আঁধার
২৬.
শেষ সিঁড়িতে দাঁড়াতেই মিলা বলল, ” আপনি এখানে দাঁড়ান। ”
মিলা শেষ সিঁড়ি থেকে এক হাত দূরে নেমে দাঁড়িয়ে পড়লো। বৃষ্টির কারণে পুকুরের পানি বেড়েছে। কারণ শেষ সিঁড়ি পানির ভেতরে। পানি ঠান্ডা মনে হলো। যেমনটা মিলার নিঃশ্বাস। পরনের সাদা শাড়ী ভিজে গেছে। আঁচল পুকুরের পানির উপরে ছড়িয়ে ছিল৷ একটু একটু করে ভিজে যাচ্ছে আর পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
” তুমি কি এখন গোসল করবে? ” প্রশ্ন না করে পারলাম না। মিলাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। বিয়ের দিন ছাড়া ওকে লাল টকটকে লিপস্টিকে দেখলাম আজকে। আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পড়ছে না অদ্ভুত! মনে হলো ও ধীরে ধীরে আমার থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে। তারপর পানির মধ্যে ডুব দিলো। তবে সাধারণ ভাবে না। পেছন দিকে টানটান হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো করে। কী হলো? বুঝতে তো পারছি না। মিলাকেও দেখছি না। চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম৷ কই? ও তো নাই। হায় আল্লাহ আমি কি তাহলে কোনো শাকচুন্নির সাথে এসেছি? মিলা হলে তো এভাবে ভ্যানিশ হয়ে যেত না। পুকুরের মধ্যে নামতে গেলাম তখনই দেখলাম আমার সামনেই মিলাকে ভেসে থাকতে দেখলাম৷ একটু আগে যেমন দেখেছিলাম ঠিক তেমনই। কিন্তু ডুব দেয়াতে পুরো শরীর ভিজে গেছে। আর ও দারুণ ভাবে পানিতে ভেসে থাকতে জানে। চুল গুলো পানিতে ছড়িয়ে আছে।
” আপনি কি গোসল করবেন? ” মিলা জিজ্ঞেস করল।
” বুঝতে পারছি না। তুমি এভাবে কেনো আছ? ”
” আপনাকে বলেছিলাম না আমি পুকুরে এসে গোসল করি, বসে থাকি। এখন সেই কাজ করছি। ”
” আমাকে বলে আনলেই পারতা। ” অভিযোগের সুরে বললাম। মিলার চোখ বন্ধ৷ আমার কথা ওর ঠোঁটের কিনারে হাসির রেখা দেখা গেল৷
” আপনাকে হতভম্ব করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি ভয় পেয়ে বসে আছেন। ”
” যা যা করতেছ তাতে অন্য কেউ হলে এতক্ষণ পিত্তি গলে মরে যেত। ”
” এজন্যই তো আপনাকে এনেছি। আপনি চাইলে গোসল করতে পারেন৷ ”
” তোমার না জ্বর এখনো পুরোপুরি সাড়েনি। তুমি তাড়াতাড়ি উঠো। ” আল্লাহ ভালো জানেন সামনের মিলা আসল মিলা কিনা।
” জ্বর এখন নাই। আর আমি এতো তাড়াতাড়ি উঠবো না। এভাবে অনেকক্ষণ থাকবো। ”
” আমার পা ব্যথা করতেছে মিলা। ”
” উপরের সিঁড়ি গুলো শুকনো। আপনি ওখানে বসুন। ”
” একা বসবো না৷ তুমি আসো। ”
” এক শর্তে আসবো। ”
” কী শর্ত? ” এই মেয়ে আসলেই পাগল।
” লাল শাপলা ফুটে আছে৷ আমাকে ওখান থেকে দুইটা লালা শাপলা এনে ফ্লাওয়ার কুইন বানিয়ে দিতে হবে। ”
” লাল শাপলার সাথে সাপ থাকে মিলা। শেষে সাপে কাটলে তো তুমি বিধবা হয়ে যাবে। ”
” কে বলেছে সাপ আছে? এগুলো সব মিথ্যা কথা। আমি তো এই পর্যন্ত সাপের কামড় খাইলাম না৷ ”
” মিলা উঠো চলো তো। আমার তোমাকে লাগবে এখন৷ ”
” শর্ত পূরণ করুন। ”
মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।
বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি
https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” স্বামীর কথা শুনবা না? ”
” সবসময়ই তো শুনি। আজকে না হয় আপনি আমার কথা শুনুন৷ ”
মিলা তার কথায় আটকে থাকবে। পুকুরের মাঝখানেই লাল শাপলা গুলো দেখা যাচ্ছে। পূর্ণিমার আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । বাধ্য হয়ে পানির মধ্যে নামলাম। মিলা এখনো ভাসছে পানিতে। পুকুরের গভীরতা অনেক বেশি। শেষ সিঁড়ি থেকে মাটিতে পা দিলাম৷ এখানেই কোমড় সমান পানি। সাঁতাড় দিতেই ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে সাঁতাড় দেয়ার জন্য পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার সাথে সাথে পানির নিচ থেকে কেউ পা টেনে নিয়ে যাবে।
” সাঁতার জানেন না? ”
” জানি ”
” তাহলে রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়ুন৷ ভয় পাচ্ছেন কেনো? আমি তো আছি। ”
আল্লাহর নাম নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম৷ শরীর কেঁপে উঠল। কী ঝামেলায় পড়লাম কে জানে!
সাঁতরে ফুলের কাছে গিয়ে কয়েক সেকেন্ড দম নিলাম৷ দুটো ফুল খুব দ্রুত ডগা সহ উঠিয়ে নিয়ে সাঁতরে কিনারে চলে এলাম৷ আল্লাহ জানেন সাপ পেছনে কিনা এই ভয়ে আরো দ্রুত সাঁতরে এসেছি। মিলা এখন গলা সমান পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। মিটিমিটি হাসছে।
সিঁড়ির উপর বসে পা ধুতে ধুতে বললাম,
” শর্ত পূরণ করেছি। এখন চলো রুমে। ” শাপলা ফুল পাশে রেখেছি৷ এই ফুলের কিছু হলে দেখা যাবে আমাকে আবার পাঠাবে। প্রথমবারে সাপ আসেনি ভালো কথা। দ্বিতীয় বার আসবে না এর কোনো গ্যারান্টি নেই।
” ক্রাউন বানাবেন না? ” মিলা শাড়ীর আঁচল ঠিক করতে করতে বলল।
” আমি তো পারিনা৷ ” একটা তোয়ালে হলে ভালো হতো। মাথাটা মুছা যেত।
” ফুলের ডগাকে গোল করে হাত দিয়ে প্যাচান। দুটো ফুল একসাথে নিয়ে প্যাচান। আমার মাথার সাইজ তো বুঝবেন। ”
” তুমি আমার জ্বর না এনে শান্তি পাবা না৷ আমার ছুটি কমে যাচ্ছে৷ এখন জ্বরে পড়লে আমার কী হবে বলোতো? ”
” জ্বর আসবেনা। আপনি তো এমনিতেই চারটা পাঁচটার দিকে প্রতিদিনই গোসল করেন। তখন তো জ্বর আসেনা? ”
” আমার আসলে ভয় করছে। তুমি কি আসলেই মিলা নাকি…”
মিলা শব্দ করে হাসলো। তারপর আমার পাশে এসে বসলো। আমার একটা হাত তার দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, ” এখন কী মনে হচ্ছে? ”
পুরো শরীর ভেজা। সাদা রঙের শাড়ী শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। গলায়, ঠোঁটে, মুখে পানির লেগে আছে। চুল দিয়ে এখনো পানি টপটপ করে পড়ছে।
” রুমে চলো। ” অস্থির লাগছে৷ আমার এখনই ওকে প্রয়োজন।
মিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” আরেকটু থাকি না, প্লিজ। আমার ভালো লাগছে। আপনি চাননা আমার ভালো লাগুক? ”
” হ্যাঁ, চাই কিন্তু তুমি আমাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছ। ”
” আমি মানুষ ভূত না। ঠিকাছে? ”
” হ্যাঁ ঠিকাছে। ”
” আমার ফ্লাওয়ার ক্রাউন? ”
মিলাকে ছেড়ে দিয়ে ফ্লাওয়ার ক্রাউন বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম৷ তেমন কঠিন কিছু না৷ গোল করে চার পাঁচটা প্যাচ দিলেই হয়ে যায়। দুটো ফুল এমনভাবে বসিয়ে প্যাচ দিলাম যাতে ফুল দুটো দুই পাশে থাকে। বানানো শেষ হওয়ার পরে মিলা বলল, ” এখন মাথার পরায় দেন৷ ”
মিলার মাথায় ক্রাউনটা বসিয়ে দিলাম৷ মিলা লাজুক ভঙ্গিতে হাসলো৷ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাদা শাড়ী, লাল টকটকে ঠোঁট আর খোলা কালো চুলে লাল টকটকে শাপলার মুকুট!
এক হাত দিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলাম৷ ওর হৃদস্পন্দন শোনা যাচ্ছে, এতো কাছে। তারপর এক হাত দিয়ে মুখের উপর লেপ্টে থাকা চুল গুলো কানের কাছে গুজে দিলাম। তারপর ধীরে ধীরে ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললাম, ” থ্যাংক ইউ, এই মুহূর্তের জন্য! ”
কানের কাছে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে দিলাম। মিলার হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে গেল। তারপর চিবুকে ঠোঁট ছোঁয়ালাম আলতো করে। মিলা দুই হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
ঠোঁটের কিনারে চুমু দিয়েই তার পুরো ঠোঁট দখল করে নিলাম। ওর শরীরের কাঁপুনি একটু একটু করে আমার মধ্যেও সঞ্চারিত হচ্ছে। আর আমি তার মাঝে বিলিন হয়ে যাচ্ছি! এখন আমি আর আগের আমি নেই.. হয়তোবা অন্য কেউ!
এই মুহূর্ত শুধু আমাদের… শুধুই…
চলবে…
~ Maria Kabir