#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
আবেগিমন চতুর্থ পর্ব
লেখনী: তৃষা ঘোষ
আকাশদের বাড়িতে আজ সকাল থেকেই বহু লোকের আনাগোনা চলছে। সানাই এর শব্দ জানান দিচ্ছে ” এসো হে পরম তব, সমারোহে “। নতুন সদস্য আসার আনন্দে সবাই উন্মুখ হয়ে আছে। চারপাশ যেনো উচ্ছশীত। আকাশের গায়ে হলুদ লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। বাড়ির ছোট বড় সবাই মিলে হলুদ খেলার আনন্দে মেতে উঠেছে। ওদিকে বিথীকা যেহেতু অনাথ তাই শ্রাবণীর বাবা মা উপস্থিত থেকে বিথীকার অভিভাবক হিসেবে বিয়ের সকল বন্দোবস্ত করেছেন। বিথীকার বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন শ্রাবণীর বাবা মা, আত্মীয় স্বজন এবং ওদের কলেজের বন্ধু-বান্ধপ রা। আকাশের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ এবং বিয়ের সমস্ত তত্ত্ব এসে পৌঁছলো বিথীকার বাড়িতে। আজ বিথীকাকে একদম অন্যরকম লাগছে। লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, খোলা চুল, লাল টিপ আর গায়ের গামছা সত্যিই অবাক করার মতো। এবার বিথীকার গায়ে হলুদ দেওয়ার পালা, আকাশের ছোঁয়া হলুদ বিথীকার গায়েও ছোঁয়ানো হলো। এবার ওকে স্নান করিয়ে সাজানোর জন্য নিয়ে গেলো শ্রাবণী। প্রিয় বন্ধুর বিয়েতে সে.. ই তো সব।
ইতিমধ্যে আকাশও প্রস্তুত। আকাশকে পড়ানো হয়েছে সাদা পাঞ্জাবী ও লাল রঙের ধূতি, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, মাথায় বরের টোপর, গলায় রজনীগন্ধার মালা। ঠিক যেন রাজপুত্র। আকাশকে নিয়ে সকলেই রওনা দিলো তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ওদিকে তার প্রিয় বন্ধু কে তখনও সাজিয়ে চলেছে শ্রাবণী।
উফ্… শ্রাবণী…আর কত সাজাবি?
চুপ করে বসতো..এখনও সাজ কমপ্লিট হয় নি। দেখি দেখি মুখটা তোল, চন্দনটা পরিয়ে দিই।
ওদিক থেকে কে একটা হাঁক ছেড়ে বললো…
কিরে! তোদের সাজানো হলো? বরের বাড়ির লোক জনেরা তো এখনই এসে যাবে।
শ্রাবণী চেঁচিয়ে উঠে.. এই তো হয়ে এসেছে।
নিজেকে একবার আয়নায় দেখ তো বিথীকা, চিনতে পারিস কিনা! বিথীকা আয়নায় এক ঝলক উঁকি মেরেই নিজের দুই হাত দিয়ে ওর মুখ টা আড়াল করলো। কনে দেখা মেঘের মতন ওর মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সবাই হো হো করে হেসে উঠলো ওর ঐ কাণ্ড দেখে। হঠাৎ..বাইরে কলরব..’ বর এসেছে, বর এসেছে ‘। সবাই হুড়মুড় করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কনের সাজে সজ্জিত হয়ে বিথীকা একাই ঘরে বসে আছে। বাইরে শাঁখের শব্দে আর উলুধ্বনির সুরে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে বরকে বরণ করে নিয়ে যাওয়া হলো ছাতনাতলায়। অবশেষে মুখোমুখি ওরা দুজন। আকাশ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল বিথীকার দিকে। লাল বেনারসি, কাজল কালো চোখ আর কপালে ওই চন্দনের ছটায় যেনো শ্যামলা মেয়ের রূপ আর ধরে না। নাকে নোলকটি এমন ভাবে দুলছে তা দেখে আকাশ একটু মৃদু হেসে মনে মনে বলে উঠলো..
” প্রহর শেষে আলোয় রাঙা, সেদিন চৈত্র মাস।
তোমার চোখে দেখেছিলাম, আমার সর্বনাশ “॥
যাই হোক সব ভাবনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দুটি মন এক হলো। বাঁধা পরলো একে অপরের নিবিড় বন্ধনে।
শিঁথিতে সিঁদুর ওঠার পর সেই মেয়েটার এক অন্য জীবন শুরু হয়। মায়ের ভালোবাসা, বাবার স্নেহ, স্বামীর আদর্শ সব মিলে এক নবরূপে সজ্জিত হয়ে উঠলো বিথীকা। এই ভাবে অনেকগুলো দিন কেটে গেল। বিথীকা আজ কেবল ঘরের বউ নয়, বাইরের জগতে তার এক নতুন পরিচয় হয়েছে। আজ সে দিদার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে। হ্যাঁ, সে আজ কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ” ডঃ বিথীকা চ্যাটার্জি “। মেডিকেল কলেজ থেকে আজ তাকে পুরস্কৃত করা হবে। আকাশও খুব খুশি। আকাশের বাবা মা এই আনন্দে বাড়িতে একটা পার্টি অ্যাটেন্ড করেছেন। সকাল এগারটায় কলেজে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আকাশ নিজে বিথীকাকে নিয়ে রওনা হলো কলেজের উদ্দেশ্যে। বিথীকা প্রথম সারিতেই বসে আছে, সাথে আকাশও আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরস্কৃত করা হবে তাদেরকে যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। আজ কলেজে শ্রাবণী ও এসেছে, কারন সেও তৃতীয় স্থান জিতেছে। যাই হোক অনুষ্ঠান পর্ব শুরু হলো কলেজের প্রিন্সিপালের ভাষণ দিয়ে…
সকল ছাত্র – ছাত্রী বৃন্দ তোমাদের জন্যে আমার অনেক ভালোবাসা অনেক অনেক আশির্বাদ। তোমরা অনেক বড়ো হও। কিন্তু আমার এই কলেজের সম্মান যে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে এবং সাফল্য এনে দিয়েছে তাদের আজ সম্বর্ধনা জানানো হবে। এরপর বিথীকার নাম সম্প্রচার করা হলো। বিথীকা চ্যাটার্জি….
বিথীকা স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। বিথীকার গলায় সোনার মেডেল পরিয়ে দিলেন ওদেরই কলেজের প্রিন্সিপাল। কিন্তু বিথীকা প্রিন্সিপাল কে থামিয়ে দিয়ে,
স্যার, আমি কিছু বলতে চাই..
বলো বিথীকা, তুমি কি বলতে চাও, নির্ভয়ে বলো..
নমস্কার, আমাকে আপনারা যে সম্মান দিয়েছেন তার প্রকৃত দাবীদার আমি নই। এই মেডেলটির একমাত্র দাবীদার হলেন আমার স্বামী। যার অনুপ্রেরণা ছাড়া আমি হয়ত আজ এখানে পৌঁছতে পারতাম না। এই অসহায় মেয়ের পাশে যে সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তিনিই এর প্রকৃত অংশিদার। তাই আমি অনুরোধ করছি আকাশ চ্যাটার্জি কে মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার জন্যে। আকাশ..আকাশ…
সবাই করতালি দিয়ে আকাশকে অভ্যর্থনা জানালো। আকাশ মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল। বিথীকা ওর গলার মেডেল টা খুলে আকাশের গলায় পরিয়ে দিল। এই দৃশ্য দেখে সেখানে উপস্থিত সকল শিক্ষক – শিক্ষিকা, ছাত্র – ছাত্রীর চোখে জল চলে এলো। সবাই খুব উৎসাহের সুরে করতালি দিয়ে ওদের অভ্যর্থনা জানায়। তোমরা সুখী হও। জীবনের এই চলার পথে তোমরা এইভাবেই একে অপরের পরিপূরক থেকো।
সন্ধ্যা হতে না হতেই লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে আকাশের বাড়িতে। বিথীকা এখনও রেডি হচ্ছে। আকাশ অনেক আগেই রেডি হয়ে অতিথিদের অ্যাপায়ন করছে। অনেক লোকের নিমন্ত্রণ আজ আকাশের বাড়িতে। বাড়ির ছোটরা হৈ হৈ করে সারা বাড়িতে খেলে বেড়াচ্ছে। আকাশের মা – বাবাও যে যার কাজে কর্মে ব্যাস্ত। ওদিকে বিথীকাও রেডি হয়ে গেছে। সে আজকে খুব সুন্দর করে সেজেছে, কারন তার কাছে এই দিনটা সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই আনন্দও অধিক হয়ে উঠেছে।
এত আনন্দের মাঝেও বিথীকা কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করছে। কিন্তু তা প্রকাশ করছে না, পাছে তার জন্য অনুষ্ঠান মাটি হয়ে যায়। আকাশও আজ খুব ব্যাস্ত তাই সেও লক্ষ্য করেনি যে এই শীতের সন্ধাতেও বিথীকা গলগল করে অনবরত ঘামছে। অনুষ্ঠান যখন শেষের দিকে তখন একটা শব্দ!! আকাশ পিছনে ফিরে তাকাতেই অবাক! দেখলো., বিথীকা মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আকাশ ছুটে গেলো বিথীকার কাছে। বিথীকা…বিথীকা…. কোনও সাড়া নেই।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share