আজল পর্ব-১২

0
333

#আজল
#পর্ব-বারো

২৬.

দুজনার হাতে দু মগ কফি নিয়ে আবার বারান্দায় বসেছে ফুয়াদ আর সাঁচি। কফি টা ফুয়াদ বানিয়েছে। কফি না থাকলে নাকি কথা বলে মজা পাওয়া যায় না! এটা ফুয়াদের কথা, সাঁচির অবশ্য একটা হলেই হয়, চা কিংবা কফি? কোনোটাতেই কোনো এ্যালার্জি নেই। হঠাৎই ফুয়াদ বললো-“আচ্ছা, তোমার জীবনে কোনো গোপন ব্যাপার নেই?”
“সে রকম বলার মতো কিছু নেই। আমার মতো এতো খ্যাতমার্কা মেয়েদের কেই বা পচ্ছন্দ করবে? আর কেউ করলে পাত্তাই বা দিচ্ছে কে?”
“হুম, বুঝলাম।”
“প্লিজ অন্য কথা না বলে আপনার বাকী কথাটা শেষ করুন।”
ফুয়াদ একটু হাসলো মনে হয়। বারান্দা অন্ধকার হওয়ার কারনে সাঁচি ঠিক বুঝতে পারলো না। চারিদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক সেই সাথে মশারাও সমান তালে গান শুনাচ্ছে। ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ঠান্ডা বাতাসে মাঝে মাঝে গা টা কেঁপে কেঁপে উঠছে। সাঁচি পা তুলে গুটিসুটি হয়ে বসে গায়ের চাদরটা ভালো মতো জড়িয়ে নিলো।
“আমি হলে এসে উঠলাম। ক্লাস শুরু হলো যথারীতি। কিছু বন্ধু বান্ধব জুটিয়ে ফেললাম অল্প দিনের মধ্যেই। আমার দিনগুলো বেশ মজায় কাটতে লাগলো। একে তো স্বাধীন জীবন তার উপর নিজের আশেপাশে বন্ধু বান্ধব এর খুব ভালো একটা গ্রুপ পেয়ে জীবনটা যেন একেবারে অন্য রকম মজাদার হয়ে গেল। তবে যাই করি না কেন পড়ালেখার সাথে কোনো আপোশ করি নাই। যেদিন সারাদিন ব্যস্ত থাকতাম সেদিন রাতে পড়ে কাভার দিয়ে দিতাম। যার ফলস্বরূপ বরাবরের মতো ক্লাস টেষ্ট আর মিডটার্মে ভালো ফল।
আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, মিডটার্মের রেজাল্ট এর পর পরই ছিলো বৈশাখ। আমি অবশ্য এসব দিবস টিবস এ্যভোয়েড করতাম। সেবারও করেছিলাম। সারাদিন বের হইনি। সন্ধ্যায় ঢাকা ভার্সিটিতে একটা কনসার্ট ছিলো, বন্ধুরা জোর করে ধরে নিয়ে গেল। এসব কনসার্ট এ আমি জীবনেও যাই নাই। এতো কোলাহল আমার ভালো লাগে না।

যাইহোক, বেশ নামকরা শিল্পীরা এসেছিলেন সেই কনসার্ট এ। আমি কিছুক্ষণ গান শুনলাম, তারপর বিরক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম, চা খাবো ভাবছিলাম। বেশ একটু হেঁটে নিরিবিলি দেখে একটা চায়ের দোকানের সামনে বসলাম। চায়ের কথা বলতেই খেয়াল করলাম সামনে আমার এক ক্লাসমেট নাম মিলি মুখচোখ কালো করে বসে আছে। আমাকে দেখা মাত্রই ও বললো
” ফুয়াদ, তুই কি এখন এখানেই থাকবি নাকি কিছুক্ষণ ?”
“হ্যা রে, ওখানে অসহ্য লাগছে, এতো আওয়াজ, কান একেবারে গেল।”
“তাহলে প্লিজ আমার একটু উপকার করনা, ভাই?”
“হ্যা, বলনা। কি হইছে, তোরে এই রকম বিরক্ত লাগতেছে ক্যান?”
“আর বলিস না! এই যে আমার ফুপাতো বোন,রেহনুমা। পিচ্চিরে নিয়া আসছিলাম কনসার্টে কিন্তু ও এখন থাকবে না বলতেছে। কেবলই তো আসলাম এখনই যাইতে চাইতেছি না। তুই যদি না যাস তাইলে ওর সাথে একটু বস না ঘন্টাখানেক। ঐদিকে তনিমা, ফয়সাল ওরা সব আমার জন্য বসে আছে। আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে আসবো।”
আমি মিলির বোনটার দিকে তাকালাম, ফর্সা গোলগাল মুখ, হেংলা স্বাস্থ্য নিতান্তই বাচ্চা একটা মেয়ে। মেয়েটার চেহারার বিশেষত্ব হলো ওর চোখ, ওর টানা টানা গভীর চোখ দুটো যেন বিষাদের সাগর। অদ্ভুত দুঃখি ভাব নিয়ে সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। জাস্ট একবারই, কিন্তু কেন জানিনা আমার ভেতরটা নড়ে উঠলো। আমার ঐ মুহুর্তে মনে হলো, এরকম দুঃখী চেহারা, বিষাদময় মুখ আমি আগে কখনো দেখিনি। আমি একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। এই ঘোরের মধ্যেই আমি মিলিকে কখন হ্যা বললাম, মিলি কখন চলে গেলো আর মেয়েটাই বা কখন আমার সামনে এসে জড়োসড়ো হয়ে বসেছে আমি কিছুই টের পাইনি। বেশ অনেকক্ষণ বাদে আমার ঘোর ভাঙলো –
“এই যে শুনছেন, হ্যালো, কি হয়েছে আপনার! তখন থেকে দেখছি একইভাবে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন? কি হয়েছে? আপনি কি অসুস্থ ফিল করছেন?”
আমার সম্বিৎ ফিরলো-
“ওহ!সরি।আমি… আসলে..একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম…আচ্ছা, আপনি কি চা খাবেন?”
“আমাকে তুমি বলুন প্লিজ। অনেক ছোট হবো আপনার থেকে।”
চা ওয়ালা মামাকে দু কাপ রং চায়ের কথা বলে বসলাম মেয়েটার পাশে-
“তো তোমার নাম রেহনুমা? কোথায় পড়ো তুমি?”
“জ্বী আমি এবার এস এস সি দিলাম। রেজাল্ট এর অপেক্ষায় আছি।”
“ওহ! তুমিতে তাহলে পিচ্চি বাচ্চা একটা।”
আমার মুখ দিয়ে আপনাতেই বেড়িয়ে গেলো। আমার বলার ভঙ্গিতে ও হেসে দিলো, কিন্তু আমার মনে হলো ওর সে হাসি যেন চোখ ছুলো না।
“তো, এই বাচ্চা মেয়েটা বড়দের অনুষ্ঠানে কেন এসেছে, হুমম?”
“ভাইয়া, আমি তো একদম আসতে চাইনি। এমনিতেও আমার এসব হই হল্লা ভালো লাগে না। আজ আপু আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে। ”
“ওহ। কিন্তু তোমার কেন এসব ভালো লাগে না? তোমাদের বয়সি ছেলেমেয়েরা তো এসব বেশ এনজয় করে।”
” আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন আপনি একটা বুড়ো দাদা?? কত বড় হবেন আপনি আমার থেকে?? বড়জোর তিন বা চার বছর, তাই এমন দাদু দাদু ভাব??”
ওর কথা শুনে আমি হাসতে শুরু করলাম, কি মজা করে কথা বলে পিচ্চি? আমার হাসি যেন থামতেই চাচ্ছে না! অল্পতেই যেন ভীষন মজা পাচ্ছি। নিজেই অবাক হয়ে গেলাম! আজিব, এতো হাসছি কেন আমি? এতো কিসের খুশি আমার বোধগম্য হলো না?

সেদিন মিলি পাক্কা তিনঘন্টা পর এসেছিলো। আর আমি, এই তিন ঘন্টা যেন তিন মিনিটের মতো কেটে গেলো এই পিচ্চির সাথে গল্প করতে করতে। রেহনুমা অতো কথা বলতে চাইছিলো না, আমি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওর হিস্ট্রি জানার চেষ্টা করছিলাম। শুরুতে আমি ওকে যতটা জলি মাইন্ড মনে করেছিলাম ও মোটেও তেমনটা নয়।
এই তিনঘন্টায় আমি মনেহয় জীবনের সব কথাই বলে ফেলেছিলাম, আর ও নিরব শ্রোতা হয়ে শুনেছিলো কেবল। মাঝে মাঝে আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উওর দিচ্ছিলো শুধু। শেষে মিলি আসাতে রেহনুমা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল।

“তোমার কি বোর লাগছে শুনতে,সাঁচি?” ফুয়াদের আচমকা প্রশ্নে ঘোর কাটলো সাঁচির। ও তো সেই পুরনো দিনে চলে গেছিলো, যে গল্পে ফুয়াদ ওর নায়ক আর নিজেকে ওর রেহনুমা মনে হচ্ছিল, এমনই বুদ হয়ে শুনছিলো ফুয়াদের কাহিনী।
“নাহ! বোর লাগবে কেন? বেশ ভালোই তো লাগছিলো? বলুন আপনি…”
ফুয়াদ একটু অসস্তি বোধ করলো। নিজের স্ত্রীর কাছেই প্রাক্তনের গল্প করতে মোটেও ভালো লাগছে না ওর।
“তোমার কি ঘুম পাচ্ছে? চাইলে কালকেও বলতে পারি? অথবা শর্টে বলে শেষ করে দিতে পারি?”
“নাহ, প্লিজ। বলুন না, আজ যতটুকু পারা যায় বলুন। আর প্লিজ ডিটেইলস বলুন। কোনো কিছুই বাদ দেবেন না। আমার শুনতে ভালো লাগছে….” সত্যি কথাটাই বললো সাঁচি।
আবার বলতে শুরু করলো ফুয়াদ-
” সেদিনের পর থেকে আমি কিছুতেই রেহনুমা কে
ভুলতে পারছিলাম না। বিশেষ করে ওর বিষাদময় চোখ দুটো আমাকে ঘুমাতে দিতো না। কি অদ্ভুত ব্যাপার, আমার মধ্যে আবার কবিতারা ফিরে আসলো। আমি আবার দিনরাত শুধু বিভিন্ন কবিতার বই পড়তে শুরু করলাম, নেশারুর মতো। রেহনুমার চোখদুটো মনে করে দু একটা কবিতাও লিখে ফেললাম। কেমন যেন মন বসছিলো না পড়ালেখায়। নিজের অজান্তেই
পড়ালেখার থেকে বেশ অনেকটা দুরে সরে যাচ্ছিলাম। ক্লাসেও মন বসে না, চোখের সামনে শুধু দুটো উদাস বিষাদময় চোখ ভেসে বেড়ায়। কয়েকদিন মিলিকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছি কিন্তু লজ্জায় আর কিছু জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। পাছে ও কিছু বুঝে ফেলে? সবকিছু মিলে আমি অকুল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। ফলাফল স্বরুপ আমি ক্লাস টেস্ট গুলোতে জিরো পেতে শুরু করলাম। আমি চেষ্টা করতাম পড়ার বাট পারতাম না। রেহনুমা কে আরেকবার দেখার ইচ্ছা আমার ভেতরকার আমিকে পাল্টে দিচ্ছিলো। না পারতে আমি একদিন মিলিকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, রেহনুমার কথা। ও কেমন একটা নাক সিটকানো ভাব নিয়ে জবাব দিলো, রেহনুৃমার মা মানে ওর ফুফু নাকি কার হাত ধরে পালিয়ে গেছে অনেক আগেই, যখন রেহনুমার বয়স আট। এতদিন ও বাবার সাথে থাকতো। কনসার্টের দিন ওর বাবার বিয়ে ছিলো….মানে দ্বিতীয় বিয়ে আরকি…তাই ওর নানি… ওকে অনুরোধ করেন রেহনুমাকে নিয়ে আসতে। রেহনুমা যাতে বাবার বিয়ের ব্যাপারটা টের না পায়। ওর বাবা নিজে বিয়ে করবেন বলে রেহনুমার পরীক্ষা হওয়ার পর পরই ওকে ওর নানুর কাছে রেখে যায়। ওর বাবা রেহনুমার নানুকে অনুরোধ করেছিলেন তার বিয়েতে থাকতে। কিন্তু রেহনুমা বাসায় থাকলে সেটা সম্ভব হতো না, তাই ওকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সেদিন আমি হলে ফিরে বাথরুমে ঢুকে অনেক কেঁদেছিলাম, জানো? এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে জীবনে কতকিছুই না দেখে ফেলেছে! ওর চোখের এত উদাসিনতা আর বিষাদের স্তুপ এর কারন টা আমি বুঝে গেছিলাম। বাবা মায়ের ভালোবাসাহীন ওর জীবনটা চিন্তা করেই আমার ভেতরটা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল। কিছুতেই আমার কান্না বন্ধ করতে পারছিলাম না। আমার এতোদিন মনে হতো আমিই হয়তো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী দুঃখী যার জীবনে কোনো স্বাধীনতা নেই, যে জীবনে কোনো ইচ্ছা পূরন করতে পারেনি। অথচ দেখ, রেহনুমা তার জীবনে এখন পর্যন্ত যা সয়েছে আমি তার ছিটেফোঁটাও দেখিনি।
নিজেকে অনেক কষ্টে শান্ত করে আমি বাথরুম থেকে বের হলাম। বিছানায় বসলাম, যদিও মনে প্রচন্ড অস্থিরতা, আমার শুধু মনে হচ্ছিল…আমি রেহনুমার কাছে ছুটে যাই, ওর হাত দুটে ধরে বলি-
” তুমি আর কষ্ট পেয়ো না রেনু, তোমায় আর কষ্ট পেতে দেবো না আমি…আজ থেকে তোমার সমস্ত দুঃখ আমার আর আমার সব সুখগুলো কেবল…কেবলমাত্র তোমারই।”
আবার আমি আমার চিন্তাগুলো গা ঝাড়া দিয়ে দুরে ঠেলতে চাই, ভাবি… এসব কি ভাবছি আমি!একটা মেয়ে যার সাথে আমার কেবল একবারই দেখা হয়েছে, জীবনের মাত্র তিনঘণ্টা যার সাথে কাটিয়েছি….তারজন্য আমার এতো চিন্তা? কিন্তু চিন্তা আমার পিছু ছারে না। না চাইতেও ঘুরে ফিরে রেহনুমা আমার মনের কোনে উকি দিয়ে যাচ্ছিলো। বুঝে গেলাম মনটা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছিলো আমারই অজান্তে।

এরপরের দু’তিন মাস আমার দিনগুলো কিভাবে গেছে আমি নিজেও জানিনা। বাড়িতে মাকেও ফোন করতাম না। মা বরং আমাকে ফোন করতেন, জিজ্ঞেস করতেন সব ঠিক আছে কিনা। আমি মাকে বলতে চেয়েও বলতে পারতাম না, পাছে মা বাবাকে যদি বলে দেয়। আমার ক্লাসে মন বসে না, খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করি না, বন্ধুরা বুঝে যায় আমার কিছু একটা হয়েছে। আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি এড়িয়ে যেতাম। সেমিস্টার ফাইনাল এগিয়ে আসছিলো অথচ আমি আমার হুশে নেই। বুঝতে পারছিলাম এখনই যদি কিছু না করি তাহলে নির্ঘাত পরীক্ষায় ফেল করবো। একদিন না পারতে আমি মিলিকে আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম রেহনুমার কথা।ও কোন কলেজে ভর্তি হয়েছে জানতে চাইলাম আর ওর যদি কোন ফোন নাম্বার থাকে সেটাও চাইলাম। মিলি ভীষন অবাক হয়ে চেয়েছিলো আমার দিকে। আমি ও ভীষন অসস্তি ভাব নিয়ে মাথাটা নামিয়ে নিয়েছিলাম। মিলি কি বুঝলো কে জানে, ও একটা কাগজে রেহনুমার মোবাইল নাম্বারটা লিখে দিলো আর জানালো ও সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ এ ভর্তি হয়েছিল। ও এখন ওর নানুর কাছেই থাকে। বাবার বিয়ের খবর জেনে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি আর। তবে বাবার কাছে আর ফেরতও যায়নি।

আমি আর দেরি করিনি, ঐদিন বিকেল বেলাই রেহনুমা কে ফোন করেছিলাম। ও আমাকে প্রথমে চিনতেই পারেনি, তারপর ওকে সেদিনের কথা মনে করিয়ে দিতেই ও চিনলো আমাকে। বাট কেমন নিরাসক্ত কন্ঠস্বর। আমি ওর সাথে দেখা করতে চাইলাম। ও কিছুতেই রাজি হয় না। অনেক অনুনয় বিনয় করার পর, মিলিকে বলে দেবার ভয় দেখিয়ে ওকে দেখা করতে রাজি করিয়েছিলাম। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম, মিলির কথা বলতেই রাজি হলো কেন? মনেহয় মিলিকে ভয় পায়। ঠিক হলো পরদিন ওর কলেজ শেষ হওয়ার পর আমরা দেখা করবো। বুয়েট থেকে প্রায় হাটা দুরত্ব। আমি তো দারুন খুশি।ওর সাথে দেখা হবে এই আনন্দে আমি অনেক দিন পর সেদিন রাতে পড়তে পেরেছিলাম।”

বলতে বলতে ফুয়াদের গলা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।পুরনো ব্যাথাগুলো আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, ফুয়াদের চোখ দিয়ে অবিরাম পানি পড়ছিলো। আর এদিকে সাঁচিও কেঁদে যাচ্ছিলো নিঃশব্দে। একদিকে নিজেকে রেহনুমা মনে করে ওর কষ্ট ফিল করে কান্না পাচ্ছিলো অন্যদিকে যেটা ওকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিছিলো সেটা হলো, ফুয়াদের এই সমস্ত আবেদ অনুভুতির কিছুই আর ওর জন্য অবশিষ্ট নেই। ফুয়াদের সমস্ত আনকোরা অনুভূতিগুলো অন্য কারো কাছে আগেই বিলিন হয়ে গেছে এটা ভাবতেই সাঁচির দুচোখ বেয়ে পানির ঢল নামলো। ওর তাহলে সারাজীবন ফুয়াদের সেকেন্ড চয়েজ হয়ে থাকতে হবে? কোনো একদিন ফুয়াদ বাধ্য হয়ে মেনে নেবে ওকে, এটা ভেবে কান্নার বেগ দ্বিগুন হলো সাঁচির। দু’টো মানুষ অন্ধকারে বসে কাঁদছে…দুজনেই তাদের প্রিয়জনের কথা ভেবেই কাঁদছে… কিন্তু কেউ কারো কান্না দেখতে পারছে না….জানতে পারছে না….অথচ…..কাঁদছে……

চলবে—-
©‌‌‌‌Farhana_Yesmin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে