#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ৫
,
,
,
,
,
অতিত,,,,
এক লাল টুকটুকা পরি দাঁড়িয়ে আছে স্টেজের উপরে । পিচ্চি হাতে রয়েছে একটা মাইক। ছোট হাতে মাইক টা ধরতে খানিকটা বেগ পেতে হলেও সে হার মানেনি।
ছোট মেয়েটা হঠাৎ গান বলা শুরু করে।সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে ৫ বছরের ছোট পরির গান। গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবাই করতালি দেয়।হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে যায়। আর ব্যকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে মেরা ইয়ার কা বার্থডে গান টা
ছোট মেয়েটা সামন তাকাতেই তার ঠোঁটে ফুটে উঠে অমায়িক এক হাসি নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কে দেখে।ছেলেটা গানের তালে তালে নাচছিলো।
মেয়েটাও দৌড়ে ছেলেটার সাথে তাল মিলায়ে নাচতে লাগে।নাচ শেষ হতেই মেয়েটা ছেলেটাকে জড়ায় ধরে
ঃহ্যাপি বার্থডে ছোয়া রানী(নাক টিপে)
নওশিনঃতোমার আসতে এতো দেরি হলো কেন। ফুফী মনি তো কখন চলে এসেছে।
ঃতোর জন্য স্পেশাল গিফট রেডি করছিলাম সে জন্য দেরি হয়ে গেলো সরি
(কান ধরে)
নওশিনঃগিফট পছন্দ নাহলে সরি এক্সেপ্ট করা হবেনা
(কোমরে হাত দিয়ে)
নওশিনের কথায় ছেলেটা হাসে। বোকারানীর গাল দুইটাই হালকা টান দিয়ে গিফট এ মোরানো প্যাকেট টা তার হাতে দেয়।গিফট টা পেয়ে পিচ্চি নওশিন খুশিতে লাফিয়ে উঠে। আশেপাশের সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে দুইজনার বন্ধুত্ব।শুধু হাসি নাই অন্য কারো ঠোঁটে। ছোট মনটাই হিংসা হচ্ছে প্রবল ভাবে।
নওশিন ছেলেটার গিফট খুলতে যাবে তার আগেই কেউ “ঈশান ভাইয়া বলে ডেকে উঠে)
নওশিন আর ঈশান পিছনে তাকিয়ে দেখে গম্ভির মুখে এক বালক পরনে কালো সুট সুদর্শন বালক টাকে দেখে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে আহান
নওশিন এর সামনে এসে আহান হাটু গেরে বসে। হাতে থাকা গিফটের প্যাকেট টা এগিয়ে দেয়।নওশিন ছোট ছোট হাতে গিফট বক্স টা নেয়।ছোট হাতে ওতো বড় দুইটা বক্স ঠাওর করতে না পরায় পরে যাচ্ছিলো দেখে ঈশান আর আহান নিজের নিজের গিফট বক্স নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়।
ঈশান তার গিফট নওশিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে ❝আগে আমার গিফট টা খুল❞ সেটা দেখে আহান ও নিজের গিফট বক্স এগিয়ে দেয় আর বলে উঠে ❝নাহ আগে আমার গিফট খুলবা তুমি❞
এই নিয়ে শুরু হয়ে যায় দুই ভাইয়ের ঝগড়া এই ফাকে নওশিন দুইজনার গিফট খুলে। আহান একটা বায়স্কোপ গিফট করেছিলো তাকে।নওশিনের চাঁদ তারা নিয়ে গবেষণা করতে খুব ভালো লাগে আর তাইতো এই গিফট।নওশিন ঈশানের গিফট খুলে দেখে সেখানে ক্যামেরা।ছোট পরিটা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। তার ক্যামেরা খুব পছন্দ।কারো মুক্ত ঝোড়া হাসি দেখে আহান আর ঈশান ঝগড়া থামায়ে সেদিকে তাকায়।দুইজন একে অন্যের কাধে হাত দিয়ে ছোট নওশিনের উল্লাস দেখছে আর সেই ফাকে আহান আর ঈশানের বড় ভাই তাদের ছবিটা তুলে ফেলে।
হ্যা আকাশ এর ছোট দুই ভাই আহান আর ঈশান। দুইজনে জমজ ঈশান আহানের থেকে ২ মিনিটের বড় এই জন্য আহান ঈশানকে ভাই বলে দুইজনার ৬ বছর বয়স। আর আকাশের তখন ১২ বছর।
আকাশ এর আম্মু সম্পর্কে নওশিনের ফুফু হয়।ছোট থেকে নওশিন ঈশান আর আহানের ক্লোজ হলেও আকাশ এর ক্ষেত্রে বেতিক্রম ছিলো।আকাশ কে দেখলেই সে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতো কারন আকাশ সব সময় গম্ভির থাকতো।আর আকাশের সেই ভীত চেহারা নওশিনকে ভালো লাগতো।প্রচন্ড আকারের।ছোট মেয়েটার মায়াবী চেহারা হুট করে আকাশের মুখ থেকে বের করে আনে মায়াবিনী কথা টা।আকাশের নওশিনের সান্নিধ্যে ভালো লাগতো কিন্তু নওশিন খালি পালায় বেরাতো।।।
———–
বর্তমানে,,
কলিং বেল চাপার আওয়াজে আকাশ এর ঘুম ভাংগে।হাতে এখনো তার দুই ভাইয়ের ছবি।আকাশ কালকে অতীত ঘাটতে ঘাটতে কখন ঘুমিয়ে পরে টের পায়না
নিজেকে ঠিক করে একবার ঘরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় দরজা খুলতে।দরজা খুলে মাঝ বয়সী এক মহিলাকে দেখে জড়ায় ধরে
আকাশঃতোমাদের না বিকালে আসার কথা ছিলো মা
নিলিমা (আকাশ এর মা)ঃহুম কিন্তু আমি কালকে বিকালের ফ্লাইটে না উঠে সকালের টাই উঠেছিলাম ব্যাস চলে এলাম(মায়াবী এক হাসি দিয়ে)
আকাশ অপলক ভাবে চেয়ে থাকে মিসেস নিলিমার হাসি দেখে হঠাৎ করে বুকটা ধোক করে উঠে মিসেস নিলিমার মতো হয়েছে নওশিন সব বলে মেয়ে নাকি মা বাবার মতো হয় কিন্তু নওশিন সম্পূর্ণ ছোয়া পেয়েছে তার ফুফুর।মা মরা মেয়েটাকে যে ফুফুই নিজের বুকে আগলে রেখেছিলেন ১২ টা বছর।
হঠাৎ করে আকাশ এর মনে পরে যায় কালকের ভেংগে পড়া অসহায় নওশিনের কান্না রত চেহারাটা।বুকের বা পাশটাই কেন যেনো শূন্যতা অনুভব করে।
নিলিমাঃকি রে আমাদের আসায় খুশি হোস নাই(আকাশ এ গালে হাত দিয়ে)
আকাশঃহুম খুশি হবোনা কেন। পিচ্চি রানী কই।
নিলিমাঃআর বলিস না এসেই গেছে গার্ডেনে।এই বাড়ি কবে নিলি
(আশেপাশে তাকিয়ে)
আকাশঃতিনদিন হলো ।
নিলিমাঃআগে কতো বলতাম একটা বাড়ি নে তখন তো নিস নি
আকাশঃএতো প্রশ্ন করবা। কিন্তু তোমরা আমার বাসার এড্রেস কই পেলে
নিলিমাঃতোর পিএ এর কাছ থেকে
আকাশঃওহ চলো
_____________
আকাশ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। কি মনে করে ফোন টা হাতে নিলো।ফোন স্ক্রীন ওন করতেই। স্ক্রী ১৫০+মিসড কল দেখে অজানা ভয়ে বুকটা কেপে উঠলো।কল হিস্টোরিতে যেয়ে দেখে ৮৮টার মতো কল এসেছে হোস্টেল থেকে আর বাকি গুলো আরিয়ান এর নাম্বার থেকে।
আকাশ হোস্টেল এর নাম্বার ডায়েল করবে এমন মহূর্তে আরিয়ান এর ফোন আসে পুনরায়
আকাশ ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই। আরিয়ান এর কাতর গলা ভেসে আসে
আরিয়ানঃআকাশ আকাশ আমি তোর দুইটা পায়ে পরি রে একটা বার আমাকে বনু র সাথে কথা বলায় দে তুই যা বলবি করবো কিন্তু এক্কটা বার তার গলার আওয়াজ শুনায় দে। আমার মন বার বার বলছে আমার বোনটা ভালো নেই। দে না রে একবার কথা বলায়ে।
আকাশঃতোর বোন ঠিক আছে।আমি কিছুক্ষন পরে তোর কথা বলায় দিচ্ছি(এই টুকু বলেই ফোন কেটে দেই আকাশ)
,
,
,
নিলিমাঃআকাশ তো ভালো আছে। আমি বাসায় ও তো কল দিয়েছিলাম সেখানেও সব ঠিক আছে তাহলে এমন কেন মনে হচ্ছে আমার খুব কাছের কেউ ভালো নেই।। সে ঠিক আছে তো। না না নাহ তার কি হবে সে অবশ্যই ঠিক আছে(নিজেকে নিজে বুঝিয়ে)
——-
আকাশ হোস্টেলের নাম্বারে কল দিতেই থমকে যায় অপর পাশের মানুষের কথা শুনে
আকাশ তাড়াতাড়ি গাড়ির চাবি নিয়ে বাহিরের দিকে হাটা ধরে।যাওয়ার সময় রামিসার(আকাশ এর বোন) এর সাথে দেখা হয়।
রামিসাঃকই যাচ্ছিস ভাই
আকাশঃকাজ আছে রে মা আর তুই দেখে শুনে থাকিস।আমি আজ নাও ফিরতে পারি
রামিসাঃকিন্তু।
আকাশ রামিসার কথা পূরন হওয়ার আগেই সেখান থেকে চলে গেলো।
আকাশের গাড়ি এসে থামে সিটি হস্পিটালের সামনে। আকাশ দৌড়ে ভিতরে যায়।রিসেপশনিস্ট এ থাকা মেয়ের কাছ থেকে যেনে নিবে সেইটুকু হুস নাই তার। ১ তালা আর ২ তালার সব রুম দেখে শেষ মেষ ৩ তালার ৪ নাম্বার রুমে শুভ্র রাঙা ব্যান্ডেজ করে ঘুমন্ত মায়ারানী কে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আকাশ।।।
________
ঃম্যাম আপনার কাজ হয়ে গেছে। আমার প্যমেন্ট টা
রায়নাঃটি টেবিলের উপর আছে নিয়ে আমার সামনে থেকে বিদেয় হো
ড্রাইভার এর পোশাক পরা লোকটি একবার তার দিকে পিঠ করে থাকা ষোড়শী কন্যার দিকে চাইলো।পরনে ওয়েস্টার্ন ড্রেস। পিঠ জুরে ছুয়ে আছে লাল বাদামী চুল গুলো
দুই দুইটা বেয়ারের বতোল নিমিষেই শেষ করে দিলো রেয়ানা।সেদিন বারে আকাশ এর থেকে রিজেক্ট হওয়ার পর থেকে তার মাথায় আগুন ধরে আছে।আর সে আগুন নিভানোর ছোট একটা প্রয়াশ করেছে সে আজ।।।।
চলবে!