#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_১
#লেখিকা_N_K_Orni
— তানিশা তুই প্লিজ ইফাদকে বিয়েটা করে নে মা। নাহলে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। আমার জন্য না হোক তোর বাবার জন্য হলেও বিয়েটা কর।
মায়ের কথা শুনে তানিশা মাথা নিচু করে বলে উঠল,
— কিন্তু মা আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করতে চাই না।
— কেন? তুই কি অন্য কাউকে ভালোবাসিস?
— না। কিন্তু…
তানিশার মা মিসেস তাসনীম তানিশার হাত দুটো ওনার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলেন,
— তুই প্লিজ বিয়েটা করে নে। নাহলে তোর বাবাকে হারাতে হবে। আমাদের সবটা শেষ হয়ে যাবে। তোর ভাই বোনের কি হবে তখন? তুই এটুকু করতে পারবি না আমাদের জন্য।
— আমি অন্য কোনো ব্যবস্থা করছি। একটা ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। ওই লোকটাকে বিয়ে করার কোনো দরকার নেই।
— তুই ব্যবস্থা করতে করতে যদি তোর বাবা মরে যায়, তখন কি হবে? এতো তাড়াতাড়ি কিছুই করতে পারবি না তুই। তাই বলছি সময় নষ্ট না করে ইফাদকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যা।
তানিশা কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠল,
— আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়? তুমি চিন্তা করো না বাবার কিছু হবে না।
তানিশা তার মায়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল। তানিশা আনমনে হাঁটছে আর মনে মনে ভাবছে,
— এখন আমি কি করবো? বাবাকে যে করেই হোক আমার বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমি তো ওই লোকটাকে বিয়ে করতে চাই না। এখন আমি কি করব?
তানিশা হসপিটালের এক কোণে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন পেছন থেকে কেউ তার ঘাড়ে হাত রাখল। তানিশা পেছনে ফিরে দেখল মিসেস তাসনীম দাঁড়িয়ে আছেন। তানিশা পেছনে ফিরতেই তিনি বলে উঠলেন,
— কিরে কি ভাবলি? কি করবি এখন?
তানিশা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠল,
— আমি মিস্টার ইফাদের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি। তুমি এখানেই থাক বাবার আছে। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল দিবে।
— আচ্ছা। সাবধানে যাস।
তানিশা ছোট করে বলল,
— আচ্ছা।
এরপর তানিশা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল।
—————
— স্যার কাজ হয়ে গেছে। ম্যাম হসপিটাল থেকে বের হয়ে এখানেই আসছেন।
— খুব ভালো।
তানিশা একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। ভেতরে ঢুকতে গেলে একজন গার্ড বলে উঠল,
— আপনি দাঁড়ান। আমি একটু ফাহিম স্যারের সাথে কথা বলছি।
তানিশা মাথা নাড়াল। লোকটা ফোন কানে দিয়ে একটু দূরে চলে গেল। তানিশা অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পরে ওই গার্ড ফিরে এলো। তারপর তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
— ম্যাম আপনি একটু অপেক্ষা করুন। ফাহিম স্যার আসছেন।
তানিশা কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। একটু পর বাড়ির ভেতর থেকে ফাহিম নামের একজন বেরিয়ে এলো। ফাহিম তানিশার সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলে উঠল,
— আমার সাথে আসেন।
বলেই ফাহিম বাড়ির ভেতরে দিকে হাঁটা শুরু করল। কিছুদূর যেতেই ফাহিম তানিশার দিকে ফিরে বলে উঠল,
— আপনি বিয়েতে রাজি তো?
— আগে আমি আপনার স্যারের সাথে একটু কথা বলতে চাই। তারপর বাকিটা জানাব।
ফাহিম তানিশাকে বাসার ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসতে বলল।
— আপনি বসুন। আমি স্যারের সাথে কথা বলে আসছি।
— আচ্ছা।
ফাহিম ইফাদের রুমের দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে বলল,
— আপনি আমার সাথে আসুন। স্যার আপনার সাথে কথা বলবেন।
— আচ্ছা।
এরপর ফাহিম তানিশাকে নিয়ে ইফাদের রুমের সামনে গেল।
— ম্যাম এটাই স্যারের রুম। আপনি ভেতরে যান। স্যার এখানেই আছেন।
— আচ্ছা।
তানিশা কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। তানিশা ভেতরে যেতেই ইফাদ গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
— বসো।
তখন ফাহিম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
— স্যার আপনারা কথা বলেন আমি আসি। কোনো দরকার হলে আমাকে ডাক দিবেন।
ইফাদ মাথা নাড়াল। ফাহিম দরজা লাগিয়ে চলে গেল। তানিশা ইফাদের সামনে বসে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
— সমস্যা কি আপনার? আমাদের পরিবারের পেছনে কেন লেগে আছেন? কেন আমাদের জীবনে সমস্যা তৈরি করছেন?
— আমি কোনো সমস্যা তৈরি করছি না। আমি শুধু এটাই বলেছি তোমার বাবাকে বাঁচাতে হলে আমাকে বিয়ে করতে হবে। আর এখানে তো কোনো সমস্যার বিষয় আমি দেখছি না। বরং এটা তোমার জন্য খুব ভালো একটা অফার। এখন তুমি শর্তে রাজি থাকলে বলো। নাহলে আসতে পারো এখন।
— আপনি যতই অভিনয় করেন, আমি ভালো করেই জানি বাবার এই অবস্থার জন্য শুধুমাত্র আপনিই দায়ী।
তানিশার কথা শুনে ইফাদ একটা তাচ্ছিল্যের হানি দিয়ে বলে উঠল,
— মোটেই না। এটা তার কর্মফল। এখন তোমার যেটা ইচ্ছা সেটা ভাবতে পারো।
ইফাদের কথা শুনে তানিশা চুপ হয়ে যায়। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে ইফাদ বলল,
— এবার বলো আমাকে বিয়ে করবে? হ্যাঁ কি না?
তানিশা এবার মনে মনে বলতে লাগল,
— আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন। আর এটাও জানি যে এই বিয়েটা খুব একটা সুখকর হবে না। কিন্তু এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায়ও তো নেই। বাবাকে বাঁচাতে হলে আমাকে যে বিয়েটা করতেই হবে।
— কি হলো? এতোকিছু না ভেবে তোমার উত্তরটা বলো। একটা কথা মনে রাখবে তোমার উত্তর দিতে যতো দেরী হবে তোমার বাবার অপারেশন করতে ততোটা দেরী হবে।
— আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। কিন্তু বিয়েটা আমার বাবার অপারেশনের পরেই হবে।
ইফাদ তার কথায় আপত্তি জানিয়ে বলে উঠল,
— উহু! সেটা হচ্ছে না। তুমি বিয়েটা করার পরই অপারেশনটা শুরু হবে। তার আগে না।
তানিশা এবার ভেজা কন্ঠে বলে উঠল,
— আপনি এতো নিষ্ঠুর কেন?
তানিশার কথা ইফাদের কানে যেতেই সে জোরে হেসে উঠল। তারপর হাসি থামিয়ে বলে উঠল,
— সেই একি কথার আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটল।
কথাটা শুনে তানিশার বুকটা ঢক করে উঠল। ইফাদ এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— এখন রাত আটটা বাজে। এমনিই অনেক দেরী হয়ে গেছে। তাহলে আমি ফাহিমকে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলি। তোমার আর আমার বিয়ের পরে ফাহিম হসপিটালে লোক পাঠিয়ে দিবে।
তানিশার আর বলার কিছু নেই। সে আর কি বা বলবে? সে শুধু মাথা নিচু করে বলে উঠল,
— আচ্ছা।
এরপর তানিশা উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তানিশা বাড়ির বাইরে এসে তার মাকে কল দিল। কিছুক্ষণ পর মিসেস তাসনীম ফোন ধরলেন। তিনি সাথে সাথে ফোনের অপর পাশ থেকে বলে উঠলেন,
— কিরে কোনো ব্যবস্থা হলো?
— মা আমি ইফাদের সাথে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছি। তুমি চিন্তা করো না। একটু পরেই বাবার অপারেশন শুরু হবে।
তানিশার কথা শুনে মিসেস তাসনীমের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
— আচ্ছা তাহলে আমি তোর বাবার কাছে যাচ্ছি।
বলেই তিনি কল কেটে দিলেন। তানিশার সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। সে ওখানে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষণ পর ফাহিম তানিশার কাছে এসে দাঁড়াল।
— ম্যাম আপনি আমার সাথে আসুন। বিয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। স্যার আপনাকে খুঁজছেন।
তানিশা নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে বলল,
— হুম চলেন।
তানিশা ফাহিমের পেছন পেছন গেল। একটু পর ইফাদ আর তানিশার বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিয়ে শেষ হতেই ইফাদ লোক পাঠিয়ে দিল হসপিটালে। তানিশা ইফাদের কাছে এসে বলে উঠল,
— বিয়েটা তো এখন হয়ে গেছে। আমি এবার তো বাবার কাছে যেতেই পারি।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কেউ বাস্তবের সঙ্গে গল্পের তুলনা করবেন না। )