আমার তুমি পর্ব-০৪

0
1811

#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৪
,
,
,
,
,
সকালে মেঘের ধারার জন্য বিকাল টা ঠান্ডা।অসম্ভব সুন্দর একটা আবহাওয়া তৈরি হয়েছে।বৃষ্টির ছোয়ার পরে মাটি থেকেও আলাদা এক সুগন্ধ ছড়ায়েছে।রৌদ্রময়ীর উত্তাপে জ্বলন্ত গাছ পালা যেনো প্রান ফিরে পেয়েছে।।।।।

—আরে করেছেন টা কি এই। নামান বলছি আজব তো (হাত পা ছুড়াছুড়ি শুরু করে দিয়েছে নওশিন)

আকাশঃথাপ্লড় না খেতে চাইলে আর মাঝা না ভাংগাতে চাইলে চুপচাপ কোলে বসে থাকো

নওশিনঃআরে মগের মুল্লুক নাকি।নামান আমাকে
(আকাশ এর কথা কানে না তুলে আগের মতোই হাত পা ছুরতে লাগে)

আকাশঃচুপ এক দম চুপ(ধমক দিয়ে)

আকাশের ধমকে নওশিন চুপ করলেও ফুফাতে শুরু করে।ধমক টা একটু বেশিই জোড়ে ছিলো।হ্যা খান বাড়িতে সবার আদরের না হলেও সবাই এমনি কথা শুনাতো বাকাচোখে তাকালেও ধমক বা উচ্চশব্দে কথা বলে নি কোন দিন।

আকাশের নিজের উপর ই এবার রাগ ধরে।একটু নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল রাখলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো আজব।কিন্তু সেও কি করতো মাথা গরম হয়ে গেছিলো

আকাশ একটা ব্রেঞ্চের উপর নওশিন কে বসিয়ে দিলো।নওশিন তখন ও মাথা নিচু করে কান্না করেই যাচ্ছে।
আকাশঃসরি আমার উচিৎ হয়নি সে ভাবে বকা টা তুমি তো দেখছিলাই রেগে ছিলাম জেদ করার কোন কারন ছিলোনা তাও করলা।আচ্ছা এই যে কান ধরছি মাফ করে দেও মায়াপাখি(কান ধরে)

আকাশ এর মুখ থেকে “মায়াপাখি ডাকটা শুনে নওশিনের অন্তরআত্না কেপে উঠলো

নওশিনঃকে আপনি(কাপা কাপা গলায়)

নওশিনের প্রশ্নে আকাশের হুস ফিরে। সে আবেগে ভেসে কি বলে ফেলেছে সে খেয়াল করেনি

নওশিন আর কিছু জিজ্ঞেস করতে যাওয়ার আগেই আকাশ এর ফোন বেজে উঠে।আকাশ যেনো মনে মনে হাফ ছেড়ে বাচে।

আকাশ নওশিনের কপালে কিস করে সেখান থেকে উঠে খানিকটা দূরে চলে যায়।।

কিছুক্ষন আগে,,,,

সকাল থেকে আকাশ বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতন করছিলো নওশিন কে। হঠাৎ করে আকাশের অফিসে ঝামেলা হওয়াই তাকে সেখানে যেতে হয়। আকাশ বাহিরের মেন ডোর লোক না করেই বেরিয়ে যায় নওশিন কে লোক করতে বলে।বেশ নওশিন সুযোগ বুঝে পালায়ে যায়।

কিন্তু কিছুদূর যেতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। আশেপাশে লোক শূন্য হতে শুরু করে নওশিন তবুও হার না মেনে হাটা ধরে।কিন্তু কিছুদূর যেতেই দেখে কয়েকটা ছেলে ওইদিকে এগুচ্ছে।ছেলেগুলো দেখে সুবিধার মনে হয়না হাটার গতি দ্রুত করে দেয়।ছেলে গুলোও হঠাৎ করে নওশিনের পিছন করতে শুরু করে।নওশিন পিছনে ঘুরে দেখে ছেলেগুলো কেমন লোভুতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

নওশিন নিজের দিকে তাকিয়ে কেদে দেয় বৃষ্টির পানিতে ভিজার কারনে জামা একদম শরীরের সাথে এটে গেছে।হুট করে পাথরের সাথে পা বেজে পরে যায়।।।

ছেলে১ঃকি সুন্দরী শেষ এই টুকুই দৌড় ছিলো
ছেলে২ঃউফফ এই সে****** আর কিছু বলার আগেই ছেলেটা সামনের দিকে তাকায়।হঠাৎ করে সব ছেলেগুলোর চোখে ভয়ের আসতানা বেধে যায়।

ছেলেগুলো হঠাৎ করে পিছাতা লাগে। এক পর্যায়ে এসে দৌড় দিয়ে পালায়।নওশিন যেনো হাফ ছেড়ে বাচে।কিন্তু জম রাজ যে তার পিছনে সেটা সে খেয়াল করেনি।হঠাৎ নিজেকে হাওয়াতে আবিষ্কার করে তখন ওর টনক নরে। ততোক্ষনে বৃষ্টিও থেমে গেছে।।।

আকাশ দিকে তাকাতেই চোখ দুইটা থমকে যায়।তার মনে হয় এই চোখ সে আগেও দেখেছে বহুবার অনেক কাছ থেকে।।

আকাশঃজানি আমি অনেক সুন্দর তাই বলে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

————

বর্তমানে,,,,

আকাশ এসে নওশিনের কোলে শুয়ে পরে।

আকাশঃমামনি আর প্রিন্সেস আসবে কালকে(চোখ বন্ধ করে)
নওশিনঃমা মানে(কাপা কাপা কন্ঠে)
আকাশঃমানে আপনার শাশুড়ী আর ননদ
নওশিনঃওহ তাহলে আমাকে
আকাশঃহুম আপাদত আপনাকে হোস্টেলেই রাখতে হবে যতোদিন না তারা যাচ্ছে।
নওশিনঃহুম। বাসায় চলুন ফ্রেশ হয়ে আবার যেতে হবে তো।
আকাশঃহুম চলো।।

নওশিনের মন টা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যায়।কালকে থেকে এতো এতো মিষ্টি কথা বলে মনে হচ্ছিলো যেনো কোন যুগ থেকে ভালোবাসে আর আজকে নিজের মা আর বোনের সামনে দাড় করানোর পর্যন্ত সাহস হয়তো সাহস আছে কিন্তু সে চায়না।

নওশিনঃতার কাছে আমি শুধু মনোরঞ্জন এর বস্তু আর কিছুই না।বিবাহিত রক্ষিতা আর কি নাহলে তার বউ এর দিকে কিছু ছেলে নোংরা দৃষ্টি দিচ্ছিলো আর সে তাদের ছেড়ে দিলো(মনে মনে কথা গুলো বলে)

দুইজন বাসায় পৌঁছে যায়। নওশিন সোজা যায় ওয়াসরুমে।আকাশ ও পাশের ওয়াসরুমে যায় ড্রেস চেঞ্জ করতে।

আকাশঃপারবোনা এখন তোমাকে মা এর সামনে আনতে আর না পারবো তার পুরানো ক্ষত তাজা করতে। অনেক কষ্টে সামলেছি তাকে।তিলে তিলে গরেছি তোমার জন্য আবার নিজের মা কে হারাতে পারবোনা আমি।

——–

নওশিন সাওয়ার এর নিচে হাটু মুরে বসে পরে
ঃকেন একটু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার ভালোবাসার লোভ দেখায়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হয়তো আপনিও আপনার উদ্দেশ্য হাসিল হলে আমাকে ছুড়ে দিবেন।কেন আমার সাথেই সব সময় এমন হয় কেন কেন।শুধু ভালোবাসায় তো চেয়েছিলাম কিন্তু পরিবর্তে সবসময় পেয়েছি অপমান লাঞ্চনা আর খুনি হওয়ার ট্যাগ।।। হায়রে
————-

গাড়ি এসে থামে সেদিনকার সে হোস্টেতাই আজকে আর ভিতরে যাওয়ার প্রয়োজন পরেনি কারন আকাশ আগে থেকেই ফোনে সব কিছু ঠিক করে দিয়েছিলো।
আকাশ যেতে নিলেই নওশিন পিছন থেকে ডাক দেয়
নওশিনঃএই যে শুনুন
আকাশঃহুম
নওশিনঃআমার একটা ফোন লাগতো না মানে আগের ফোন টা তো ওই বাসায়।(মাথা নিচু করে)
আকাশঃফোন দিয়ে কি হবে (গম্ভির কন্ঠে)
নওশিনঃভাইয়ুর সাথে কথা বলতাম। আমি অনার্স টা কম্পিলিট করতে চায়।তাই ভাইয়ুকে বলে এডমিশান এর কার্জকর্ম প্লাস আমার কিছু টাকা

আকাশঃকেন তোমার স্বামি কি ফকির। নাকি তার টাকা পয়সা নাই কোনটা( রাগো স্বরে)

নওশিনঃস্বামি আদৌ আপনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গন্য করেন। আমার তো মনে হয়না।যেখানে আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মনেই করেন না সেখানে আপনার টাকা বাই ব্যবহার করার কথা আসে কই থেকে।

আকাশঃখুব মুখ বেরেছে তাইনা।(রাগী স্বরে)

নওশিন কিছু না বলে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিলো

আকাশ সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো নওশিন কে কিছুনা বলেই।

নওশিন মাটিতে বসে পরে,,,
নওশিনঃআই মিস ইউ ভাইয়ু আই রেয়লি মিস ইউ।তোমার পরিবাচ্চা আজকে কতো অসহায় দেখো।কোথায় তুমি ভাইয়ু তাড়াতাড়ি চলে আসোনা আমি যে আর পারচ্ছিনা ভাইয়ু সত্যি খুব খুব কষ্ট হয়েছে আজ অব্দি তুমি আমাকে আগলে রেখেছিলে।বুঝতে দেওনি আসলেই এই দুনিয়াটা এতো নিষ্ঠুর আমি ভাবতাম শুধু আমার পরিবার টাই এমন কিন্তুনা ভাইয়া তুমি ছাড়া তোমার বোন বড্ড একা বড্ড।(হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে)

আকাশ কিছুটা দূরেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।ফ্রন্ট মিররে সব টা দেখছিলো সে।তার ঠোঁটে হাসি লেগে থাকলেও তার বুকের মাঝে অদ্ভুদ এক যন্ত্রনা করছে।কিন্তু সেটাকে সে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে আনন্দিত করার চেষ্টা করছে।

নওশিনের একটা ছবি তুলে আরিয়ান কে পাঠালো।আরিয়ান ঢাকাতেই ছিলো নওশিন কে খুজছিলো। হঠাৎ ম্যাসেজ টোন বেজে উঠায় হোয়াইটস এপ ওপেন করে নিজের আদরের বোন কে পাগলের মতো কান্না করতে দেখে। আরিয়ান বুকটা ধক করে উঠে।ইচ্ছা করছে ছুটে যেয়ে বুকে শক্ত করে জরায় ধরতে।

আরিয়ান আকাশ কে কল দিতে যাবে তখন ই আকাশ নিজে থেকে কল দেয়

আকাশঃকি শালাবাবু কেমন লাগলো নিজের কলিজার টুকরোকে কান্না করতে দেখে
আরিয়ানঃতোর কেমন লাগছে তোর ভালোবাসার মানুষ কে এরকুম অসহায় দেখে(নিজের চোখের পানি মুছে)
আকাশঃসেট আপ তোর এই সব কথায় আমার কোন যায় আসেনা আমি শুধু তোকে এটা দেখাতে চায় যে এটা তো কেবল শুরু আরও বাকি আছে। দেখ তোর আদরের বোনের জীবন কি করে জাহান্নামে পরিনত করি(হাহা করে হেসে)
আরিয়ানঃওই বাড়িতেও সে হেসে খেলে থাকতোনা মানসিক টর্চার এর মাধ্যমেই সে বড় হয়েছে।যে বয়েসে বাচ্চারা পুতুল নিয়ে খেলতো সে বয়সে সে নিজেকে সামলানো শিক্ষেছে।এবার একটু ওর দিকে তাকা তো দেখ নিজের চোখের পানি নিজে মুছছে।

আকাশ ফিরে দেখে আসলেই নওশিন নিজের চোখের পানি মুছে ভিতরে যাচ্ছে।আকাশ রাগে ফোন কেটে দেয় আর সেখান থেকে চলে যায়

আরিয়ানঃআমি জানি তোর ও কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু নিজের প্রতিশোধ এর আগুনে সেটা লুকাচ্ছিস।কিন্তু বেশি সময় সম্ভব হবেনা আর আমিও আমার বনুকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো।।।।

আকাশ বাসায় যেয়ে একের পরে এক জিনিস ভাংগতে থাকে।এক সময় চোখ যায় একটা ছবির দিকে।দুইজন ছেলে একে অপরের ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ছবিটা নিয়ে ফ্লোরে বসে পরে আকাশ আর ডুব দেয় সৃতির পাতায়,,,,,

চলবে!!!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে