আঁধার
৩৭.
নিয়মিত খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করছি। মিলা তার চাকরিতে জয়েন করেছে। সে আমার আগেই বাসা থেকে বের হয়। ফিরে আমার আসার পরে। আমাদের মধ্যে তেমন কথাই হয়না। রাতে এসে সে তার মতো থাকে। আমি কিছু বলতেও পারছি না। রাকা এদিকে ম্যাসেজের উপর ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে যেন আমি কাউকে ওর প্ল্যান না বলে দেই। এভাবে এক সপ্তাহ কাটালাম আমরা। রাতে আমার ঘুম হয়না। রাতে প্রায়ই মিলার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। একবার মনে হয় নক দেই। আরেকবার মনে হয় কী দরকার সম্পর্কের গাঢ়ত্ব বাড়ানোর। সেই তো দুজনের পথ আলাদা হয়ে যাবে। প্রতিনিয়ত আমি নিজের মধ্যে একটা গর্ত খুঁড়ছি। চুপচাপ মিলাকে দেখি আর ভাবি সে এমন ঠান্ডা কীভাবে আছে? সে তো আমাকে ভালোবেসেছে । তাহলে এভাবে চলে যেতে কেনো দিচ্ছে? নাকি সেও আমাকে ভালোবাসেনি।
রাকার সেই ম্যাসেজ পেলাম। যেখানে লেখা ছিল। আমাদের আগামীকাল দুপুর দুটোর মধ্যে নিতে আসবা। আরো কিছু নির্দেশনা। আমি জানতাম ম্যাসেজ বা ফোনকলে যেভাবেই পারুক ও আমাকে যেতে বলবেই। তারপরও আশায় ছিলাম যেন সে না করে দেয়। একসময় এই রাকাকে পাওয়ার জন্য কতো উতলা ছিলাম। এখন ঠিক উল্টো। মিলা বাসায় ফিরতেই জানালাম, ” আগামীকাল চলে যাচ্ছি। ” ডাইনিং এ বসে ছিলাম তখন।
মিলা আমার দিকে না তাকিয়ে বলল, ” তাহলে এক তারিখে সাবলেটে ভাড়া দিতে পারবো। ”
” এই ফ্ল্যাট তুমি সাবলেটে ভাড়া দিবে? ” আমি অবাক না হয়ে পারছি না।
” হ্যাঁ, টাকা লাগবে না? মাত্র মাসিক পাঁচ হাজারে হয় নাকি? ”
” তোমার বাবার কাছ থেকেই তো নিতে পারো। ”
” নিজেরও কিছু ক্যাশ থাকা ভালো। আর আপনার তো এতো প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই। আমরা এখন নিজেদের পথে। ”
” হ্যাঁ তাই তো। ভুলেই যাই। ”
” আপনার জিনিসপত্র কবে নিয়ে যাবেন? ”
” কাল তো নিতে পারবো না। ঢাকা থেকে ওদেরকে নিয়ে আসার পরে নিয়ে যাব। ”
” এক তারিখের আগেই নিয়ে যাবেন দয়া করে। বুঝতেই পারছেন কেনো বলছি। ”
” হ্যাঁ, পারছি। ”
রাতের খাবার খাওয়ার আগে যা যা আমার ছিল সব গুছিয়ে নিলাম। মিলা ওয়ারড্রব থেকে সব জামাকাপড় বের করে ফেলল। ফ্রীজ সে ফেরত দিবে না কিন্তু ওই পরিমাণ টাকা সে দিয়ে দিবে।
রাতে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি৷ আগামীকাল থেকে পুরো জীবন বদলে যাবে। নতুন একটা ঝামেলা শুরু হবে। মিলা ঠিকই বলেছে রাকা সুবিধাবাদী। তা নাহলে এইভাবে ব্ল্যাকমেইল করে!
বিছানা থেকে উঠে মিলার রুমের দিকে গেলাম। রুমের লাইট নেভানো। ও ঘুমাচ্ছে। আজকেই তো শেষ আরতো একসাথে থাকা হবেনা। তাই দরজায় টোকা দিয়ে বসলাম। কয়েকবার টোকা দেয়ার পরে মিলা দরজা খুলল। ঘুমের যে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি সেটা তার চেহারার দেখেই বুঝতে পারলাম।
” কিছু বলবেন? ” মিলা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল।
” হ্যাঁ ” কী বলবো জানি না। ও যে দরজা খুলবে এই আশা করিনি।
” তাহলে বলুন। সকালে বললে হতো না? ”
” একটু ভেতরে আসা যাবে? ”
মিলা দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। বিছানায় মশারী টানানো বিধায় চেয়ার টেনে বসলাম। মিলা বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসল। কালো রঙের নাইটি পরনে। চুল বেণি করে রাখা। চোখে সকালের দেয়া কাজল।
” চুপচাপ বসে আছেন যে কিছু বলবেন বলে? ”
” না ”
” তাহলে ঘুম ভাঙালেন কেনো? ”
” আমার ঘুম আসছিল না তাই ভাবলাম… না থাক। ”
মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।
বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি
https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” আমার সাথে ঘুমালে আপনার ঘুম আসবে এরকম কিছু? ”
” হ্যাঁ ”
” আমার সাথে আপনি এক বিছানায় ঘুমাতেই পারেন। আমরা এখনো স্বামী স্ত্রী। ”
” ঠিকাছে ”
মিলা দরজা আটকে দিয়ে লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
” আপনি বললেন ঘুমাবেন৷ তাহলে এখনো বসে আছেন কেনো? ”
” জানিনা ”
” আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে রাকা আপু রাগ করবেন না তো? ”
” ও জানবে কীভাবে? ”
বালিশে মাথা দেয়ার সাথে সাথে মিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজে দিল। তাকে গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলাম। ওর শরীরের সুন্দর একটা গন্ধ আছে। আমার প্রচণ্ড ভালো লাগে। বেণি করা চুল খুলতে শুরু করলাম।
” চুল কেনো খুলছেন? ”
” মিলা, মিলা, মিলা… ”
*****
স্কুল থেকে ছুটি দিতেই চাচ্ছিল না। অনেক জোরাজোরি করে একদিনের ছুটি নিলাম। মিলা তার কাজে চলে গেছে। এখন আমার পালা যাওয়ার। রাতের ঘটে যাওয়া কিছু সুন্দর মুহূর্ত এখনো ঘোরের মধ্যে রেখে দিয়েছে আমাকে। রাকার ম্যাসেজ কয়েকবার এসে বসে আছে। কখন রওয়ানা দিবে? কটায় বাস? রিপ্লাই দিতে ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও রিপ্লাই দিতে হয়েছে।
ঢাকায় পৌঁছাতে বারোটার বেশি বেজে গেল। কেনো যেন পা চলছে না৷ রাকা ওর আগের বাসাতেই আসতে বলেছে। মাহমুদ ভাই নাকি তার মায়ের সাথে দেখা করতে গেছে৷ এই ফাঁকে সে তার কাজ সারবে। দুটোর বেশি বেজে গেল ওর বাসায় পৌঁছাতে। ঢাকার জ্যামে পড়ে দেরি হওয়া আরকি।
উবার ওর বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামার পরেও মনে হচ্ছিল এটায় করে ব্যাক করে বাসস্ট্যান্ডে চলে যাই৷ তারপর যা হয় ভাবা যাবে। কিন্তু বেশিক্ষণ এই ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না।
ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে এলিভেটরের দিকে পা বাড়ালাম। রাকার ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়াতেই নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছিল। কলিংবেল চাপার সাথে সাথে রাকা দরজা খুলে দিল। ওর দিকে তাকাতেই মন চাচ্ছিল না। কিছু একটা বলতে যাবো তখনই মাহমুদ ভাইয়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম।
” কী খবর শ্যালক? তো দুলাভাইয়ের বউ নিয়ে পালানোর প্ল্যান ছিলো নাকি?”
হতভম্ব হয়ে মাহমুদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি দরজা বরাবর সোফায় বসে আছেন। মুখে লম্বাচওড়া হাসি। বিজয়ের হাসি।
চলবে…
~ Maria Kabir