#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_৪
#লেখিকা_N_K_Orni
— আপনি খেয়েছেন?
তানিশার কথা শুনে ইফাদ বিষ্ফোরিত চোখে তানিশার দিকে তাকাল। ইফাদ এবার তানিশার একটু কাছে গিয়ে বলল,
— কি বললে? শুনতে পাইনি আবার বলো।
তানিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
— যখন শুনেননি তখন আর শোনা লাগবে না।
— আচ্ছা এবার খেয়ে নেও। আমাকে একটু পর অফিসে যেতে হবে?
— ওহ।
তানিশা খেতে শুরু করল। তখন ইফাদ তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— তোমার বাবার সাথে তোমার দেখা হয়েছে? এখন কেমন আছেন উনি?
— এখন আগের থেকে ভালো। তবে বাবার সাথে কথা হয়নি। বাবা ঘুমিয়ে ছিল। মা বলেছে বিকালে গিয়ে দেখা করতে।
— আচ্ছা। আমি ফাহিমকে বলে রাখব ও যেন বিকালের দিকে তোমাকে হসপিটালে পৌঁছে দিয়ে আসে। তুমি আবার সকালের মতো একা বেরিয়ে পড়ো না।
তানিশা এবার আর ইফাদের কথায় না করল না। সে বলে উঠল,
— আচ্ছা।
তানিশা খাওয়া শেষ করে উঠে বারান্দায় চলে গেল। সে ওখানে বসে নিজের জীবনের কথা ভাবছিল। হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেল সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছে না। কয়দিন আগেও সব ঠিকই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একটা ঝড় এসে সব তছনছ করে দিয়ে গেল। তার জীবনকে নিয়ে গেল এক নতুন মোড়ে। যাকে সে কখনো নিজের জীবনে আশাই করেনি সেইই আজকে তার স্বামী। কয়েকদিনের মধ্যেই যে তার জীবনে এতো পরিবর্তন এসে যাবে সেটা সে কখনোই ভাবতে পারেনি। সে এসব ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বেশ কিছুক্ষণ পর সে রুমে ফিরে এলো। সে ফিরে এসে দেখল ইফাদ রুমে নেই। সে ভাবল ইফাদ হয়তো অফিসের জন্য বেরিয়ে গেছে। তানিশা খেয়াল করল ইফাদ রুম অগোছালো করেই বেরিয়ে গেছে। যেটা সে হালকা হাসল। তারপর নিজের হাতে রুম গোছাতে শুরু করল।
ইফাদ তার অফিসে বসে কাজ করছিল। হঠাৎ তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। সে ম্যাসেজ চেক করে ফোন রাখতেই যাবে তখনই তার মনে পড়ে সে আসার তাড়াহুড়ো করে তানিশাকে না বলেই চলে এসেছে। তানিশা এখন কি করছে সেটা তার দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। যেহেতু রুমে ক্যামেরা ফিট করা, তাই সে তার ফোনের মাধ্যমে তার রুম চেক করল। সে দেখল তানিশা তার রুম গুছিয়ে দিচ্ছে। এটা দেখে ইফাদ খুশি হলেও পরক্ষণেই মুখ কালো করে নিল। বিকালে তানিশা তার বাবার সাথে হসপিটালে দেখা করতে যাবে বলে তৈরি হচ্ছিল। তখন তার মনে পড়ল সকালে ইফাদের বলে যাওয়া কথাটা। তাই সে দ্বিধায় পড়ে গেল।
— আচ্ছা আমি কি ফাহিম ভাইয়াকে বলব যে আমি বাবার সাথে দেখা করতে যাব, উনি যেন আমাকে পৌঁছে দেয়? নাকি ইফাদকে কল দিয়ে বলব? নাকি একাই চলে যাব? কোনটা করব বুঝতে পারছি না? এদিকে একা গেলে যদি ইফাদ রাগ করেন? কি করব আমি এখন? এক কাজ করি একাই চলে যাই। পরে ইফাদ জিজ্ঞাসা করলে বলল যে আমি ভুলে গেছিলাম।
তানিশা নিজের কথা রাখতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুদূর আসতেই দেখল ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে। তানিশাকে আসতে দেখে ফাহিম বলে উঠল,
— হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন তাই না ভাবি? চলেন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
তানিশা ফাহিমের কথা শুনে মনে মনে বলল,
— যাক বেঁচে গেছি। ইফাদ আর কিছু বলতে পারবে না।
তানিশা এবার ফাহিমের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল,
— আচ্ছা।
ফাহিম তানিশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— ভাবি বলেছি বলে কিছু মনে করেননি তো? এতোদিন আপনার সাথে স্যারের বিয়ে হয়েছিল না বলে ভাবি বলার সুযোগ পাইনি। এখন পেয়েছি।
তানিশা এবার একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল,
— না আমি কিছু মনে করিনি।
— তাহলে চলেন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
— হুম।
এরপর ফাহিম তানিশাকে হসপিটালে পৌঁছে দিয়ে এলো। তানিশা হসপিটালে এসে সোজা চার তলায় চলে গেল। কারণ তার বাবাকে এখন ওখানেই রাখা হয়েছে। সে ওখানে পৌঁছাতেই দেখল তিনা ওখান দিয়েই হাঁটছিল। তিনা ওকে দেখতেই ছুটে এলো।
— আপু তুই এসেছিস? আমি ভাবছিলাম যে তোকে কল দিয়ে আসার জন্য বলব। বাবা এখন জেগে আছে। চল দেখা করবি।
— মা কি বাবার কাছেই আছে?
— না। মা আমাকে আর তিহানকে রেখে একটু বাসায় গেছে।
— ওহ। তা তিহান কই?
— ও নিচে গেছে ওষুধ আনার জন্য।
তানিশা এবার একটু মন খারাপ করে বলল,
— এখানে সারাদিন থেকে তোর পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে রে তাই না? আর তোর খাওয়াও ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি থাকলে তোকে এতো কষ্ট করতে হতো না। আমিই বাবার কাছে থাকতাম। মা যে কেন এমন করছে?
তিনা ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে উঠল,
— আপু এসব এখন বাদ দে। চল বাবার সাথে দেখা করি। বাবা ওঠার পর থেকে তোকে খুঁজছিল।
— হুম চল। বাবাকে দেখতেই তো আমি এখানে এসেছি।
তিনা তানিশাকে তার বাবার কাছে নিয়ে গেল। সে ওখানে গিয়ে দেখল তার বাবা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সে তার বাবার কাছে গিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
— বাবাহ!
কারো কন্ঠস্বর শুনে তার বাবা আজাদ রহমান চোখ খুলে সামনে তাকালেন। তানিশাকে দেখে তিনি উঠে বসতে গেলেন। তখন তানিশা ওনাকে বাধা দিয়ে নিজে সাহায্য করল উঠে বসতে। আজাদ রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
— তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি মা? আমি তো অনেক খুঁজছিলাম। তখন তোর মা বলল তুই যখন এসেছিলি তখন নাকি আমি ঘুমিয়েছিলাম। এখন তুই বাসায় গেছিস। আবার বিকালেই আসবি। তুই তখন আমাকে ডাক দিসনি কেন?
বাবার কথায় তানিশা আপত্তি করে বলে উঠল,
— উহু! তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলে। তাই তখন তোমাকে ডাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন।
আজাদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলেন,
— আমার জন্য তোদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে না? আমার জন্য তোদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমি একবার সুস্থ হই তখন তোদের আর কোনো সমস্যা হবে না।
বাবার কথা শুনে তানিশার বুকটা ধক করে উঠল। ওনার অসুস্থতার জন্য তারা এতোকিছু করছে দেখে ওনার খারাপ লাগছে। আর উনি যদি জানতে পারেন ওনার এই চিকিৎসার জন্য ওনার মেয়েকে ওনারই সবচেয়ে অপছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে করতে হয়েছে তখন উনি কি করবেন তানিশা সেটা ভেবে পারছে না। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠল,
— বাবা আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আর তোমার জন্য এটুকু আমরা করতেই পারি।
তখন তিনা এগিয়ে এসে বলল,
— আপু ঠিকই বলেছে বাবা। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের শুধু তুমি হলেই চলবে।
দুই মেয়ের কথা শুনে আজাদ সাহেব হালকা হেসে বললেন,
— আমার পাগলি মেয়ে দুটো!
এরপর ওরা কথা বলতে লাগল। কিছুক্ষণ পর তানিশার ছোট ভাই তিহার ওষুধ নিয়ে ওখানে এলো। সে সামনে না তাকিয়েই বলে উঠল,
— এই তিনা ওষুধগুলো নে। অনেক খুঁজে এগুলো এনেছি।
তিহান সামনে তাকাতেই দেখল তার বড়ো বোন তানিশা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। তিহান ওকে দেখে বলে উঠল,
— আপু তুই কখন এলি?
— এইতো একটু আগে। এসে শুনলাম তুই নাকি ওষুধ আনতে গেছিস।
— হ্যাঁ। নার্স এসে বলল কয়েকটা ওষুধ হসপিটালে নেই। তাই বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হবে। সেটাই আনতে গেছিলাম।
বলেই সে তিনার হাতে ওষুধগুলো দিল। তারপর তানিশার দিকে তাকিয়ে বলল,
— আপু একটু বাইরে আয়। তোর সাথে একটু কথা ছিল। প্লিজ আয় না!
— আচ্ছা চল।
বলেই তানিশা তিহানের সাথে বাইরে গেল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )