#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং: নয়
আমার অক্সিজেন,
তুমি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো আমার এই সম্বোধন দেখে…
অবশ্য অবাক হওয়ার ই কথা। কারণ তোমাকে কখনো তোমার উপস্থিতি তে অক্সিজেন নামে সম্বোধন করিনি আমি। কি করবো বলো তুমি কাছে থাকতে তো বুঝিই নি তুমি যে আমার অক্সিজেন! কিন্তু এখন হারে হারে আমি টের পাচ্ছি তুমি আমার কতোটা জুড়ে ছিলে আর তোমাকে ছাড়া আমি কতোটা অসম্পূর্ণ।
আমার বাবা-মা আর তোমার বাবা-মা এই চারজন মিলে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে অন্য একটা নতুন মানুষকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু এটা কি এতই সহজ! ওদের কিভাবে বোঝাই বলো তো, তোমায় কতোটা ভালোবাসি আমি…
তোমার শরীরের ঘ্রাণ ছাড়া আমি ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারিনা, যতক্ষণ পর্যন্ত কাবার্ড খুলে তোমার টিশার্ট,জ্যাকেট,হুডি আর শার্ট গুলো জড়িয়ে ধরে থেকে তোমার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ টা না নিতে পারি ততক্ষণ আমার মনে হয় আমি অক্সিজেন পাচ্ছি না, মনে হয় মরে যাচ্ছি। কেমন যেন আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আর এদিকে চারজন বুড়ো-বুড়ি প্ল্যান করছে আমাকে নতুন করে বিয়ে দেওয়ার।
যেদিন আমরা দুজন কবুল বলে একে অপরের সাথে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম, সেদিন থেকেই তো আমাদের মধ্যে একটা অপ্রকাশিত,অলিখিত চুক্তি হয়েছিল শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত একে অপরকে ভালোবেসে যাওয়ার। একে অপরকে ছেড়ে না যাওয়ার। আল্লাহ রব্বুল আলামিন চেয়েছে তাই তুমি আমার আগেই ওপারে চলে গেছো। তাই বলে কি আমার উচিৎ তোমাকে ভুলে গিয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু করার? তোমার সব অধিকার অন্য একজন কে দিয়ে দেওয়ার?
“তুমি তোমার ওয়াদা পালন করেছো। তোমার জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তুমি শুধু আমাকেই ভালোবেসে গেছো। এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তুমি শুধু আমার ই ছিলে। তোমার মনে শুধু আমার বসবাস ছিল।”
“কিন্তু এদিকে আমাকে বলা হচ্ছে তোমাকে ভুলে গিয়ে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে,তোমাকে করা ওয়াদা ভুলে যেতে। আমি খুব ভালো করেই জানি যদি আমার আরেকটা বিয়ে হয় তাহলে তোমাকে আমি আর এরকম ভাবে ভালোবাসতে পারবো না। তোমার জায়গাটা তখন অন্য একজনের দখলে থাকবে। আমার রুমে অন্য একজন পুরুষ থাকবে। আমার কাবার্ডে তোমার পরিবর্তে অন্য একজন পুরুষের জিনিসপত্র জায়গা পাবে। আমার অক্সিজেন নামক তোমার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণটা হারিয়ে যাবে।”
আমি তোমাকে দেয়া অঙ্গীকার পালন করতে চাই। আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যেতে চাই ক্বালবি। আমার এবং আমার ক্বালবির মাঝখানে অন্য কেউ আসবেনা, আমি কাউকে আসতেই দেবো না। তাই বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবছি একটা বাচ্চা দত্তক নিবো। তাহলে আমারও সময় কাটবে ভালো আর বাবা-মায়ের ও ভালো লাগবে। তখন আর বাসাটা খালি খালি লাগবেনা। আর আমাকেও নতুন করে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা সবার মাথা থেকে বের হয়ে যাবে। কেমন আইডিয়া বের করলাম বলো তো…
আচ্ছা ক্বালবি, তুমি কি আমাকে আর বাবামাকে দেখতে পাও সবসময় ওপার থেকে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়। আমার এই চিঠি কি তোমার কাছে পৌঁছবে? তুমি কি আমার সব কথা শুনতে পাও?
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে মাঝে মাঝে দুইটা লাইন খুব বেশি মনে পড়ে,
“হৃদয়ের লেনাদেনা এই পাড়েতে আর হবে না,
তোমার আমার দেখা হবে ঐ পাড়ে”
এই আশায় ই আমি বেঁচে আছি। কোনোরকমে দিনগুলো পাড় করছি আর ঐ পাড়ে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় আছি।
ইতি
তোমার ভালোবাসার ত্বাহা