ছোট ফুফি বললো
” ও আচ্ছা। ঐ বিচ্চু বাহিনী গুলা সবাই কোথায়??”
“আছে ওরা। দিচ্ছি দাড়া। এই রিজবী ফোন টা ওদের কে দিয়ে আয় তো। আমি ব্যস্ত আছি। ”
রিজভী ফোন নিয়ে সাবার রুমে এসে ফোন টা তমালের হাতে দেয়। তমাল বলে,, কে এইটা??
“রাদিফ ভাইয়া”। রিজবী
” হ্যাঁ রাদিফ বল”।তমাল
“এখানে তাহিয়া আছে?? থাকলে ওকে দে।”
“তুবা, নে রাদিফ তোর সাথে কথা বলবে। বাইরে যা তুই এইখানে কথা বুঝবি নাহ”।
” আসসালামু আলাইকুম “খানিকটা ভয়ে ভয়েই বললো তুবা
” ওয়াইলাইকুমুস সালাম। ছোট ফুফির ফোনটা তাকে দিয়ে তুই তোর রুমে যা। মি তোর ফোনে ফোন দিচ্ছি।”খানিকটা গম্ভীর স্বরে ঐপাশ থেকে রাদিফ বললো।
আমি রুমে গিয়ে ফোন চেক করে তো হতভম্ব। এত্ত গুলা মেসেজ আর কল তাও রাদিফ ভাই এর থেকে। আজকে তুবা তুই শেষ। দেখলাম রাদিফ ভাই আবার দিয়েছে কল। বললো,,
“এতক্ষণে নিশ্চয়ই দেখেছিস কতগুলা কল আর মেসেজ দিয়েছি আমি। তোর এই ফোনটা সামনে যদি পাইতাম তাহলে আমি আচাড় মারতাম। ফোন দিয়ে যদি না পাই তাহলে ফোন ব্যবহার করার দরকার কি।
এইখানে আমি ফোন দিয়ে দিয়ে মরে যাচ্ছি আর তুই আড্ডা দিতে ব্যস্ত। খুব তো ঊড়তেছিস। যত পারিস উড়ে নে। আমি আসলেই তোর ডানা কাটবো আমি।”
একটু থেমে আবার বললো,,
ছেলেদের থেকে কমপ্লিমেন্ট পেতে খুব ভালো লাগে তাই নাহ?? সেজেগুজে বাইরে যাস তো কমপ্লিমেন্ট পেতে। আনাস যখন ছবি তুলছিলো তখন মানা করতে পারছিলিনাহ। কথা বল..ড্যাম
আমি কান্না শুরু করে দিয়েছি অলরেডি। রাদিফ ভাই এর থেকে এগুলো আশা করি নি। আমি বললাম,,
“আনাস ভাই এত করে বললো তাই। আর ওরা আমাকে কি ভাববে ছবি না তুললে”।
এই কথা শুনে অপরপাশ রাদিফ চিৎকার করে বলে,,
” হ্যাঁ। তুই তো সবার মন বুঝিস। খালি আমার টা ছাড়া। আমার টা কবে বুঝবি তুই। কি করলে তুই বুঝবি।একদম ন্যাকামি করবিনা আমার সাথে,,বলে দিলাম”।
এই বলে রাদিফ ভাই ফোন কেটে দিলো।
রাদিফ ভাইয়ের কথাগুলো যেন আমার কানে বাজছে। আমি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম ঐখানে।
চলবে…….