#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৪
#জাফিরাহ_জারিন
আজ মিহির খুব ইচ্ছে করতে সাজতে।মায়ের বাসায় থাকতে সে মাঝে মাঝেই সাজতো।আজও তার ইচ্ছে করছে সাজতে।তার অবশ্য কিছু কারণ আছে।আজ বাসায় কেউ নেই।মিহির শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আজ নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে।রিশানও তাদের সাথে যেতে চেয়েছিল।তাই ইলারা বেগম রিশানকে নিয়ে গেছেন।যেহেতু এতদিন ইলারা বেগম রিশানকে সামলিয়েছেন তাই রিশানকে নিতে তার কোনো সমস্যা হয় নি।আজ রিদিমেরও অফিসে কাজের চাপ বেশি।তাই রিদিমেরও আজকে আসতে দেরী হবে।তাই পুরো বাড়ি ফাকা।আর এজন্যই মিহির আজকে সাজতে ইচ্ছে হচ্ছে।এমনি সময় বাসার সব কাজকর্ম শেষ করে রিশানকে সামলিয়ে আর নিজেকে সময় দিতে পারে না মিহি।তাই আজকে সে সাজবে।মিহি হাতমুখ ধুয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো।
______________________________________
অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রিদিম।আজ তার অতীত খুব করে মনে পড়ছে।ইদানিং তার অতীত তাকে অনেক পীড়া দেয়।বিশেষ করে এই মিহি নামক নারী তার জীবনে আসার পর থেকে রিদিমের অতীত তাকে আরও বেশি তাড়া করে বেড়ায়।
অতীত,
আজ রিদিম তার মা-বাবাকে নিয়ার ব্যাপারে বলবে।রিদিম এবার নিয়াকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়।রিদিম তার মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো।
রিদিম:আসবো মা??
ইলারা:আরে আয়।কিছু বলবি??
রিদিম:হুম।
ইলারা:কি??
রিদিম:মা আসলে আমি নিয়াকে ভালোবাসি।আমি নিয়াকে বিয়ে করতে চাই।
ইলারা:ফাইনালি তুই বিয়ের কথা মুখে আনলি।তোর খুশিতেই আমার খুশি।আমি তোর বাবার সাথে কথা বলছি আর তোর এবং নিয়ার বিয়ের ব্যাবস্থা করছি।ওকে??
রিদিম:লাভ ইউ মা।
ইলারা:লাভ ইউ টু ডিয়ার।
এক সপ্তাহ পর,
মিহি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেল তার মা আর ইলারা বেগম বসে গল্প করছেন।
ইলারা:আরে মিহি মা!!কেমন আছো??
মিহি:আলহামদুলিল্লাহ ভালো মামনি।তুমি কেমন আছো??
ইলারা:আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
মিহির মা: আরে মিহি জানিস।আগামী শুক্রবার রিদিমের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
এই কথাটা শুনে মিহির মাথায় যেন বাজ পড়লো।তার সামনেই তার ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যাবে।অথচ তাকে সহ্য করতে হবে।এটা সে কিছুতেই পারবে না।মিহির পক্ষে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না।
মিহি:মা!!আমি একটু আসছি।
কোনোমতে এটা বলে মিহি দৌড়ে তার রুমে চলে এলো।এতটা কষ্ট সে কোনোদিনও পায় নি।মনে হচ্ছে কেউ তার হৃদয়ে ক্রমাগত ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।মিহির খুব কষ্ট হচ্ছ্র সে পারছে না কিছুতেই এই বিয়েটা মেনে নিতে।কিন্তু সে কিই বা করতে পারে!!রিদিম তো এই বিয়েতেই খুশি।তাই মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো মিহি।
রাতের বেলা,
মিহি:আসব বাবা??
মিহির বাবা:আরে মিহি মা!!কিছু বলবে আম্মু??
মিহি:হ্যা বাবা।
মিহির বাবা:কি বলবে আম্মু??
মিহি:বাবা আমি বিদেশ যেতে চাই।আমার মনে হয় বিদশ গেলে আমি বেশি ভালো থাকবো।
মিহির বাবা:ইটস ওকে আম্মু।রিদিমের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আমি তোমার যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
মিহি:না বাবা।তার আগেই যেতে হবে।পরশু দিন বিদেশে স্টাডির জন্য রেজিস্ট্রেশন করার লাস্ট ডেট।
মিহির বাবা:ওকে আম্মু।তুমি যা চাও তাই হবে।
মিহি:থ্যাংক ইউ বাবা।
এরপর তাই হলো।রিদিমের বিয়ের দিন মিহি দেশ ছেড়ে পাড়ি জমালো বিদেশে।নিজের ভালোবাসার মানুষটার খুশির জন্য নিজের ভালোবাসাকে মাটিচাপা দিলো সে।অবশেষে রিদিম আর নিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো।
____________________________________
১ বছর পর,
আজ রিদিমদের বাড়িতে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।কারণে আজ সবাই জানতে পেরেছে যে নিয়া মা হতে চলেছে।রিদিমের তো খুশির শেষ নেই।নিজের অনাগত সন্তানকে নিয়ে সে খুব উৎফুল্ল।নিয়াকে তো খাট থেকে নামতে নিষেধ করে দিয়েছে সে।এখন থেকে নাকি নিয়ার সব কাজ সে করবে।রিদিমের এরকম পাগলামি দেখে নিয়া হেসে দিল।সত্যিই ছেলেটা তাকে খুব ভালোবাসে।
ধীরে ধীরে সময় যেতে লাগলো।দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেছে।নিয়ার পেটটা বেশ অনেকটাই বড় হয়েছে।এখন তো প্রায়ই রিদিম নিয়ার পেটের সাথে কান লাগিয়ে বেবির হৃদস্পন্দর শোনে।রিদিমের জন্য এটা এখন ডেইলি রুটিন হয়ে গেছে।প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেই সে সবার আগে নিয়ার কাছে যায়।প্রথমে সে নিয়ার কপালে চুমু খায় তারপর সে নিয়ার পেটে কান লাগিয়ে বেবির স্পন্দন শোনে।রিদিমের কাছে এটা একটা নেশার মত হয়ে গেছে এখন।নিয়ার তো খুব মজা লাগে রিদিমের এরকম বাচ্চামো দেখতে।
______________________________________
অনেক্ষণ যাবত মিহির ফোন বেজে চলেছে।মিহি এইমাত্র ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হতে গেছিল।এসে দেখে তার মা ফোন দিয়েছে।মিহি তার মাকে কল ব্যাক করলো।
মিহি:কেমন আছো মা??
মিহির মা:আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো মা??
মিহি:আমিও ভালো আছি।বাবা,মাহিম ওরা সবাই কেমন আছে??
মিহির মা:ওরা সবাইও ভালো আছে।তোর পড়াশোনা কেমন চলছে??ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছিস তো??
মিহি:হ্যা মা।সব ঠিকঠাক চলছে।
মিহির মা:জানিস নিয়া মা হতে চলেছে আর রিদিম বাবা হতে চলেছে।
মিহি:এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে মা!! আমি এখন রাখছি পরে কথা হবে।বাই।
এই বলে ফোন কেটে দিল মিহি।ফোন রাখতেই কান্নায় ভেঙে পড়লো সে।মিহি তো এখনও রিদিমকে ভালোবাসে।আচ্ছা যদি নিয়ার জায়গায় মিহি থাকতো তাহলে কি খুব খারাপ হতো!!একেই হয়ত নিয়তি বলে।
____________________________________
হসপিটালের করিডোরে পায়চারী করছে রিদিম।ভিতরে অপারেশন থিয়েটারে নিয়া রয়েছে।আজ নিয়ার ডেলিভারি ডেট।কিছুক্ষণ পরই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ গেল রিদিমের কানে।নার্স একটা ছোট্ট বাচ্চাকে এনে রিদিমের কোলে দিল।
নার্স:কংগ্রাচুলেশনস স্যার।আপনার ছেলে হয়েছে।
রিদিম:আমার ওয়াইফ কেমন আছে??
নার্স:তিনিও সুস্থ আছে।কিছুক্ষণ পরই তাকে কেবিনে দেওয়া হবে।
রিদিম নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখলো।খুব মিষ্টি দেখতে হয়েছে।দেখতে হুবহু একদম রিদিমের মত।
তিনদিন পর নিয়াকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হলো।বাড়ির সবাই তো পরিবারের ছোট্ট সদস্যকে নিয়ে ব্যস্ত।ইলারা বেগম নিজের নাতির নাম রেখেছেন “রিশান”। রিশানের সাথে ইলারা বেগমের খুব ভাব জমেছে।সারাদিন রিশান ইলারা বেগমের কাছেই থাকে।মিসেস ইলারাও তার নাতিকে নিয়ে খুব খুশি।সারাদিন রিশানকে নিয়েই তার কেটে যায়।
১ বছর পর,
ইদানিং নিয়া একটু অন্যরকম ব্যবহার করছে।সবসময় অন্যমনস্ক থাকে।রিশানের দিকেও ঠিকমত খেয়াল রাখে না সে।রিদিমের সাথেও প্রায়ই ঝগড়া হয় তার।রিদিমের খুব খারাপ লাগে নিয়ার এরকম ব্যবহারে। কিন্তু যতই হোক সে তো নিয়াকে ভালোবাসে।তাই কিছু বলে না।কিন্তু ইদানিং নিয়া একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে সে।তাই রিদিম ঠিক করেছে আজকে সে নিয়ার সাথে কথা বলে সব ক্লিয়ার করবে।
চলবে………………..