আঁধার পর্ব-২৪

0
1506

আঁধার

২৪.

” তাহলে আমি আসবো না। এটাই তো তুমি চাও? ”

” রাকা মাই ডার্লিং রাগ করে না। ”

” তাহলে অপেক্ষা করতে হবে। একটু তো অপেক্ষা করাই যায়? ”

” তা যায় ”

সানি ঢাকার বেশ ভালো একটা হোটেলে উঠেছে। সে মূলত গাজীপুরে থাকে। ব্যবসার জন্য মাঝেমধ্যে ঢাকায় তাকে আসতে হয়। ব্যাংক একাউন্টে যা আছে রাসেল তো দূরে থাক মাহমুদেরও নাই। তারপরও রাসেল আমার সবচেয়ে প্রিয়। হয়তো সে আমার জীবনের ফার্স্ট তাই! ওর সবকিছুই আলাদা। কারো সাথে মিলে না। বিয়ে টা করাতে ভালো হয়েছে আমার। সারাক্ষণ আমার পেছনে ঘুরঘুর করার অভ্যাসটা কমেছে। কাঙ্ক্ষিত হোটেলে পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগলো না। এই সময় জ্যাম কমই থাকে আর এই দিকটাতে এমনিতেই জ্যাম কম হয়।
রিসিপশনে এসে দাঁড়াতেই খুব সুন্দর স্মার্ট মেয়েটি আমাকে দেখে খুব পরিচিত ভঙ্গিতে হেসে জিজ্ঞেস করলো, ” ম্যাম, কীভাবে সাহায্য করতে পারি? ”

আমি ব্যাগ থেকে বের করে একটা টুকরো কাগজ তার সামনের টেবিলে রেখে বললাম, ” ব্যস এটুকুই। ”

মেয়েটা কাগজে চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর বলল, ” থার্ড ফ্লোরের সোজা গিয়ে একদম শেষের ডানের রুমটা। রুম নাম্বার ৩০৯। ”

” থ্যাংক ইউ ” বলে এলিভেটরের দিকে এগিয়ে গেলাম৷ মেয়েটার নাম এলিজা। সানির পরিচিত। আর সেই এলিজাকে এখানে চাকরি দিয়েছে। এই হোটেলের সে মালিক, সে আবার সানির ক্লোজ ফ্রেন্ড। এখানে আসাটা আমাদের জন্য এই কারণেই অনেক বেশি সেফ। রুম নাম্বার ৩০৯ এর সামনে এসে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলাম নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সানির ওয়াইফ আর আমি একই ক্লাবের। তবে ও গাজীপুরের দলের আর আমি ঢাকার। দুজনের মধ্যে একটা কম্পিটিশন কাজ করে। যার ফলাফল স্বরূপ আজ সানি আমার হাতের মুঠোয়। খুব গর্ব করে বলেছিল, ” আমার বাবুর বাবা ওরকম না। সে আমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়েও দেখে না। ”
আমি শুধু হেসেছিলাম! দরজায় নক করার প্রয়োজন হলো না। সানি দরজা খুলে আমাকে বলল, ” ম্যাডামের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে থার্ড ফ্লোরে আসতে এতো সময় লাগে? ”
আমি ভেতরে ঢুকে ব্যাগ পাশের টেবিলে রেখে বললাম, ” আইনস্টাইনের টাইম ডিলিউসন কি মনে নেই? ”

” ওহ রাকা, এখানে ফিজিক্স টেনো না প্লিজ। ”

” তাহলে কী টানবো? ”

সানি দেয়ালে হেলান দিয়ে বলল, ” আই রিয়েলি মিসড ইউ। ”

” আমাকে নাকি আমার…? ”

” তোমাকে আগে কেনো পেলাম না? তাহলে ওইসব মাহমুদ কোথায় উড়ে যেত। ”

” আমার হাজবেন্ডকে নিয়ে ওভাবে বলবা না। আমি আফরিনকে নিয়ে কখনো বলি? ”

” মুড নষ্ট করে দিও না তো। ”

পায়ের নুপুরের সাথে শাড়ীর পাড় লেগে যাওয়াতে টান লাগছিল এতক্ষণ। সেটা ঠিক করার জন্য বিছানার উপর পা উঠালাম।

” আরেকটু শাড়ী উঠাও। তোমার পা খুব পছন্দ আমার। একদম সফট। ”

” তুমিই তো পারো… তাই না? ”

*****

বাসায় ফেরার পথে ওশানের জন্য কিছু চকলেট নিলাম। মাহমুদের কাছ থেকে কয়েকবার ফোন এসেছিল। বলেছি ছেলের জন্য চকলেট কিনতে বাহিরে এসেছি। ছেলে ঘরের কোনো চকলেট খাবেনা। বাসায় এসে শাড়ী খুলে সুতির থ্রিপিস পড়ে নিলাম। রাত নয়টায় ক্লাবের মেম্বারদের ফেসবুকের চ্যাট গ্রুপে থাকতে বলা হয়েছে। কী আর বিশেষ কাজ তাদের? শো-অফ করেই এরা দিক পায়না। মূলে সবাই আমার মতোই। আমাদের ক্লাবের যে মেইন সে কড়া লেভেলের ফেমিনিস্ট! পুরুষ যদি হাজার জনের কাছে যেতে পারে। তাহলে আমরা কেনো পারবো না?

( রাসেল )

” মিলা? ” অনেক সময় যাবত মিলা চুপচাপ আমার বুকের সাথে লেপ্টে আছে। কান্না থেমেছে ঠিকই কিন্তু এখনো তার রেশ কাটেনি।

” হুম ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” চা খাবে? ”

” না ” আমি ওর মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম, ” এই-যে কান্নাকাটি করে যে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছ। এইযে চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। ঠোঁট কেমন শুকিয়ে আছে। এই অবস্থায় কেউ দেখলে ভাববে আমি তোমাকে খারাপ কিছু বলেছি। ”

” না, কেউই আপনার দোষ দিবে না। সবাই জানে আমার সম্পর্কে। ”

” কিন্তু আমি তো পুরোটা জানিনা৷ তোমার শরীরের সবকিছু আমার জানা। কিন্তু মনের কিছু জানা নেই। ”

” মনের কিছু জেনে কী করবেন? ”

” তোমার পুরোটা আমার দখলে হওয়ার কথা। কিন্তু তোমার অর্ধেকটাই তো তুমি আমার সামনে মেলে ধরছো না। তাহলে কি জানার প্রয়োজন নেই? দেহ তো এই যুগে খুব সহজেই পাওয়া যায়। কিন্তু মন? ”

” মন কেউই মেলে ধরে না৷ সেটা নিজে থেকে খুঁজে নিতে হয়৷ মনকে স্পর্শ করতে হয় অন্যভাবে। ”

” কীভাবে? আমি ব্যকুল হয়ে আছি।” আমি কখনো কারো মনের প্রতি এতো বেশি আকৃষ্ট হইনি। জীবনে আমার মাত্র দু’জন মেয়ে এসেছে। তারমধ্যে এই মিলাই সবচেয়ে বেশি টানে আমাকে। যতই বলি রাকা, মন বলে মিলা।

” আমি জানিনা। ”

” তাহলে কীভাবে আমার মনকে স্পর্শ করলে? জানোনা তাহলে কীভাবে? মিথ্যা বলছ না তো? ”

” মিথ্যা কেনো বলবো? ” মিলার চোখে কৌতুহল দেখা যাচ্ছে । একটু আগেও তার চোখে মুখে তীব্র কষ্টের ছায়া ছিল। কিন্তু এখন…
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে মনে হলো বুকের ভেতরের কোথাও জমে থাকা কোনো একটা স্বপ্ন গলতে শুরু করেছে। আমার শক্ত পাথরের মতো যেই মন নামক পদার্থটা আছে। সেই মনের ধারেকাছেও রাকা যেতে পারেনি। কিন্তু মিলা এই অল্প কয়েকদিনেই সেখানে পৌঁছে গেছে। আর এই ধ্রুব সত্যটা কেবলই বুঝতে পারলাম।

” আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার কাছে ধরা দিতে চাওনা৷ তাই বলতে চাচ্ছো না। ”

” আমি তো আপনার কাছেই আছি। ”

” উঁহু, শুধু শরীর আছে। মন এখনো বহুদূরে। ”

” আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে জোর চলে না৷ ”

” আমাকে পথ তো বলে দাও। ” আমি সত্যি কখনো এমন ফিল করিনি৷ অদ্ভুত অনুভূতি পুরো শরীর মন জুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। মিলা চোখ নামিয়ে আবার আগের মতো লেপ্টে রইলো। শান্তি, স্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এতোটা শান্তি আর স্থিরতা কখনো আমার জীবনে আসেনি। আর আসবেও না।

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে