#আমার _বিষাদীনি
#উম্মে _হাফসা
#পর্ব: _৩
রাদিফ ভাইয়ের মেসেজ টা দেখে তো আমি পুরাই টাস্কি খাইলাম। এ যেনো এক অন্য রাদিফ ভাই। তাই আমি রিপ্লাই দিলাম,,
“এই আপনি সত্যি রাদিফ ভাই তো??!!”
দেখলাম মেজেস সিন করলো কিন্তু কোনো রিপ্লাই করলো নাহ। উপ!!ভাব। একটু আগে বউজান বলে এখন আবার ভাব। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
এদিকে___
রাদিফ নিজে নিজে হাসতেছে। কি এক পাগলি কে ভালোবাসলাম,, বউজান বলার পর আমাকে বলতেছে আপনি সত্যি রাদিফ ভাই তো। কবে আমার এই অবুঝ বউ টা আমাকে একটু বুঝবে।
তখনি রাদিফের বন্ধু ইমন ওর রুমে প্রবেশ করলো। আর বললো,
“এই রাদিফ, সিনথিয়া যে আজকে তোকে প্রোপোজাল দিলো তুই তো কিছু বললি নাহ। আমি জানি অবশ্যই তুই ওকে একসেপ্ট করবি। আফটার অল ও আমাদের এই ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে আর তোর মামাতো বোন।”
তখন রাদিফ বললো,,
“আরে নাহ। কিসের একসেপ্ট!! আমি ম্যারিড। আমার বউ আছে। আর আমি নিজেই সিনথিয়া কে বলবো আমার বিয়ের কথা। আশা করি ও বুঝবে। আর না বুঝলেও আমার কিছু করার নাই। ”
“কিহ!!? তুই ম্যারিড!!” ইমন
“হ্যাঁ ” রাদিফ
_________________
“এই তাহিয়া এই দিকে আয় তো”
“নাহ আমি আসবো নাহ। আসলেই আপনি আমাকে পানিশমেন্ট দিবেন আমি জানি”
“আরে কিছু করবো না,,বলতে বলতে রাদিফ ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে আর আমি পিছাচ্ছি।”
রাদিফ ভাই তার দুই হাত দেওয়ালে দিয়ে আমাকে আটকে রেখেছে। তারপর বললেন,,
“বউজান আমার কথা অবাধ্য করার জন্য তোকে পানিশমেন্ট হিসেবে তোকে আমি এখন একশ টা চুমু খাবো। ভাব নিয়ে বললো,, চাইলে তুই ও খেতে পারিস আমি মাইন্ড করবো নাহ। এই বলে উনি আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,,,
নাহহ!! বলে ধড়ফড়িয়ে আমি বিছানা থেকে উঠে বসলাম। ও তারমানে এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। ছিহ! কি বিশ্রি স্বপ্ন। তাও আবার রাদিফ ভাই কে নিয়ে।
পরদিন সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করছিলো সবাই। তখন বড় মা বলে উঠলো আজকে নাকি আমাদের ফুফি রা আসবে। আমার বড় ফুফির চার ছেলে মেয়ে। তানিশা আপু,,অনামিকা আর পিচ্চি তানহা আর তমাল ভাইয়া। ছোট ফুফির তিন ছেলে মেয়ে। আনাস ভাইয়া, ইরহাম ভাইয়ার আর ইরা।
আর আজ সবাই আসতেছে কারণ কালকে দাদুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ হবে তাই।
আমি আর বললাম,,” উপ কত দিন সবাই একসাথ হবো। আমি আর সাবিহা দুজনেই ব্রেকফাস্ট করে কলেজের উদ্দেশ্য রোনা দিলাম। রাস্তায় যেতেই দুজন একটা রিকশা পেয়ে গেলাম। আমি সাবিহা কে আজকেও বললাম,,
“সাবিহা, আমার মনে হচ্ছে আজকেও আমাদের কেউ ফলো করছে”।
” কে ফলো করবে!!? পেছনে তো কাউকেই দেখতে পাচ্ছি নাহ।”সাবিহা বললো।
তারপর দুজন কলেজের গেটের সামনে নেমে রিকশাওয়ালা কে যেই ভাড়া দিতে যাবো রিকশাওয়ালা মামা তার আগেই রিকশা টান দিয়ে চলে গেলো!!
এইদিকে আমি আর সাবিহা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
সাবিহা বলল,,
“তুবা, তারমানে আজকেও কেউ আমাদের ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কে এমন মহৎ ব্যক্তি সাজতে গেলো যে আমাদের ভাড়া দিয়ে দেয়। আচ্ছা তুবা, বিষয় টা রাদিফ ভাইকে জানালে কেমন হয়??”
ও রাদিফ ভাইকে জানানোর কথা বলার সাথে সাথেই আমি বললাম,
“নাহ। রাদিফ ভাইকে জানানোর দরকার নেই। উনি শুধু শুধু ঝামেলা বাধাবে। তার থেকে বরং আজ যেহেতু ফুফিরা সবাই আসছে আমরা তমাল ভাইয়া দের জানাতে পারি। দেখ রাদিফ ভাই তো সামনাসামনি নাই তাই উনি ব্যাপার টা নিয়ে বেশি ঝামেলা করে ফেলবে আর তমাল ভাইরা তো আছে উনারা ব্যাপারটা বুঝবে।”
“হুম তাও ঠিক” সাবিহা বলল
এই বলে দুজন কলেজে প্রবেশ করলো।আজকে ওদের প্রথম ক্লাস নিচ্ছে সায়ান স্যার।
সায়ান স্যার ক্লাস নিচ্ছে আর এইদিকে মেয়েরা উনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে রিমি তো একেবারে নজর সরাচ্ছেই নাহ।
দেখতে দেখতে স্যারের ক্লাস শেষ হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে স্যার দেখলাম আমাদের ব্যাঞ্চের দিকে এগিয়ে আসতেছে!! এদিকে আমরা তো ভয়ে শেষ। ভাবলাম আমরা একটু আগে রিমির কান্ডে হাসাহাসি করেছি যে এই জন্য বোধহয় স্যার আমাদের দিকে আসতেছে!!। কিন্তু আমাদের ভুল প্রমাণ করে দিকে স্যার আমাকে বলল,,
“তুবা তোমাকে যে বইটা দিয়েছি ঐটা থেকে তুমি টপিক টাহ বুঝছো। না বুঝলে ব্রেক টাইমে আমি ফ্রি আছি বুঝিয়ে দিবো।”
আমি বললাম,,
“নাহ স্যার আমি বইটা পড়ে খুব সুন্দর ভাবে বুঝেছি। কিন্তু স্যার আমি তো আপনার বইটা আনতে ভুলে গিয়েছি। কালকে নিয়ে আসবো”।
” থাক বইটা দিতে হবে নাহ। তুমি তোমার কাছে রেখে দিও”
এই বলে স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। আর এইদিকে রিমি তো আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবে লুক দিচ্ছে। আমি আজ থেকে রিমি আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগবে।
_________________________
“সিনথিয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে” রাদিফ
সিনথিয়া মনে মনে বললো,
“উপ আমাকে মনে হয় রাদিফ একসেপ্ট করবে। কত দিনের স্বপ্ন আমি রাদিফের বউ হবো। ও আমাকে ভালোবাসবে। ফাইনালি আজকে আমাকে ও ভালোবাসার কথা বলবে”।
” দেখ সিনথিয়া তুই এমনিতেই কালকে এক সিনক্রিয়েট সৃষ্টি করছিস। তাই আমি তোকে বেশি কিছু বলতে চাই না। আমি ম্যারিড। আমার ছোট চাচ্চুর মেয়ে তুবা কে তো তুই চিনিস,,ওর সাথেই আমার বিয়ে হয়েছে। আর আমি আমার বউকে ভালোবাসি ” রাদিফ বলল।
সিনথিয়া যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজের সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসার মানুষের মুখে এইসব কথা শুনে ও যেন উত্তেজিত হয়ে গেছে। ও রাদিফ কে বললো,,
“তুমি আমার সাথে নিশ্চয়ই মজা করছো তাই না। তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিবে এই জন্য এগুলো বলছো তাই না?? তুবা তো অনেক ছোট। ও কিভাবে তোমার বউ হবে। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। তুমি নিশ্চয়ই আমার সাথে,, মজা করছো।”
__________
আমি মাত্র কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে বের হলাম। তখনি দেখলাম ফোন বাজছে। দেখলাম “জমদূত” নাম্বার থেকে ফোন আসছে মানে রাদিফ ভাই ফোন দিয়েছে।
কিন্তু রাদিফ ভাই এইসময় আমাকে কল দিবে কেনো। তাও আবার হোয়াটসঅ্যাপে ভিড়িও কল দিছে। এতকিছু ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেছে। যেই আমি রিপ্লাই কল দিতে যাবো দেখলাম আবার উনি দিয়েছে,,
“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়াইলাইকুমুসসালাম। এতক্ষণ ফোন দিচ্ছি। ফোন ধরছিস নাহ যে। আর পেছনের ক্যামেরা কেন দিয়েছিস। আমি কি তোর রুম দেখার জন্য ফোন দিয়েছি?? ”
“মাত্র কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেস হচ্ছিলাম। আর ফুফুরা এসেছে বাসায়।তাই ফোন ধরতে পারি নাই”
“ক্যামেরা তোর দিকে ঘুরা। তোর সাথে সিনথিয়া কথা বলবে। ও নাকি তোকে অনেকদিন দেখে নাই তাই”।
” হেই তুবা,,কেমন আছ?? তুমি নাকি এখন মিসেস রাদিফ হয়ে গেছো”কিছুটা কটাক্ষ করে সিনথিয়া বললো।
“আসসালামু আলাইকুম আপু। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?? তোমাকে সেই কবে দেখছিলাম। রাদিফ ভাই আসার সময় তুমিও এসো”
“হ্যাঁ আসবো। নিশ্চয়ই আসবো। আফটার অল আমার ফুফির বাসা। আচ্ছা বায়”।
ওর থেকে ফোন নিয়ে রাদিফ বললো,,
আচ্ছা তাহু এখন রাখি। তুমি গিয়ে খাবার খেয়ে নাও আর হ্যাঁ অবশ্যই দৌড়াদৌড়ি কম করবা এখন ফুফিরা আসছে মানে তো তুমি আকাশে চাঁদ পাইছো। নিজের খেয়াল রাখবা। আল্লাহ হাফেজ ” বউ”।
চলবে……..