আমার তুমি পর্ব-২৮

0
1617

#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৮
,
,
,
,
দিন কিভাবে ফুরিয়ে যায় জানাই যায় না। সময় আসলেই কারো হাতে থাকেনা। এটা বহমান।লন্ডনের আকাশ টাও ১৫ দিনে পরিবর্তন হয়েছে অনেক টুকু।লন্ডনের আকাশের বুক ফেটে গরিয়ে পরছে বৃষ্টি।শুধু লন্ডনে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়নি পরবর্তন হয়েছে ঈশান আর রামিসার সম্পর্কও। ঈশানের মনে রামিশার জন্য থাকা জায়গাটা দিন দিন বেরে চলেছে। রামিসা তার কথা রেখেছে সে পেরেছে ঈশানের জীবনে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করতে। কিন্তু সেটা এখনো রামিসাকে বলেনি ঈশান। রামিশা কি বলবে সে নিজেই তো এখন মুখামুখি হয়নি নিজের মনের কথার সাথে।তাইতো এখনো রামিসাকে বলে উঠতে পারেনি #আমার_তুমি।

আজ সবাই মিলে ঠিক করেছে সবাই ঘুররে যাবে। যেটা ভাবা সেটা কাজ সবাই রেডি হয়ে নেয়।নীহারিকা প্রথমে নাকচ করলেও পরে রামিসার জোড়াজুড়িতে যেতে রাজি হয়েছে।সবাই মিনি মাইক্রোতে চরে বসে। সবাই পৌছে যায় লন্ডনের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গায় এটি বেশ পরিচিত। লন্ডন এলে এখানে আসতেই হবে। হাইড পার্ক লন্ডনের বৃহত্তম রওয়্যাল পার্ক। চারদিকে সারি সারি বিশাল আকারের গাছ, বড় মাঠ, পার্কে বসার স্থান সব মিলিয়ে একটি দারুণ জায়গা।নওশিন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সব কিছু দেখছে।উত্তেজনায় নওশিন সবাইকে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়। আকাশ ও নওশিনের পিছনে দৌড় দেয়। নীহারিকা ওদের পিছনেই ছিলো আকাশ এর ছুটে যাওয়া নওশিনের পিছনে তার বুকের মাঝে ঝড় তুলে দিলো।আকাশ যখন ছুটে গিয়ে নওশিনের হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় বন্ধি করে নিজের বুকের দিকে টেনে নিলো সেটা দেখে নীহারিকার ভিতরটাই অদ্ভুদ যন্ত্রণা সৃষ্টি করছে নীহারিকার হাত টা ওর বুকের বা পাশ টাই চলে গেলো চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো দুই ফোটা পানি। তারাহুরো করে নিজের চোখ মুছে অন্য দিকে চলে গেলো।

আকাশঃএই মেয়ে এখন ই হোচট খেয়ে পড়তা মাথায় কমন সেন্স নাই এখন তুমি একা নাই তোমার মাঝে আরও একটা প্রান বেরে উঠছে এতোটা কেয়ারলেস কেন তুমি হ্যা এখন যদি না ধরতাম কি অবস্থা হতো আইডিয়া আছে স্টুপিড একটা(রেগে ধমক দিয়ে)

নওশিন মাথা নিচু করে ফেলে।এই ভাবে বকার কি আছে আশেপাশের সৌন্দর্য টা এতোটাই মন কারা ছিলো সে পারেনি নিজেকে আটকে রাখতে তাই তো ছুট দিয়েছিলো।তাই বলে লোকটা এইভাবে বকবে একটু ভালোবেসে বুঝালে কি হতো। (মুখ গোমড়া করে)

নওশিন মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে চলে যায় বুকটা তার অভিমানে জর্জরিত হয়ে গেছে সে জানে সে পারবেনা এই লোকটার থেকে বেশিক্ষন নিজের জন্য অভিমান পুষে রাখতে কিন্তু তবুও সে করবে প্রচন্ড অভিমান করবে সে।।।

____
আরু এদিক ওদিক যাচ্ছে আর ছবি তুলছে বিভিন্ন এংগেলে আরিয়ান চুপচাপ তার পিছন পিছন হেটে যাচ্ছে।চোখ দুইটা তার প্রিয়সীর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসি টার দিকে।ভালোবাসার মানুষের ঠোটের হাসি টাও কেন এতোটা মুগ্ধতায় ঘিরা হয়।কেন ভালোবাসার মানুষ টাকে খালি ভালোবাসতে মন চায়। কেন বিরক্ত আসেনা তার চেহেরা দেখতে দেখতে কেন মন ভরে না তাকে হাজার ভালোবাসেও বার বার মনে হয় কোথাও একটা কমতি থেকে যাচ্ছে ভালোবাসায় আরও ভালোবাসা দিতে হবে ।।

আরিয়ান এইসব ভাবছিলো এমন সময় তার ফোনে টুং করে নোটিফিকেশন বেজে উঠে।ডাটা ওন থাকায় ফেসবুকের নোটিফিকেশন এসেছে।আরিয়ান ভ্রু কুচকে ফোন ওন করে নোটিফিকেশন ক্লিয়ার করতে যেতেই ভুলে ক্লিক লেগে যায়। আর তাতেই তার শান্ত চোখ জোড়া অশান্ত হয়ে যায়।পায়ের গতি দ্রুত করে আরুর হাত থেকে ফোন নিয়ে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ফোন দুইটা কে দুই খন্ড করে দেয়।।

আরু হতবাক হয়ে যায় মহূর্তের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতে তার খানিকটা বেগ পেতে হলো। আর বুঝতে পেরেই চিৎকার দিয়ে কেদে দিলো

আরুঃএএএএএ আমার ফোন এ কি করলা তুমি আমার সব ছবি জানো ১০ হাজারের উপরে ছিলো আমার কালেকশান
আরিয়ানঃকালেকশান মাই ফুট তোকে এতো সাহস কে দিয়েছে হ্যা নিজের ছবি ফেসবুকে আপ দেওয়ার কতোশত ছেলে লাইক দিয়েছে মাত্র ৮ মিনিটে ৩০০ টা লাইক পরেছে তাও আবার শুধু ছেলের। হ্যা তুই ফেসবুকের এতো ছেলের সাথে পরিচয় বাহ বাহ
আরুঃআরে ধুর এতো ছেলে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে বলে কি আমি তাদের কে চিনি নাকি আমার আইডি পাবলিক করা যার দরুন এই অবস্থা তাই বলে তুমি আমার এতো সাধের ফোনটাকে টুকরা টুকরা করবা (ন্যাকা কান্না করে)
আরিয়ানঃচুপ একদম চুপ আর একটা কথা বললে ফোনের মতো তোকেও ভাংবো বলে দিলাম ইডিয়াট একটা

রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো।আরু অসহায় ফেস নিয়ে একবার ফোনের দিকে তো একবার আরিয়ান এর দিকে তাকায়ে ঠোঁট উলটে সেখানেই বসে পরে।।

___

ঈশানঃরামি উঠ এই রামিসা
(রামিসার গালে হালকা থাপ্পড় মেরে)

রামিসা ঘুমের মাঝেই ঈশানের হাত জোড়া নিজের হাত দিয়ে আকড়ে বুকের সাথে জড়ায়ে আবার ঘুমায় পরে।ঈশান সেটা দেখে বিরক্ত হয় আজ সকাল থেকেই তার মাথায় রাগ উঠে আছে।তার ইউএসএ তে যে বিজনেস টা তার ফ্রেন্ড দের নিয়ে শুরু করেছিলো সেটা নাকি অনেক বড় লোস ফেস করছে আর সেটা সে কালকে রাতে জানতে পেরেছে

ঈশানঃএই তোকে উঠতে বলছিনা কথা শুনিস না কেন(চিল্লিয়ে)

ঈশানের চিল্লানো শুনে ধরফরায়ে উঠে বসে রামিসা হাত পা তার কাপছে প্রচন্ড ভাবে। মাথার ভিতর ও কেমন জেনো করছে।

রামিসাঃকি হয়েছে(আসতে করে)
ঈশানঃকি হয়েছে মানে কখন থেকে ডেকে চলেছি তোকে উঠার নাম গন্ধ নেয় সমস্যা টা কি তোর হ্যা। সব সময় আমাকে বিরক্ত করা ছাড়া কোন কাজ নেই না তোর
(চিল্লিয়ে+রেগে)

রামিসার চোখ দুইটা ছোলছোল করে উঠে কষ্টে অপমানে। একে হুট করে ঘুম থেকে উঠা তার উপরে ঈশানের এমন কথার তেজ দেখে রামিসার বুক ফেটে কান্না পেলো।

ঈশানঃশুরু হয়ে গেলো ন্যাকামি একটু কিছু বললেই ম্যা ম্যা করে কান্না শুরু যতোসব অসহ্য(কথা গুলো বলেই গাড়িতে লাত্থি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়)

রামিসা ভয়ে কেপে উঠে। রামিসা ঈশানের এমন ব্যাবহারে আশ্চর্য হয়ে যায়। আচ্ছা সত্যি কি রামিসার জন্য লোকটা এতোটা বিরক্ত এতো পরিমান জ্বালাতন করে সে ঈশান কে যার কারনে তার চোখে এতোটা অসহ্য হয়ে উঠেছে রামিসা।তাহলে কি রামিসা এতোদিনে ভাবতো যে ঈশানের মনে তার জন্য জায়গা তৈরি হয়েছে সেটা কি ভুল ছিলো সে ভুল ভাবতো ঈশান তো তাকে দেখতেও পারেনা তার জ্বালায় অতিষ্ঠ সে।

কথা গুলো ভাবতেই রামিসার বুকটা দুমরে মুচড়ে যায়। ভালোবাসার মানুষ টার চোখে নিজের জন্য বিরক্তি অসহ্য রাগ অবহেলা দেখাটা যে কতোটা কষ্টে সেটা রামিসা হারে হারে টের পাচ্ছে এই সময়।।।

নওশিন আরু যেখানে বসে ছিলো সেখানে আসে।আরুকে ওই ভানে মাটিতে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকায় নওশিন
নওশিনঃকি রে চাশমিস তুই এইখানে বসে আছিস কেনো মুখটা ওতো সুন্দর করে(বিরক্তিক্ল্র সুরে)

আরু যেনো এতোক্ষন এই প্রশ্নের ই অপেক্ষায় ছিলো নওশিনের প্রশ্ন করতে দেরি হলেও আরুর ঠোট উলটে কান্না করতে দেরি হলোনা। ব্যাস নওশিন বুঝে গেলো আরুর ভাংগা টেপ রেকর্ডার এই মুহূর্তে শুরু হতে চলেছে তাই সেও চুপচাপ আরুর পাশে বসে পরলো ততোক্ষণে রামিসার মুখটা কালো করে নওশিনের পাশে বসে পরে ওর কাধে মাথা রেখে

আরু কেদে কেটে সব বলে। সব শুনে রামিসা আর নওশিন কিছু ক্ষন গম্ভির মুখ করে রাখলেও পরক্ষণে দম ফাটা হাসিতে মেতে উঠে একে অন্যের গায়ে ঢোল খেয়ে পরে যেতে শুরু করে। আরু সেটা দেখে ঠোট উলটে ন্যাকা কান্না করতে শুরু করে।।।।

এরই মধ্যে সেখানে ৩ জন ছেলে এসে উপস্থিত হয়।সবার আগে আরুর চোখ যায় আরুর চোখের ইশারায় নওশিন আর রামিসাও তাকায়

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে