আড়ালে কে নাড়ে কলকাঠি পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0
702

#আড়ালে_কে_নাড়ে_কলকাঠি
#১২তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক



আমি নির্বাক তাকিয়ে আছি ফৌজিয়ার চোখের দিকে। তার চোখ ভেজা জবজবে। গালে জলের ধারা।নাকে সর্দি জমেছে।
ফৌজিয়া কান্নাভেজা গলায় বললো,’ আমায় তুমি খারাপ মেয়ে ভাবছো তাই না তপু? ভাবছো আমিই তোমার ভাবীর সংসার নষ্ট করে দিয়েছি? এইসব কিছুর পেছনে আসল কালপ্রিট আমি এটাই ভাবছো তাই না তপু?’
চোখ মুছলো হাতের পিঠ দিয়ে ফৌজিয়া। তারপর বললো,’ আমি সংসার নষ্ট করিনি তোমার ভাবীর। সত্যি আমি এটা করিনি।’
এরপর এক অদ্ভুত কান্ড ঘটলো। সে ডাকলো হঠাৎ করে,’ অপি ভাবী, অপি ভাবী? এদিকে আসুন তো!’
আমায় অবাক করে দিয়ে ঠিক তখনই ওপাশের ঘরের দরজা খুলে অপি ভাবী এলো।অপি ভাবীকে এখনও দেখতে রোগা লাগছে। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে একেবারে।
ফৌজিয়া বললো,’ ভাবী, ওদিকে বসুন।’
ভাবী আমার পাশেই বসলো।
এবার ফৌজিয়া বললো,’ আমি কি আপনার সংসার ভেঙেছি ভাবী? বা আমি আপনার সংসার ভাঙার জন্য কোন রকম দায়ী? ‘
অপি ভাবী তখনই কথা বললো না। সে কথা বললো খানিক পর।বললো,’ না। তুমি বরং আমায় ঠিক পথ দেখিয়েছো। আমি রাগে অন্ধ হয়ে নিজের গর্ভের সন্তানটিকে নষ্ট করে ফেলতে চেয়েছিলাম। তুমি তা করতে দেওনি।আমি সু*ইসাইড করার ডিসিশন নিয়েছিলাম।ওখান থেকেও ফিরিয়ে এনেছো তুমি। এরচে আরো বড় বিষয় হলো তুমি আমায় প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছো যে অপু কতোটা ভ*য়ংকর লোক! তুমি দেখিয়ে দিয়েছো অপুর সত্যিকারের রূপ।ওর আড়ালের চেহারা। ‘
আমি শুধু ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।কথা শুনছিলাম ওদের।
ফৌজিয়া এবার বললো,’ আরো কিছু শুনাই তোমায় তপু? গুরুত্বপূর্ণ কিছু।এইসব কিছু শুনলে বা দেখলে তুমি বুঝতে পারবে তোমার ভাই কতোটা ভয়ংকর লোক! তুমি বুঝতে পারবে সে অতোটা অমানুষ কিংবা সে আসলেই কোন মানুষ কি না! ‘
আমি শুনতে চাই, কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। চুপচাপ বসে রইলাম। ফৌজিয়া তার ল্যাপটপ নিয়ে এলো। টেবিলের উপর তা রেখে ফাইলে গিয়ে একটা ভিডিও চালু করলো।ভিডিও করা হয়েছে ফৌজিয়ার বাসাতেই।এই রুমেই। গোপন ক্যামেরা দিয়ে।তার মানে অপু ভাইয়ার কদিন ধরেই এই বাসায় যাতায়াত ছিল।
ফৌজিয়া বললো,’ ভিডিওতে যে কথাগুলো তোমার ভাইয়া বলছে তা তুমি মনোযোগ সহকারে শুনো।’
আমি ল্যাপটপের স্ক্রিনের আরো কাছাকাছি গিয়ে বসলাম।ভিডিওতে এই সোফার উপরেই ভাইয়া আর ফৌজিয়া কাছাকাছি বসে আছে। ফৌজিয়া ভাইয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে।আর সে ভাইয়াকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে।আর ভাইয়া সেসবের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
ফৌজিয়া ভাইয়াকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো,’ বিয়ে করবে কবে আমায় অপু?’
‘তুমি যখন চাও তখনই।’
ভাইয়া মৃদু হেসে উত্তর করলো।
ফৌজিয়া বললো,’ তোমার ঘরে যে একটা বউ আছে তাকে কি করবে? নাকি আমায় সতীনের ঘর করতে হবে আবার! ‘
ভাইয়া হা হা করে হেসে উঠলো। তারপর বললো,’ ওটা পুরনো জিনিস।ডেট এক্সফায়ারড।লাথি মেরে শালীকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিবো।’
বলে ভাইয়া ফৌজিয়াকে কাছে টানলো। তারপর বললো,’ কিভাবে কি করবো সব ডিসিশন নেয়া শেষ আমার।পুরো প্লট সাজিয়ে ফেলেছি আমি।টাকা পয়সা ছিটিয়ে দিয়ে লোক লস্কর ভাড়াও করে ফেলেছি।হা হা হা।’
ভাইয়া আবার হাসলো।
ফৌজিয়া বললো,’ আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। সবকিছু ভেঙে বলো।’
ভাইয়া বললো ,’ আমার ফোনের মেমোরিতে অপির ন্যুড ছবি আছে।ভিডিও আছে। আমার ফোনটা আমি নিজেই কোথাও লুকিয়ে ফেলবো।’
ফৌজিয়া ভাইয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।বললো,’ ফোন লোকালে কি হবে? ‘
ভাইয়া হাসলো। হেসে বললো,’ মেয়ে মানুষের মাথা মোটা থাকে। তুমি ডাক্তার মানুষ।আমি ভেবেছিলাম তোমার মাথা অন্ততঃ মোটা না। কিন্তু এখন দেখছি তোমার মাথাও মোটা!’
ফৌজিয়া বললো,’ এসব ফালতু কথা রেখে কাজের কথা বলো। কিভাবে কি করবা তা বলো।’
ফৌজিয়া ভাইয়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
ভাইয়া উপর দিকে চোখ বাঁকিয়ে নিয়ে ফৌজিয়ার চোখের দিকে একবার তাকালো। তারপর বললো,’ আমি বাসায় সবার কাছেই বলবো আমার ফোন চুরি হয়ে গেছে। তারপর আরেকটা জঘন্য কাজ করবো।বুঝলে?’
বলে ভাইয়া আবার অট্টহাসি হাসলো।এই ভিডিওটা আর আমি দেখতে পারছিলাম না। ভীষণ বিচ্ছিরি লাগছিলো। ভাইয়ার চেহারাটা কেন জানি আর মানুষের চেহারা মনে হচ্ছিল না। তাকে মনে হচ্ছিল, একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে!
ফৌজিয়া বললো,’ সেই জঘন্য কাজটা কি অপু?’
ভাইয়া বললো,’ সব বলতে হবে? কিছু সিক্রেট থাক না।’
ফৌজিয়া মান দেখালো। ভাইয়ার থেকে সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’ এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও। আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে না। তোমার সঙ্গে আমার কিছুই নেই।যাও বলছি।’
ভাইয়া ফৌজিয়ার দিকে এগিয়ে এলো। তার হাত ধরে বললো,’ সরি ফৌজিয়া।আমি সব বলছি। তোমার কাছে এসব না বললে কার কাছে বলবো বলো? তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার? তোমার সঙ্গে আমার কোন গোপনীয়তা নাই।বুঝলা জানমণি!’
বলে ভাইয়া এক এক করে সব বলতে লাগলো। সে বললো,’ এক লোককে আমি পয়সা দিয়ে ভাড়া করবো। সে অপিকে ফোন করে বলবে, সেই আমার ফোন চুরি করেছে। তার হাতে এখন আমার ফোন। এই ফোনে অপির ন্যুড আছে, ভিডিও আছে।আর এসব সে ছড়িয়ে দিবে। তার কাছে যে অপির ছবি আছে এসব অপি বিশ্বাস করবে কিভাবে? অপি তো জানে না তার সবকিছু যে আমার কাছে আছে।
এই কাজ আমিই করবো।যেহেতু আমার ফোন আমিই লুকিয়ে রাখবো।এক সময় এটা বের করে হোয়াটসঅ্যাপে অপিকে কিছু ছবি আর ভিডিও পাঠিয়ে দিবো।অপি তখন ভাববে ওই চোর বা শয়তান লোকটাই এইগুলো তাকে পাঠিয়েছে। তার মানে ওই লোকের কথাই সত্য। তাছাড়া অপি তো এমনিতেও জানবেই আমার ফোন যে চুরি হয়ে গেছে।
তারপর ওই ভাড়াটে লোকটি বলবে, সে এইসব ছবি বা ভিডিও ছড়াবে না এক শর্তে।শর্ত হলো অপিকে তার সঙ্গে দেখা করতে হবে।’
ফৌজিয়া ভাইয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। তারপর বললো,’ তুমি তো দেখছি বিরাট একটা হারামি!’
ভাইয়া বিশ্রীভাবে একটা হাসি হাসলো। তারপর ফৌজিয়াকে বুকের সঙ্গে শক্ত করে মিশিয়ে নিয়ে বললো,’ ফৌজিয়া, আমি যা চাই তা আদায় করি। তোমার চেয়ে কেউ এটা ভালো জানার কথা না।’
ফৌজিয়া সামান্য কেঁপে উঠলো। তবুও দেখলাম সে নিজেকে সংবরণ করলো। সামান্য হাসার চেষ্টা করে বললো,’ অপু, তো ওই লোকের সঙ্গে যদি অপি দেখা করে তবে তোমার কি লাভ বা এতে আমারই বা কি লাভ?’
ভাইয়া বললো,’ লাভ আছে। তখন আমি বাসায় থাকবো না। অফিসের কাজের নাম করে তোমায় নিয়ে সিলেটে চলে যাবো।আমরা ঘুরবো,দৌড়াবো। বেড়াবো।আর রাতভর একে অপরকে শুষে নিতে থাকবো।’
ভাইয়া আবার বিকৃত একটা হাসি দিলো।
ফৌজিয়া বললো,’ সেসব না হয় বুঝলাম, কিন্তু অপি যে দেখা করবে, এরপর কি হবে?’
ভাইয়া বললো,’ আমার ছোট ভাই তপু, হারামজাদাটা অপিকে বিরাট বিশ্বাস করে। আমার মাও বিশ্বাস করে। তাদের অবস্থা এমন যে, যেন অপি এই ঘরের বউ না, এই ঘরের মেয়ে।তো, আমি যখন বাসায় থাকবো না, এই সময় ফৌজিয়া তার মান সম্মান রক্ষা করতে, নিজের ছবি আর ভিডিও যেন ছড়িয়ে না যায় এই জন্য সে যেভাবেই হোক আমার ভাড়া করা লোকটার সঙ্গে দেখা করতে যাবে।আমি যাকে ভাড়া করেছি তাকে আগেই বলে রেখেছি সে যেন নিজে এসে সুযোগ মতো অপিকে আমাদের বাসার সামনে থেকে গাড়ি করে নিয়ে যায়। এমন ভাবে নিয়ে যাবে যেন বাসার কেউ না কেউ দেখে।যেন ওদের ভেতর সন্দেহের তীরটা ঢুকে যায়।আর তার শরীরের সবগুলো গহনা খুলে রেখে দিবে।পরে আমায় দিয়ে দিবে এগুলো।এতে সন্দেহ আরো শক্তিশালী হবে।আর এরপর যখন মা আর তপু অপিকে সন্দেহ করতে শুরু করবে, এই সুযোগে আমি একটা কাজ করবো। আমার ফোনে থাকা ওর সব ছবি, ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দিবো। তবেই তো খেলা চুকে গেল।তপু আর মা এরপর অপিকে নিজ থেকেই ঘাড় ধরে ঘর থেকে বের করে দিবে।এমন অসভ্য, নোংরা মেয়েকে তারা কিছুতেই আর সহ্য করবে না! আর তখন আমার আর তোমার পথ পরিষ্কার। তোমার আর আমার বিয়ে তখন আটকায় কে ফৌজিয়া?’
বলে ভাইয়া আবার বিকৃত এক হাসি হাসলো।
ফৌজিয়া এবার ভাইয়াকে বললো,’ আমি পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ দেখেছি, কিন্তু তোমার মতো খারাপ মানুষ আর একটিও দেখিনি অপু !’
ভাইয়া এবার ফৌজিয়ার কাঁধের উপর দিয়ে তার মুখটা নিলো। তারপর বললো,’ সেই যে ষোল বছর বয়সী তোমার শরীর পেয়েছিলাম, এরকম একটা শরীরের জন্য আমি পুরো দুনিয়া জ্বালিয়ে দিতে পারি ফৌজিয়া।আমি সব, সবকিছু করতে পারি।’
ফৌজিয়া বললো,’ ভুল বলেছো অপু।তুমি আমার শরীর পাওনি।জোর করে কেড়ে নিয়েছিলে।’
ভাইয়া কি যেন বলতে চাইলো, এরমধ্যেই ও ঘর থেকে কে যেন ডাকলো।কাজের মেয়ে হয়তো।বললো,’ আপা, আপা, মামা অজ্ঞান হয়ে গেছে।’

এইটুকু ভিডিওই ছিল।ভিডিও শেষ হলে ফৌজিয়া আবার কাঁদলো।বললো,’ বাবা, সেদিন সবকিছু শুনে ফেলেছিল।বাবা জেনে গিয়েছিল, বাবা মারা গিয়েছিল হার্ট ফেল করে সেদিনই।’
এরপর আবার সে আবার বলতে শুরু করলো।বললো,’আমার এসএসসির রেজাল্টের দিন, খুশি হয়ে তোমার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে মিষ্টি কিনে নিয়ে যখন তোমাদের বাসায় যাই, গিয়ে দেখি তুমি বা আন্টি তোমরা দুজনের কেউই বাসায় নাই। খালার বাসায় নাকি বেড়াতে গিয়েছিলে।অপু শুধু বাসায় ছিল। সে বললো, একটু বসতে।তোমরা নাকি আধ ঘন্টার মধ্যে এসে যাবে।গাড়িতেই আছো।আমি সেদিন বসলাম।আর সেদিনই পৃথিবীর নির্মমতম ঘটনাটি আমার সঙ্গে ঘটলো। কলঙ্কের কালো অমানিশা নেমে আসলো আমার পবিত্র, সুন্দর, ফুটফুটে জীবনে। তোমার ভাইয়া‌ নামের কুকুরটা সেদিন আমার উপর চড়াও হয়েছিল।আমি রেপড হই সেদিন তপু।আমি রেপড হই! এই যে চেইন, ছেঁড়া চেইন।যে চেইনের কথা তুমি বললে , মেলা থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল।তা চুরি হয়নি।আমি ওর কাছ থেকে ছুটতে গিয়ে ধস্তাধস্তির সময় এটা ছিঁড়ে গিয়েছিল।আর কিভাবে যেন আমার জামায় এঁটে যায় এটা।আমি এটা রেখে দিয়েছিলাম।যেন এই দিনটা কোনদিন না ভুলি।যেন, এই চেইন আমায় সব সময় প্রতিশোধ পরায়ণ করে তুলে।আমি আর কাউকে কিচ্ছু বলিনি এই বিষয়ে।আমি জানতাম, তখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, তোমার ভাইয়া সেই দলের ভালো পর্যায়ের লিডার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব তার কথায় চলে। পুলিশের আইজিপির মেজো ভাইয়ের সঙ্গেও তোমার ভাইয়ার দহরমমহরম সম্পর্ক ছিল।আমি জানতাম, এসব নিয়ে কথা উঠলে, কিংবা মামলা দিলে তার কিছুই হবে না। বরং সারা দুনিয়ার লোক আমাকেই দোষারোপ করবে।যা ঘটেছে তা উল্টে যাবে। বরং আমার নামে একজন ভালো মানুষের মানহানির মামলা হবে।
তখন থেকেই আমি চুপচাপ হয়ে যাই একেবারে। নিজের পথে নিজে হাঁটতে থাকি। এরপর বড় হই।ডাক্তার হই। কিন্তু আমি কিছুই ভুলি না আর।আমি অপেক্ষা করি। শুধু সুযোগ খুঁজতে থাকি। তুমি মিথ্যে মামলায় ফেঁসে গিয়েছিলে এটা শুনে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল আমার। এরপর যখন ফিরলে তখন তোমার সঙ্গে আবার বন্ধুত্ব করি। বন্ধুত্ব করি এই জন্য যে, যদি এই সুযোগে হলেও তোমার ভাইয়ের কাছে যাওয়া যায়। এরপর সেই সুযোগ এলো।অপি ভাবী একদিন এলো এবরোশন করাতে।আর তোমার ফোনে বার বার ভাবীর ছবি দেখেছি বলে ভাবীকে খুব সহজেই চিনে ফেলি আমি। তারপর কি কি হয়েছে এর সব তুমি তো জানোই। ভাবীর থেকে অপুর নম্বর নিয়ে নেই আমি।আর আমি জানতাম সে কতোটা নারী লোভী।সুযোগটা কাজে লাগাই।আর খুব সহজেই সে আমার ফাঁদে পা ফেলে। এমনকি আমার প্রতি সে এতোটাই উদগ্রীব হয়ে উঠে যে আমার জন্য সে সব করতে পারে।আমায় তার সব দিয়ে দিতে পারে। এই সুযোগে তার মেমোরি থেকে সবগুলো ফাইল শেয়ার করেও নিয়ে নেই আমি।
এখন তুমি বলো আমি খারাপ মেয়ে কি না? আমি এইসব কিছু করেছি শুধু আমার সঙ্গে করা অ*নাচারের শাস্তি দেয়ার জন্য।এটা কি পাপ? তোমার কি মনে হয় তপু? ‘
আমার রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বোধবুদ্ধি হারিয়ে যাচ্ছে যেন।কি করবো না করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।যাকে আমি ভাইয়া ডাকি, সে একজন ধ*র্ষক! ফৌজিয়ার বাবা তার জন্যই হার্ট ফেল করে মারা যায়! সে একটি মৃত্যুর কারণ! সে মহসিন ভাইয়ের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করার কারণ! সে অপি ভাবীর মতো একটা মাটির মানুষের জীবন নষ্ট করে দেয়ার কারণ!
আমার ইচ্ছে করছে, এই এক্ষুনি গিয়ে ওকে খু*ন করি নিজের হাতে। এক্ষুনি। নয়তো আমি শান্তি পাবো না। পাগল হয়ে যাবো আমি!
আমি ফৌজিয়াকে বললাম,’ ফৌজিয়া, তোমার পি*স্তলটা দিবে আমায়।আমি গিয়ে নিজের হাতে ওকে খু*ন করে আসি।প্লিজ দিবে!’
ফৌজিয়া বললো,’ উঁহু। আমার প্রতিশোধ শুধু আমিই নিবো। শুধু আমি।একা আমি।’
বলে সে আমায় বললো, তুমি আর অপি ভাবী ও ঘরে চলে যাও। কুইক।’
ডান পাশের ঘরটা দেখিয়ে দিলো আমাদের।আমরা গিয়ে ঘরের ভেতর থেকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওখান থেকে সব শোনা যায়।জানলা দিয়ে দেখা যায়। কিন্তু ফৌজিয়া বাইরে থেকে দরজাটা আটকে দিয়েছে।
এরপর দেখলাম ফৌজিয়া ভাইয়াকে ফোন করলো।বললো,’ অপু, এক্ষুনি আসো তো আমার বাসায়।কাজের মেয়ে আসেনি আজ। এখন এই মুহূর্তে তোমাকে আমার প্রয়োজন। ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন। আমার শরীর তোমায় চাইছে।বুঝলে! ‘
ভাইয়ার আসতে সময় লাগে চল্লিশ মিনিটের মতো। ভাইয়া এসে সোফায় বসে। ফৌজিয়া তখন দুটি রঙিন বোতল নিয়ে আসে।ব*দকা না অন্য জাতের ম*দ এটা দূর থেকে চেনা যাচ্ছে না। তাকে দেখা গেল গ্লাস ভরে ভরে ভাইয়াকে খাওয়াতে। ভাইয়া ঢকঢক করে গিলছে। এরপর ভাইয়াকে সে জড়িয়ে ধরে। সোফায় নিয়ে শুয়ে পড়ে। তারপর মুহূর্তে সোফার ওপাশ থেকে রশি টেনে নিয়ে ভাইয়াকে বেঁধে ফেলে।এতোটা তরল গেলায় ভাইয়ার শরীর এমনিতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে তখন। এই জন্য খুব সহজেই এটা করতে পারে ফৌজিয়া। এরপর আমাদের চোখের সামনেই ক্ষীপ্র বাঘিনীর মতো চা*কুটা বের করে নিয়ে ভাইয়ার উপর হামলে পড়ে ফৌজিয়া। তারপর যা করার সে তা করে ফেলে এক মুহূর্তে।অপু নামের কুকুরটা তখন গগণবিদারী চিৎকার করতে শুরু করে। জীবন ভিক্ষা চাইতে থাকে। আকুতি মিনতি করতে থাকে। আহাজারি করতেই থাকে আর করতেই থাকে।জ*বেহ করা গরুর মতো লাফাতে থাকে। কিন্তু বাঁধা থাকায় অতোটাও নড়তে পারে না!
আমার কানে এসে এসব আকুতি মিনতি আর আহাজারি বাজে না কেন জানি।আমি কেবল তখন শুনতে পাই, একটা বুনো কুকুর, ঘেউ ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করছে।
আমি অপি ভাবীকে বলি, ভাবী শুনতে পাচ্ছো তুমি, একটা কুকুর কিভাবে ঘেউ ঘেউ করছে!’

ফৌজিয়া তখন অপু নামের কুকুরটার বুকের উপর পা রাখে। তারপর বলে,’ নারীরা দেবীর মতো। দেবীকে সম্মান দিলে, দেবীরা স্বর্গের সুখ দেয়। জীবন রাঙিয়ে দেয় ভালোবাসায় ‌।আর অসম্মান করলে নরকের যন্ত্রণায় পুড়িয়ে মারে কুত্তা!’

অপু চিৎকার করে কাঁদে। আহাজারি করে।
আর ফৌজিয়া এতো জোরে জোরে হাসতে থাকে যে তার হাসির শব্দে অপু নামক কুকুরটির আর্তনাদ কোথায় যেন বিলীন হয়ে যায়।

ফৌজিয়া অপুর বুকে গু*লিবিদ্ধ করে আরো আধ ঘন্টা পর। পরপর কয়েক রা*উন্ড গু*লি ছুঁড়ে। বিকট শব্দে যেন কান ফেটে যেতে চায়।আমি আর অপি ভাবী কানে আঙুল চেপে ধরি।আর জানলার স্বচ্ছ কাঁচের ওপারে দেখি ছটফট করতে করতে অপু নামের কুকুরটির মুখ থুবড়ে পড়া। ভয়ানক যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃ*ত্যু হয় একটি নোংরা কুকুরের। তার মৃ*ত্যুর মাধ্যমে কলঙ্ক এবং পাপ মুক্ত হয় আমার পরিবারের।

এরপর ফৌজিয়া এসে দরজা খুলে দেয়। সে কাঁদছে। আমি বললাম,’ কাঁদছো কেন ফৌজিয়া? তোমার তো ভীষণ আনন্দ হবার কথা? তুমি তোমার প্রতিশোধ নিতে পেরেছো? ‘
ফৌজিয়া আমায় জাপটে ধরলো। শক্ত করে। তারপর বললো,’ আনন্দে কাঁদছি আমি।তপু, আনন্দে কাঁদছি।আজ আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। সবচেয়ে বেশি খুশির দিন।এই পৃথিবীতে আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। আমার এইম ইন লাইফ এখন পরিপূর্ণ হয়েছে।’
এরপর ফৌজিয়া নিজেই ফোন করে দিলো থানায়।তার বাসার ঠিকানা বললো।বললো, এখানে একটা খু*ন হয়েছে।
পুলিশ আসতে সময় লাগলো খানিক। এরমধ্যে যা করার আমি তা করে ফেলেছি। ফৌজিয়ার মাথায় সামান্য আঘাত করতেই সে টাল মাটাল হয়ে দূরে ছিটকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। তারপর ওর হাত থেকে চকচকে কালো রঙের পি*স্তল আর চা*কু দুটোই কেড়ে নেই। তারপর বলি, ‘ খবরদার! বাড়াবাড়ি করলে এক্ষুনি ভবলীলা সাঙ্গ করে দিবো তোমার।অপি ভাবীর। চুপচাপ ওখানেই থাকো। যেভাবে আছো।’
ফৌজিয়া ভীষণ অবাক হয়েছে। নিজেকে সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সে আমার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইল শুধু।আর অপি ভাবী একেবারে দাঁড়ানো থেকে দেয়াল ঘেঁষে মুখ চেপে বসে পড়লো। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে অপি ভাবী।আর আমি হাসছি। শব্দ করে।হা হা হা করে হাসছি।
ফৌজিয়া রাগ অথবা ঘেন্নায় আমার দিকে একদলা থুথু ছিটিয়ে দিয়ে বললো,’ কুত্তার বাচ্চা।তোরা সবাই কুত্তার বাচ্চা।’
আমি আবারো হাসলাম।
ততোক্ষণে পুলিশ এসে গেছে। পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে অ*স্ত্র জমা দিয়ে আমি আত্মসমর্পণ করলাম। এবং স্বীকারোক্তি দিলাম, বললাম, ‘আমার নিজের ভাইকে আমিই নির্মম ভাবে হ*ত্যা করেছি।’
অপি ভাবী গলা ছেড়ে কাঁদছে। বলছে, ‘ না না।ও মিথ্যে বলছে।ও মিথ্যে বলছে।’
ফৌজিয়া পাগলের মতো উঠে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।কান্নায় মরিয়া হয়ে উঠে বললো,’ না।ও কিচ্ছু করেনি।সব আমি করেছি। আল্লার কসম আমি করেছি।’
পুলিশের লোকেরা ওসব শুনলো না।তারা দেখলো আমার হাতেই মারণা*স্ত্র।সব প্রমাণাদি আমাকেই খু*নি চিহ্নিত করে।তারা আমার হাতেই কারার শেকল পরিয়ে দিলো। তারপর আমায় নিয়ে যেতে লাগলো গাড়ির দিকে।
অপি ভাবী দৌড়ে এগিয়ে আসতে লাগলো আমার কাছে। ফৌজিয়া আমায় ছাড়তে চায় না কিছুতেই। কাঁদে। আঁকড়ে ধরে রাখে। পাগলামি করছে বড়।
পুলিশের লোকেরা ওদের বাঁধা দিলো। আটকে দিলো। আমি যখন ওদের থেকে অনেকটা দূরে চলে এলাম একেবারে গাড়ির কাছে। এবার গাড়িতে উঠে যাবো।তখন পেছনে ওদের দিকে তাকিয়ে আমার গলার সবটুকু আওয়াজ দিয়ে বললাম-
” আমি জানি আমার হয়তো ফাঁ*সি হয়ে যাবে । হোক। এই যে কারার ফাঁ*সিতে আমার মৃ*ত্যু হবে। এই মৃ*ত্যু বড় আনন্দের ‌। নারীর স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে পারে কজন পুরুষ? ফৌজিয়া, অপি ভাবী, তোমরা সাক্ষী থেকো, প্রতিটা ঘরেই একদিন এমন করে একজন করে তপুর জন্ম হবে।আর এই তপুরাই এনে দিবে এ দেশে নারীর মুক্তির স্বাদ।তারাই উড়াবে নারীর বিজয়ের রঙিন নিশান। একদিন এদেশের নারীরাই গাইবে নারীর বিজয়ের গান।বিদায়, নারী! খোদা হাফেজ!'”

___সমাপ্ত___

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে