আঁধার পর্ব-২৩

0
1250

আঁধার

২৩.

” আমার সামনে শাড়ী পরার দরকার আছে? আমি তো সব দেখেই বসে আছি। ” আমার চোখ মোবাইলের স্ক্রিন থেকে সরছে না। মানুষের শরীরের প্রতি মানুষের এতো আগ্রহ, অন্য কোনো প্রাণীর মনে হয় তাদের স্বজাতির প্রতি এতো আগ্রহ থাকেনা। অদ্ভুত এই মনুষ্য প্রজাতি।
” আমার বুঝি লজ্জা করে না? ”
এই মেয়ের লজ্জা বলতে তো কোনোদিন কিছুই দেখিনি। প্রথম যেদিন তার সাথে বিছানায় গেলাম। সেদিনও তাকে লজ্জা পেতে দেখিনি। আমাদের দুজনের ভার্জিনিটি একসাথেই নষ্ট হয়েছে। বিয়ের আগে তার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক অনেক বার হয়েছে। মাহমুদ ভাই কি কিছুই টের পায়নি? আমি তো ফার্স্ট রাতেই বুঝতে পারছি যে, মিলা কুমারী না। মিলা অনেক সময় যাবত বাসায় নাই। ও কোথায় গেছে আমার খোঁজ নেয়া উচিৎ। তার তো আবার এক্সের অভাব নাই। দেখা যাবেনে এক্সের সাথে দেখা হওয়াতে গল্পে জমে গেছে।

” রাসেল, কথা কেনো বলছো না? ” আমার চুপ হয়ে যাওয়াতে প্রশ্নটা করলো। স্লিভলেস ব্লাউজও সে খুলতে শুরু করেছে।

” ওশান নাই আশেপাশে? তুমি এভাবে খোলাখুলি করছ যে? ”

” ওশান ওর বেডরুমে ঘুমাচ্ছে। ”

” ঘুম থেকে উঠলে কথা বলায় দিও। এখন রাখি। কেউ একজন আসছে মনে হয়। ”

” আরে কেবলই তো ফোন দিলা। এখনই রেখে দিলে হবে না। ”

” বাই ”

কল কেটে দিয়ে, নেটওয়ার্ক অফ করে দিয়ে মোবাইল পাশে রাখলাম। দুপুরে ভরপেট খাওয়ার কারণে এখন বিছানা থেকে উঠতে মন চাচ্ছে না। এদিকে মিলারও খোঁজ নেই। এই মেয়ে কী ভাবে কী করে বুঝিনা। বুঝারও দরকার নেই৷ বেশিদিন তো আর একসাথে থাকবো না। রাকা যে পরিমাণ পাগল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। তাতে খুব দ্রুত ওদেরকে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের তিন জনের সুন্দর একটা সংসার হবে। মাঝখান দিয়ে মিলা মেয়েটা ক্ষণিকের অতিথি হয়ে আসল। নিজের অজান্তেই মিলার নাম্বারে ফোন দিয়ে বসলাম।
তিনবার ফোন দেয়ার পরে রিসিভ হলো।
মিলা ঠান্ডা স্বরে বলল, ” হ্যালো ”

” বাসায় আসার কি প্রয়োজন নেই? ”

” বান্ধবীর বাসায় আসছি তো অনেক দিন পরে। তাই দেরি হচ্ছে। ”

” এখন চলে আসো৷ এতো বেশি থাকার প্রয়োজন নেই। ”

” আচ্ছা, আসছি। ” পাশ থেকে ছেলের কণ্ঠ কানে আসলো। খুবই অস্পষ্ট ভাবে শুনলাম। ছেলেটা খুব সম্ভব বলল, ” আরেকটু থাকো। ”

” দ্রুত ” ফোন কেটে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। এই মেয়ে নিশ্চয়ই এক্সের সাথে দেখা করতে গেছে। কী না কী করছে কে জানে!
এলোমেলো ভাবতে ভাবতেই মিলার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম৷ দরজা খুলতে বলতেছে। বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। মিলা ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে আমার দিকে না তাকিয়ে রুমের শেষ প্রান্তের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। গাঢ় জাম রঙের শাড়ী তার পরনে। রুমে এসে একবারও আমার দিকে তাকালো না।

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” ছেলেটা কে ছিল যার সাথে দেখা করতে গেছিলা? ” সরাসরি প্রাসঙ্গিক আলোচনায় যাওয়াই ভালো ।

” আমার বান্ধুবীর বড় ভাই আর আমার এক্স। ”
আমার ধারণাই ঠিক।

” এতো সেজেগুজে এই কারণে যাওয়া? তো কী বলল তোমার এক্স? এখনো মিস করে? ”

” আমি জানতাম সে এখানে। গিয়ে হতভম্ব হয়ে গেছি৷ ”

” কত নম্বর এক্স সে? ”

” এক ”

” ওহ! হ্যাঁ, প্রথমজনের জন্য টান বেশি থাকে। তাই তো বলি এতো সাজগোজের কারণটা কী! ”

” আমি সাজিনি। ”

” তাহলে নতুন শাড়ী হয়ে এতো পরিপাটি হয়ে যাওয়ার কারণটা কী? ”

” আমি যদি পুরাতন শাড়ী পরে আর এলোমেলোভাবে যাই। তাহলে তো ওরা ভাববে আপনি আমাকে ভালো ট্রিট করেন না। তারা ভাববে আপনার ইকোনমিক্যাল প্রব্লেম আছে। তারা ভাববে আপনি অযোগ্য কেউ। ”

” কিন্তু তোমার ভাবসাব দেখে তো মনে হচ্ছে না! ”

” মানে? ”

” এইযে রুমে এসে একবারও আমার দিকে তাকিয়ে দেখলে না। আমার কাছ থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলে। ”

” আমার আসলে দম বন্ধ লাগছে। তাই জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ আসার পথে সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। ঠিক এরকম একটা সময়ে আমাকে তারা তুলে নিয়ে যায়। ভাবতেও পারিনি এতো বীভৎস কিছু ঘটবে আমার সাথে! অন্ধকার রুমে তিন দিন পর্যন্ত আটকে রেখে…”

” মিলা বন্ধ করো। অতীত যত ঘাটবা তত খারাপ লাগবে। ”

” সেই অন্ধকারের কোনো সীমা ছিলো না। এখনো মনে পড়লে দম বন্ধ অনুভূতি হয় আমার। ”

আমি হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ” আমার কাছে আসো৷ ” মিলা আমার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো৷ মনে হলো তার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। আমার বাড়িয়ে দেয়া বাহুতে সে নিজেকে আবদ্ধ করলো৷ আমার বুকে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করলো। আমি এই প্রথম তাকে কাঁদতে দেখলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। মনে হচ্ছে বহু দিনের জমানো কষ্ট আজকে এই মুহূর্তে সে উগরে দিচ্ছে।
আমার খারাপ লাগা শুরু হলো। এই মানুষটাকে কীভাবে একা ফেলে আমি যাবো?
সে ধীরে ধীরে আমার উপর নির্ভরশীল হতে শুরু করেছে। আমিও তো অনেকটা উইক হয়ে পড়েছি। দুপুর থেকে সে ছিলো না তাই…
কান্নার তীব্রতা যত বাড়তে লাগলো আমি তত বেশি তাকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে লাগলাম।
ভাঙাচোরা একটা মানুষকে এভাবে আগলে রাখার মধ্যেও শান্তি আছে। আমার এভাবে মায়া বাড়ানো ঠিক হচ্ছেনা। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। ঢাকা থেকে এভাবে চলে আসার কারণে আমাদের মধ্যে বন্ধনটা অনেক গাঢ় হয়েছে। আর এই গাঢ়ত্ব শুধু বেড়েই যাচ্ছে। এই-যে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছি। এতেও অনুভূতি গাঢ় হচ্ছে। না পারছি ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতে। না পারছি থাকতে…

( রাকা )

রাসেলের ফোন কেটে দেয়ার পরে না হেসে পারলাম না। কোথাকার কী বিয়ে করেছে তারজন্য সে আমাকে ইগ্নোর করে! কলিজা আছে মিলার। বিয়ের আগেই এই মেয়ের অল ইনফরমেশন কালেক্ট করেছি। মেয়ে যে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। তাতে বোঝাই যায় এর বুক পিঠ নেই। সে যাইহোক আমাকে বাহিরে বের হতে হবে। আজ দশদিন যাবত সানিকে ঘোরাচ্ছি। তার সাথে মিট করার ডেট ফাইনালই করতে পারছিলাম না৷ অবশেষে গতকাল করলাম।
কালো জামদানীটা পরে রুম থেকে বের হলাম। ওশান ড্র‍য়িংরুমে বসে রানুর সাথে কথা বলছে। মাত্র বয়স সাড়ে তিন। তাতেই তার মুখ দিয়ে কথার ঝুড়ি ছুটে। রানুকে ওর বেবিসিটার হিসেবে রেখেছি এক বছর ধরে। মাস গেলে পনেরো হাজার টাকা সাথে দুই বেলার খাবার ফ্রী। কাজ শুধু সকাল এগারোটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত দেখবে। বাকি সময় আমিই দেখে রাখতে জানি।

” আপা, রাইতে কী খাবেন? ” লতার প্রশ্নে তার দিকে ঘুরে দাড়ালাম।

” একটা কিছু করলেই হবে। ” রান্নাবান্না, ঘরের কাজ এই কাজ গুলোর জন্য লতাকে রাখা৷ মাস গেলে তারজন্যও মাহমুদকে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। সে মাহমুদই বুঝুক। তার তো আর টাকার অভাব নেই।

” জ্বে আপা ”
হাতে ব্যাগ দেখে ওশান দৌড়ে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো।
” আব্বুটা আমার ” কথাটা বলে তাকে কোলে তুলে নিলাম। আমার আর রাসেলের ভালোবাসার চিহ্ন। এই ছেলেই রাসেলের সব। মিলা কিচ্ছু না।

” তুমি আবাল বাইলে যাতছো? ” ওশান র বলতে পারে না৷ র এর বদলে ল বলে। রাসেলকে ও লাসেল মামা বলে ডাকে। রাসেল এই নিয়ে ভীষণ রেগে যায়। তার নিজের ছেলে তার নামটাও ভালো করে বলতে পারেনা।

” আম্মু দ্রুত যাবে দ্রুত চলে আসবে। ”

” না, তুমি আসো না। আমি লানুল কাছে বসে বসে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পললে তুমি আসো। ”

” আম্মুর জন্য কাঁদতে হয়না। আম্মু তোমাকে অনেক ভালোবাসে। ”

” তাই না? ” মাহমুদ এভাবে মাথা ঝুলিয়ে তাই না বলে। মাহমুদকে দেখে শিখেছে।

রানুর কাছে ওকে দিয়ে বের হলাম। উবারে ফোন দেয়ার পরে সানির নাম্বার থেকে ফোন আসলো । রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলল, ” মানে কী? আর কতো ওয়েট করাবা আমাকে? ”

” আরে ওশানকে রেখে আসা কি এতো সহজ? ”

” তাহলে রানুকে কেনো রেখেছ? আমার তো বাসায় আবার যেতে হবে। ”

” বউকে বলবা জরুরী কাজ ছিলো। ”

” আমার বউ তোমার স্বামীর মতো ছয় মাস শীপে থাকেনা। তাই আমাকে অনেক বেশি জবাবদিহি করতে হয়। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে