#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৩
#জাফিরাহ_জারিন
“ডাকছিলেন আমাকে??”
রিদিমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো মিহি।
“হুম।রিশান কোথায়??”
“নিচে।মাহিমের রুমে মাহিমের সাথে খেলছে।”
“ওহ।কখন উঠেছে ঘুম থেকে??”
“সকাল ৭টার সময়।”
“ও এইরকম টাইমেই প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে।”
“ওহ”
এরপর রিদিম আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেল।রিদিম যেতেই মিহি বিছানা গোছাতে শুরু করলো।একটু পর রিদিম ফ্রেশ হয়ে নিচে রিশানের কাছে গেল।আর মিহিও গেল রিশানকে খাওয়াতে।
দুপুর ৩টা,
ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে রিদিম।পাশেই মিহি বসে আছে।আর মিহির কোলে রিশান।দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর মিহিদের বাড়ি থেকে রিদিমদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে তারা।কিছুক্ষণ আগে গোসল করায় মিহির চুলগুলো এখনও ভেজা আছে।তাই মিহি চুল ছেড়ে দিয়েছে।বাতাসের কারণে মিহির উড়ন্ত চুলগুলো বারবার গিয়ে রিদিমের মুখে বারি খাচ্ছে। কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্যি যে এতে রিদিমের একটুও বিরক্তি লাগছে না।বরং মিহির চুলের এক মাতাল করা ঘ্রাণ পাচ্ছে রিদিম।
“পাপা!!!গাড়ি থামাও।”
হঠাৎ করেই রিশান রিদিমকে বললো গাড়ি থামাতে।রিশান এভাবে বলায় রিদিম তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামালো।
“কি হয়েছে আব্বু??তুমি এভাবে গাড়ি থামাতে বললে কেন??”
রিশানকে জিজ্ঞাসা করলো রিদিম।
“পাপা দেখো ওইখানে।”
রিশানের কথা শুনে রিদিম আর মিহি দুজনেই ওইদিকে তাকালো।দেখলো সেখানে একটা পার্ক আছে।সেই পার্কে ছোট ছোট বাচ্চারা খেলছে।
“তুমি কি এখন ওই পার্কে যেতে চাও সোনা??”
“হুম।”
এরপর রিদিম গাড়ি স্টার্ট করে পার্কিং এরিয়াতে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থামালো।এরপর রিদিম,রিশান এবং মিহি সবাই গাড়ি থেকে নামলো।গাড়ি থেকে নেমেই রিশান ছুটে গেল পার্কের ভিতরে।রিশানের পিছন পিছন রিদিম আর মিহিও গেল।রিশান গিয়েই একটা দোলনায় বসলো।রিদিম আর মাহি গিয়ে সেই দোলনায় ধীরে ধীরে ধাক্কা দিতে লাগলো।রিদিম একদৃস্টিতে দোলনার দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ এই দোলনা আরও একবার তাকে তার অতীত মনে করিয়ে দিচ্ছে।
অতীত,
পার্কে দাঁড়িয়ে বারবার হাত ঘড়িতে সময় দেখছে রিদিম।গত আধঘণ্টা যাবত সে তার প্রেয়সীর অপেক্ষায় আছে।কিন্তু তার প্রেয়সী এখনও আসছে না।আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে রিদিম তার প্রিয়তমার দেখা পেল।
“সরি রিদিম।লেট হয়ে গেলো।”
“ইটস ওকে নিয়া।”
“চলো না দোলনায় বসি।”
রিদিমের দিকে তাকিয়ে আবদারের সুরে বললো নিয়া।
“না।আমার দোলনায় বসতে ভালো লাগে না।”
“প্লিজ রিদিম।একবার বসো।অন্তত আমার জন্য একবার হলেও বসো।”
নিয়ার এরকম আবদার ফেলতে পারলো না রিদিম।সে আর নিয়া একে অপরের হাত ধরে দোলনার কাছে গেল।নিয়া দোলনার একপাশে বসে রিদিমকে দোলনার অপরপাশে বসতে ইশারা করলো।অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নিয়ার কথা রাখতে রিদিম গিয়ে দোলনার অপরপাশে নিয়ার সাথে বসলো।এরপর নিয়া আর রিদিম দোলনায় বসে দোল খেতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর রিদিম দোলনা থেকে নেমে গেল।আর দোলনার পিছে দাঁড়িয়ে দোলনায় ধাক্কা দিতে লাগলো।
(নিয়া আর রিদিম ক্লাসমেট। তারা একই ভার্সিটিতে পড়ে।অনার্স ১ম বর্ষ থেকেই তাদের একে অপরের সাথে পরিচয়। তাদের মধ্যে ছিল খুব ভালো বন্ধুত্ব। সময় বাড়ার সাথে সাথে তাদের এই বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হতে থাকে এবং একসময় এই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হয়।এখন নিয়া ও রিদিম একে অপরকে খুব ভালোবাসে।)
বর্তমান,
“পাপা চলো।এবার বাড়িতে যায়।আমি দাদুকে অনেক মিস করছি।”
রিশানের কথা শুনে রিদিমের ধ্যান ভাঙলো।সে রিশানকে কোলে তুলে নিলো।রিশানের মুখে অনেকবার চুমু খেলো।
“কি হয়েছে পাপা??”
“কিচ্ছু হয় নি সোনা।চলো যায়।”
অনেকটা ধরা গলায় বললো রিদিম।রিদিমের এরকম কন্ঠ যেন মিহির বুকে তীরের মত গিয়ে লাগলো।মিহি খুব ভালোমত বুঝতে পারছে রিদিমের নিয়ার কথা মনে পড়ছে।কেন মনে পড়ছে সেটাও মিহি জানে।
অতীত,
আজ মিহি ও তার বন্ধুরা পার্কে বেড়াতে এসেছে।সেদিন রিদিমকে দেখার পর থেকেই মিহির মনে অন্যরকম একটা অনুভুতি সৃষ্টি হয়েছে।যা দিনে দিনে আরও তীব্র হয়ে উঠছে।এখন মিহি প্রায়ই রিদিমদের বাড়িতে যায়।সবাইকে বলে সে তার মামণি ইলারা বেগমের সাথে গল্প করতে যাচ্ছে।মিহি সেখানে গিয়েও ইলারা বেগমের সাথে গল্প করে।কিন্তু মিহি আসলে সেখানে যায় রিদিমকে দেখতে।ধীরে ধীরে রিদিম নামক মানুষটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে সে।পার্কে বসে মিহি আর মিহির বন্ধুরা কিছু খাওয়ার প্ল্যান করলো।মিহি সবার জন্য খাবার অর্ডার করতে গেল।কিন্তু ঠিক তখনই সে এমন কিছু একটা দেখলো যা সে কল্পনা করে নি।মিহির মনে হলো যে সে রিদিমকে দেখলো।সে ভাবলো যে এটা তার মনের ভুল।তাই সে কিছুটা এগিয়ে গেল।কিন্তু তখনও সে রিদিমকেই দেখতে পেল।কিন্তু রিদিমের সাথে এই মেয়েটা কে??মিহি আরও একটু এগিয়ে গেলো।নিয়া ও রিদিমের কথোপকথন শুনে মিহি খুব ভালোমত বুঝতে পারলো যে রিদিম ও নিয়া একে অপরকে ভালোবাসে। “রিদিমকে কাউকে ভালোবাসে,-এই কথাটা যেন মিহি বিশ্বাস করতে পারছিল না।মিহির চোখ বেয়ে অশ্রুকণা যেন ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।মিহি আর সেখানে দাঁড়াতে পারলো না।কাউকে কিছু না বলে ছুটে পার্কে থেকে বেরিয়ে এলো সে।বাসায় এসে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করলো সে।এতটা কষ্ট মিহি কোনোদিনও পায় নি।তবে কি মিহির ভালোবাসা সারাজীবন একতরফা ভালোবাসা হয়েই থেকে যাবে??
বর্তমান,
গাড়ির হর্ণ শুনে মিহির ধ্যান ভাঙলো।তারা বাড়িতে পৌছে গেছে।রিশান অলরেডি গাড়ি থেকে নেমে গেছে।মিহি নামছে না দেখে রিদিম গাড়ির হর্ণ দিয়েছিল।মিহি ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে গেল।এরপর রিদিম গাড়ি পার্ক করে রিদিমও বাড়ির ভিতরে গেল।রিশান বাড়ির ভিতরে গিয়েই ছুটে গেল তার দাদুর রুমে।
“দিদা!!!”
“আরে দাদুভাই!! ”
রিশান ছুটে গিয়ে তার দিদার কোলে উঠলো।রিশানের দিদা রিশানকে কোলে নিয়ে তার গালে চুমু খেল।
“জানো দিদা আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি।”
“আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি দাদুভাই।”
“রিশান আব্বু।চলো জামাকাপড় পাল্ট ফ্রেশ হয়ে নাও।” ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বললো মিহি।
“কেমন আছো মিহি মা??”
“ভালো আছি মামণি।তুমি ভালো আছো??আর কালকে নিজের ওষুধ ঠিকমত খেয়েছিলে??”
“হুম।খেয়েছি”
“গুড গার্ল”
মিহি কথা শুনে রিশান এবং ইলারা বেগম দুজনেই হেসে দিলেন।
“আম্মু গুড গার্ল/বয় তো শুধু ছোটদের বলে।দিদা তো আর ছোট না।”
“হুম তাই তো।কিন্তু জানো আব্বু যারা গুড হয় তারা বড় হোক ছোট হোক সবসময়ই তাদেরকে গুড বলা যায়।”
“ওহ”
“হুম।এবার চলো ফ্রেশ হয়ে নেবে।”
এই বলে মিহি রিশানকে কোলে তুলে নিল।এরপর সে রিশানকে রুমে নিয়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে দিল।
চলবে………………………..