#আড়ালে_কে_নাড়ে_কলকাঠি
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আমি ভেবেছিলাম মার এই কঠিন রাগ কিংবা অভিমান অতো সহজে ভাঙবে না।মা সহজে বাসায় আসবেন না। ভাইয়া বাড়ি ফিরলে সে যদি গিয়ে মায়ের কাছে ক্ষমা চায়, অনুরোধ করে তবেই হয়তো মা ফিরবেন। কিন্তু আমায় চমকে দিয়ে পরদিন সকাল বেলায়ই মা বাসায় এসে উপস্থিত হলেন।মামার বাসায় তিনি যাননি।বড় খালার বাসা থেকে সরাসরি এসে পড়েছেন।
মা আসার পর মাকে সবকিছু খুলে বললাম। বিশেষ করে মহসিন ভাই যে বললো ভাইয়া ট্রেনিংয়ে বা অফিসের কোন কাজে কোথাও যায়নি। সে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।আর আমাদের কাছে,মানে আমার কাছে বলে গিয়েছে সিলেট যাচ্ছে।এর সবকিছুই মাকে বললাম।
মা এই কথা শুনে চমকে উঠলেন। তিনি বিড়বিড় করে জপতে লাগলেন, আল্লাহ, আমি যা ভাবছি তা যেন না হয়। আল্লাহ আমার ছেলেকে নাফরমানদের অন্তর্ভুক্ত করো না তুমি!
মা আমায় কাছে ডাকলেন।আমি কাছে গেলে তিনি বললেন,’ তপু, তুমি এক্ষুনি অপুর অফিসে যাও।মহসিনের কথার উপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। তুমি ওখানে গিয়ে ওর বসের কাছ থেকে, এবং অন্যদের থেকেও জানবে, আসলে তোমার ভাইয়া ছুটি নিয়ে গিয়েছে নাকি অফিসের কাজে গিয়েছে। এক্ষুনি যাও তুমি।দ্রুত।সব জানার চেষ্টা করবে।’
আমি বের হতে যাবো ঠিক তখনই ভাবী তার ঘর থেকে এক রকম দৌড়ে এলো। এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,’ তোকে অফিস যেতে হবে না তপু।অফিস গিয়ে কোন লাভ হবে না।লাভ হবে আমি যদি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই, তবেই।’
আমি চমকে উঠলাম ভাবীর কথা শুনে।আর মা চোখ বড় বড় করে তাকালেন ভাবীর দিকে। তাকিয়ে বললেন,’ কি বললে তুমি? ‘
অপি ভাবীর চোখ থেকে তখন টপটপ করে জল গড়িয়ে নামছে গালে। সে তার বা হাতের পিঠ দিয়ে তার গালে লেগে থাকা সেই জল মুছতে মুছতে ভেজা চুপসানো গলায় বললো,’ মা, আমি এখানে আর এক দণ্ডও থাকবো না।কেউ আমায় এখানে আর রাখতে পারবে না।কারোর অধিকার নাই আমায় এখানে আটকে রাখার!’
ভাবী রাগে কাঁপতে কাঁপতে এই কথাগুলো বললো।
মা আর আমি বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মা দূর্বল গলায় বললেন,’ আমি কি জানতে চাইনি তোমার কাছে , কি হয়েছে? কি হচ্ছে এই বিষয়ে? তুমি বলেছিলে কিছু আমায়? বলো বলেছিলে?’
অপি ভাবী রাগে তার গলার আওয়াজ আরো ধারালো করে বললো,’ না বলিনি। কেন বলিনি জানেন? ‘
মা বললেন,’ কেন?’
ভাবী তার কান্না,রাগ এইসব কিছু থামিয়ে হাসলো। অট্টহাসি। তাকে কেমন এলোমেলো দেখাচ্ছে এখন। তাকে একেবারেই অচেনা মনে হচ্ছে। এই যে এতো নম্র,ভদ্র আমাদের অপি ভাবী। এখন তাকে দেখলে মনে হবে ভদ্রতার ছিটেফোঁটাও তার মধ্যে নাই! সে এক ছন্নছাড়া, ক্ষ্যাপাটে মেয়ে লোক।
ভাবী তার হাসি শেষ করে বললো ,’ কারণ আমি একটা নষ্ট মেয়ে। খারাপ মেয়ে। বুঝলেন? ‘
মা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।আমি মাথা নত করে রেখেছি। ভাবীর মুখ থেকে এমন সব কথা,তাও মার সামনে, মাকে উদ্দেশ্য করে বলা, এসব কখনোই আশা করিনি!
ভাবী বললো,’ আপনাদের অতো টেনশনের দরকার নাই। আপনাদের ছেলে যে দেশেই থাক না কেন, আমি আপনাদের বাড়ি থেকে চলে গেলে সে ঠিকই ফিরবে। কিন্তু আমি থাকলে আর কখনোই ফিরবে না।’
মা কিছু বললেন না আর। একেবারে চুপ হয়ে গেলেন।আমি বললাম,’ ভাবী, কি হয়েছে তুমি ভেঙে বলো প্লিজ। তুমি কিছু না বললে আমরা বুঝবো কি করে কি সমস্যা হয়েছে আর কিইবা এর সমাধান! ‘
ভাবী বললো,’ কিছুই আর বুঝতে হবে না তপু। কোন কিছুর আর সমাধান করতে হবে না তোর, তোদের।আমি আজ এক্ষুনি এই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।চিরতরে চলে যাচ্ছি। ‘
বলে ভাবী এক কাপড়েই বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।আমি তার হাত ধরে আটকাতে চাইলাম।মা গিয়ে সামনে দাঁড়ালেন। কিন্তু কিছুতেই আর কিছু হলো না। সে চলেই গেল।যাওয়ার সময় গেটটা যখন পেরুবে ঠিক তখন একবার পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আবার বা হাতের পিঠ দিয়ে তার চোখ মুছলো
তারপর হনহন করে হেঁটে চলে গেল।আমি তাড়াহুড়ো করে তার পেছন পেছন বেরুলাম।মাও বেরুলো। ততোক্ষণে ভাবী সিএনজি করে ওখান থেকে চোখের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে ।
‘
ভাবী চলে যাবার পর মা একেবারে মনমরা হয়ে গেলেন। তাকে ভীষণ দূর্বল দেখাচ্ছে। তিনি আমায় বললেন,’ আমি এরকম অসহায় কোনদিন হইনি রে তপু! আমার ঘরে এসব কি হচ্ছে! কেন এমন হচ্ছে! নিশ্চয় আমার ঘরের কেউ একজন ভয়াবহ কোন পাপ করেছে। কিন্তু কে করেছে এই কঠিন পাপ! এই পাপের আগুনেই আমার স্বর্গের ঘর আজ দাউ দাউ করে জ্বলছে!
মা কাঁদছেন। তার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে গালের উপর। তিনি তার হাত দিয়ে কিংবা আঁচল দিয়ে সেই জল মুছছেন না।
আমি এই দৃশ্য মোটেও আর সহ্য করতে পারছি না। ভীষণ ভীষণ খারাপ লাগছে আমার। ইচ্ছে করছে আমিও চিৎকার করে কাঁদি। কিন্তু সবাই কি আর প্রকাশ্যে কাঁদতে পারে? আর সবাই পারলেও আমি পারি না! কিন্তু এই যে ভেতরের কান্না। ভেতরের ভাঙচুর।এ বড় কঠিন।এ বড় কষ্টের।যন্ত্রণার!
‘
বিকেল বেলা ভাইয়ার অফিসে গেলাম। ভাইয়ার বস এবং তার অন্যান্য কলিগদের থেকে জানতে চাইলাম, ভাইয়া আসলে ছুটি নিয়েছে নাকি অফিসের কাজে গিয়েছে।তারা সবাই বললো, ছুটি নিয়েছে।এক সপ্তাহের জন্য ছুটি।
আজ ছুটির পাঁচদিন হয়েছে।আর দুদিন। এরপর তো নিশ্চয় ভাইয়া ফিরবে।অফিস তো করবে এসে।
কিন্তু ভাবী যে হঠাৎ করে এভাবে কেঁদে কেটে আর রাগ দেখিয়ে চলে গেল।যাবার সময় বললো, সে গেলেই সব সমাধান হয়ে যাবে। ভাইয়া বাড়ি ফিরবে। তাহলে কি ভাইয়ার পথের কাঁটাই ছিল অপি ভাবী? ভাবী চলে যাওয়া মানে ভাইয়ার পথের কাঁটা দূর হওয়া। আমি কি এটাই ধরে নিবো তবে?
‘
রাত তখন এগারোটা বিশ মিনিট। শুয়ে আছি আমি। কদিন ধরে ফিকশন, ননফিকশন কোন ধরনের বই -ই ধরছি না আমি।দু মাস পর বই মেলা।এক প্রকাশক পেছনে লেগেছে খুব করে।একটা উপন্যাস লিখে দিতে। আমিও অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম এ বছর একটা বই’বের করবো।বইয়ের নামও ঠিক করে রেখেছিলাম। ‘নারী ‘ । ভেবেছিলেন একটি সাহসী মেয়ের সব বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে জীবন জয়ের একটা উপন্যাস লিখবো।লিখাও শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়। এরমধ্যেই তো সমস্যাটা শুরু হলো। ভাইয়া -ভাবীর মধ্যে ঝামেলা। মাঝখানে ফৌজিয়ার দেয়া উদ্ভট তথ্য।আর এখন তো একটার পর একটা জটিলতা সামনে আসছেই!
এসব ভাবছিলাম আর ভাবছিলাম। এরিমধ্যেই
মহসিন ভাই আমায় ফোন করলো।বললো,’ তপু, এসব কি হয়ে গেল রে ভাই!’
মহসিন ভাই খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ গলায় বললেন।
আমি বললাম,’ কি হয়েছে ভাই? ‘
মহসিন ভাই অবাক হলেন। বললেন,’ তুমি কিছুই জানো না? দেখোনি এখনও কিছু? ‘
আমিও অবাক হলাম। বললাম,’ না তো। আপনি ভেঙে বলুন।’
মহসিন ভাই বললেন,’ তোমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর কি এটিই যেটাতে আমি কল করেছি?’
আমি বললাম,’ জ্বি ভাই।’
উনি বললেন,’ অনলাইনে যাও তাহলে। এক্ষুনি। গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চেক করো।একটা লিংক দিচ্ছি দেখো। কিন্তু আমার এখনও এটা বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুতেই।মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।অপি ভাবী এমন নোংরামি কিভাবে করতে পারলো! ছিঃ! ‘
আমি এখনও অনলাইনে যাইনি। কিন্তু আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে। কিসের লিংক দিয়েছেন মহসিন ভাই?
‘
ওয়াইফাই কানেক্ট করে হোয়াটসঅ্যাপে গিয়েই দেখি মহসিন ভাই একটা লিংক পাঠিয়েছেন।ড্রাইভ লিংক।ড্রাইভে গিয়ে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।ড্রাইভে অনেক গুলো ন্যুড ছবি, আর স্ক্যান্ডাল ভিডিও। ওখানে শুধুমাত্র অপি ভাবীকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ভিডিওতে একজন পুরুষ লোকও আছে। কিন্তু পুরুষ লোকটির চেহারা দেখা যাচ্ছে না। চেহারা না দেখিয়েই এই ভিডিও করা হয়েছে। তবে এইসব ছবি কিংবা ভিডিও আমাদের বাসার বাইরে করা।মনে হচ্ছে কোন রিসোর্টে। সাধারণত বাসার রুম গুলো এমন হয় না কখনো!
আমার মাথা আর কাজ করছে না।মনে হচ্ছে এক্ষুনি মাথা ঘুরে আমি লুটিয়ে পড়বো জমিনে। আমার শরীর ভীষণ রকম কাঁপছে।মনে হচ্ছে ভীষণ রকম ভূমিকম্প হচ্ছে।আর সবকিছু ভেঙে ছারখার হয়ে এক্ষুনি আমার মাথার উপর ভেঙে পড়বে। মহসিন ভাইকে যে একটা মেসেজ করবো,টাইপ করার এই শক্তিটুকু পর্যন্ত আমি পাচ্ছি না আঙুলে।
তবুও কষ্ট করে আমি মহসিন ভাইকে একটা মেসেজ করলাম। লিখলাম,’ আপনি এই লিংক কোথায় পেয়েছেন মহসিন ভাই?’
‘
‘
#চলবে
‘