#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৮
“ভালোলাগা”শব্দটায় একটা সুপ্ত অনুভূতি মিশে থাকে।সেই সুপ্ত অনুভূতি টা যখন প্রকট আঁকার ধারণ করে
তখনই সেটাকে”ভালবাসা”বলে।ভালবাসার মানুষটার সবকিছুই তোমার ভালো লাগবে।আবার কারো প্রতি ক্ষুদ্র ভালোলাগাকে কেন্দ্র করেই তুমি তাকে ভালোবেসে ফেলবে।কি অদ্ভুত তাইনা!
সবে মাত্র মায়ার ভার্সিটি থেকে বেরোলো আরিয়ান।এতোদিন পড়াশোনা একপ্রকার বন্ধ ছিলো মায়ার।কয়েকদিন পর পরীক্ষা।আর দেরি করলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
সে নিজে প্রফেসর দের সাথে কথা বলে এসেছে।মায়ার নোট’স গুলো যেন তারাই তৈরি করে দেয়।প্রয়োজনীয় বইপত্রগুলো গাড়িতে রেখে উঠে বসলো।এখন আবার অফিসে যেতে হবে।
॥
মায়ার রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে মায়া।আরিয়ান একটু কেঁশে উঠতেই মায়া পেছনে ফেরে।আরিয়ানকে দেখে একবার ঘড়ির দিকে তাকায়।সে অনেকক্ষন যাবত অপেক্ষা করছিলো।বলে,
—“আপনার এতো দেরি হলো কেন আজ?”
—“তোমার ব্যাপারে একটা জরুরি কাজে গিয়েছিলাম।”
—“আমার ব্যাপারে?…কি কাজ?”
আরিয়ান জবাব না দিয়ে একটু হাসে।তখনই তন্ময় ঢুকে।তার হাতে দুইব্যাগ বই।টেবিলে রেখে দিয়ে বেরিয়ে যায় সে।মায়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।তবে ঠোঁটের কোঁণে খেলা করছে মৃদু হাসির কণা।
—“তোমার বইখাতা।খোঁজ নিয়েছি আমি।একমাস পর পরীক্ষা।হেলাফেলা করলে সেমিসটার ড্রপ দিতে হবে।তোমার একটা বছর লস যাক আমি চাইনা।সেজন্যই কাল থেকে সিরিয়াসলি পড়তে হবে।ঠিকাছে?
—“কিন্তু…
—“নোটসগুলো তো?আগের সব নোটস কাল সকালে পেয়ে যাবে।আর নতুনগুলা রোজ সন্ধ্যায় এসে দিয়ে যাবে।ওকে?
মায়া মিষ্টি করে হাসে।দু’দিন যাবত সে ভাবছিলো আরিয়ানকে বলবে এই ব্যাপারে।কিন্তু বলেনি পাছে আরিয়ান রাগ করে এই ভয়ে।অথচ আজ আরিয়ান নিজেই সব ব্যবস্থা করে ফেললো।কিভাবে যে লোকটা সব আগে আগে বুঝে যায় ভেবে পায়না মায়া।
——————
আরিয়ানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে মায়া।আরিয়ানের শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ সে।এতটা কাছাকাছি থাকে তারা তবুও মাঝে কেমন একটা দুরত্ব।অদ্ভুত একটা জড়তা!
মায়া হাত বাড়িয়ে আরিয়ানের গালে রাখে।তার গালে হাল্কা চাঁপদাড়ি সেগুলো বিঁধে বিধায় সে সরিয়ে চোখের পাপড়ির উপর হাত রাখে।আরিয়ানের পাপড়িগুলো তুলনামূলকভাবে বড়।সে একআঙ্গুলের ডগা দিয়ে নাড়াচাড়া করতেই আরিয়ান চোখ কুচকে ফেলে।ঘুমের মধ্যই ষ্পষ্ট কন্ঠে বলে,
—“কি করছো?”
মায়া ভ্রু কুচকিয়ে ফেলে।তার মানে উনি ঘুমায়নি।
—“আপনি জেগে আছেন?
—“উহু,আমিতো ঘুমাচ্ছি।”
—“ঘুমাচ্ছেন তো কথা বলছেন কিকরে?”
ফট করে চোখ খুলে আরিয়ান।মায়া লক্ষ্য করে তার চোখে এখন ঘুম নেই।তবে একটু আগে দেখে তো মনে হচ্ছিলো সে গভীর ঘুমে।
মায়া চোখের উপর থেকে দ্রুত হাত সরাতে গেলে আরিয়ান হাত ধরে ফেলে।ঠোঁটের কাছে এনে হাতের তালুতে উষ্ম স্পর্শ এঁকে দেয়।মায়ার মুখে লজ্জামাখা মৃদু হাসি ফুটে উঠে।
আরিয়ান একটু উঠে মায়ার উপর ঝুকে যেতেই মায়া চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।
আরিয়ান তার হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মায়ার গালে হাল্কা ছোয়াঁ দিয়ে বলে,
—“আমি ঘুমিয়েই ছিলাম।তুমিইতো জাগিয়ে দিলে।…তুমি কি জানো তোমার হাতে কতটা মোহময়ী সুবাস আছে?সেই হাত যদি আমার চোখে মুখে এভাবে বিচরণ করে তবে ঘুম না ভেঙে উপায় আছে বলো?
মায়া উওর দেয়না।তার শ্বাস ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে।আরিয়ানের তপ্ত নি:শ্বাস গুলো মুখের উপর ছড়িয়ে পরায় ক্ষনে ক্ষনে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।
আরিয়ান হঠাৎ মাথা বাকিয়ে তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার হাতদুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে ধীরকন্ঠে বলে,
—“আচ্ছা,তোমার ভয় হয়না?এইযে আমার রুমে তুমি আমি একদম একা,এক বিছানায়।দরজা বন্ধ।বাতি নিভানো।তার উপর তুমি এতটা আবেদনময়ী।শত হলেও আমি একজন পুরুষ।তুমি ছোট মানুষ..আমাকে বাঁধা দিতে পারবেনা।এখন যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করে ফেলি?
মায়া আরিয়ানের চোখে চোখ রাখে।আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে তার দিকে উওরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে।
—“আপনি কি ঘুমের ঘোরে কথা বলছেন?একটু থেমে আবার বলে”এ্যাই,আপনার জ্বর টর এলো নাতো আবার?দেখি..”বলে তার বিছানায় চেপে রাখা হাত উঠাতে চায়।কিন্তু আরিয়ান তা শক্ত করে ধরে রেখেছে।
—“আমি সম্পূর্ণ সজাগ মায়া।কোন ঘোরে নেই।তুমি আমার কথার উওর দাও।”
মায়ার ভয় লাগেনা।সে নিশ্চিত আরিয়ান তার সাথে মজা করছে।তার দৃঢ় বিশ্বাস আরিয়ান কখনোই এমন কিছু করবেনা তার সাথে।
—“আপনি ভয় দেখাচ্ছেন তাইনা?আমি জানি আপনি ওরকম না”
—“ভয় দেখাবো কেন?আমি শুধু সত্যিটা বলছি।এটা হতেই পারে,সবসময় আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রনে নাই রাখতে পারি।আফটার অল ইউ আর টু মাচ এট্রাকটিভ”।বলে মায়ার সারা মুখে চোখ বুলায় আরিয়ান।
মায়া অবিশ্বাসের কন্ঠে বলে,
—“এরকম মজা করছেন কেনো?আমার ভালো লাগছেনা।ছাড়ুনতো”।
আরিয়ান এমন ভাব করে যেন তার কথা শুনতেই পায়নি।সে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে বলতে থাকে,
—“এরকম খোলা চুল,ঘুম ঘুম চেহারা,আর তোমার ঠোঁট গুলো তো জাস্ট…,গায়ে ওড়নাও নেই।আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ মায়া।ডু ইউ নো হাউ মাচ্ হট্ ইউ আর লুকিং?”
~চলবে~
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৯
মায়া এবার জোরে কান্না করে দেয়।আরিয়ান আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা।মায়ার হাত ছেড়ে দিয়ে তার উপর থেকে সরে গিয়ে শব্দ করে হেসে ফেলে।আরিয়ানের হাসি দেখে মায়ার কান্নার বেগ বেড়ে যায়।হেঁচকি তুলে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে সে।আরিয়ানের হাসি যেন থামছেই না।সে হাসতে হাসতেই উঠে বসে।
ব্যাঙ্গ করে বলে,
—“আমি মজা করছিলাম মায়া।ডোন্ট ক্রাই।”
মায়ার কান্না থামেনা।দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে সে।আরিয়ান এখনো হাসছে।সে শুধু একটু মজা করতে চাচ্ছিল।তবে তার অভিনয় মনে হয় একদমই ভালোনা।এজন্যই মায়া তার কথাগুলো বিশ্বাস করছিলোনা।
লাস্টে হয়তো একটু বেশিই বলে ফেলেছে।আরিয়ান বহু কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে মায়াকে টেনে তুলল।
পাশে বসিয়ে মাথায় পিছের দিকে হাত রেখে বললো,
—“আচ্ছা,আর কাঁদেনাতো।তুমিতো আমার কথাগুলো বিশ্বাসই করোনি।তো এভাবে কাঁদছো কেন?”
কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে মায়া।কোনরকম থেমে থেমে সে বললো,
—“আ..আপনি ওরকম..বি..বিশ্রিভাবে কেন..ক..কথা বলছিলেন?”
আরিয়ান ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।সে বুঝতে পারছে সে একটু অতিরিক্তই বলেছে।তার মায়াবতী খুবই নরম,কোমল।এসব কথা তার সইবেনা।
—“ভয় পেয়েছো?”
—“উহু,আমি..আমি জানি আপনি ওমন নন”
আরিয়ান শুধু এতটুকুই জানতে চেয়েছিলো যে মায়া তাকে কতটা বিশ্বাস করে।তার এসব বলার পরও মায়ার চোখে তার প্রতি কোনরকম ভয় দেখেনি।দেখেনি কোন অবিশ্বাস।ভাবতেই অন্যরকম ভালোলাগায় ছেঁয়ে যাচ্ছে ভেতরটা।
মায়ার মুখ থেকে হাত সরাতেই মাথা নিচু করে ফেললো মায়া।এখনো কাঁদছে সে।মায়ার হাতদুটোকে একহাতের মুঠোয় বন্দি করলো আরিয়ান।মায়ার হাতগুলো বাচ্চাদের মতো।আরিয়ানের একহাতেই তার দুইহাত এসে যায়।
মুখের উপর আসা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে আরিয়ান বললো,
—“এত বিশ্বাস করো কেন আমাকে?”
মায়া মাথা উঠিয়ে আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।তার কাঁদতে কাঁদতে লাল হয়ে যাওয়া চোখগুলো দেখে আরিয়ানের কোথাও একটা “ধক্” করে উঠে।তৎক্ষনাত সে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
মায়া আবারো কয়েকফঁটা জল বিসর্জন দিয়ে উওর দেয়,
—“জানিনা”।
আরিয়ান তাকে কাছে টেনে একহাতে আগলে ধরে।মাথাটা বুকে চেপে দৃঢ় কন্ঠে বলে,
—“আর কাঁদবেনা।কান্না বন্ধ কর।”
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে মায়ার কান্না থামে।ঘাসের উপর যেভাবে শিশির লেপটে থাকে ঠিক সেভাবেই আরিয়ানের প্রশস্ত বুকের সাথে মিশে থাকে সে।
আরিয়ান হঠাৎ ডেকে উঠে,
‘মায়া?’
‘বলেন’
‘আমি না হয় মজা করছিলাম।কিন্তু কথা গুলো কিন্তু সত্যি ছিলো।তোমাকে কিন্তু এখন খুবই…
এটুকু বলতেই মায়া চোখ রাঙিয়ে তাকায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
—“আপনি আবারো…।
আবছা আলোয় মায়ার এমন চাহনীতে নি:শব্দে হেসে ওঠে আরিয়ান।
——————
——————
সকালে নিজের রুমে ওয়ার্ক-আউট করছিলো আরিয়ান।জীম-ম্যাট বিছানো মেঝেতে।পাশে দুটো ডাম্বেল রাখা।
মায়া তখনো ঘুমে।আরিয়ানও ডাকেনি।কালরাতে এতো কেঁদে এখন ঘুমাচ্ছে!ঘুমাক!।
পুশ-আপ দিতে দিতে হঠাৎই থেমে যায় আরিয়ান।তার দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়ে যায় মায়ার সদ্য ভাঙা ঘুমঘুম চেহারায়।মায়া আধো আধোভাবে চোখ খুলছে।একহাত দিয়ে তার পাশে হাতরাচ্ছে।আরিয়ানকে খুঁজছে হয়তো।পাশে না পেয়ে ঝট করে চোখ খুলে মায়া।চারপাশে চোখ বুলাতেই আরিয়ানকে চোখে পরে।
ততক্ষনে মাথা নামিয়ে পুশ-আপে মনোযোগ দিয়েছে আরিয়ান।
তার পেটানো সুঠাম দেহ থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে।গায়ের চাদর সরিয়ে মায়া উঠে বসে।চোখ-মুখ ফুলে আছে তার।চোখ কচলিয়ে সামনে তাকাতেই আরিয়ানের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়।
একটা হাই তুলে মায়া বলে,
—“এই সকাল সকাল আপনি এসব করছেন কেন?”
—“এখন সকাল সকাল?সাড়ে দশটা বাজে”।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে মায়া।আসলেইতো বেলা হয়ে গেছে। বালিশের পাশ থেকে ওড়না নিতে যাবে তখনই বালিশের উপর রাখা আরিয়ানের ফোন বেজে ওঠে।ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকানোর আগেই আরিয়ানের দ্রুত ফোনটা নিয়ে নেয়।নামটা দেখে কপালে সুক্ষ ভাঁজ পরে।দাড়িয়ে যায় সে।গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে,”তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও,আমি আসছি”।অত:পর ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায় সে।
মায়া মাথা ঘামায় না।হয়তো জরুরি কারো ফোন।
বিছানা থেকে নেমে সামনে যাবে তখনই নিচে রাখা ডাম্বেলে হোঁচট খায়।কোনরকম বিছানা ধরে পরা থেকে বেঁচে যায় মায়া।পায়ের ব্যাথায়”উফ” বলে আর্তনাদ করতেই পেছন থেকে আরিয়ানের কন্ঠ শুনে,
—“কি হলো?ব্যাথা পেয়েছো?”
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।আরিয়ান ফোন কানের থেকে অনেকটা দুরে রেখে তার উপর একহাত রেখে দিয়েছে।যেন তাদের কথোপকোথন ওপাশের মানুষটা শুনতে না পায়।মায়া সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে,
—“না ঠিক আছি।আপনি যান,কথা বলুন”।
আরিয়ান তার পায়ের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে কানে ফোন লাগিয়ে চলে যায়।মায়া ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে।আরিয়ান যে কেন তার এত কেয়ার করে?
––—–———
সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে আরিয়ান।এখন নিচে নামবে ব্রেকফাস্ট করতে।মায়া অপেক্ষা করছে।
দরজা খোলার আগমুহুর্তে তার কানে ভেসে আসে ইতির চিৎকার।অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে আরিয়ানের।
জলদি দরজা খুলে বাইরে যেয়ে দেখে সিঁড়ির কাছে কাঁপতে কাঁপতে দাড়িয়ে আছে ইতি।আরিয়ানকে দেখেই সে চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললো,
—“স্যার,,,ম্যাম…
আরিয়ান এগিয়ে যেতেই দেখলো উঁচু সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পরে আছে মায়া।।মাথা থেকে বেয়ে যাচ্ছে লাল রক্তের ধারা…
~চলবে~
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২০
আরিয়ান কোনরকম সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামল।পা যেন চলছে না তার।মায়া উপুর হয়ে পরে আছে।
দ্রুত হাটুগেড়ে বসে মায়াকে সোজা করে মাথাটা কোলের উপর নেয়।কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
চোখের উপর দিয়ে বেয়ে বেয়ে পরছে রক্ত।
আরিয়ান গালে টোঁকা দিয়ে ক্ষীণ স্বরে ডাকে,
—“মায়া?চোখ খুলো।মায়াবতী?তার কন্ঠে স্পষ্ট ভয় প্রকাশ পাচ্ছে।
মায়া উঠেনা।আরিয়ান তাকে বুকে টেনে নেয়।মায়ার রক্ত তার জামায় লেগে যায়।আচ্ছা,তার কম্পিত হৃদস্পন্দন কি মায়ার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে?মায়া কি বুঝতে পারছে তার অস্থিরতা,তার তীব্র অনুভূতির ভীত বহি:প্রকাশ?
তন্ময় সামনে এসে দাড়ায়।আরিয়ান তাকে কিছু বলার আগেই তন্ময় দ্রুত বলে,
—“গাড়ি বের করেছি ভাই।ম্যাম কে নিয়ে আসুন।”
মায়াকে যত্ন করে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।তন্ময় ছোট একটা শ্বাস ফেলে এগিয়ে যায়।ইতিকে ইশারা করে তার সাথে যেতে।ইতি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।তার সামনেই মায়ার এমন একটা বিপদ হয়ে গেল।যদিও তার
কিছুই করার ছিলোনা।সে যখন দেখলো ততক্ষনে অর্ধেক সিঁড়ি গড়িয়ে পরে গেছে মায়া।
————–
গাড়ি ড্রাইভ করছে তন্ময়।পিছের সিটে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বসেছে আরিয়ান।মায়ার পাশে জানালার ধারে ইতি বসে আছে।
মায়ার কপালে শক্ত করে রুমাল চেপে ধরে রেখেছে আরিয়ান।তবুও রক্ত থামছেনা।বাসার সিঁড়ি বেশ উঁচু।সেখান থেকে পরে গেছে তাই হয়তো ক্ষতটা বেশি।
আরিয়ান একবার মায়ার মুখের দিকে তাকায়।ফর্সা মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে।
মূহর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে।মেয়েটাকে এত আগলে আগলে রাখার পরও কেন তার সাথেই এসব হয়?কেন ওর উপর দিয়েই সব বিপদ যেতে হয়?হাহ্!
—“তন্ময়,ড্রাইভ ফাস্ট।আর কতক্ষন লাগবে?”
—“এইতো ভাই,পৌছে গেছি।”
গাড়ি থামে হসপিটালের সামনে।রাস্তা ভর্তি মানুষ।আরিয়ান সেসব না ভেবেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।ঝুকে গিয়ে মায়াকে কোলে নেয়।আশেপাশের সবাই হা করে দাড়িয়ে থাকে।ভীড় জমায়।পাবলিক প্লেসে এভাবে গার্ড ছাড়া সচরাচর আরিয়ানকে দেখা যায় না।আর আজকে তো একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে আছে।
উৎসুক জনতার কেউ কেউ মোবাইল বের করে ভিডিও করে।
আরিয়ান সেসব তোয়াক্কা না করে হসপিটালের ভেতরে ঢুকে যায়।তন্ময় গাড়ি থেকে বের হয়ে ইতিকে নিয়ে কোনরকমে সবাইকে এড়িয়ে চলে আসে।তার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।কিছু একটা যে ঘটবে তার আভাস বেশ শক্তভাবেই পাচ্ছে সে।তবে আরিয়ানকে এখন এসব বলা যাবেনা।রাগের মাথায় কখন কি করে ফেলবে ঠি ক নাই।
——————
কেবিন থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসে।আরিয়ান দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায়।বাইরে থেকে শোরগোলের শব্দ আসছে।রাগে শরীর শিরশির করছে তার।যেখানে যাবে সেখানেই এই মিডিয়া।মানুষের পার্সনাল লাইফ নিয়ে কেন যে এত কৌতুহল তাদের!
সামনে নতজানু হয়ে দাড়িয়ে আছে একজন অল্পবয়সী ফিমেল ডক্টর।নাম মিতালী রহমান।সে ভীত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“আপনার স্ত্রীর কপালে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।ক্ষতটা বেশ গভীর।রক্তও বেরিয়েছে অনেক।ভয়ের কিছু নেই কিন্তু খুব দূর্বল উনি।আর বেসামালভাবে পরার কারণে ডানহাত মচকে গেছে।প্লা স্টার করে দেয়া হয়েছে।তবে সম্পূর্ণ ঠি ক হতে সময় লাগবে।জ্ঞান ফিরবে কিছুক্ষন পর।
মায়াকে স্ত্রী বলার পরেও আরিয়ান কিছু বলেনা।ইতিও চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।এতক্ষনে মায়ার প্রতি আরিয়ানের অনুভূতি সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত হয়েছে সে।
—“ওকে কি হসপিটালেই রাখতে হবে?বাসায় নিয়ে যেতে পারবোনা?”
—“জি জি পারবেন।স্যালাইন চলছে তো।সেটা শেষ হোক তারপর সন্ধ্যার সময় বাড়িতে নিয়ে যেয়েন”।
—————
চোখ খুলতেই মাথায় ব্যাথা অনুভূত হয় মায়ার।গালের উপর কারো হাত রাখা।বেশ বুঝতে পারছে এটা আরিয়ানের হাত।হাল্কা করে হাতের আঙ্গুল নাড়াতেই ইতির কন্ঠ শুনতে পায় সে,
—“ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে স্যার।”
আরিয়ান এতক্ষন অন্যমনস্ক হয়ে ছিল।ইতির কথায় হুঁশ ফিরে তার।মায়া আধো আধো ভাবে তার দিকে চেয়ে আছে।আরিয়ান যেন প্রাণ ফিরে পায়।স্বস্তির নি:শ্বাস ছাড়ে আলতো করে মায়ার মাথায় হাত রাখে সে।ধীর গলায় বলে,
—“কেমন লাগছে এখন?ব্যাথা হচ্ছে বেশি?”
মায়া মৃদুভাবে দু’পাশে মাথা নাড়ায়।ব্যাথা হচ্ছে কিন্তু এতটাও বেশি নয়।আরিয়ানকে দেখেই বুঝতে পারছে সে খুব চিন্তায় ছিলো।তার টেনশন আর বাড়াতে চায়না সে।
হাতে দিকে তাকাতেই আৎকে উঠে মায়া।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকাতেই সে বলে,
—“ডোন্ট ওয়ারি।একটু ফ্যাকচার হয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে।”
মায়া উঠতে চায়।তবে হাতে ভর দিতে পারছে না।স্যালাইন চলছে।আরিয়ান তাকে ধরে উঠায়।বুকের সাথে হেলান দিয়ে বসায়।ইতির সামনে মায়া লজ্জা পেলেও মুখে কিছু বলেনা।
ইতির দিকে তাকাতেই সে মুচকি হাসে।প্রতিউওরে মায়াও হাসে।আরিয়ান একহাতে ফোনে কিছু একটা করছে আর আরেকহাত মায়ার কোলের উপর রাখা।
কিছুক্ষন পর মিস.মিতালী কেবিনে প্রবেশ করে।মায়াকে আরিয়ানের বুকে দেখে একটু হাসে সে।
আরিয়ান খান কে না চেনে!রাগী,মেজাজী মানুষ সে।ভয়ে প্রেস মিডিয়ায়ও তার সম্পর্কে কোন বাজে ভুয়া নিউজ ছড়ানো হয়না।অথচ নিজের স্ত্রীর প্রতি কতোটা যত্নশীল সে।যদিও সে জানতো আরিয়ান অবিবাহিত।
কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখে তার আরিয়ানের স্ত্রী ছাড়া কিছু মনে হয়নি।আর যদি মেয়েটা তার স্ত্রী নাই হতো তাহলে নিশ্চয় তাকে স্ত্রী বলার পর আরিয়ান কোন রিয়েক্ট করতো।
ওতশত না ভেবে সে এগিয়ে যায়।স্যালাইনটা নামিয়ে দিয়ে বলে,
—“আপনার ক্যানেলাটা খুলে দেই।স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে।”
মায়া ভীত কন্ঠে বলে,
—“কিন্তু এটা খুললেতো ব্যাথা পাবো।”
আরিয়ান হুট করে মায়ার চোখে উপর হাত রেখে ইশারা করে খুলে ফেলতে।মিস.মিতালী হেসে খুলে ফেলেন সেটা।”উহ্”করে উঠে মায়া।আরিয়ান মুচকি হেসে চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়।মেয়েটা এতো ভয় পায়!!
___________
সব ফর্মালিটিস শেষ করে কেবিনে আসে আরিয়ান।ইতি আর মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
তন্ময় বারবার ফোন দিচ্ছে আরিয়ানকে।বাইরে নাকি সাংবাদিক দের ভীড়।আরিয়ানের মেজাজ প্রচন্ড গরম।
সমস্যাটা কি এদের?
বের হতেই এতো মানুষ দেখে চমকে উঠে মায়া।আরিয়ান তার পিঠের পিছ দিয়ে বাহু জড়িয়ে ধরে।আশ্বস্তভরা কন্ঠে বলে,
—“আমি আছিতো,ভয় পায়না”।
সাংবাদিকরা একটার পর একটা ছবি তুলছে।ক্যামেরার ফ্লাসে প্রচন্ড অসস্তি লাগছে মায়ার।মাথা নিচু করে আরিয়ানের পিঠের শার্ট খামছে ধরে আছে সে।
তন্ময় দ্রুত সামনে আসে।অস্থিরভাবে বলে,
—“ভাই আপনি ম্যামকে নিয়ে গাড়িতে বসুন।এদের কথায় কান দিয়েন না।রাগের মাথায় রাস্তায় সিন ক্রিয়েট হয়ে যাবে”
ভীড় ঠেলে সামনে যেতে পারেনা আরিয়ান।তার আগেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে।একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“ইনি কে স্যার?”,আপনার গার্ল-ফ্রেন্ড?”,আপনারা কি গোপনে প্রেম করছেন?”,অবৈধ সম্পর্ক?”,
“এ কি আপনার রক্ষীতা?”
এ পর্যায়ে এসে রাগের সীমা ছাড়িয়ে যায় আরিয়ানের।তুমুলভাবে গর্জে উঠে সে বলে,
—“জাস্ট শাট আপ।সি ইজ্ মাই ওয়াইফ।আমার স্ত্রী “।
~চলবে~
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২১
আরিয়ানের গম্ভীর কন্ঠের ভারি ধমকে মূহুর্তেই কোলাহল থেমে গেল।সাংবাদিকদের সাথে মায়াও খানিকটা চুপসে গেলো।আরিয়ানের ধমকে সে যারপরনাই ভয় পেয়েছে।পিনপতন নিরবতা ভেঙে একজন বলে উঠলো,
—“কিন্তু স্যার,আপনিতো আনম্যারিড।ইনি যে আপনার স্ত্রী প্রমান কি?এমন তো নয় আপনি কোন নারী কেলেঙ্কারি তে জড়াতে চাচ্ছেননা।এজন্য উনাকে স্ত্রী বলছেন।ম্যাম কিছু বলুন।আপনি কি উনার সাথেই থাকেন?আপনাকে কি উনি জোর করে…
মায়া লজ্জায় কুঁকরে যায়।এদের কথাবার্তার ইঙ্গিত বুঝতে পারছে সে।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে মাথা নুইয়ে আরিয়ানের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকে।
সাংবাদিকটা আরো কিছু বলার আগেই আরিয়ান চোখ গরম করে আবারো ধমকে উঠে,
—“হাউ ডেয়ার ইউ!আপনার সাহস কি করে হয় ওকে কোন প্রশ্ন করার?আর এতোটা বাজে চিন্তাধারা কিভাবে আসে আপনাদের মাথায়।আরিয়ান খানের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট নিশ্চয় আপনাদের মুখ থেকে শুনতে হবেনা।আমি যখন বলেছি ও আমার স্ত্রী।তখন এই ম্যাটারটা এখানেই ক্লোজ হওয়া উচিত না?এটা নিয়ে আর একটা ওয়ার্ডও শুনতে চাচ্ছিনা আমি।রাস্তা ছাড়ুন।
আরিয়ানের উপর আর কিছু বলার সাহস পেলোনা কেউ।সাইড দিতেই দ্রুত হেটে মায়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিল আরিয়ান।দরজা আটকে নিজে গাড়িতে ঢোকার আগে যেই ছেলেটা মায়াকে প্রশ্ন করছিলো তার চেহারাটা একবার দেখে নেয়।অত:পর গাড়িতে বসে জানালার কাঁচ উঠিয়ে দেয় সে।
মায়ার সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে সজোরে গাড়ি টান দেয়।মাথায় আগুন জ্বলছে তার।রাগ নিয়ন্ত্রন সে কোনোকালেই করতে পারে না।
হঠাৎ ডুকড়ে কেঁদে উঠে মায়া।আরিয়ান সেদিকে তাকায় না।সে জানে মায়া কেন কাঁদছে।মায়ার কান্নার শব্দে রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে তার।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে সে রাগী কন্ঠে বলে,
—“মায়া,কাঁদবেনা।রাগ উঠে যাচ্ছে।স্টপ ক্রাইং”
আরিয়ানের ধমকে আরো জোরে কেঁদে দেয় মায়া।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,
—“উনারা তো ঠি কই বলছিলো…আমরাতো…”
হুট করে ব্রেক কষে আরিয়ান।মাথা ঠি ক নাই তার।রাগে শরীর কাঁপছে।উঠে গিয়ে মায়ার দিকে ঝুকে সিটের দু’পাশে সজোরে বাড়ি মেরে বলে,
—“আমরাতো কি?হুম?কি আমরাতো?ওরা ঠি ক বলছিলো?কখনো জোর করেছি আমি তোমাকে?একসাথে থাকার পরও ফিজিক্যালি ইনভলভ্ হয়েছি কখনো?এখন চুপ করে আছো কেন?স্পিক আপ,ড্যাম ইট্।
—“আ..আমি সেটা ব..বলিনি…”
—“তো কি বলছো?বলো?কি বোঝাতে চাচ্ছো?”
মায়া একবার আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।রাগে যেন চোখ দিয়েই ঝলসে দিবে সে।ভয়ে মাথা নিচু করে সশব্দে ফুঁপিয়ে উঠে সে।
আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।মাথা কাত করে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নেয়।নিজের সিটে বসে স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে।মিনিট দুয়েক পর চোখ খুলে সে।এখনো মায়ার ফোঁপানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।শীতল গলায় বলে,
—“আমাদের বিয়ে হয়নি এটাইতো বলতে চাচ্ছো?”
মায়া উওর দেয়না।কেবল মৃদুভাবে উপর নিচে মাথা নাড়ায় ।মুখে কিছু বলতে ভয় লাগছে তার।আরিয়ান যদি আবার ধমকে উঠে।
আরিয়ান ফোনে কাওকে কিছু একটা মেসেজ করে ফোনটা গাড়ির সামনে রেখে বলে,
—“বেশ,আজকেই বিয়ে করবো আমরা”।
মায়া চমকে তাকায়।চোখে মুখে বিস্ময়।এখন বিয়ে করবে মানে?রাত হয়ে গেছে এখন হুট করে কিভাবে?
আরিয়ান তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার কান্না তার সহ্য হয়না তবুও মেয়েটা তার সামনেই বারংবার কাঁদে।
সামনের দিকে দৃষ্টি স্হির করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে বলে,
—“চোখ মুছো মায়া।অযথা কাঁদবে না।তোমার চোখের পানির প্রতিটা ফোঁটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।সেগুলো ঝরলেও শুধু আমার জন্য ঝরবে।অন্য কোন কারণে নয়।”
————–——
মাত্র প্লাস্টার করা হাত দিয়েই কোনরকম রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দেয় মায়া।মায়ার সাইন করার পর আরিয়ানও সাইন করে দেয়।রুমে শুধু পাঁচজন মানুষ।একজন উকিল,তন্ময়,ইতি,মায়া,আরিয়ান।
তন্ময় হাপাচ্ছে।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার।এতক্ষন বেশ দৌড়-ঝাপের মধ্য ছিলো সে।আরিয়ান-মায়া সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেও ইতিকে নিয়ে অন্য গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিল।পথিমধ্য হঠাৎই আরিয়ানের মেসেজ পায়,এখনই রেজিস্ট্রি পেপারের ব্যবস্থা করতে।সে এখনি মায়াকে বিয়ে করবে।
ব্যাস,আরিয়ানতো বলেই ক্ষান্ত।আর এই রাতের বেলা এসব মেনেজ করতে করতে সে ক্লান্ত।
রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসালো আরিয়ান।মায়া একেবারেই চুপচাপ।সে কি রিয়েক্ট করবে তার জানা নেই!তার কি আদৌ রিয়েক্ট করা উচিত?বিয়েটা তার সম্মতিতে হলো নাকি অসম্মতিতে সেটাই তো বুঝতে পারছেনা।তবে এতটুকু জানে,আরিয়ান যা করছে তার ভালোর জন্যই করছে।
______________
বাসায় ফিরে আগেই তাকে এতগুলো খাবার খাইয়েছে আরিয়ান।সে নাকি খুব দূর্বল।এখন নাকি বেশি বেশি খেতে হবে।এত খেয়ে এখন ক্লান্ত লাগছে মায়ার।ঘুম আসছে।বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে সে।আরিয়ান গেছে ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিতে।সবকিছুই স্বাভাবিক।রোজকার মতো।শুধু এখন তারা বিবাহিত।আরিয়ানের বিয়ে করা বউ সে।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে বেরোয় আরিয়ান।শুধু টাওয়াল পরা সে।মায়া একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।লজ্জা লাগছে তার।লাল হয়ে যাচ্ছে ফর্সা গালদুটো।
আরিয়ানের যে এতো রাগ আজ না দেখলে বুঝতোই
কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে আরিয়ান।টাউজার আর টি-শার্ট পরে বেরিয়ে আসে।
ঘরের লাইট নিভিয়ে মায়াকে সোজা করে শুইয়ে দেয়।কারণ কাত হলে মায়া হাতে ব্যাথা পাবে।তবে কথা বলেনা কোন।মায়াও নিশ্চুপ।
অত:পর মায়ার পাশে তার পেট জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।কিছুক্ষন অতিবাহিত হতেই মায়া ধীর কন্ঠে অভিমানের স্বরে বলে,
—“আপনি আজ আমাকে ধমক দিয়েছেন।”
—“বেশ করেছি”।
আরিয়ানের এমন গা ছাড়া ভাবে অভিমানের পাল্লাটা আরো ভারি হলো মায়ার।মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে থাকলো সে।কিছুক্ষন পরই আরিয়ান তার গালে নাক ঘষে বললো,
—“তখন মাথা ঠিক ছিলনা মায়াবতী।রাগ হচ্ছিল খুব।তার উপর তুমি কাঁদছিলে।যেটা আমার সবচেয়ে অপছন্দের।তাই রাগের মাথায়…”
—“রাগের মাথায় আমার উপর চিল্লিয়ে দিলেন”।
আরিয়ান হেসে ফেলে।এই বাচ্চা মেয়েটার মায়াজালে সে কিভাবে যে ফেঁসে গেছে?
—“বাদ দাও সেসব।ঘুমিয়ে পরো।আর ঘুমের মধ্য নড়াচড়া করবেনা।হাতে বা মাথায় ব্যাথা পাবে কিন্তু।…
শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ডাকবে।ঠিকাছে?”
—“হু”।
মায়া পরম শান্তিতে আরিয়ানের বাহুডোরে ঘুমিয়ে পরে।সে জানে এই জায়গাটা তার জন্য নিরাপদ।একেবারেই নিরাপদ।কোন খারাপ কিছু তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা এখানে।কখনো পারবেনা।
~চলবে~