আমার তুমি পর্ব-০৭

0
1911

#আমার তুমি
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা খুব ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ হয়। রাতে শাড়ি চেঞ্জ না করেই তুলি বেলকনিতে বসে আছে। মাথায় হাজারটা চিন্তা।

“কি রে

তুলি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান।

” তুই

“তো কি তোর টাকলা বর ভেবেছিলি

” মজা করিস না প্লিজ
সায়ান তুলির পাশে বসে।

“বিয়েটা কেনো করছিস? গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে সায়ান।

” বাবা ভাই চায় তাই।

“যাকে ভালোবাসিস

‘সায়ান প্লিজ বাদ দে

” ওকে

“একটা গান শুনা

” চারবেহারার পালকি কইরা যখন গেলা সামনে দিয়া শেষ দেখাও দিলা না আমারে।
ফিরা আইসা দেখবা তুমি চইলা গেছি জগৎ ছাইরা পাইবা আমায় শুধু স্বপনে

তুমি কান্দিয়া ডাকিবা তবু না পাইবা কান্দিয়া ডাকিবা আমারে

সায়ানের গান শুনে তুলি হাসতে হাসতে শেষ।

“হাসছিস যে

” তো কি করমু এইটা কোনো গান হইলো

“তুই বুঝবি না। যখন তুই বুঝবি তখন আমি থাকবো না

তুলি সায়ানের কপালে হাত দেয়

” আর ইউ ওকে

“হুমমমম। যা ঘুমিয়ে পর

সায়ান চলে যায়।
” কি হলো ব্যাপারটা ও এভাবে হুট করে চলে গেলো কেনো?
তুলিও ফ্রেশ হতে চলে যায়।

আজ তুলির বিয়ে। একটু আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। এখন বর কোনে কে এক জায়গায় আনা হয়েছে। সামনে থাকা মানুষটা কে দেখে তুলির মাথায় রক্ত চরে যায়।

“আপনি এখানে কেনো? চোয়াল শক্ত করে বলে তুলি। জীম এবার সরু চোখে তুলির দিকে তাকায়

” বলছেন না কেনো?

চিৎকার করে বলে তুলি। আশেপাশের মানুষ জন দেখছে। তুলির ভাই তুলির কাছে আসে

“তুলি কি হয়েছে?

ভাইকে দেখে তুলি চুপ হয়ে যায়। এখানে সিনক্রিয়েট করা ঠিক হবে না। পাঁচজনে পাঁচ কথা বলবে। তাই তুলি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

রুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদছে সায়ান। চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটা অন্যের হয়ে গেলো।

সায়ান তুলির বাবা আর ভাইয়ের পা ধরে কেঁদে তুলিকে চেয়েছিলো সায়ান কিন্তু ওনারা রাজি হয় নি। কোনো মতে সায়ানের সাথে তুলির বিয়ে দেবে না। তুলি এবিষয়ে কিছু জানে না।

তুলিকে শশুর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কয়েকজন মেয়ে আর রাই তুলিকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে। তুলি কিছুখন বসে বেলকনিতে চলে যায়।

জীম রুমে এসে বিছানার দিকে তাকায় কেউ নেই। জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে এখনো তুলি আসে নি

” যেখন যাওয়ার যাক আমার কি? আমি শুয়ে পরি।

জীম বালিশ ঠিক করে শুতে যাবে তার আগেই তুলি টান দিয়ে বালিশটা নিয়ে যায়।

“এটা কি হলো?

তুলি বালিশটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

সকালে তুলি চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় পায়।

” আমি তো বেলকনিতে ঘুমিয়েছিলাম বিছানায় এলাম কি করে?

উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তুলি আরও অবাক। কারণ তুলির গায়ে কোনো গহনা নেই। নরমাল একটা শাড়ি পরে আছে।

“এটা কি করে পসিবল। আমি তো ওওওও এক মিনিট ওই লোকটা এসব করেছে। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।

তুলি রেগে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়।বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। জীম কয়েকটা মেয়ের সাথে হেসেহেসে কথা বলছে।

” তুলি মাথায় কাপড় দাও

তুলির শাশুড়ী তুলির কানে ফিসফিস করে বলে

“কেনো?

” নতুন বউ মাথায় কাপড় না দিলে লোকে কি বলবে

“কে কি বললো না বললো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আর কে বলবে তাকে আমার সামনে নিয়ে আসো

তুলি জোরে বলে। জীম ওদের কাছে আসে

” মা কি হয়েছে?

“দেখ না ও কিভাবে ঘুরছে

তুলি মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকায়

” তুলি মা যা বলছে করো।

তুলি ভেংচি কেটে রুমে চলে যায়।

রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। সকালের খাবারও খায় না। জীমের মায়ের খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে।

“কেনো যে ওকে মাথায় কাপড় দিতে বললাম। এখন তো মেয়েটা না খেয়ে থাকবে। আর ও এমন রুমে বসে থাকলে লোকে কি বলবে

” মা তোমায় হাজারবার বলেছি তুমি তুলিকে উল্টা পাল্টা কিছু বলো না। এবার তুলি না খেলে তাজ আমাকে খেয়ে ফেলবে (রাই)

“আমি দেখছি (জীম)

” তুই কিচ্ছু করতে পারবি না (জীম)

“চাপকে সোজা করে দেবো আমি। তোরা তো আদর করতে করতে মাথা তুলে রেখেছিস।

” ভাবি আমি বেরুচ্ছি ফিরতে রাত হবে।

ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ওরা। তুলি সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে কথাটা বলে। জিন্স আর শার্ট পরা। হাতে ফোন। জীম তুলির সামনে দাঁড়ায়

“হোয়াট

” কোথাও যাবে না তুমি?

তুলি একটু হেসে বলে

“মুখ বুজে আপনাকে বিয়ে করেছি বলে এটা ভাববেন না যে আমি আর পাঁচটা মেয়ের মতো আপনার কথায় উঠবো বসবো

” তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য

“আরে আমি তো আমার বাবা মায়ের কথাই শুনি না আর আপনি কোথাকার কে? পথ ছাড়ুন

” তুলললললললি

“ভয় পায় না।

তুলি জীমের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় তখন

” প্লিজ তুলি এমন করো না। বাড়ি ভর্তি মেহমান আমাদের অসম্মান হবে। তোমার শশুরমশায় কষ্ট পাবে প্লিজ

শাশুড়ীর কথায় তুলি থেমে যায়।

“জাস্ট আজকের দিনটা আপনার কথা শুনবো কাল থেকে কিন্তু শুনবো না।

জীমের মা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

” ঠিক আছে।

তুলি রুমে চলে যায়

“এই মেয়েটা এমন কেনো?

” ওর এই পরিবর্তনটার জন্য তুই দায়ী ভাইয়া

রাই চলে যায়। বেডে বসে আছে তুলি। তখন জীম আসে

“আমার ড্রেস কেনো চেঞ্জ করেছিলেন। শান্ত গলায় বলে তুলি। জীম সোফায় বসতে বসতে বলে

” বলার প্রয়োজন মনে করছি না

তুলি এবার উঠে জীমের কলার চেপে ধরে

“নেক্সট টাইম আমার গায়ে হাত দিলে হাত কেটে রেখে দিবো

জীম তুলির হাত ছাড়িয়ে তুলির হাতটা শক্ত করে ধরে বলে

” আমি চাইলে অনেক কিছু করতে পারি তুমি কিচ্ছু করতে পারবে না

“হাত ছাড়ুন

” ছাড়িয়ে নাও

তুলি হাত মুচরামুচরি করে কিন্তু ছাড়াতে পারে না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে