#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_২
#জাফিরাহ_জারিন
“নিজের জামাইকে এনেছিস ভালো কথা।তাই বলে নিজের সৎ ছেলেকেও আনবি!!”
কথাটা শুনে থমকে দাঁড়ায় মিহি।সে জানে এই কথাটা কে বলেছে।তাই অযথা কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলো মিহি।কিন্তু আবারও সেই একই কণ্ঠস্বর কানে এলো।
“এখন মুখ লুকিয়ে পালাচ্ছিস কেন??”
এবার আর মিহি চুপ করে থাকতে পারলো না।এবার সে পিছে ঘুরে সেই মানুষটির মুখোমুখি দাঁড়ালো।
“দেখো ছোট চাচী।আমি তোমার কোনো পাকা ধানে মই দিই নি।তাই আমার সংসারে নাক গলাতে এসো না।আর রিশান আমার সৎ ছেলে নয়।সে আমার নিজের ছেলে।সৎ ছেলে তখনই হয় যখন কোনো মা নিজের ছেলেকে সৎ ছেলে মনে করে।অন্যথায় ছেলে ছেলেই হয়।”
মিহির এইরকম সোজাসাপ্টা জবাব যেন তীরের মতো লাগলো মিহির ছোট চাচীর গায়ে।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার।তিনি মিহির দিকে অগ্নিদৃস্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
“এখন খুব বড় বড় কথা বের হচ্ছে মুখ থেকে।দেখব কতদিন থাকে তোর এই মহত্ব।দুইদিন পর যখন দেখবি নিজের বাচ্চা নেই।তখন
দেখব কিভাবে বলিস ওই বাচ্চাটা তোর নিজের ছেলে।”
এই বলে হনহন করে নিচে চলে গেলেন মিহির ছোট চাচী।মিহি কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে তার ছোট চাচীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে ছিল।এরপর মিহিও নিজের রুমে চলে গেল।
রাত ২টা,
পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ।সবাই ঘুমাতে ব্যস্ত।কিন্তু মিহির চোখে ঘুম নেই।সে একদৃস্টিতে রিদিম আর রিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।রিশান আজকে মিহির কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে।খাটের একপাশে রিদিম আর একপাশে মিহি।মাঝে রিশান ঘুমিয়েছে।মিহি রিদিমের দিকে তাকিয়ে অতীতের কথা ভাবছে।একসময় রিদিমকে পাগলের মত ভালোবাসতো মিহি।মাঝখানে ৫ বছর কেটে গেছে।সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে।কিন্তু রিদিমের প্রতি মিহির ভালোবাসা একবিন্দুও কমে নি।মিহি চোখ বন্ধ করে তার আর রিদিমের প্রথম দেখার কথা ভাবতে লাগলো।
অতীত,
আজ মিহি ও মিহির পরিবার মিহির বাবার এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যাবে।মিহি যেতে চায় না।কিন্তু তার মায়ের জোর করছে বলে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাকে যেতে হচ্ছে।মিহির না যেতে চাওয়ার কারণ হচ্ছে সেখানে গিয়ে ভদ্র বাচ্চার মত চুপচাপ বসে থাকতে হয়।যা মিহির পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। তবুও সে গেলো।সেখানে যেতেই ইলারা বেগম পরম স্নেহের সাথে মিহিকে স্বাগতম জানালেন।
ইলারা: কেমন আছো মিহি আম্মু??
মিহি:আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো মামণি??
ইলারা:আমিও ভালো আছি আম্মু।
এরপর তারা সবাই মিলে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।মিহির বড়দের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগছিল না।তাই সে উঠে গিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছিল।ঘুরতে ঘুরতে একসময় সে একটা রুমে গেল।রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো।মিহির রুমটা খুব ভালো লেগেছে।তাই সে রুমটাকে খুবই আগ্রহের সাথে পর্যবেক্ষণ করছিল।এমন সময় তার কানে এলো,
“কারোর পারমিশন ছাড়া তার রুমে ঢোকা উচিৎ নয়।এইটা কি আপনি জানেন না??”
কথাটা কানে আসতেই মিহি পিছে ঘুরলো।দেখলো একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।বয়স ২২ এর কাছাকাছি। দেখতে খুবই সুন্দর। প্রথমবার দেখাতেই মিহির ভালো লেগেছে ছেলেটাকে।
“কি হলো কি বললাম কানে গেল না??”
ছেলেটার কথা শুনে মিহির ধ্যান ভাঙলো।
“আসলে বাড়িটে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।ভুল করে এখানে এসে পড়েছি।সরি”
ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বললো মিহি।মিহির কথার জবাবে বললো,
“ভুল করে এসেছেন ভালো কথা।এবার ঠিক করে বেরিয়ে যান।”
রিদিমের এরকম কথা শুনে মিহির প্রচন্ড রাগ হলো।মাহিম হলে এতক্ষণে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিত মিহি।কিন্তু প্রথমবার কারোর বাসায় এসে ঝগড়া করাটা খুবই খারাপ দেখায়। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে রুমের বাহিরে হাটা ধরলো।রিদিম কিছুক্ষণ মিহির যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল।তারপর সে ল্যাপটপ নিয়ে বসে নিজের কাজে মন দিল।
মিহি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে আর রিদিমকে বকছে।
“এহ!!কি এটিটিউড। ভুল করে না হয় তার ঘরেই ঢুকে পড়েছি। তাই বলে এভাবে অপমান করবে!!মনে হচ্ছে ঘরে সাত রাজার লুণ্ঠিত ধনসম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন তিনি।আর আমি মনে সেগুলো চুরি করতে গেছি।”
“কাকে এভাবে বকছো মিহি আম্মু!!”,বললেন ইলারা বেগম।
“মি.এটিটিউডের বস্তাকে।”
“মানে??কার কথা বলছো আম্মু??”
“এইরে!!মামণির সামনে এসব কি বলে ফেললাম!!”,মনে মনে বললো মিহি।
“না মানে আসলে ওইযে ওই ছেলেটা….”
“তুমি রিদিমের কথা বলছো??”
“রিদিম কে??”একটু সন্দেহের সাথে জিজ্ঞাসা করলো মিহি।
“রিদিম আমার ছেলে।একটু রাগী।কিন্তু মনটা ভালো।”,বললো ইলারা বেগম।
“ওহ আচ্ছা।”বললো মিহি।এরপর সে নিজেই নিজেকে বললো,
“মামণি মানুষটা কত্ত ভালো।অথচ তার ছেলেকে দেখো।কি রাগি আর মুডি।প্রথম দেখায় কি সুন্দর লেগেছিল।কিন্তু এখন তো দেখছি…”
বর্তমান,
“মাম্মাম!!! ”
রিশানের ডাকে ঘুম ভাঙলো মিহির।অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে
সেটা খেয়াল নেই মিহির।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে।পাশে তাকিয়ে দেখে রিদিম এখনও ঘুমিয়ে আছে।ঘড়িতে বাজে সকাল ৭টা।মিহি রিশানকে বললো,
“এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছো কেন আব্বু??”
“আর ঘুমোতে ইচ্ছে করছে না।”
“তো এখন কি করতে ইচ্ছে করছে??”
“খেলতে”।
রিশানের উত্তর শুনে মিহির মাথায় একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি এলো।অনেকদিন ধরে একজনকে জ্বালানো হয় নি।আজকে সুযোগ পেয়েছে।
“ঠিক আছে আব্বু।চলো তোমাকে একজায়গায় নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে খুব খেলবে।ওকে??”
“ওকে মাম্মাম। ”
এরপর মিহি রিশানকে রেডি করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।এরপর সে ধীর পায়ে গিয়ে একটা দরজার সামনে দাঁড়ালো। মিহি নক করলো সেই দরজায়।কয়েকবার নক করতেই গেট খুললো একটা ছেলে।মিহিকে এইসময় দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।না জানি এখন তার কপালে কি আছে??
“আপু তু…তুই এখানে!!”ভয়ে ভয়ে বললো মাহিম।
“কেন অন্য কারোর আসার কথা বুঝি?”
“না….না মানে ওই আরকি!!”
“রিশান আব্বু চলো ভিতরে যায়।”
এই বলে মিহি মাহিমকে ঠেলে রিশানকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।এরপর রিশানকে সে সোফায় বসিয়ে দিল।আর মাহিমের উদ্দেশ্যে বললো,
“শোন।রিশান এখন খেলত্র চায়।আর তুই এখন ওর সাথে খেলবি।যদি উল্টা-পাল্টা কিছু করিস তাহলে তো জানিসই”
“হুম।বুঝেছি”
এই বলে মিহি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর সে আরও একবার রুমে উকি দিল।সে দেখলো মাহিম আর রিশান খেলছে।তারা দুইজনই খুব মজা করে খেলছে।মুহুর্তের মধ্যেই রিশান আর মাহিমের খুব ভালো ভাব জমেছে।হঠাৎ মিহির কানে রিদিমের কণ্ঠস্বর এলো।রিদিম মিহিকে ডাকছে।মিহি তাড়াতাড়ি করে গেল রিদিমের কাছে।
চলবে…………………..