আমার তুমি পর্ব-১৭

0
1830

#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৭
,
,
,
,
,
নওশিন ঘুম থেকে উঠতেই চোখের সামনে আকাশ কে দেখে চমকে উঠে।নিজের চোখে ডলে সামনে তাকাতেই মাথাটা পিছিয়ে নেয় কারন আকাশ একদম নওশিনের মুখের উপরে।

নওশিনঃআ আপনি এখানে (কাপা কাপা গলায়)
আকাশঃইয়েস সুইটহার্ট আমি এখানে(স্লো ভয়েসে)

নওশিন বার বার ঢোক গিলছে একে তো হুট করে ঘুম ভেংগে গেছে তার উপরে আকাশের মুখটা নওশিনের মুখের এতোটা কাছে। সে যেনো আর সহ্য করতে পারছেনা চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে ফেলে

আকাশঃউফফ সুইটহার্ট ইউ নো না যখন তুমি এই ভাবে চোখে জোড়া বন্ধ রাখো আর বার বার ঢোক গিলো ইচ্ছা করে খেয়ে ফেলি।
(নওশিনের মুখের উপরে ফু দিয়ে)

নওশিনঃএহ লাটসাহেব আমাকে এতো দিন কান্না করায়ে আমাকে আর বেবিকে কষ্ট দিয়ে এখন এসেছে লুচ্চামি করতে দ্বারাও জানেমান এবার দেখবা নওশিন আকাশ চৌধুরী কি জিনিস হা(মনে মনে কথা গুলো বলে চোখ জোড়া খুলে)

আকাশ কে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরায়
নওশিনঃএই যে মিস্টার লুচু চৌধুরী যান আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেন খুদা লেগেছে আপনার বেবির। একা আমি কেন এর প্যারা সামলাবো যান যান তাড়াতাড়ি জান

হঠাৎ নওশিনের এরুপ আচারণে ভ্যাবাচেকা খায়ে যায় আকাশ।সে ভেবেছিলো হয়তো নওশিন চেচামেচি করবে বকবে মারবে ভাইলেন্ট হয়ে যাবে আর সে সুযোগ এ একটু আধটু রোমাঞ্চ করবে সে কিন্তু এখানে দেখি সিন ই উলটা

নওশিনঃআরে কি হলো বসে আছেন কেন যান নাকি আমার মামুর ভয়ে নড়তে পারচ্ছেন না
(হেসে উঠে নওশিন

আকাশঃচল এবার বউ এর সেবা কর এই ছিলো কপালে নিরামিষ বউ হলে যা হয়(নিজের কপাল নিজে চাপড়ে রুম থেকে বের হয় সে)

নওশিনঃকি বাচ্চু কি ভাবেছিলেন আমি বুঝিনা আপনি কি চান আমি এখন হাইপার হয় আর আপনি সেটার সুযোগ নেন বাট আমি তো সেটা করবোনা উহু নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো দেখে নিয়েন (ভাব নিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে)

বেবি তুমি কি মাম্মাম এর উপর রাগ করছো হুম।প্লিজ রাগ করোনা প্রিন্সেস টা। বেশিদিন দূরে রাখবোনা তোমাকে তোমার বাবাই এর থেকে

আকাশঃসুইটহার্ট সুইটহার্ট এই নেও তোমার খাবার তোমার ফেবরেট চিকেট আর কাচ্চি(নওশিনের সামনে প্লেট রেখে)

নওশিন সেটা দেখে নাক কুচকায়।নওশিনঃনাহ আমি এগুলো খাবোনা কেমন গন্ধ (নাক চেপে ধরে)

আকাশের ভ্রু কুচকে চায় মেয়ে বলে কি কাচ্চি পাগল মেয়ে নাকি কাচ্চির গন্ধ সহ্য করতে পারছেনা।
আকাশঃতাহলে কি খাবা(ভ্রু কুচকে)
নওশিনঃকিছু ইয়াম্মি ইয়াম্মি উমম ডাল সাথে মুরগির মাংস ভুনা আর গরম গরম ভাত
আকাশঃএই রাতে এগুলো কই পাবো(অসহায় কন্ঠে)
নওশিনঃআমি জানিনা মানিনা শুনিনা আমি খাবো খাবো খাবো নাহলে আমি আর বেবি রাগ করবো।বেবিও বলবে পচা বাবাই আমাদের ভুক্কি(খুদা) লেগেছে আর বাবাই বাহান করছে।
আকাশঃআরে বাবা বাহানা কই করলাম। আমি রান্না পারি নাকি আর তোমার যা মামা মনে হয়না কোন স্টাফ কে দিয়ে বানায় দিবে আর সব রেস্টুরেন্ট ও বন্ধ (অসহায় হয়ে)
নওশিনঃআকাশ চৌধুরী দা সাইকো যে কিনা এতোদিনে কতো গুলো মার্ডার করেছে কতো ভয়াবহ কাজ বিনা ভয়ে করে ফেলেছে সে কিনা নিজের বউ আর বাচ্চার এতো ছোট একটা দাবি মানতে পারবেনা(অভিমানী কন্ঠে)

আকাশ তো মার্ডার এর কথা শুনে ভয় পায়ে গেছিলো যে নওশিন এগুলো যানলো কি করে। পরে ভাবলো আগে বউ এর পেটে থাকা ইদুর কে শান্ত করি তারপরে সব জানা যাবে।

আকাশ যেতেই নওশিন হেসে উঠলো। নওশিনঃবেবি আপনার বাবাই আর আজ রাতের মাঝে ফিরবে না চলো কাচ্চি খাওয়া যাক

নওশিন কাচ্চি অর্ধেক খেয়ে হাড্ডি চিবুচ্ছিলো এমন সময় দেখে আকাশ হাতে করে ধোয়া উঠা ভাত ডাল আর আরেকটা বাটি নিয়ে ঢুকছে নিশ্চয় সেটাতে মুরগী আছে।আকাশ ভ্রু কুচকে তাকালো নওশিনের দিকে।

সব কিছু টি টেবিলের উপরে রেখে নওশিনের পাশে বসে নওশিনের মাথায় হাত বুলায়ে ঠোটের পাশে লেগে থাকা খাবার মুছে দেয়।

আকাশঃকই দিন পরে বাচ্চার মা হবা আর এখনো বাচ্চামো গেলোনা খাওয়াই শিক্ষলে না। (কপালে কিস করে)

______

আরুশিঃতোমার কাজ হয়নি(শোয়া থেকে উঠে)
আরিয়ানঃনাহ আরেকটু কাজ বাকি আছে তোকে ঘুমাতে বললাম না(ল্যাপটপের দিকে নজর দিয়ে)
আরুশিঃআজকাল একটু বেশিই ব্যাস্ততা দেখাচ্ছোনা (অভিমানী কন্ঠে)
আরিয়ানঃআরু ঘুমিয়ে পর জ্বালাস না কালকে অনেক ইম্পোর্টেন্ট সার্জারি আছে।
আরুশিঃহুম।

আরুশি না ঘুমিয়ে উঠে ছাদে চলে যায়। চোখ দিয়ে তার অশ্রু গুলো বিনা অনুমতিতে গরিয়ে পরছে। প্রিয় মানুষ গুলোর একটু অবহেলাও এক পাহাড় সমান পিরা দেয়।আরুশি জানে আরিয়ান ব্যাস্ত তবুও তার অভিমান হচ্ছে সারাদিন হস্পিটালে নাহয় নওশিন কে খুজতে চলে যায় এই রাত টুকুই তো পায় সে আরিয়ান কে একান্ত ভাবে সে টাইমেও যদি আরিয়ান ব্যাস্ততা দেখায় তাহলে খারাপ লাগা টা কি জায়েজ না

আরুশিঃচলে যাবো আমি এখান থেকে জোড় করেই তো বিয়ে করেছিলাম আরিয়ান তো কাউকে জানাতেই রাজি ছিলোনা আমাদের কথা আমিই জানিয়েছি বিয়েটা করার জন্য তাড়াহুড়োও আমিই করেছি । তাহলে মুক্তিটাও আমি দিবো(চোখের পানি মুছে পিছনে ঘুরতেই আরুশির মাথা যেয়ে বাড়ি খায় শক্ত কারো বুকে)

আরুশি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে আরিয়ান।চোখ দুইটা অগ্নিরুপ ধারণ করেছে।উজ্জ্বল শ্যামলা মুখটা লাল হয়ে উঠেছে।

আরুশি ভয়ে ভয়ে পিছাতে লাগে।আরিয়ান আরুর কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে আনে। এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে আরেক হাত চুল শক্ত করে আকড়ে ধরে

আরিয়ানঃকি যেনো বলছিলি মুক্তি দিবি তাই না তো কিভাবে মুক্তি দিবি আমি তো তোকে ডিভোর্স দিবোনা আর না তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো তাহলে।উম তাহলে তোর কাছে একটা উপায় আছে সেটা হলো মৃত্যু (চুলের মুঠ টা শক্ত করে আরুর মুখটা নিজের মুখের আরও কাছে নিয়ে আসে।)

আরুশিঃঠিক আছে আপনার শান্তি যদি আমার মৃত্যু তেই হয় তাহলে মরণ শ্রেয়(অভিমানী কন্ঠে)
আরিয়ানঃবাহ মুখে দেখি ক্ষয় ফুটেছে মরার খুব শখ না আজকে সারারাত মৃত্যু যন্ত্রণায় তোকে ভোগাবো

(বলেই আরুকে কলে তুলে নেয়)

_______

তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশিই
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বুঝায় ভালোবাসিই
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সে রঙ দিয়ে তোমাকেই আকি
আর কিভাবে বোঝায় ভালোবাসিই,,,

ঈশান গান টা গেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখের কোণা বেয়ে এক ফোটা অশ্রু গরিয়ে পরে।দরজার বাহিরে রামিসা দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখেও পানি।পড়ছিলো সে ঘুমুতে যাবে এমন সময় ঈশানের গলার আওয়াজ পেয়ে এক পা এক পা করে তার রুমের দিকে আগায়।

রামিসা বুঝতে পারে এই গানে কতোটা কষ্ট মিশে ছিলো।রামিসাও এই কয়েক দিনে ঈশান কে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু ঈশান কে জানানোর মতো সাহস হয়নি তার।

হঠাৎ রামিসার চোখ যায় ঈশানের হাতে রক্ত। তার বুঝতে বাকি থাকেনা যে গিটার বাজাতে যেতে হাত কেটে ফেলেছে।রামিসা ফার্স্ট এড বক্স নিয়ে এসে ঈশানের পাশে হাটু মুড়ে বসে।

রামিসার চোখ দিয়ে পানি গরাচ্ছে।ঈশান ওর দিকে তাকায়না।রামিসা ঈশানের হাত নিজের হাতে নিয়ে স্যাভলোন দিয়ে ক্ষত জায়গাটা পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো

ঈশানঃএই সামান্য কাটাতে আমার কিছু হয়না রে। তার চেয়ে বেশি কষ্ট এই বুকে জমে আছে(বুকের বাম।পাশ টাই হাত দিয়ে দেখায়ে)

রামিসাঃবিশ্বাস করো ঈশান ভাইয়া যদি আমার সে সার্ধ থাকতো সত্যি বলছি নিজের জান দিয়ে হলেও তোমার কষ্ট দূর করে দিতাম একে বারের জন্য।(মনে মনে)

রামিসা ঈশানের হাতে একমনে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিলো। হঠাৎ করে ঈশানের কথা শুনে থমকে যায়।।।।

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে