#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৩১
,
,
,
,
,
দেখতে দেখতে বাংলাদেশে ফিরার দিন চলে এলো কালকে আহান এর মৃত্যুবার্ষিকী। এজন্য আজকে সকালের ফ্লাইটে সবাই বাংলাদেশের উদ্দেশ্য রওনা দিবে।আকাশ এর চিন্তাই মাথা খারাপ হয়ে গেছে নওশিনের সাড়ে ৮ মাস চলছে এই অবস্থায় তাকে নিয়ে জার্নি করা একদম সেফ না সে জানে কিন্তু নওশিন ও নিজের জেদ ছাড়তে রাজি নেই। কালকে থেকে নওশিনের মনটা বড্ড কু ডাকছে।বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে। খুব খারাপ কিছু আচ্ছা আর কি ফিরা হবে না আকাশের নীড়ে। সে দেখতে পারবে তো তার সন্তান এর মুখ কেন এমন লাগছে তার বার বার কেনো খারাপ চিন্তা এসে হানা করছে তার মনকে।কিসের ভয়ে জর্জরিত সে।
নওশিন আনমনেই লাগেজ গুছাচ্ছিলো।আকাশ তার পিছনে দাঁড়িয়ে তার সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখছিলো।আকাশ হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করে নওশিন কে কোলে তুলে পাশে বসায় দিলো।
আকাশঃএতো যখন খারাপ লাগছে কেনো জেদ করছো দেশে যাওয়ার(নওশিনের সামনে হাটু মুরে বসে নওশিনের হাতে নিজের কপাল ঠেকিয়ে অসহায় কন্ঠে কথা টা জিজ্ঞেস করলো)
নওশিনঃজানেন আকাশ একটা মায়ের জন্য সব সন্তান সমান হয়।মায়ের মনে তাদের সন্তান দের জন্য সমান ভালোবাসা থাকে।মায়ের মুখে হাসি ফুটে সন্তানের ঠোঁটের হাসি দেখে।মায়ের মন কাদে সন্তানের অনুপস্থিতিতে। আমার সন্তান এখনো আমার হাতে আসেনি সে আমার গর্ভেও তবুও তাকে নিয়ে হাজারো জল্পনা কল্পনা আমার সে যদি অনেক সময় ধরে নড়াচড়া না করে আমার অবস্থা করুন হয়ে যায় সিজদাহ্য় লুটিয়ে পরি সন্তানের মঙ্গল কামনা করার জন্য।একটাবার ভাবেছেন যে সন্তান আমার বুকে আসেনি তার জন্য আমার মন কাদে আর আহান ভাইয়া তো ১৮ বছর মামনির বুকে ছিলো ওই মায়ের কেমন লাগে যখন তার দুই সন্তান চোখের সামনে থাকে কিন্তু তার আরেকসন্তান কে চোখের দেখাও দেখতে পায়না এটাও জানেনা কবরে তার সন্তান টা কেমন আছে। মামনির চোখ মুখ দেখেছেন রোজ সকালে কেমন ফুলে থাকে। ওই মায়ের জন্য এতোটুকু না করতে পারলে যে শান্তি হবেনা আমার আকাশ।আমি এই বোঝা কোন দিন ও নিজের মন থেকে নামাতে পারবোনা
আকাশ স্তব্ধ হয়ে গেলো নওশিনের কথায় সে তো এই ভাবে ভেবেই দেখেনি একটাবার মা কে বুকে আগলে তাকে বলা হয়নি আহান নেই তো কি হয়েছে আমি আছি না। আকাশ নওশিনের কোলে মুখ গুজে দিলো নওশিন ও নরম হাত টা আকাশের চুলে গলিয়ে দিলো।
দরজার আড়াল থেকে মিসেস নিলিমা সরে গেলেন শাড়ির আচল মুখে গুজে। সে বলতে এসেছিলো প্যাকিং কতোদূর। মিসেস নিলিমা মনে করেছিলেন হয়তো নওশিন নিজের সন্তানের সেফটির জন্য আকাশ কে বারণ করবে বাংলাদেশে যেতে কিন্তু তিনি বুঝতেই পারেন নি তার মনের কথা নওশিন না বলেই বুঝতে পেরে গেছে।হয়তো মা হচ্ছে তাই তো এখন থেকে সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা টা টের পাচ্ছে।
_______
বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতেই সবার মন প্রান জুরিয়ে গেলো হাজার হোক জন্মভূমি। এতো মাস দূরে ছিলো। আকাশ গাড়ি ডেকেছিলো বটে কিন্তু গাড়িতে না উঠে ক্যাব বুক করে।গাড়িদের এক রাস্তায় পাঠায় দিয়ে অন্য রাস্তা নেয় তারা।কেউ কোন প্রশ্ন করতে যেয়েও করে না সবাই বাড়ি না যেয়ে হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে কবর জিয়ারত করতে যায়।
আসাদুজ্জামানঃওরা গাড়িতে ছিলোনা মানে কি হ্যা মানে কি। ওরা গাড়িতে না থাকলে কই থাকবে ৩০ মিনিটের মধ্যে ওদের লোকেশান ট্রাক করে আমাকে জানাবি
আসাদুজ্জামান রাগে হাতের ফোন আছাড় মারে
মহিলাঃকি হয়েছে ভাইয়া
আসাদুজ্জামানঃওই আকাশ চালাকি করে গাড়িতে না যেয়ে অন্য কিছুতে গেছে আবার বাড়িতেও যায়নি কই গেছে পাওয়া যাচ্ছেনা
মহিলাঃওরা হয়তো আহান এর কবর জিয়ারত করতে গেছে।
আসাদুজ্জামানঃঠিক বলেছিস চল(আসাদুজ্জামান বের হতে নিলেই তার ফোন বেজে উঠে।ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই অপর পাশের ব্যাক্তির কথা শুনে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে উনার মুখে)এবার কি করবি আকাশ চৌধুরী তোর প্রান এখন আমার কবজায়।
মিসেস নিলিমা দূর থেকে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে রামিসা আর আরু দুইজন দুই দিক দিয়ে তাকে ধরে রেখেছে। আকাশ আরিয়ান আর ঈশান আহানের কবর জিয়ারত করছে।নওশিন এর শরীর ট্রেভেল সহ্য করতে না পেরে এলিয়ে গেছে তাই তাকে হোটেলে রেখে এসেছে আকাশ না আসতে চাইলেও নওশিনের জোড়াজুড়িতে আসতে হয়েছে।
আকাশঃএমন কেন মনে হচ্ছে মায়াবতী ঠিক আছে তো(ফোন নিয়ে বার বার নওশিনের নাম্বার ট্রাই করতে করতে)
ঈশানঃভাই চল হোটেলে ফিরে যায়
আকাশঃকি হয়েছে তোর এমন অস্থির লাগছে কেন
ঈশানঃজানিনা ভাই মনে হচ্ছে নওশিন ভালো নেই চল
আকাশঃআমার ও তো একই ফিল হচ্ছে আল্লাহ আমার মায়াবতীকে ঠিক রেখো ওর কিছু হয়ে গেলে আমি বাচতে পারবোনা আল্লাহ
সবাই দ্রুত ক্যাবে উঠে রওনা দেয়। মাঝ রাস্তায় আসতেই ক্যাব দাড়ায় পরে। আকাশের একেই চিন্তাই অস্থির তার উপর হঠাৎ ব্রেক কষায় তার উপরে এভাবে ব্রেক কষায়ে রাগ টা বেড়ে যায়।
আকাশঃহোয়াট নোনসেন্স এই ভাবে গাড়ি ব্রেক করার মানে কি(ড্রাইভার এর কলার চেপে ধরে)
ড্রাইভারঃস্যার মাঝরাস্তায় একটা গর্ভবতী মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে
আকাশ এর হাত ঠান্ডা হয়ে আসলো মস্তিষ্ক যেনো মহূর্তে ফাকা হয়ে গেলো।গায়ের সমস্ত জোড় নিমিষেই হারায় গেলো।আকাশ কোন মতে নিজেকে সামলে ক্যাব থেকে বের হয়ে আসলো বাকিরা অন্য রাস্তা দিয়ে গেছে এটা শর্টকাট বলে আকাশ এই রাস্তা নিয়েছে।ক্যাব থেকে বের হয়ে কাপা কাপা পায়ে সামনের দিকে এগুতে থাকে মেয়েটার মুখের উপর চুল থাকায় মুখ না দেখা গেলেও আকাশের চিন্তে বাকি রইলোনা এটা তার মায়াবতী তার ছোয়া রানী আকাশের ছোয়া। আকাশ হাটু ভেংগে বসে পরলো তার পা টা অচল হয়ে পরেছে।
ড্রাইভার নামতে যাবে এমন সময় আকাশের ফোনে কল আসে আকাশ যেহেতু ক্যাবে বসে নওশিনের নাম্বার ট্রাই করছিলো হঠাৎ ড্রাইভারের ব্রেক করায় ফোন টা পরে যায়।ড্রাইভার দোনমোন করে ফোন টা রিসিভ করে।ঈশান এর ফোন। ড্রাইভার সব বলে ঈশান কে ঈশানের খটকা লাগে সে ড্রাইভার কে বলে মেয়েদের হোটেলে পাঠায় দিয়ে গার্ড আর আরিয়ান কে নিয়ে ছুটে অর্ধেক এর বেশি গার্ড মেয়েদের সাথে পাঠায় দেয়।
আকাশ কাপা কাপা হাতে নওশিনের মুখের উপর থেকে চুল সরাতে নিলেই মোটা বাশ দিয়ে বাড়ি মারে আকাশের মাথার পিছনে আকাশের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পরতে শুরু করে আকাশ খানিকটা হেলে পরে নওশিনের মুখের উপরে। চোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে নওশিনের মুখের উপর পরে। একের পর এক।আঘাতে আকাশের শরীর জর্জরিত করতে শুরু করে। আকাশ এর শরির এতোটাই অবশ হয়ে আসে যে সে বিপরীতে যে আঘাত করবে সে হুশ টাও তার নেয়।
এরই মাঝে আসাদুজ্জামান সেখানে উপস্থিত হয় হাতে তার ধারালো চাকু সে চাকু দিয়ে আকাশ কে আঘাত করার আগেই একটা গুলি এসে আসাদ এর হাতে লাগে।আসাদ এর হাত থেকে চাকু পরে যায়।এরই মধ্যে আকাশের গার্ড রা আসাদুজ্জামান এর আনা গুন্ডাদের আঘাত করতে শুরু করে ঈশান আর আরিয়ান দ্রুত আকাশ আর নওশিন কে নিয়ে হস্পিটালে এডমিট করে দেয়।
আজ ২ দিন পরে আকাশের জ্ঞান ফিরে। আকাশের জ্ঞান ফিরতেই সবার আগে তার মুখে একই কথা ছিলো কোথায় তার মায়বতী সে তার মায়াবতীকে চায়।সবার চোখে তখন পানি দেখে আতকে উঠেছিলো সে। তাহলে কি ঘটে গেছে অঘটন। আকাশের ছোয়া কি আকাশের ছোয়া থেকে বহুদূরে চলে গেছিলো।
চলবে!