আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-০৮

0
3762

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৮
লেখিকাঃমাহযাবীন

সন্ধ্যে নেমে এসেছে।আকাশ টা ধূসর রঙ ধারণ করেছে এবং সূর্যের তাপ জানিয়েছে বিদায়। চারিদিকে বয়ে চলছে ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস।
আফিমদের পুরান বাড়িটি ঠিক পুড়নো দিনের বাড়ি গুলোর মতোই,নেই কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া।বাড়ির সামনেই এক মস্ত বড় উঠোন।সেই উঠোনের চারপাশ দিয়ে আছে বিভিন্ন গাছগাছালী।জায়গাটায় গাছগাছালী বেশি থাকায় বাতাস যেমন বেশি ঠিক তেমনই দূষণমুক্ত ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ নির্মল নিঃশ্বাস মুগ্ধতার সাথে নিজের মাঝে টেনে নেওয়া যায়।ভুতের ভয় পাবারও সুযোগ নেই কারণ আফিমদের বাড়ির সামনেই ছোট্ট মোটামুটি পাকাপোক্ত একটি রাস্তা এবং রাস্তার ওপাশেই আরেকটি বাড়ি আছে।আফিমদের বাড়ির দুপাশেও দুটো বাড়ি আছে কিন্তু মধ্যবর্তী দুরত্ব অনেক।
রাতে মাছের বিবিকিউ খাওয়া হবে আগের থেকেই পরিকল্পিত ছিলো।তাই এ সন্ধ্যে দিয়েই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।বাড়ি থেকে মেরিনেট করা মাছ নিয়ে এসেছিলেন সানিয়া বেগম।আর যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করছেন রবি চাচা।বিবিকিউ তৈরির সময় সবাই উঠোনে বসেই আড্ডা দিবে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী উঠোনে ছোট্ট ছোট্ট বেশ কয়টি বসার জন্য মোড়া পাতানো হয়েছে।
আফিম একটি হাতা কাটা গেঞ্জি পরে বিবিকিউর জন্যে উঠোনে চুলা ঠিক করছে।বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার মুখে ও শরীরে।চুলগুলো এলোমেলো এবং কিছু অবাধ্য চুল তার কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এই মুহূর্তে আফিমকে কেউ দেখলে মুগ্ধ হতে বাধ্য।নাফিয়া আফিমের থেকে কিছুটা দূরে ঠিক সামনে বরাবরই একটি মোড়ায় বসে আছে।তার পাশেই দাদী ও সানিয়া বেগম গল্প করছে।সে গল্পে নাফিয়ার মনোযোগ নেই।সে তো তার সামনে বরাবর চুলা সেট করতে থাকা এক সুদর্শন পুরুষকে দেখতে ব্যস্ত।চুলা ঠিক করার মাঝেই আফিম হটাৎ চোখ তুলে তাকায় নাফিয়ার দিকে।দেখে নাফিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।আফিমের চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নেয় নাফিয়া।আবারও এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হলো তাকে।নিজের উপরই রাগ হচ্ছে নাফিয়ার।কেনো সে বিনা কারণে আজকাল এতোটা দেখছে এই পুরুষ টাকে!কই সে তো ইচ্ছে করে দেখে না,অনিচ্ছাকৃতই তো বার বার চোখদুটো এই পুরুষটাতেই আঁটকে যাচ্ছে! নিজের উপরই বিরক্ত হচ্ছে সে।এদিকে,নাফিয়ার তাকিয়ে থাকাটা বেশ কিছুটা সময় ধরেই বুঝতে পারছিলো আফিম।তাই সে ইচ্ছাকৃতই হুট করে তাকায় নাফিয়ার দিকে যেনো চোর হাতেনাতে ধরা পরে।চোখে চোখ পরতেই নাফিয়ার চোখ সরিয়ে নেওয়া ও লজ্জা পাওয়ার বিষয়টি বেশ উপভোগ করে আফিম।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আবারও নিজের কাজে মনোনিবেশ করে সে।

আফিমরা এ বাড়িতে দীর্ঘ কয়েক বছর কাটিয়েছে বলে প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক বেশ ভালো তাদের।আফিমরা এসেছে জেনে প্রতিবেশী দু’জন মহিলা ও দু’টি মেয়ে আসে তাদের সাথে দেখা করতে।সানিয়া বেগমের অনুরোধে রাতের খাবার সেড়েই যাবেন বলে ঠিক করেন তারা।সবাই গোল করে বসে গল্পে মেতে আছে।নাফিয়াও গল্পে যোগ দিয়েছে কিন্তু আফিমের এদিকে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ নেই।সে ব্যস্ত রবি চাচার সাথে খাবারের ব্যবস্থা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে।আজকের খাবার তালিকায় যা আছে তার কিছু কিছু পদ আফিম রান্না করবে।আফিমের রান্না বেশ মজা হয় তাই সানিয়া বেগম এবং দাদী উভয়ই নিশ্চিন্তে আছেন।আফিম ও নাফিয়া দু’জনে দু’জনার মতো ব্যস্ত হলেও ফাঁকে ফাঁকে আঁড়চোখে একে-অপরকে একটু একটু দেখে নিচ্ছে।ভাগ্যক্রমে এবার আর একে-অপরের চোখেচোখ পরে না।

বেশ লম্বা সময় ধরে গল্প চলার পরে ঠিক ৯ টা বাজতেই রবি চাচা আসেন সবাইকে খেতে ডাকতে।সবাইও আর দেরি না করে খাওয়ার জন্য উঠানে বিছানো বড় একটি পাটিতে যেয়ে বসে পড়ে।উঠানেই খাবার ব্যবস্থা করার কারণ হলো উঠোনের পরিবেশটা বেশ সুন্দর।ঠান্ডা বাতাস তো বইছেই সেই সাথে বেশ কয়েকটা হারিকেন জ্বালিয়ে রাখার ফলে জায়গাটি হলদে বর্ণ ধারণ করেছে এবং হারিকেনগুলো দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছে।সেই সাথে সেকেলে একটা অনুভূতি আসছে যখন বিদ্যুৎ ছিলো না এবং মানুষ আগুন দিয়েই রাতে কাজ করতো।মাথার উপরই আছে প্রকাণ্ড আকাশ এবং তার বুকে ঝুলে আছে মস্ত বড় চাঁদ।বাতাসে গাছপালাগুলো নড়ছে এবং শব্দগুলোও মনে অন্য রকম অনুভূতি জাগাচ্ছে।মশার জন্যে রবি চাচা ধূপ ব্যবহার করেছেন ফলে মশা তেমন নেই আর ২/৪ টা যা আছে তার কামড় এই পরিবেশের মুগ্ধতার কাছে অতি নগন্য।বলে রাখা ভালো,মশা, মাছি তাড়ানোর প্রাচীন একটি পদ্ধতি হলো ধূপ। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় শরীরের ক্ষতি করে না। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ধূপগাছ জন্মে। গাছের কাণ্ড থেকে যে নির্যাস বা আঠা পড়ে,তা দিয়েই তৈরি হয় ধূপ।
এই পরিবেশে নাফিয়ার মনে হচ্ছে সে যেনো আধুনিকতার যুগ হতে অনেক পিছিয়ে প্রাচীন কালে পৌঁছে গিয়েছে।ভালোলাগা,মুগ্ধতা গ্রাস করছে তাকে।কিছুটা সময়ের মাঝেই সকলের সামনে খাবার উপস্থিত করা আরম্ভ হয়।রবি চাচা ও আফিম উভয়েই একে একে খাবার এনে পাটির মধ্যখানে রাখছে।খাবারের তালিকায় আছে,কোরাল মাছের বিবিকিউ,নান,মুরগী ঝাল করে রান্না,গরুর মাংস ভুনা,স্যালাদ সাথে সাদা ভাতও আছে।যারা নান খাবে না তারা সাদা ভাত খেতে পারবে।অতঃপর সবাই মিলে খাওয়ার পাট চুকিয়ে প্রতিবেশীরা বিদায় নেয়।প্রতিবেশীদের বিদায় দিয়ে সবাই যে যার কক্ষে ঘুমুতে চলে যায়।
এ বাড়িতেও নাফিয়াকে দাদীর পাশের রুমটি দেওয়া হয় ঘুমাবার জন্যে।কিন্তু রাত ১২ টা বাজতে চললো,নাফিয়ার বিন্দু পরিমাণ ঘুম আসছে না।তার ইচ্ছে করছে উঠোনে যেয়ে আরো কিছুক্ষণ নিস্তব্ধে বসে থাকতে।কিন্তু একা যেতে ভয়ও লাগছে তার।সে শুয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠে জানালার ধারে যায়।জানালা দিয়ে বাইরের উঠোন দেখা যাচ্ছে।হারিকেনের হলদে বর্ণের আলোতে একজন পুরুষকে স্পষ্ট দেখতে পায় নাফিয়া।ঠোঁটে হাসি টেনে চুল হতে কোমর অব্দি কাপড় দিয়ে আবৃত করে সে উঠোনের উদ্দেশ্য অগ্রসর হয়।
আফিম ফোনে স্লো মিউজিক ছেড়ে এক হাত মাথার নিচে ও অপর হাত বুকের উপর রেখে শুয়ে আছে।নয়ন তার চন্দ্রিমার দিকে।নাফিয়া এসে আফিমের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-আমিও যদি আপনার সাথে এখানে বসি তবে কি খুব বিরক্ত হবেন?
হটাৎ কারো কন্ঠস্বর কানে আসতেই উঠে বসে আফিম।নাফিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে।নিজ স্থান থেকে একটু সরে নাফিয়াকে বসার জায়গা করে দিতেই নাফিয়া ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে আফিমের পাশে বসে পরে।নাফিয়া, আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এতো রাতে এখানে?
-এ বাড়িতে এলে হয় ছাঁদে নাহয় এখানেই রাত কাটে আমার।
-বাহ!
কথার আর কিছু না পেয়ে উভয়ই কিছুটা সময় নিরব থাকে।নিরাবতা ভেঙে আফিম বলে ওঠে,
-তুমি জেগে আছো যে?
-ঘুম আসছিলো না।এই মুগ্ধতা টা মিস করছিলাম।
উত্তরে কিছু বলে না আফিম।নাফিয়া বলে ওঠে,
-এখানে আপনার কোনো বন্ধুমহল নেই?
-“বন্ধু” নামক সম্পর্কটি আমার জীবনে নেই।
অবাক হয় নাফিয়া।বিস্মিত কন্ঠেই নাফিয়া জিজ্ঞেস করে,
-কেনো?
-গম্ভীর,কথা কম বলা আর আলাদা ব্যক্তিত্বের হওয়ায়।
-তাতে কি হয়েছে?আমার তো মনে হয় আপনি অনেক ভালো বন্ধু হওয়ার যোগ্য।
এতোক্ষণ অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও এ কথায় নাফিয়ার দিকে দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে আফিম।আফিমের চোখে চোখ রেখে নাফিয়া তার ডান হাতটি আফিমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-বন্ধু হতে পারি?(ঠোঁটে আলতো হাসি)
একবার নাফিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নাফিয়ার চোখের দিকে তাকায় আফিম।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে নাফিয়ার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরে এক হেঁচকা টানে নাফিয়াকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে আফিম।উভয় একে-অপরের এতোটা কাছে যে উভয়ের ঠোঁটজোড়ার মধ্যবর্তি দুরত্ব ব্যাস কয়েক ইঞ্চির।আফিমের এমন কাজে নাফিয়া চমকে যায়,সেই সাথে আফিমের এতোটা কাছে আসায় তার হৃৎস্পন্দন কয়েকশো গুণ বেরে গিয়েছে।আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়েই মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
“আর কি কি হওয়ার যোগ্য আমি?”
মুহূর্তেই একরাশ লজ্জা ও অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো নাফিয়ার হৃদয়।আফিমের দিকে তাকিয়ে থাকাটা বেশ দুষ্কর মনে হচ্ছে তার কাছে তাই চোখজোড়া নামিয়ে নেয় সে।হারিকেনের এই হলদে আলোতে নাফিয়ার লজ্জারাঙ্গা চেহারাটা এতোটাই মোহনীয় লাগছে যে আফিম নিজের অজান্তেই একটি ঘোরের মাঝে বিলীন হয়ে যেতে আরম্ভ করে।কিছু না ভেবেই আফিম একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে নাফিয়ার ঠোঁটের দিকে।আফিমের ঘন নিঃশ্বাস নিজের মুখের উপর অনুভব করতেই নাফিয়া আধো আধো চোখে আফিমের দিকে তাকায়।আফিম ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার ঠোঁটের দিকে।নাফিয়া খুব করে চাচ্ছে আফিমকে আটকাতে কিন্তু কেনোই যেনো সে অনুভব করছে তার পুরো শরীর অবশ হয়ে গিয়েছে।সে কোনোভাবেই পারছে না আফিমকে বাঁধা দিতে।তবে কি কোথাও না কোথাও সেও চায় এটি?
আফিম আর নাফিয়ার ঠোঁটজোড়ার মাঝে ঠিক ২ ইঞ্চির দূরত্ব অবশিষ্ট ঠিক এমন সময় হুট করে হারিকেনের কেরোসিন শেষ হয়ে আলো নিভে যায় এবং পুরো জায়গাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পরে।ওমনি ভয়ে আফিমকে জড়িয়ে ধরে নাফিয়া।হটাৎ ঘোর কেটে যাওয়ায় আফিম একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরলেও নিজের বুকে নাফিয়ার অস্তিত্ব অনুভব করায় অনেকটা অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে তার।একহাতে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে অপর হাতে ফোনের লাইটটি জ্বালায় সে।আলোর উপস্থিতি টের পেয়ে আফিমের বুক হতে আলতো করে মাথা তুলে আফিমের দিকে তাকাতেই দেখে আফিম তার দিকেই চেয়ে আছে ঠোঁটে সেই বাঁকা হাসি নিয়ে।ভীষণ লজ্জা এসে ভীর জমায় নাফিয়ার মনে সে আর দেরি না করে আফিমকে ছেড়ে নিজের কক্ষের দিকে দৌড়ে পালায়।এদিকে নাফিয়ার কাজ দেখে হেসে দেয় আফিম।

!!
সকালে আফিম,দাদী,সানিয়া বেগম,নাফিয়া সবাই প্রস্তুত হয়ে বের হয় পুরন বাড়ির আশপাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখতে।আজ গাড়ি নিয়ে বের হয়নি তারা।সানিয়া বেগম ও দাদী তাদের পুরোনো স্মৃতিগুলো নিয়ে কথা বলতে বলতেই হাঁটছে।এদিকে তাদের পেছনেই আফিম ও নাফিয়া নিরবে হাঁটে চলছে।হাঁটার মাঝে আঁড়চোখে একে-অপরকে একটু দেখছেও।অনেকটা হাঁটার পর নাফিয়া দেখে বেশ বড় একটি খালি মাঠ এবং এর এক কিনারায় ৫/৬ টির মতো ঘোড়া বেঁধে রাখা।একজন লোক এই ঘোড়াগুলোর সাথে দাঁড়ানো।নাফিয়া ঘোড়া দেখে বেশ উত্তেজিত হয়ে দ্রুত পদে ঘোড়াগুলোর কাছে চলে যায় এবং লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এই ঘোড়া গুলো কি জন্য রাখা হয়েছে?
-এই ঘোড়া গুলো দ্বারা প্রতিদিন ঘোড়ার গাড়ি চালানো হয়।
-ওহ!আলাদাভাবে ঘোড়া চালানো যাবে?
-নাহ,এ নিয়ম নেই।
মন খারাপ হয়ে যায় নাফিয়ার।এই মন খারাপ নিয়েই বাকিদের কাছে ফিরে আসে সে।সবাই দূর থেকেই নাফিয়ার এ বিষয়টি খেয়াল করে।সানিয়া বেগম এবং দাদী উভয়ই নাফিয়াকে মন খারাপ না করার জন্য সান্তনা দিয়ে নিজেদের মতো করে আবারও হাঁটা আরম্ভ করে।আফিম এতোক্ষণে কিছু না বললেও এবার বলে ওঠে,
-ঘোড়া চড়াতে পারো?
নাফিয়া মাথা ডানে-বামে হেলিয়ে বুঝায় যে পারে না।আফিম এবার বলে ওঠে,
-তাইলে এতো মন খারাপের কি আছে ইডিয়ট!
আফিমের কথায় সাথে সাথেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় নাফিয়ার।সে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে ওঠে,
-নিজে এতো পারলে যান না চালান,অ্যারোগেন্ট![Arrogant]
আফিম উত্তরে কিছু না বলেই উল্টো হেঁটে সেই ঘোড়ার গুলোর কাছে যায়।নাফিয়া বিষয়টি খেয়াল করে না।সে তো আছে তার মন খারাপ নিয়ে।
কিছুটা সময় পার হতেই আফিম একটি ঘোড়ায় চড়ে তা নিয়ে নাফিয়ার কাছে আসে।নাফিয়ার চোখ আফিমের উপর পরতেই তার চোখগুলো রসগোল্লার ন্যায় বড় হয়ে যায়।অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে সে আফিমের দিকে।আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে।আফিম ঘোড়া চড়াতে পারে দেখে নাফিয়া বেশ খুশি হয়ে আফিমের কাছে যেয়ে বলে ওঠে,
-প্লিজ আফিম,আমার ছোটো বেলা দিয়ে সখ ঘোড়া চড়ানোর।প্লিজ আমাকেও সাথে নিন।
-নো,আই ওন্ট!
-প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ!
-কিছুক্ষণ আগেই কেউ একজন আমাকে অ্যারোগেন্ট বলেছিলো!
-স্যরি।প্লিজ ক্ষমা করে দেন।
সানিয়া বেগম এবং দাদীও আফিমকে বলে ওঠে নাফিয়াকে ঘোড়াতে উঠাতে।অবশেষে আফিম নাফিয়াকেও উঠায় ঘোড়াতে।অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছে নাফিয়ার।এই প্রথম সে ঘোড়াতে উঠলো।অবশ্য একপাশেই পা রেখেছে সে,ছেলেদের মতো আর বসেনি।আফিম ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ধীরে ধীরে চালানোর মাঝেই নাফিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে ওঠে,
-আমাকে ধন্যবাদ বলা উচিৎ তোমার মিস.শেখ!
আফিমের দুবাহুর মাঝে আবদ্ধ হয়ে আছে নাফিয়া।সেই সাথে আফিমের এতোটা কাছে এসে মৃদু স্বরে কথা বলায় কেমন যেনো আলাদা রকমের অনুভূতি হচ্ছে নাফিয়ার।এ অনুভূতিটার কোনো নাম নেই।আর অনুভূতি কিভাবে ব্যক্ত করতে হয় তাও জানা নেই নাফিয়ার।কিন্তু সে এ অনুভূতিটি বারংবার অনুভব করতে চায়!
কিছুটা কাঁপা কাঁপা স্বরে নাফিয়া বলে ওঠে,
-থ্যাংক ইউ।
-উহু,এভাবে না।
-তবে?
উত্তরে কিছু না বলে ঠোঁটে আলতো হাসি ঝুলিয়ে নেয় আফিম।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে