আমার বিষাদীনি পর্ব-০২

0
428

#আমার বিষাদীনি
#উম্মে হাফসা
#পর্ব: ২

ড্রয়িংরুমে বড় মা রাদিফ ভাই কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সবার চোখে পানি। কারণ;সবার আদরের ছেলে আজ চলে যাচ্ছা,,রিজবী তো রাদিফ ভাইকে ছাড়ছেই না। আমি এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি আর মাথায় ঘুরছে রাদিফ ভাইয়ের তখনকার কথাগুলো।।ঐসময় আমি যেন এক অন্য রাদিফ ভাই কে দেখলাম।

যখন কথা গুলো ভাবতেছি রাদিফ ভাই আমার সামনে এসে বললো,,
“মন দিয়ে লেখাপড়া করবি। কোনো ফাঁকিবাজি করবি নাহ। দুজনে যেন কলেজ ছাড়া আর অন্য কোথাও ঘুরাঘুরি না করিস। সামনে কিন্তু ফাইনাল এক্সাম। আর ভাববি না যে,,আমি চলে যাচ্ছি বলে উড়তে পারবি।”
“আমার নজর কিন্তু সবসময় তোমাতেই আবদ্ধ ” আমার বিষাদীনি ” কানের কাছে আস্তে করে বললো।

“আর এইদিকে আমি তো যেন রোবট হয়ে গেলাম,, এটা কোন রাদিফ ভাই এত অচেনা। আর বুঝলাম যাওয়ার সময় ও কি হুমকি ধামকি দিয়ে যেতে হবে”!!

____________________
” কিরে রাদিফ ভাই তোকে তখন কি বললো?! আয়হায় কিতনা রোমান্টিক হ্যায়। কেউ খেয়াল না করলেও আমি কিন্তু করেছি। ইউ নো না জান্স আমার নজর সবসময় তোমার উপর” ভাব নিয়ে সাবিহা বললো

“কি আর বলবে রাদিফ ভাই। হুমকি দেওয়া ছাড়া আর পারে টা কি।? ” আমি বললাম

পরদিন সকাল বেলা সবাই টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো। আমি আর সাবিহাও একেবারে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আসলাম। বড় মা তখন রাদিফ ভাইয়ের সাথে ভিড়িও কলে কথা বলছে। সবাই কে দেখাচ্ছে। আমার আর সাবিহার দিকে ক্যামেরা ঘুরাতেই রাদিফ ভাই ঐপাশ থেকে বলে উঠলো,,

“তোরা দুজন আজকে থেকে বাড়ির গাড়ি করে কলেজে যাবি আসবি”।

যদিও আমি আর সাবিহা দুজনেই রাদিফ ভাইয়ের কথায় মাথা নেডেছি,, মনে মনে ঠিকই কিন্তু রাদিফ ভাই কয়েকশ খানেক বকাঝকা করেছি। আর মনে মনে ভাবতে ভাবতে আমি সত্যিই রাদিফ ভাই কে ভেংচি কেটে দিয়েছি। খেয়াল করে দেখলাম কেউ দেখেছে কি না।। না কেউ দেখে নি।

রাদিফ যদিও সবার সাথে কথা বলতেছে ওর দৃষ্টি কিন্তু ওর প্রেয়সী তেই সীমাবদ্ধ। কারণ ক্যামেরা এখনো কিন্তু ওর দিকে ঘুরানো। ইশ! আমার বউ টা কে যদি আরেকটু কম সুন্দর লাগতো তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত। এই মেয়েটা আমাকে এখানে শান্তি তে থাকতে একটু ও দেবে না দেখছি।

” আচ্ছা মা আমরা গেলাম।” এই বলে আমি আর সাবিহা দুজনেই উঠে পড়লাম।
দুজনেই বাইরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। তখনি দেখলাম একটা খালি রিকশা আসছে। দুজনেই উঠে পড়লাম। কিন্তু পথের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে। তাই সাবিহা কে আমি বললাম,,

“এই সাবিহা, মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে।সাবিহা পেছনের দিকে তাকিয়ে বললো,,
” আরে কেউ নাই”।
দুজনেই কলেজের গেটের সামনে নামতেই রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিতেই মামা বললেন
“আপনাদের ভাড়া দিতে হইবো নাহ। আপনাদের ভাড়া দিয়া দিছে”। আমি আর সাবিহা তো অবাক আমাদের ভাড়া আবার কে দিবে। দুজনেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। এরপর দুজন কলেজের বটতলায় যেতে আমাদের আরো দুই বেস্টফ্রেন্ড তন্ময় আর অনিমা আসলো। তন্ময় এর কাজই হচ্ছে সারাদিন অনিমার পিছে লেগে থাকা। আমরা আসতেই তন্ময় বললো,,
” এই তুবা,, দেখ আজকে অনিমা কে পুরা শাকচুন্নির মতো লাগছে তাই না??।ব্যাস হয়ে গেলো দুজনের ঝগড়া শুরু।

“তোরা থামবি। ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছে। লেট করে গেলে ঐ টাকলু স্যার আবার দাঁড় করাই রাখবে ” সাবিহা
________
ব্রেক টাইমে চারজন মিলে সিংগাড়া খাচ্ছিলাম তখনি একটা মেয়ে এসে বললো,,
“এখানে তাহিয়া আহমেদ তুবা কে?? ”
আমি বললাম,”আমি তুবা। কেন??
সায়ান স্যার আপনাকে তার রুমে ডেকেছি আপু।
সায়ান স্যার। মানে আমাদের ইংলিশ টিচার। কিন্তু সায়ান স্যার হঠাৎ আমাকে ডাকবে কেন??!

স্যারের রুমে যেতে স্যার বললো,
“ও তুবা আসছো। এই নাও এই বইটা নাও। তুমি ওইদিন আমাকে যে টপিক টার কথা বললা,, যেটা তুমি বুঝো না এই বইটা থেকে তুমি টপিক টা তুমি খুব সুন্দর ভাবে বুঝবা। আর না বুঝলে তো আমি আছি।”

“জি স্যার”।

সায়ান স্যার হলো আমাদের কলেজের সবচেয়ে সুদর্শন স্যার। এক কথায় মেয়েরা ওনার উপর ক্রাশড। তাতে আমি কি আমি তো বিয়েত্তা।
_____________
কলেজ ছুটির পর আমি আর সাবিহা দুজনেই বাড়ির সামনে নামলাম। কিন্তু এইবার ও কলেজে যাওয়ার সময়ের মতো ঘটনা হইছে। রিকশাওয়ালা মামা টাকা নে নাই। কিন্তু কেন?? কে এইরকম করবে??

বাসায় ঢুকতেই মেজো আম্মু বললো,
” যা দুজন ফ্রেস হয়ে আয়। টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”
কিন্তু আমরা দুজনেই ঐ আগুন্তকঃ কে নিয়ে চিন্তা করছি।

রাতে_______________

মাত্রই আমি পড়া শেষ করে উঠলাম। কারণ কয়েকদিন পর ইন্টার ফাইনাল এক্সাম। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি সকালে আবার উঠতে হবে। ফোন হাতে নিয়ে এলার্ম দিলাম। এরপর দেখলাম কলেজের গ্রুপে সবাই সায়ান স্যার আর মিথিলা ম্যামের কিছু একসাথে কফি খাওয়ার ছবি আপলোড দিয়েছে। আর সবাই শুধু আমাদের ক্লাসের লিডার মানে রিমিকে মেনশন দিচ্ছে কারণ ও সায়ান স্যার এর উপরে ভীষণ ক্রাশড। এক কথায় ও সায়ান স্যার এর দিওয়ানা।
আর আমি এগুলা দেখে মজা নিচ্ছি। তখনি হোয়াটসঅ্যাপে রাদিফ ভাইয়ের নাম্বার থেকে মেজেস নোটিফিকেশন আসলো,,

“এত রাতে অনলাইন এ কি তোর”??!

আমি বললাম,, নাহ এইতো আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম। কলেজের গ্রুপে কিসের নোটিফিকেশন আসলো সেটা দেখতে গেলাম।

ওপাশ থেকে রাদিফ ভাই লিখলো,
” আমার কথা অমান্য করে আবার রিকশায় গিয়েছিস কলেজে। আর সকাল বেলায় আমাকে ভেংচি কেটেছিস কেন। তুই ভেবেছিলি কেউ দেখে নাই,,তাই না। এগুলার পানিশমেন্ট কেমন হবে সেটা কি আপনি জানেন “বউজান”।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে