#আমার_তুমি
#পর্ব_১২[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে পাশে তাকিয়ে থমকে গেলো। আবার তড়িঘড়ি করে চোখ নামিয়ে মাথা নুইয়ে নেয়।
তার ঠিক ডান পাশে সাদনান বসা খুব নরমাল সাজ শুধু সাদা একটা পাঞ্জাবি পরিহিত।
প্রিয়তার ছোট মন তখন নানা প্রশ্ন আওড়াতে ব্যস্ত।
আচ্ছা তিনি কি বিয়ে করতে এসছে?
ওনার সাথে কি তবে আমার বিয়ে?
-“মা বলো কবুল।”
কাজির ডাকে সম্মতি ফিরে প্রিয়তার একবার মিতা সওদাগর একবার ভাইয়ের দিকে সবার দিকে তাকাতেই সবাই ইশারায় “কবুল” বলতে বলে।
প্রিয়তা পেছেনে দাঁড়িয়ে থাকা সারা হাত টা শক্ত করে ধরে পর পর তিনবার কবুল বলে দেয়।
সাদনানও বলে তবে খুব স্বাভাবিক ভাবে।
কোনো তারাহুরো নয় আবার দেরীও নয়।
কিন্তু রাহান পেছন থেকে ঠিক খুঁচা মেরেছে।
রাহাত আর আয়নার বিয়ে প্রথম হয়েছে। আর প্রিয়তা দেরী করছিল বলে আয়ান আনতে গিয়ে ছিল।
বিয়ে শেষ করে সব ঝামেলা নিয়ম কানুন পালন করে প্রিয়তা আর আয়না কে বিদায় দেওয়া হলো।
কিন্তু সাদনান সে গাড়ি দিয়ে যাবে না।
সে তার দলের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ছেলে কে বাইক নিয়ে আসতে বলে।
এতে আর কেউ দ্বিধা মত পোষণ করে নি।
আয়না আর রাহাত কে নিয়ে তিন টা গাড়ি সহ সব আত্মীয় স্বজনরা চলে যায়।
শুধু রাহান আর চার পাঁচ জন ছেলে রেখে দিয়েছে।
ওহ হ্যাঁ সাদনান সারা কেও সাথে রেখে দিয়েছে।
অতঃপর সারা ভারি লেহেঙ্গা নিয়ে রাহানের পেছন উঠে বসে। সারা বেশ অনেক টা দূরত্ব রেখেই বসেছে বাইকে।
রাহানের মুখ হুতুমপেঁচার মতো করে রেখেছে।
ইস তারও ইচ্ছে করে সাদনানের মতো বিয়ে করে নিতে আর তারই বোন কে।
কিন্তু সাদনান জানতে পারলে কি করে আল্লাহ মালুম।
রাহান আঁড়চোখে একবার বাইকে মিররে দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে সারা কে বলে উঠে
-“আমার কোনো ছুঁয়াছুঁয়ি রোগ নেই।
ধরে বসো নয়তো ধপাস করে পরলে তোমার ভাই আমার সব হাড্ডি ভেঙ্গে মাংসতে পরিণত করবে।”
সারা ফিক করে হেসে ফেলে রাহানের কথা শুনে।
রাহান চোখ বন্ধ করে আবার ঝটপট চোখ খোলে ফেলে।
এই মেয়ে এভাবে হাসে কেন?
সে কি জানে পাশে বসা সুদর্শন যুবক টার এতে বুকের বা পাশে তীব্র যন্ত্রণা হয়?
-“হেসো না পেত্নী লাগে দেখতে।”
ব্যস মূহুর্তের মধ্যে সারার মুখ মলিন হয়।
সত্যি কি সে হাসলে বাজে দেখায়?
কিন্তু মনের কথা মনে রেখেই
মুখে ভেংচি কেটে বলে উঠে
-“হ্যাঁ, আপনার থেকে ভালো দেখায়।”
এবার রাহান নিজেও হাসে।জবাব দেয় না আর।
সে খুব করে বুঝে এই মেয়ে তাকে তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে যেমন টা সে নিজে এই মেয়ে কে বাসে।
আগের দুই টা ছেলে বাইক চালাচ্ছে।
আর মাঝে রাহান আর সবার পেছনে সাদনান প্রিয়তা।
প্রিয়তা আগের ন্যায় মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।
সে রেগে আছে না খুশি না-কি অভিমান সাদনান বুঝতে পারলো না।
আর বেশি বুঝেতেও চাইলো না।
সবাই ওদের থেকে বেশ অনেক টা সামনে হওয়াতে।
সাদনান প্রিয়তা কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে
-“বিয়ে করেছি কি এভাবে আগের মতো মাঝে ভারত বাংলাদেশ বর্ডার দিয়ে রাখার জন্য?
চুপ চাপ শক্ত করে জড়িয়ে ধরো মেয়ে।
নয়তো ধাক্কা দিয়ে এখানেই ফেলে রেখে চলে যাবে।”
প্রিয়তা সাদনানের এরূপ কথায় একটু ভয় পেলো।
সত্যি ফেলে দিতে পারে বিশ্বাস নেই।
তাই নিজের ছোট ছোট হাত জোড়া দিয়ে সাদনান কে শক্ত করে আলিঙ্গন করতে চাইলো।
তবে সাদনানের এমন লম্বা চওড়া পেটানো বলিষ্ঠ শরীরে প্রিয়তার হাতের বাঁধনে কিছুতেই আসে না।
তাই যতটুকু সম্ভব ততটাই আঁকড়ে ধরে।
সাদনান মুচকি হাসে।
বউ তার বড্ড ছোট।
আর এখন এটা কে লালন পালন করে বড় করতে হবে।
কিন্তু ভালোবাসা এক ফোঁটাও এদিক সে দিক হবে না। এটা আজ রাত থেকেই শুরু হবে।
সওদাগর বাড়ি পরে আগে মির্জা বাড়ি মির্জা বাড়ি থেকে সওদাগর বাড়ি হেঁটে গেলে লাগবে হয়তো দশ বারো মিনিট আর গাড়ি বা বাইকে গেলে লাগবে তিন চার মিনিট কিন্তু আজ যেনো রাস্তা ফুরচ্ছে না।
আর সাদনান সে তো সাইকেল এর গতিতে বাইক চালাচ্ছে।
প্রিয়তা ভালো লাগছে তবে মনে মনে বেশ ভয়ে আছে।
আগে যাওয়া আসা আর আজকের মাঝে ভীষণ পার্থক্য।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই তিন টা বাইক এসে মির্জা বাড়ির গেইট -এ থামে আর ভেতর হতে গেইট খোলে দেয় দুই জন দারোয়ান।
আগে সাদনান প্রবেশ করে তার পর রাহান আর দুই টা ছেলে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
———–
আয়না, প্রিয়তা দুই বোন কেই বসিয়ে রাখা হয়েছে লিভিং রুমে।
আর চার দিক হতে মানুষ জন তাদের ভিড় জমিয়ে দেখতে এসছে।
বিয়ের দিন বউ দেখতে যাওয়া টা যেমন লোকের ভালো লাগে ঠিক তেমন যেই বউ টা কে দেখতে যাওয়া হয় সেই নতুন বউ জানে এই বিষয় টা কত টা অস্বস্তিকর।
তাই তো সালেহা বেগম আর আম্বিয়া মির্জা সারা, আর মাইশা কে বলে যাতে দুই নাত বউ কে রুমে নিয়ে যেতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা তখন সাত টার কোঠা ছাড়িয়েছ।
প্রিয়তা এসছে আধঘণ্টা হবে।
সাদনানের মা বড় ছেলে বউ কে আগেই বরণ করে বাড়ি তে তুলেছে।
তার পর প্রিয়তা সাদনান কে।
কিন্তু বরণ শেষ সাদনান এক মিনিটও অপেক্ষা করে নি।
মাকে কিছু ইশারা করে রুমে চলে গিয়েছে। তার পর ফ্রেশ হয়ে একটু আগে বেরিয়ে গেছে বাড়ি হতে।
তাই সালেহা বেগম শাশুড়ী কে বুঝিয়ে টুঝিয়ে ছেলে বউদের রুমে পাঠিয়েছে।
তিনি ছেলের ইশারা বুঝতে পেরেছে।
ছেলের বউ তার ভীষণ ছোট। আর এই বয়সে বিয়ে তার উপর এতো মানুষের ভীড়ে মেয়ে টার অস্বস্তি হওয়া টাই স্বাভাবিক।
—————
সারা, মাইশা দুজনে মিলে দুই বোন কে দুই টা শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে।
বিয়ের সাজ একদম ধুয়ে মুছে ছাফ করে দিয়েছে।
এ-র মধ্যে প্রিয়তা একবারও কারোর সঙ্গে কথা বলে নি।
সারা দুই এক বার কিছু বলতে গিয়েও বলে নি।
কি দরকার নিজের সাফাই গাওয়ার।
তার ভাই সব ঝামেলা বাধিয়েছে তার ভাইয়ে খুলে দিবে সে নিশ্চিত।
আর একবার যদি সাদনান প্রিয়তার রাগ অভিমান যাই হোক ভেঙে দিতে পারে তবে নিশ্চিত প্রিয়তা সারা কে বাসর ঘরের কাহিনি বলতেও হয়তো দ্বিধা করবে না।
না করবে হয়তো লজ্জাও পাবে।
সারার ভাবতে ভাবতে প্রিয়তার চুল বেধে দিচ্ছিল।
কিন্তু দরজায় কড়া নড়ার শব্দে ভাবনার সুতু ছিঁড়ে।
মাইশা গিয়ে দরজা খোলতেই দুইজন কাজের লোক ঘরে প্রবেশ করে হাতে তাদের থালা ভর্তি খাবার।
সালেহা বেগম পাঠিয়েছে জানালো তারা।
বাড়িতে তো খেতে পারে নি আর আজ প্রথম এই বাড়িতে এক সাথে বসে সবার সমানে বসে খেতে অস্বস্তি হবে সে সব ভেবে তিনি খাবার পাঠিয়েছে। যদিও শফিক সওদাগর,আর আজ্জম মির্জা বন্ধু হাওয়ার সুবাধে আগে অনেক বার এই বাড়িতে ভিন্ন সময় ঈদ,বা নানা অনুষ্ঠানে এসছে আর এক সাথে বসে খাবার খেয়েছে। তবে আজ ভিন্ন আর সাথে আছে বাড়ি ভর্তি মেহমান।
সারা আয়নার খাবার থালাসহ ওকে রাহাতের রুমে দিয়ে আসে।
আর মাইশা প্রিয়তা কে সাদনানের রুমে।
ওরা এতোক্ষণ মাইশার রুমে ছিল।
———–
-“এই কাজ টা বোকামি হয়ে গেলো।”
-“ভালোবাসি আমি ওকে।
আর আপনার এতো আপত্তি থাকলে নমিনেশন দিতে হবে না আমাকে।”
ওয়াসিফ দেওয়ান এর কথা শুনে সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়।
ওয়াসিফ দেওয়ান আবারও বোঝানোর স্বরে বলে উঠে
-“আহ,রেগে যাচ্ছো কেন?
আমি বলতে চাইছি বিপক্ষ দলের লোকেরা এটা জানতে পারলে ঝামেলা করবে।
তাই বিয়ে টা গোপন রাখাই মঙ্গল।”
-“তাই হবে।আর এমনিতেও আজ বিয়ে শুধু একটাই হয়েছে বলে জানে সবাই।
আমাদের বিয়ের কথা দুই পরিবার আর খুব কাছের কয়েকজন তার মধ্যে আপনি একজন।”
#চলবে……..
#আমার_তুমি
#বোনাস_পর্ব[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
সাদনান বাইক চালাচ্ছে। রাহান ওর পেছনে বসে আছে।
রাত এখন দশ টা ছুঁই ছুঁই করছে।
এই দশ মিনিট হবে তারা ওয়াসিফ দেওয়ান এর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে।
সাদনান কে বেশ ফুরফুরে লাগছে।
আগের মতো আজ অতো টা গম্ভীর নয়।
নিজে থেকে এটা সে টা জিজ্ঞেস করছে রাহান কে।
এক পর্যায় হঠাৎ করে অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসে সাদনান
-“তুই বিয়ে করবি না?”
রাহান চমকে উঠে।
কি বলবে?
নিজে তো ঠিক সতেরো ছুঁই ছুঁই একটা বাচ্চা কে বিয়ে ঠিক করে নিয়েছে।
আর এখন যদি আমি বলি তোর বোন কে করবো?
তখন নিশ্চয়ই উষ্ঠা দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দেবে।
রাহানের ভাবনার মাঝেই সাদনান আবারও জিজ্ঞেস করে উঠে
-“কি হলো বল?
না-কি কাউ কে পছন্দ করিস?”
-“হ্যাঁ, না মানে,,,,
-“হ্যাঁ, না কি তোলাচ্ছি?
এমন কিছু হলে বলে ফেল।”
-“হ্যাঁ আছে।”
-“জানা জাবে?”
-“না মানে।
আমি তোকে সময় করে দেখিয়ে দেবো ওকে।”
রাহানের কথায় সাদনান বাঁকা হেসে মনে মনে বলে উঠে
-“তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না? তবে ভুল এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া এক দেখায় মানুষের চোখ দেখে বলে দিতে পারে কে কেমন মানুষ সেখানে তুই আমার বন্ধু। রোজ রোজ তোকে দেখি আমি। ”
সাদনানের ভাবনার মাঝেই রাহান বলে উঠে
-“আমি বাড়ি চলে যাই আজ।”
-“না।
কাল সকালে একটা মিটিং আছে সেখানে যেতে হবে।
আর তুই বাড়ি গেলে কাল দশটার আগে ঘুম থেকে উঠবি না আমি ভালো করে জানি।”
কথা টা বলেই সাদনান বাইক গ্যারেজে রাখার জন্য দারোয়ানের হাতে চাবি দিয়ে রাহান কে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।
সালেহা বেগম ওদের খাবার দেয়।
সাদনান মায়ের রুম হতে ফ্রেশ হয়ে আসে।
আর রাহান রান্না ঘরে বেসিনে।
অতঃপর দুই জনে খেতে বসে পড়ে।
সাদনান তার মধ্যে মায়ের সাথে টুকটাক আলাপ সেড়ে নেয়।
তার পর মাকে বলে রুমে পাঠিয়ে দেয়।
রাত তো অনেক হলো সাদনানের জোড়া জুড়িতে সালেহা বেগম রুমে চলে যায়।
আর রান্না ঘরে দুই জন কাজের লোক আছে।
ওদের খাবার শেষ সাদনান হাত ধুয়ে টিসু দিয়ে হাত মুছে নেয়।
রাহানও সাদনান কে অনুসরণ করে।
-“গেস্ট রুমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
সেখানে হয়তো মহিলা আছে।
তুই বরং আমার সাথে আয়।”
সাদনান কথা টা বলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
আর রাহান বিস্ময় চাহনি দিয়ে বলে উঠে
-“তুই কি তোর বাসর ঘরে আমাকে পাহাড়া দিতে,,,
-“চুপ চাপ আমার সাথে আয়।”
সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
রাহান মুখে হাত দিয়ে উপর সাদনানের পেছন পেছন যেতে লাগলো।
সাদনান সোজা সারার রুমের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ে।
একটু পর এসে সারা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে।
বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে
-“কি হয়েছে ভাই?”
-“তুই মাইশার রুমে যা।
আজ রাহান থাকবে এখানে।”
সারা এতোক্ষণ চোখ কচলাচ্ছিল।
কিন্তু সাদনানের কথায় ঝট করে চোখ খোলে সাদনানের দিকে তাকিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাহান ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সারা চোখ ঘুরিয়ে মিনমিন করে বলে উঠে
-“আচ্ছা।”
সারা ফের রুমে গিয়ে ওর ওর চাদর টা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে।
সাদনান রাহান কে রুমে যেতে বলে।
সারা ততক্ষণে অনেক টা এগিয়ে গিয়েছে।
রাহান এতোক্ষণ সারা দিকে তাকিয়ে ছিল।
এই মেয়ে তাকে না মারা অব্দি শান্তি হবে না না-কি?
সাদনান ওকে রুমে যেতে বলেই নিজেও রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।
কিন্তু রাহান পেছন থেকে দুষ্ট হেসে বলে উঠে
-“ছোট মানুষ ভাই।
একটু,,,,
সাদনান পেছন ফিরতেই রাহান তড়িঘড়ি করে রুমে ঢোকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আর সাদনান মুচকি হাসে।
সব সময় খুঁচা না মারলে হয়তো বেডা রাহানের পেটের ভাত হজম হয় না।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সাদনান রুমে আসতে থমকে গেলো।
বউ তার এখনো ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় গাপটি মেরে বসে আছে। সারা ঘর বিভিন্ন রকমের ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
রাত কয় টা বাজে?
হয়তো এগারো টার কোঠা ছাড়িয়েছ।
দরজা খোলার শব্দে প্রিয়তা একটু নড়েচড়ে বসে।
ওর ঘুম চলে আসছিল কিন্তু ওকে মাইশা রুমে দিয়ে যাওয়ার পর আম্বিয়া মির্জা পইপই করে বলে দিয়ে গিয়েছে যেনো সে না ঘুমায়।
ছোট বলে কি হয়েছে।
স্বামীর জন্য বাসর ঘরে বসে অপেক্ষা করতে হয়।
আর সেই কথা ভেবেই বসে বসে ঝিমাচ্ছিল প্রিয়তা।
তবে সাদনান কে দেখে চট করে উঠে এগিয়ে আসে।
অতঃপর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গিয়ে শাড়ীতে পা বেঁধে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো। অল্পের জন্যে সাদনানের উপর পরে নি।
আর সাদনান ফিক করে হেসে ফেলে।
কিন্তু প্রিয়তা বেশ ব্যথা পেয়েছে।
সে দিকে তার খেয়াল নেই সে তো সামনে দাঁড়ানো গাঢ় নীল সার্ট পড়া সুদর্শন পুরুষ কে দেখতে ব্যস্ত।
হাসলে কি সুন্দর লাগে ওনাকে।কিন্তু এই গোমড়া মুখু সাদনান ভাই তো ভুলেও হাসে না সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকে।
-“এই মেয়ে উঠো।
নিজে কে সামলাতে পারে না।
আর সে না-কি নেবে মির্জা সাদনান শাহরিয়া সামলানোর দায়িত্ব?”
সাদনানের কথা প্রিয়তা কিছু বলে না।
মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়ায়।
সে তো এই লোকের সাথে কথাই বলবে না আজ।
কত কষ্ট পেয়েছিল কোনো ধারণা আছে ওনার?
একবার বলে দিলে কি এমন হতো?
আচ্ছা ওনি আমায় বিয়ে কেন করেছে?
-“এখনি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
সাদনানের কথা শুনে প্রিয়তা চোখ গোল গোল করে তাকায়।
মানে মনের কথ শুনে ফেলেছে নাকি?
নয়তো এই কথার মানে কি?
-“মানে?”
-“বোঝাচ্ছি।”
আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে প্রিয়তা।
যা দেখে সাদনান আরও একটু এগিয়ে আসে সার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে বলে।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ পিছিয়ে গিয়ে বিছানার সাথে লেগে ধপাস করে আবারও পরে যায়।
ও সাদনান কি নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে।
অনেক কথা বলেছে।
স্বপ্ন অনেক বার সাদনানের চাপদাড়ি ভর্তি গালে চুমু খেয়েছে।
তবে আর কিছু ভাবে নি।
সাদনান প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই ওর উপর উঠে বসে দুই হাত চেপে ধরে বিছানার সাথে।
সার্ট এর বোতাম খুলে ফেলার কারণে গলা হতে পেট পর্যন্ত উন্মুক্ত।
প্রিয়তা কতক্ষণ সে দিকে তাকিয়ে দেখে সাদনানের দিকে তাকালো।
সাদনান তার দিকেই কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
যেখানে আছে শুধু ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের মতো করে আপন করে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করা।
সাদনান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তা একটা ঢোক গিলে দৃষ্টি ঘুরায় এলোমেলো।
আজ তার ভালোবাসার মানুষটা তারই স্বামী ভাবতে খুশিতে চোখে অশ্রু হানা দেওয়ার জোগাড়।
তবে নিজে কে সামলে নিলো ছোট প্রিয়তা।
ধরে আসা গলায় আবার বলে উঠে
-“কি করছেন সাদনান ভ,,,
-“হুশ।
কোনো কথা না।
আজ আমার পালা কম জ্বালাও নি আমাকে।
সব সময় ধৈর্য্য ধরে থেকেছি।
তবে আজ আর কোনো কথা না।
আজ এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া সময়।”
প্রিয়তার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই সাদনান ফিসফিস করে বলে উঠে।
কথা শেষ করে সাদনান প্রিয়তার ঘাড়ে হাল্কা করে কামড়ে ধরে।
প্রিয়তা ব্যথাতুর শব্দ করে উঠে।
সাদনান সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় থেকে মুখ তুলে নিজের ওষ্ঠ দিয়ে প্রিয়তার ওষ্ঠ চেপে ধরে।
প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাদনান চোখ বন্ধ করেই তার ছোট জানের ভালোবাসায় মত্ত।
স্বামীর এমন এলোমেলো স্পর্শে ছোট প্রিয়তা সর্বাঙ্গে জুড়ে অন্য রকম ভালো লাগার সঞ্চারণ হলো।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদনানের বলিষ্ঠ দেহখানা। কিন্তু হাতের নাগালে আসে না সব টা। শারীরিক
স্পর্শ গুলো তখনি সুখের হয় যখন স্পর্শ গুলো ভালোবাসার মানুষটার হয়।
প্রিয়তার দশাও তাই।
নিজেও সাদনানের সঙ্গ দিলো।
সাদনান যেনো আরও উন্মাদ হলো।
কিন্তু তার বউ যে বড্ড ছোট সে দিকে তার নজর রইলো।
কিন্তু প্রিয়তার পাগলামি নিজের ভালোবাসা কোনো টার কাছেই আর পেরে না উঠে ডুবে গেলো ছোট প্রিয়তার মাঝে।
রাত তখন প্রায় তিন টা।
সাদনান তার ছোট চড়ুই জান কে বুকে আগলে শুয়ে আছে।
প্রিয়তা এতোক্ষণ ব্যথায় ছটফট করছিল।
কিন্তু একটা চিপস খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার পর একটু ঘুমিয়েছে।
সাদনান তখনো সজাগ।
একটু আগে শাওয়ার নেওয়ার ফলে দুজনের শরীর বেশ ঠান্ডা।
সাথে প্রিয়তার লম্বা চুল গুলো হালকা ভেজা।
সাদনান সব করিয়ে দিয়েছে বউ কে গোসল করা থেকে শুরু করে কাপড় ধুয়ে ব্যালকনিতে দেওয়া ব্যথার পিলও দিয়েছে।
সাদনান প্রিয়তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মাথার তালুতে একটা চুমু খেয়ে বিরবির করে বলে উঠে
-“সরি।
আমি চাই নি।
কিন্তু তুমি আমাকে পাগল করে দিলে আমার ছোট জান।
কবে বড় হবে তুমি?
আমি তো তোমাকে বড়ও হতে দিলাম না। ”
#চলবে…..