#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১০
মায়া যেন হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল।অশ্রুসিক্ত নয়নে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো সে রাশেদ চৌধুরির দিকে।রাশেদ চৌধুরি চোখ মেলাতে পারলোনা মেয়ের সাথে।নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরিয়ান মায়াকে আলতো হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
—“জানিস রাশেদ,সেদিন মায়ার উপর হামলা কে করেছিলো?…এই আজিজ।মায়াকে কিডন্যাপও করিয়েছিলো এই আজিজ।তোর মেয়ের উপর খারাপ নজর আছে ওর ঠি ক যেমন আমার মায়ের উপর তোর খারাপ নজর ছিলো।তোর কল রেকর্ডিং আমাদের কাছে দিয়েছে আজিজ।বিশ বছর আগে আমার বাবার সাথে একইভাবে তুই বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলি আর আজকে তোরসাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করলো আজিজ।
আরিয়ানের কথা শুনেও মায়া কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো না।সে তখন ব্যস্ত তিক্ত সত্য কথাগুলো কোনরকম হজম করে নিতে।
রাশেদ চৌধুরি চোখ বড়বড় করে আজিজের দিকে তাকালো।আজিজ কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে সে বুঝতে পারছেনা এসব আরিয়ান কিভাবে জানলো?সে তো শুধু কল রেকর্ডিং দিয়েছিলো।বাকি কথা আরিয়ান কি করে জানে?কপাল বেয়ে ঘাম পরতে লাগলো তার।কিছু না ভেবে সে দৌড়ে পালাতে যেতেই আরিয়ান শুট করে দিলো।পরপর গুলি করায় সেখানেই লুটিয়ে পরলো আজিজ।রক্তে ভেসে গেলো রাস্তা।মায়া চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।
—“তোকে তো আমার বাবা শাস্তি দিতে পারেনি।কিন্তু তোর হয়ে আমিই আজিজকে শাস্তি দিয়ে দিলাম।”
এই প্রথম যেন নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে রাশেদ চৌধুরির।আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে সে দুই হাতজোর করল।ধরা গলায় বললো,
—“আমার মেয়েটাতো কিছু করেনি।ওকে কিছু করোনা তুমি।”
আরিয়ান একটু হাসলো।তারপর শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—“আমার মা ও কিন্তু নির্দোষ ছিলো কিন্তু তুই কি করেছিলি?”
রাশেদ চৌধুরি মাথা নিচু করে ফেললো।আরিয়ান তার নত চেহারার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো।মায়াকে নিজের আরো একটু কাছে টেনে নিয়ে বললো,
—“তোর মতো আমি কখনোই করবোনা রাশেদ।কুকুড় কামড়ালে তো কুকুড়কে আর কামড়ানো যায় না।”
মায়া একদৃষ্টিতে একবার তার বাবার দিকে তাকালো।আরিয়ান হাত উঠিয়ে বন্দুক তাক করে ট্রি গারে আঙ্গুল রাখলো।
রাশেদ চৌধুরি অনুরোধ করে বললো,
—“মায়া মা তুমি দেখোনা।চোখ বন্ধ করে রাখো।”
মায়া কথা শুনলোনা।চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে অনবরত।আরিয়ান তাকে ঘুরিয়ে একহাতে তার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।চোখের ইশারায় রাশেদ চৌধুরিকে কিছু একটা আশ্বস্ত করে শুট করে দিলো।
মায়া”বাবা”বলে আর্তনাদ করে উঠলো।আরিয়ান তাকে মাথা উঠাতে দিলো না।শক্ত করে ধরে রাখলো।
রাশেদ চৌধুরির মৃতদেহ পরে রইলো।আরিয়ান সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসলো।
ততক্ষনে তার বুকেই জ্ঞান হারিয়েছে মায়া।
——————
নিজের রুমেই মায়াকে যত্ন করে শুইয়ে দিলো আরিয়ান।শত চেষ্টা করেও মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করার কথা চিন্তাও করতে পারনি সে।কিছু একটা যেন আটকে দিয়েছে বারবার।কান্নার করার ফলে চোখমুখ লাল হয়ে আছে মায়ার।ফর্সা চেহারার আরক্তিম আভা যেন তার সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরিয়ান ঝুকে তার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।সে জানে মায়ার এই অবস্থার জন্য সেই দায়ি।তবুও তার কিছুই করার নেই।বাবা-মার মৃত্যুর প্রতিশোধ তো তাকে নিতে হতোই।
রুম থেকে বের হতেই ইতির সাথে দেখা হলো।তন্ময়কে তার পাশেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
—“পাশের রুমে মায়ার জিনিসপত্র রেখে দে।আর কর্নারের রুমে ইতির থাকার ব্যবস্থা করে দে”
তন্ময় মাথা নাড়ায়।আরিয়ান গটগট করে নিচে নেমে যায়।ইতির হাত থেকে লাগেজ নিয়ে তন্ময়ও এগিয়ে যায়।তার পিছু পিছু যায় ইতি।
———–—–—
জ্ঞান ফিরেছে মায়ার।উদ্ভ্রানতের মতো কাঁদছে আর চিৎকার চেঁচামেচি করছে সে।
—“ম্যাম একটু শান্ত হন।এভাবে চিৎকার করলেতো..
—“উনি কোথায়?কোথায় উনি?উনাকে আসতে বলো আমার কাছে।কিভাবে পারলেন উনি আমার সামনেই বাবাকে…।”বলতে বলতেই উচ্চস্বরে কেঁদে দিলো মায়া।
দরজা খুলে প্রবেশ করলো আরিয়ান।একটা কাজে বেরিয়েছিলো।আসতেই শুনলো মায়া এমন করছে।সে অবশ্য জানতো,মায়া কখনোই স্বাভাবিক আচরণ করবেনা তার সাথে।সেই হিসেবে প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে সে।মায়ার চিৎকার উপেক্ষা করে ইতিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—“তুমি যাও ইতি।ওকে আমি দেখছি…।
নি:শব্দে বেরিয়ে গেলো ইতি।আরিয়ান ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো।মায়ার দিকে এগিয়ে আসতেই মায়া চিৎকার করে বললো,
—“কাছে আসবেন না।একদম কাছে আসবেননা বলছি।”
আরিয়ান জানে মায়া এখন নিজের মধ্য নেই।তার রাগ হলোনা।ধীরপায়ে মায়ার সামনে গিয়ে বসলো সে।
ধরতে গেলেই মায়া ছিঁটকে তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
—“ধরবেননা আমাকে।আপনি একজন খুনি।বাবাকে খুন করেছেন।”
—“মায়া রাগ উঠিয়োনা আমার।কিছুই জানোনা তুমি।”
—“কি জানবো?আপনিতো আমার সামনেই..।আবার কান্না করে দিলো সে।
আরিয়ান শক্ত করে তার দু হাত নিজের একহাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখলো।আরেকহাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“আর একফোঁটা পানি যদি বের হয় মায়া।আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”
মায়ার চোখ আবারও ভিজে এলো।আরিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারো তার পানি মুছিয়ে দিলো।মায়া হঠাৎ ই শান্ত হয়ে গেলো।কেন হলো সে নিজেও জানেনা।
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,
—“হাত ছাড়ুন।ব্যাথা পাচ্ছি।”
আরিয়ান তার হাত ছেড়ে দিলো।মায়ার একগালে হাত রেখে বললো,
—“আমার কথাগুলো শোনো।তারপরও যদি তোমার মনে হয় আমি ভুল কিছু করেছি তখন ঠি কাছে আমি মেনে নিবো।কিন্তু কিছু না জেনে তো তুমি এমন কিছু বলতে পারোনা।”
মায়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।হাতের উল্টোপিঠে দিয়ে সে চোখ মুছে বললো,
—“বলুন”।
আরিয়ান নরম কন্ঠে বললো,
—“তার আগে একটা প্রশ্নের উওর দাও।তোমার মা কিভাবে মারা গিয়েছিলো তুমি জানো?”
মায়া একটু অবাক হলেও বললো,
—“বাবা বলেছিলো,আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে।”
—“তোমার মা তোমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়নি।তোমার বাবা নিজ হাতে তোমার মাকে খুন করেছে।”
~চলবে~
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১১
মায়া দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,
—“কি সব বলছেন?বাবা কেন মাকে মারতে যাবে?”
আরিয়ান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,
—“কারণ রাশেদের তখন আমার মাকে প্রয়োজন ছিলো।তোমার মা ছিল তার পথের কাঁটা তাই সেটাকে উপড়ে ফেলতে ও একমিনিটও ভাবেনি।”
মায়া কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই আরিয়ান তার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—“আমার কথা শেষ হবে তারপর তুমি কথা বলবে।তার আগে না।ঠিকাছে?
মায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।আর কোন উপায় নাই তার কাছে।আরিয়ান বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,
—“২০ বছর আগে,আমার বাবা আদনান খান ছিলেন তখনকার মিনিস্টার।তার পি.এ ছিলো রাশেদ।মিনিস্টার হওয়া সত্তেও তার কোন শত্রু ছিলনা।অতিরিক্ত ভালো মানুষ ছিলেন বলেই রাশেদের ষড়যন্ত্র সে বুঝতে পারেনি।মিনিস্টারের পি.এ হওয়ার তাগদে সে নানা দুর্নীতি করলেও আমার বাবা তাকে বারবার ক্ষমা করে দিতেন।তখন ছিলো ইলেকশনের সময়।বাবা ছিলেন খুব ব্যস্ত।কৌশলে একদিন বাবার ব্যাংকের সব টাকা রাশেদ নিজের এ্যাকাউনটে ট্রান্সফার করে ফেলে রাশেদ।তারপর ইলেকশনের ঠি ক তিনদিন আগে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে।বাবা নাকি লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেয়।সেই বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণও দেখায় সে।সবসময় মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে যাওয়া আমার বাবাকেই সবাই দোষী সাব্যস্ত করে।প্রচন্ড অপমানিত হন তিনি।জনগন থু থু করে তার উপর।ফলস্বরূপ রাজনীতি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয় বাবাকে।
আমার বয়স ছিলো ৮ বছর।আমি ছিলাম তখন আমার মামার বাসায়।তাই আমাকে আর ওখান থেকে না এনে সন্ধ্যাবেলা মাকে নিয়ে সরকারি বাসা থেকে বেরিয়ে যায় বাবা।বাবার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়েও ক্ষান্ত হয়নি রাশেদ।তার লোভাতুর দৃষ্টি ছিলো মায়ের উপর।পথিমধ্য বাবার গাড়ি থামিয়ে মায়ের সামনেই তাকে মেরে ফেলে সে।তারপর জোর করে মাকে তুলে নিয়ে যায় নিজের বাসায়।তোমার বয়স হয়তো তখন ছয় সাত মাস হবে।মায়ের চিৎকার চেঁচামেচি তে তোমার মা এসে বাঁধা দিতেই একপর্যায়ে তাকেও শুট করে দেয় রাশেদ।
তখন রাশেদের মাথায় চলছিলো শুধু আমার মাকে পাওয়ার নেশা।শত কাকুতি মিনতি করেও ছাড়া পায়নি আমার মা।সারারাত নিজের স্বামীর খুনির নিকট শারিরীক নির্যাতন সহ্য করে সে।মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পরে পরেরদিনই কাঁচের টুকরা দিয়ে হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করে মা।
মামা সেদিন নিজের বোনকে বাঁচানোর জন্য ছুটে গিয়েছিলো রাশেদের বাসায়।কিন্তু পারেনি।রাশেদের এত লোকের সাথে পেরে উঠেনি সে।বস্তুত তার সামনেই তোমার মাকে শুট করে রাশেদ।
আমি তখন ছোট ছিলাম কিন্তু অবুঝ ছিলাম না।একটু বড় হবার পর মামার কাছেই এসব শুনি আমি।তখন থেকেই প্রতিশোধের নেশা জেগে উঠে আমার মাঝে।আর আজকে ঠি ক একইভাবে রাশেদ চৌধুরিকে শাস্তি দিতে পেরেছি আমি।ঠিক যেভাবে আমার বাবার সম্মান সে নষ্ট করেছিলো তেমনি ওর সম্মানও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি।এখন তুমি বলো আমি কি ভুল কিছু করেছি?
মায়া ছলছল নয়নে আরিয়ানের দিকে তাকায়।লোকটার লাল লাল চোখগুলোই বলে দিচ্ছে তার সবগুলো কথা সত্যি।আর এগুলো বিশ্বাস না করারো কোন কারণ নেই মায়ার কাছে কারণ তার সামনেই তার বাবা সব স্বীকার করেছে।নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে তার এত খারাপ একটা লোকের মেয়ে সে।ছিহ্!আর আরিয়ান তার জন্য কত করছে।তার তো উচিত মায়াকেও মেরে ফেলা।কিন্তু সে তার কত যত্ন করছে।ভাবতেই আরো কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।
—“আমি জানি রাশেদ চৌধুরি তোমার বাবা ছিল।আর এটাও সত্য যে,ও নিজের মেয়েকে সত্যিই খুব ভালোবাসতো।কিন্তু আমারতো কিছু করার ছিলো না।নিজের বাবা-মায়ের করুণ মৃত্যুটাতো আমি এত সহজে
ভুলতে পারতাম না।তাইনা?
মায়া মাথা নিচু করে মৃদু স্বরে উওর দেয়,
—“সরি”।
আরিয়ানের ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।মায়ার চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে তার মাথা উঁচু করে।মায়া চোখ মেলাতে পারেনা তার সাথে।নিজের বাবার কৃতকর্মের জন্য লজ্জা লাগছে তার।
—“তুমি সরি বলছো কেন?আমি কি একবারও তোমাকে দোষী করেছি?যা করেছে তোমার বাবা করেছে তুমিতো করনি।”
মায়া উওর দেয়না।নিজেকে খুব নোংরা মনে হচ্ছে তার।আরিয়ান উঠে দাড়ায়।
—“ইতিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পরো,অনেক ধকল গেছে তোমার উপর দিয়ে।”
—————–
রাত দেড়টা..
আরিয়ানের বিছানায় অগোছালোভাবে ঘুমাচ্ছে মায়া।পাশেই বালিশে হেলান দিয়ে আধ সোয়া হয়ে বসে আছে আরিয়ান।তার দৃষ্টি মায়ার মুখের দিকে।দৃষ্টি দিয়েই যেন তাকে অনুভব করছে সে।মেয়েটার মধ্য না আছে কোন অহংকার না আছে কোন মারপ্যাঁচ।একদম সহজ সরল সাধারন।বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।বিরবির করে ঘুমের মধ্যই কিছু একটা বলছে মায়া।আরিয়ান একদম কাছে ঝুঁকে শোনার চেষ্টা করে।
কিন্তু কিছু বুঝতে পারেনা।ভ্রু কুচকে আলতো করে মায়ার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিতেই বিরবির করা থেমে যায়।
তবে আরিয়ানের নি:শ্বাস মায়ার মুখের উপর পরতেই একটু নড়ে উঠে সে।আরিয়ান দ্রুত সরে যায়।
রাতে আরো একদফা কান্নাকাটি করে বহু কষ্টে ঘুমিয়েছে মেয়েটা।এখন উঠে গেলে মনে হয়না আর ঘুমাবে।
তাই ঘুমটা ভাঙাতে চায়না সে।
মাঝে একটা বালিশ আর একটু দুরত্ব রেখে ওপরপাশেই শুয়ে পরে আরিয়ান।
মাঝরাতে বুকের উপর কিছু একটা অনুভব হতেই ঘুম ভেঙে যায়।চোখ মেলে তাকায় আরিয়ান।তার বুকে মাথা রেখে গুটিশুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে মায়া।এক পা তার পায়ের উপরে উঠানো।পাশে তাকিয়ে দেখে মাঝখানে রাখা কোলবালিশ লাথি মেরে বিছানার নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে মায়া।আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।একহাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও হাত সরিয়ে নেয়।মেয়েটা নাহয় ঘুমের ঘোরে এমন করছে কিন্তু সে তো জেগে আছে।সামান্য জড়িয়ে ধরা থেকেও যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়…
~চলবে~
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১২
মায়ার ঘুম ভাঙে দেরি করে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো রুমে সে একা।ঘরের জানালা লাগানো।পর্দাও টেনে দেয়া।হাল্কা আলো জ্বলছে।আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে সব।আরিয়ান রুমে নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে।হয়তো উনি শাওয়ার নিচ্ছে।বড় একটা হাই তুলে উঠে বসে মায়া।কালরাতে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছে তার একদমই খেয়াল নেই।ঘড়ির দিকে তাকায় কিন্তু আবছা আলোয় সময়টা বুঝতে পারেনা।ঘুমঘুম ভাবটা কাটানোর জন্য দু হাতে চোখ কচলায়।তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে আরিয়ান।মায়াকে বসে থাকতে দেখে ব্যালকনির কাঁচের দরজার সামনের পর্দা সরিয়ে দেয়।
আলোকিত হয়ে যায় ঘর।মায়া মুখ তুলে তাকায়।এতক্ষন সে বুঝতেই পারেনি আরিয়ান রুমে এসেছে।
আরিয়ানের পরণে ব্ল্যাক টাউজার।গলায় টাওয়াল ঝোলানো।জিম করা বডিতে বিন্দু বিন্দু পানির কণা।
আরিয়ান গলার টাওয়ালটা নিয়ে চুল মুছতে মুছতে সামনের আয়না দিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—“ঘুম হয়েছে ঠি কমতো?”
আয়না দিয়েই আরিয়ানের দিকে তাকায় মায়া।চোখে চোখ পরতেই দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।আরিয়ানকে শার্ট ছাড়া দেখে কেন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার।কোনরকম আমতা আমতা করে বলে,
—“জি হয়েছে”।
আরিয়ান একটা ধুসর রংয়ের টি-শার্ট পরে নেয়।বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নেয়ার জন্য কাছে আসতেই মায়া দ্বিধাগ্রস্ত কন্ঠে বলে,
—“আমি একটু ফ্রেশ হতাম।”
আরিয়ান ফোনটা নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে বলে,
—“ওহ হ্যাঁ।কাল এখানে ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাকিনি।পাশের রুমে তোমার সব জিনিসপত্র রাখা আছে।আসো।”
——————
মায়ার রুমের দরজাটা হাল্কা একটু ফাঁক করে ইতি।আঙ্গুল দিয়ে একটু টোঁকা দিয়ে বলে,
—“ম্যাম আসবো?”
—“আসো আসো।কই ছিলা তুমি?”
ইতি একটু হেসে ভেতরে ঢুকে।মায়া তখন চুল আঁচরাতে ব্যস্ত।
—“ম্যাম,আরিয়ান স্যার আপনাকে ব্রেক ফাস্ট করতে নিচে যেতে বলেছেন।উনি অপেক্ষা করছেন।”
মায়া ভ্রু কুচকায়।আরিয়ান তার জন্য অপেক্ষা করছে কেনো?তবুও কোন প্রশ্ন না করে ইতিকে বলে,
—“চুল বাঁধবো কি দিয়ে?কোথায় কি রাখা আছে কিছুই তো জানিনা।”
ইতি মুচকি হেসে ড্রয়ার থেকে চুলের কাঁটা বের করে দিয়ে বলে,
—“আমিই সব গুছিয়ে রেখেছি ম্যাম।চিন্তা করবেননা।”
মায়া চুলগুলো খোঁপা করে বেঁধে নেয়।নিচে নেমে দেখে আরিয়ান আর তন্ময় ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।
সামনে খাবার সাজানো অথচ উনারা খাচ্ছেনা দেখে বুঝতে পারছে তার জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে।
ইতি চেয়ার টেনে দিলো তাকে।আরিয়ানের কাছের চেয়ারে বসে পরলো মায়া।ইতি বসলোনা।তার পাশে দাড়িয়ে রইলো।অন্য সময় হলে মায়া ভাবত ইতি হয়তো আগে খেয়ে নিয়েছে।কিন্তু এখানে তো নিশ্চয় এমনটা হয়নি।
—“বসো ইতি।”
ইতি ইতস্তত করে বললো,
—“না ম্যাম,আমি পরে খেয়ে নিবোনে।”
মায়া চোখমুখ কুঁচকে তাকায়।আরিয়ান বলে,
—“এখনি খেয়ে নাও”।
ইতি আর না করেনা।বসে পরে মায়ার পাশে।
একমনে খেয়ে চলেছে আরিয়ান।খাওয়ার সময় কথা পছন্দ না তার।মায়া খেতেখেতেই এটা ওটা বলছে।তন্ময় সেগুলোর জবাব দিচ্ছে।তন্ময় ভেবেছিলো আরিয়ান হয়তো রেগে যাবে।কারণ খাওয়ার সময় সে কোন জরুরি কথা বললেও আরিয়ান রেগে যায়।অথচ আজকে মায়া এত কথা বলছে তার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।মায়াকে একবারও কথা বলতে নিষেধও করছেনা। মনে মনে হাসে তন্ময়।কিন্তু মুখে কিছু বলেনা।
হঠাৎই গলায় খাবার আটকে যায় মায়ার।শব্দ করে কেঁশে উঠে সে।মায়ার সামনের গ্লাসে পানি ঢালা ছিলনা।তন্ময় দ্রুত পানি ঢালতে নেয়।তার আগেই আরিয়ান নিজের গ্লাসের পানি খাইয়ে দেয় মায়াকে।পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু ধমকের স্বরে বলে,
—“খাওয়ার সময় এত কথা বললেতো গলায় আটকাবেই।”
অর্ধেক পানি খাইয়ে গ্লাসটা নামিয়ে রাখে আরিয়ান।মায়ার কাশি থেমে গেছে ততক্ষনে।চোখে পানি চলে এসেছে।আরিয়ান পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছিয়ে দেয়।ইতি আর তন্ময় শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে।
দুজনের ঠোঁটেই চাঁপা হাসি।
আরিয়ান রুমালটা পকেটে ঢুকিয়ে ঠিক হয়ে বসে।গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“চুপ করে খাও।”
মায়া মুখ বাঁকা করে বিরক্তির স্বরে বলে,
—“ধ্যাত্,বকছেন কেনো?এরকম রোবটের মতো বসে বসে খাওয়া যায় নাকি?”
তন্ময় মুখ টিপে হাসে।সে নিশ্চিত অন্য কেউ এই কথাটা বললে আরিয়ান তাকে বিনাবাক্য শুট করে দিত।আরিয়ান রাগি দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
খাওয়া শেষে যখন পানি খাবে তখন তন্ময় দ্রুত বলে,
—“পানি চেন্জ করিয়ে দিচ্ছি ভাই”।কারণ সে জানে আরিয়ান শুধু ওই গ্লাসেই পানি খায়।
—“প্রয়োজন নেই”। বলে মায়ার খাওয়া অর্ধেক পানিটা খেয়ে উঠে পরে আরিয়ান।গটগট করে হেটে উপরে চলে যায়।
——————
বিকেলবেলা নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে আছে মায়া।তার পাশে ইতি।আবারো মন খারাপ লাগছে তার।
না চাইতেও বাবার কথা মনে পরছে।ভাবতেই অবাক লাগছে এই পৃথিবীতে তার সব থেকেও কিছু নেই।আপনজন বলতে ইতি ছাড়া কেউ নেই।আরিয়ান যে তাদের নিজের বাসায় রাখছে এটাইতো ঢের বেশি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া।
—“আপনাদের মধ্য কেমন সম্পর্ক?”
মায়ার ধ্যান ভাঙে।ইতির কথার বুঝতে না পেরে সে বলে,
—“মানে?”
—“মানে গতরাতে না আপনি আরিয়ান স্যারের রুমে ঘুমালেন?”
—“হ্যাঁ,তো?”
—“তো?সেটাই বলছি।বুঝতে পারছেন না।”
মায়ার বোধগম্য হয় বিষয়টা।বিচলিত কন্ঠে সে বলে,
—“তুমি যা ভাবছো।সেরকম কিছু না।”
ইতি আর কিছু বলেনা।তবে তার চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছে মায়ার কথাটা সে খুব একটা বিশ্বাস করেনি।
মায়াও চুপ করে যায়।চোখ বন্ধ করে ভাবে,”মূলত তার কাছেও এই প্রশ্নের উওর নেই।তার আর আরিয়ানের মধ্য আসলে কিসের সম্পর্ক?।”
~চলবে~।
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৩
অফিস থেকে ফিরেছে আরিয়ান।রাতের খাবার কখনোই খায়না সে।তাই রোজকার মতো সিগারেট হাতে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে।
চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার।বাড়ির সামনের লাইটগুলোও তার নির্দেশে এসময় বন্ধ করে দেয়া হয়।অন্ধকার খুব পছন্দের আরিয়ানের।তার এক সমুদ্র আঁধারে ঢাকা নি:সঙ্গ জীবনে এই যান্ত্রিক আলো গুলো একেবারেই বেমানান,অনর্থক লাগে।একবার মায়ার খোঁজ নিয়েছিলো।শুনেছে মেয়েটা নাকি সারাদিন রুমেই ছিলো।বের হয়নি।
শূন্য শূন্য লাগছে তার।কালরাতে মায়া ছিলো সাথে।সারারাত শান্তি মত ঘুম হয়েছে।আশ্চর্যজনক হলেও কালকে কোনরকম নেশাও করেনি।তবুও ঘুমটা হয়েছে একদম মনের মত।আবারও সিগারেটে টান দেয় আরিয়ান।পুরো ব্যালকনি গুমোট ধোঁয়ায় ভরে গেছে।অ্যাশ-ট্রে তে জমা হয়েছে অনেক গুলো আধপোড়া সিগারেটের অংশবিশেষ।আরিয়ানের অবচেতন মন বারবার মায়াকে খুব করে কাছে চাইছে।সেই চাওয়াটাকেই সিগারেটের ধোঁয়ায় সাথে উড়িয়ে দেয়ার নির্মল প্রচেষ্টা করছে সে।
দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ হয়।আরিয়ান ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার তাকায়।তার রুমের দরজা লক করা না।কিন্তু কারো নক না করে প্রবেশ করার অনুমতি নাই।তন্ময় এসেছে ভেবে জোর গলায় সে বলে,
—“দরজা খোলাই আছে…কাম ইন”।
ধীরপায়ে আরিয়ানের রুমে প্রবেশ করে মায়া।ঘরের আলো নিভানো।কোনরকম পা ফেলে সামনে এগোয় সে।
ব্যালকনিতে প্রবেশ করার সময় অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেয়ে ধুম করে মাথায় বাড়ি খায়।”উফ”বলে কঁকিয়ে উঠতেই আরিয়ান সচকিত হয়ে পেছনে ফিরে।অবয়ব দেখে বুঝতে পারছে এটা মায়া।
—“তুমি এখানে?”
—“আপনাকে ডাকতে এলাম।রাতে খাবেননা?”
—‘তন্ময় বলেনি?আমি রাতে খাবার খাইনা।”
তার দিকে এগিয়ে এলো মায়া।যেই হাতে সিগারেট ধরা সেই হাতের কব্জি ধরে মুখের সামনে এনে বললো,
—“তো কি খান?এসব ছাইপাঁশ?ফেলুন এটা।ইশ্ কি বিশ্রি গন্ধ!!।
সিগারেট পুড়ে ধোঁয়া উড়তেই হাত ছেড়ে একটু দুরে সরে যায় মায়া।একটু কেঁশে বলে,
—“ওটা ফেলে চলুন,খাবেন”।
আরিয়ান জোরে একটা টান দেয় সিগারেটে।প্রায় শেষের দিকে ওটা।মায়ার দিকে না তাকিয়েই সে বুঝতে পারে মায়া তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
—“তুমি যাও মায়া।রোজকার অভ্যাস আমার।রাতে আমি কখনোই খাইনা।তুমি খেয়ে নাও”।
জেদ চেপে বসে মায়ার।তন্ময় কে সে জোর গলায় বলে এসেছিলো সে আরিয়ানকে রাতে খাইয়ে ছাড়বে।
তন্ময় তাকে ঠাট্টার স্বরে বলেছিলো,”সে নাকি জীবনেও পারবেনা”।
মায়া একদম আরিয়ানের কাছাকাছি এসে দাড়ায়।একহাত বাড়িয়ে সিগারেটটা নিতে গেলেই আরিয়ান হাত উঁচু করে ফেলে।আরিয়ান তার থেকে বেশ লম্বা হওয়ায় হাতের নাগাল পায়না সে।
—“দিন ওটা।আপনি এখন খেতে না গেলে আমিও সিগারেট খাব।”
আরিয়ান তার দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
—“পাগলামি করোনা।যাও।”
মায়া আরিয়ানের এককাঁধে হাতের ভর দিয়ে পা উঁচু করে।আরেকহাত উপরে বাড়াতেই তার সম্পূর্ণ ভর যেয়ে পরে আরিয়ানের উপর।ব্যালেন্স রাখতে আরিয়ান একহাতে তার কোমড় পেচিয়ে ধরে।উঁচু হয়ে যাওয়ায় মায়ার গরম নি:শ্বাসগুলো আরিয়ানের গলার সামনে পরছে।ক্ষনে ক্ষনে নিজের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে সে।
—“হাত নামান বলছি।আমি খাবোই”
—“এসব তুমি খেতে পারবেনা মায়া।জেদ করোনা!।
একরকম ধস্তাধস্তি করেই সিগারেটটা নিয়ে নেয় মায়া।যদিও ঠি ক মতো সেটা ধরতেও পারেনা সে।আনাড়িভাবে কাঁপা হাতে সেটা মুখে দিতে নিলেই আরিয়ান দ্রুত বলে উঠে,
—“ওটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে মায়া।ঠোঁট পুড়ে যাবে।”
আরিয়ানের বলতে দেরি কিন্তু মায়ার ছেঁকা খেতে দেরি হয়না।গোলাপি ঠোঁটে জলন্ত ছেঁকা খেতেই আর্তনাদ করে উঠে সে।আরিয়ান তার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে ব্যালকনির লাইট অন করে দেয়।একহাতে ঠোঁট চেপে ধরে চোখ ছোট ছোট করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে মায়া।
আরিয়ান এগিয়ে আসে।
—“আপনার জন্য আমার ঠোঁটটা পুড়ে গেল।”
আরিয়ান তার হাত সরিয়ে দেয়।গোলাপি ঠোঁটগুলো রক্তিম লালবর্ণ ধারণ করেছে।ঘোর লেগে যায়।একটা শুকনো ফাঁকা ঢোক গিলে সে।
আরিয়ান মুখ ক্রমশ এগিয়ে গালে হাত রেখে বিরবির করে বলে,
—“আমি তোমাকে সিগারেট খেতে বলিনি,তুমিই তো জেদ করলে,তবে আমার দোষ দিচ্ছো কেন?।”
মায়া উওর দেয়না।প্রচন্ড অসস্তি হচ্ছে তার।দুরত্ব কেবল এক ইন্চি পরিমাণ হলেও আরিয়ান ঠোঁট মেলায় না।
ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
—“এই ঠোঁটে কেবল ঠোঁটের ছোঁয়াই মানায় মায়াবতী।পোড়া সিগারেটের ছোয়াঁ নয়।”
মায়া শিঁউরে উঠে।শরীরের পশম কাঁটা দিয়ে উঠে।আরিয়ানের কথার মানে বুঝতে অসুবিধা হয়না তার।ঝট করে মাথা নামিয়ে সে চাপা স্বরে বলে,
—“খেতে চলুননা প্লিজ।”
—————
ডাইনিং টেবিলে বসে ঠোঁটে বরফ ঘঁষছে মায়া।ছেঁকা টা যে বেশ ভালোভাবেই লেগেছে এখন বুঝতে পারছে।
প্রচন্ড জ্বলছে যে!আরিয়ান খাচ্ছে তার পাশের চেয়ারে বসে।
তন্ময় মুখে বিস্ময় নয়ে সোফায় বসে আছে।তার ভালো লাগছে আবার অবাকও লাগছে।আরিয়ান যত যাই হোক রাতের খাবার খায়না।মদ,সিগারেট খেয়েই রাত পার করে।আর আজকে মায়া বলতেই খেতে চলে এলো।মায়া তার দিকে ঠাট্টার দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করলে সে হেসে ফেলে,”মেয়েটার আসলেই অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।”
আরিয়ান খাওয়া শেষ করে বলে,
—“এখনও জ্বলছে?”
—“উহু,কমে গেছে।”
—“পাগল নাকি তুমি?এরকম কেও করে?”
—“আপনি প্রথমে আমার কথা শুনলেই পারতেন।আমার আর এমন করা লাগতোনা।”
আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ফেলে উঠে যায়।মায়াও আর কিছু বলেনা।
——————
বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে মায়া।বারবার সেই শ্বাসরুদ্ধকর সময়ের কথা মনে পরছে।আরিয়ানের কথাগুলো কানে বাঁজছে।আরিয়ান আজ তাকে মায়াবতী বলে সম্মোধন করেছিলো কেন?কোন বিশেষ কারণে?
~চলবে~