আমার পূর্ণতা পর্ব-১০

0
901

#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ১০

তাফসির ভাইয়ের কাঁধে আমার মাথা দেখে চমকে উঠলাম। ঘুমিয়েছিলাম সিটে হেলান দিয়ে তবে এখন তাফসির ভাই কোথা থেকে আসলো বুঝলাম না। আমাকে উঠতে দেখে সরে বসলেন তাফসির ভাই। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন—

” অবশেষে তোর ঘুম ভাঙলো প্রাচু? বাবা আমার কাঁধ ব্যাথা করে দিয়েছিস। ”

” তো আপনাকে আসতে বলেছে কে আজব? আমি তো বলিনি নি যে তাফসির ভাই আসুন আপনার কাধেঁ মাথা রাখতে দিয়ে আমাকে একটু ধন্য করুন।”

আমার কথা শুনে উনি অবাক হওয়ার ভান করে বললেন—

” তুই এমন চোখ উল্টি দিচ্ছিস কেনো প্রাচুর্য? তুই ই না বললি আমাকে আসতে? এখন অস্বীকার করছিস কেনো?”

” কিসব বলছেন তাফসির ভাই? আমি কখন বললাম? আমি তো ঘুমিয়েছিলাম।”

” হ্যাঁ তো? আমি কি একবার ও বলেছি যে তুই জেগে ছিলি?”

” তাহলে কথা বললাম কিভাবে বলুন।”

” ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বলেছিস বোকা। এটাও বুঝিস না?”

ওনার কথায় আমি বিস্মিত হয়ে বললাম—

” আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলেছি? একদম মিথ্যা বলবেন৷ না।”

” আমি মিথ্যা বলছি কি না অন্যদের থেকে শোন।”

এতোক্ষণ পর কথাটা আমার মাথায় আসলো। আসলেই তো। এনার সাথে এতো তর্ক না করে অন্যদের কাছে শুনলেই তো হয়। তা না এতোক্ষণ যাবত গাধার মতো বকবক করেই যাচ্ছি। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি। গাড়ির কেউই জেগে নেই। আমি, তাফসির ভাই আর ড্রাইভার আঙ্কেল ছাড়া। তাই মুখ ফুলিয়ে পাশে তাকাতেই দেখি উনি মুখ টিপে হাসছেন।
.
.
.
.
প্রায় রাত ১ টায় আমরা চট্টগ্রামে গিয়ে পৌছালাম। আগ্রাবাদ ফুপ্পিদের বিল্ডিংয়ের নিচে যখন পৌছালাম তখন পুরো বিল্ডিং নিস্তব্ধ। শুধু ফুপ্পির ছেলে মাহিন দাঁড়িয়ে ছিলো আমাদের রিসিভ করার জন্য। আমাদের দেখেই তিনি হাসিমুখে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। বয়সে তিনি তাফসির ভাইয়ের থেকে বছর তিনেক বড় হবেন হয়তো। ভাইয়া আমাদের নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলেন। ভেতরে ঢুকতেই ড্রয়িংরুমে হুইল চেয়ারে বসে আছেন মধ্যবয়সী এক মহিলা। মাথার সামনের চুল আধ পাকা-কাচাঁ। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। আমাদের দেখতেই তিনি শব্দ করে কেঁদে উঠলেন। সবাইকে কাছে ডাকলেন। আমরা সবাই এগিয়ে যেতেই একে একে সবাইলে জড়িয়ে ধরতে লাগলেন। বাবা-মা রা তার ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। আমাদের তাই চিনতে অসুবিধা হলো না তাকে। তিনি আমাদের ডেকেও খুব আদর করলেন। আবির ভাইয়ার সাথে পরিচয় হলেন।
এর মধ্যে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন একটি মেয়ে। গায়ের রং ধবধবে সাদা। সাথে চুল গুলো ও সোনালী রঙের। প্রথম দেখাতেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে সে এ দেশীয় নয়। কিন্তু সব থেকে মুগ্ধকর বিষয় হলো তার গায়ে জড়ানো খাঁটি বাঙালি মেয়েদের মতো শাড়ি। সে এসেই সবাইকে সালাম দিলেন। সবাই সালামের উত্তর দিতেই মাহিন ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দিলেন তার সাথে। সম্পর্কে তিনি মাহিন ভাইয়ার স্ত্রী। নাম তার দিয়ানা। দিয়ানা অর্থাৎ যিনি সম্পর্কে আমাদের ভাবি হন তিনি আমেরিকান। মাহিন ভাইয়া আর ভাবি একই ভার্সিটি তে পড়ালেখা করতো। সেখান থেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অতপর বিয়ে।

আমাদের আলাপ পরিচয় সব শেষ হতেই নিজেদের জন্য নির্ধারিত রুমে চলে গেলাম। পেটের মধ্যে ক্ষুধায় ইদুর দৌড়াচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে চলে এলাম সবাই। টেবিলে বাহারি রকমের খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে আমাদের জন্য। তাই আর দেরি না করে খাওয়া শেষ করলাম। খাবার শেষ হতেই ক্লান্ত থাকার দরুন রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলাম।

——————

সকাল হতে না হতেই দরজায় করাঘাতে ঘুম ভেঙে গেলো প্রাচুর্যের। রিয়া কানের উপর বালিশ চাপা দিয়ে আবার শুয়ে পরলো। প্রাচুর্য বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুলতেই দেখলো মিসেস শাহানা দাড়িয়ে আছেন দরজার সামনে। প্রাচুর্য দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে জায়গা করে দিলেন মিসেস শাহানাকে ভেতরে ঢোকার জন্য। মিসেস শাহানা ভেতরে গিয়ে খাটের কোনায় গিয়ে বসলেন। প্রাচুর্য কৌতুহলী চোখে পর্যবেক্ষণ করছে মিসেস শাহানাকে। মিসেস শাহানার এমন শান্ত মনোভাব পছন্দ হলো না ঠিক তার। মিসেস শাহানা ইশারায় প্রাচুর্যকে ডাকলেন কাছে। প্রাচুর্য ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো। ততোক্ষণে রিয়া ও উঠে বসেছে। সে এখন বিছানায় বসে বসে হামি তুলছে। মিসেস শাহানা দু’জনের দিকে তাকিয়ে বললেন—

” এই রিয়া, প্রাচুর্য? ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে শোন।”

” মা তুমি কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে যে সকাল সকাল আমাদের ঘুম ভাঙাতে হলো?”

” আছে আছে। একটা নিউজ আছে। শোন এসব কথা জোরে সোরে বলা যাবে না। কাছে আয়। তার আগে দরজাটা বন্ধ করে আয়।”

মায়ের কথায় অবাক হয়ে গেলাম আমরা। ততোক্ষণে রিয়ার ঘুম পুরোপুরি উবে গিয়েছে। সে মা’য়ের ইম্পর্ট্যান্ট কথা শোনার জন্য একদম মায়ের কাছাকাছি গিয়ে বসেছে। আমি দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে উঠে গেলাম দরজা বন্ধ করতে। কেনো জানি না মায়ের কথা শোনার জন্য আমার ইন্টারেস্ট আসছে না। কিন্তু রিয়া আপুকে দেখো। কি সুন্দর কৌতুহলী মুখে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কথা টা না শুনলে সে মরেই যাবে। আমি দরজা বন্ধ করে কোলের উপর বালিশ নিয়ে বসলাম। মা আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন—

” শোন যে কথাটা বলবো তা তাফসিরকে নিয়ে।”

তাফসির ভাইয়ের কথা শুনেই আমি নড়েচড়ে বসলাম। ওনাকে নিয়ে আবার কি কথা যে মা এতো সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলছে। এবার একটু একটু কৌতুহল শুরু হতে লাগলো আমার। আমার মতো একি অবস্থা রিয়া আপুর ও। তাফসির ভাইয়ের নাম নিতে সেও সোজা হয়ে বসলো। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো—

” তাফসির ভাইকে নিয়ে আবার কি কথা ছোট মা?”

” আজকে কি হয়েছে শুনবি? তোরা তো জানিস যে আমি অনেক সকাল সকাল উঠি। তো উঠে আমি বিছানা ঠিক করছিলাম। প্রাচুর্যের বাবা তখন বাথরুমে ছিলো। তো হঠাৎ জানালা দিয়ে আমার চোখ পরলো নিচে। আর তখন কি দেখলাম জানিস?”

মায়ের কথায় আমি আর রিয়া আপু একসাথে বলে উঠলাম— ” কি?”

” দেখলাম নিচে গেটের সামনে যে রাস্তা টা আছে না? সেখানে তাফসির একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আর সব থেকে বড় কথা কি জানিস? দু’জনের মুখে হাসিঁ যেনো ধরছে না এমন অবস্থা। মেয়েটা কে ও ভালো করে দেখলাম। একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরা ছিলো। তারপর কি হলো জানিস? তারা দু’জন কথা বলতে বলতে কোথায় যেনো চলে গেলো।”

” তো তাতে কি হয়েছে মা? কথা বলতেই পারে স্বাভাবিক।”

” তুই চুপ কর। বুঝিস না কিছু। স্বাভাবিক হলে তো আর আমি এভাবে বলতাম না। আমার মনে হয় কি জানিস? তাফসির ওই মেয়ে টা কে পছন্দ করে। নাহলে যে ছেলে কোনোদিন ও কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাই নি সে কি না এতো হেঁসে হেসে কথা বলছে?”

মায়ের কথায় মাথা উপরনিচ ঝাকালো রিয়া আপু। বোঝার ভঙ্গিতে বলতো—

” তোমার সাথে আমি একমত ছোট মা। সব কথা শুনে আমার ও তাই মনে হচ্ছে যে তাফসির ভাই মেয়েটা কে পছন্দ করেছে।”

রিয়া আপুর কথায় আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলো মা। আমার দিকে তাকিয়ে বললো—

” দেখলি? এখন রিয়ার ও তাই মনে হচ্ছে। তার মানে আমার সন্দেহ মিথ্যা নয়।”

মা পুনরায় রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন—

” রিয়া মা শোন। তোকে একটা কাজ দি। যদিও কাজ টা তোর একার না। তোর সাথে আমিও আছি। পারবি তো করতে?”

” তুমি শুধু একবার বলো কাজ টা কি ছোট মা। তারপর দেখো পারি কি না।”

” তোর কাজ টা হলো তাফসিরের উপর নজর রাখা। আর এদিকে আমি মেয়েটার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। যদি সব কিছু ভালো দেখি তাইলে ধরে নে তাফসিরের বউ পেয়ে গেছি।”

তাদের কথার মাঝে বাঁধা দিলাম আমি। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম—

” সিরিয়াসলি মা? না মানে তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? শেষ পর্যন্ত কি না ঘটকালি শুরু করলে তোমরা? আমার মা-বোন হয়ে কিভাবে পারলে এসব কথা মাথায় আনতে? ব্যাপার টা কে স্বাভাবিক নাও না। ”

আমার কথায় ধমকে উঠলেন মা। চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন—

” তুই চুপচাপ বসে থাক। আমারই ভুল হয়েছে তোর সামনে কিছু বলা। রিয়াকে আলাদা ডেকে নিয়ে যদি বলতাম তাহলেই ভালো হতো। আমার পেটের মেয়ে কিনা আমার সাথে বড় বড় কথা বলছে। বেয়াদব কোথাকার। এই রিয়া যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর তোর কাজে লেগে পর।”__বলেই গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মা।

এদিকে আমি রাগে দুঃখে বোম হয়ে বসে থাকলাম। এখন তাফসির ভাইয়ের ওপর রাগ হচ্ছে আমার। কি দরকার কোনো মেয়ের সাথে এমন হাসাহাসি করে কথা বলার? উনি যদি এভবে না বলতো তাহলে তো মা দেখতো ও না আর তার জন্য আমার বকা ও খাওয়া লাগতো না। তাই রাগে পাশে থাকা রিয়া আপুর ফোন হাতে নিলাম। খুঁজে খুঁজে তাফসির ভাইয়ের আইডি তে গিয়ে মেসেজ দিলাম—

” আপনার কয়ডা লাগে তাফসির ভাই?”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে