আঁধার পর্ব-০৮

0
1856

আঁধার

৮.

” তাহলে রাখি রাসেল? ”

” হ্যাঁ, রাখো। ” আমি অবাক হই ন্যাকামির মাত্রা দেখে। এতো ন্যাকামি পারে কীভাবে? এখান থেকে এক ফোঁটা মিলাকে দিলে ভালো হতো। অন্ততপক্ষে সেক্সের সময় মুখে ভালো এক্সপ্রশেন আনবে। এমনভাবে মুখ করে রাখে যেন কোনো অনুভূতি নাই। মনে হয় সেক্স ডলের সাথে সেক্স করতেছি। বিরক্তিকর আচরণ মিলার।

” এতো কম কথা বলবা আমার সাথে? ”

” আমার নেক্সট ক্লাসে যেতে হবে। ক্লাসে না গেলে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। ঝাড়িও খেতে হবে। তুমি কি চাও তোমার রাসেল অন্যের কাছে জবাবদিহি করুক। ঝাড়ি খাক। তাও তোমার জন্য? ” কণ্ঠ কয়েক ধাপ নামিয়ে এনে ন্যাকা স্বরে বললাম। এতেই যথেষ্ট কাজ হবে।

” না, আমি চাইনা। ”

” তাহলে রাখো এখনকার মতো। বিকালে কথা হবে। ”

” গত বিকালের মতো তো করবা না? আমাকে ফেলে তোমার বউয়ের সাথে ঘুরতে চলে যাবা না তো? ”

” না রে বাবা। আই প্রমিজ, পাক্কা প্রমিজ। ” ফোনের ওপাশের হালকা হাসির শব্দ এপাশেও ভেসে আসছে। অদ্ভুত মেয়ে মানুষ!

” ওকে বাই, রাসেল৷ ”

” বাই ”

ফোন কেটে দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে টিচার্স রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। এখন কোনো ক্লাস নেই আমার। আজকের দিনে টিফিনের আগে আমার মাত্র দুইটা ক্লাস থাকে। সেই দুটো একটু আগেই শেষ করে এলাম। টিচার্স রুমে রায়ান ভাই মুখ ভার করে বসে আছেন৷ এইখানে আমার একমাত্র সঙ্গী এই রায়ান ভাই। আর সবাই ম্যাডাম। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষিকার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
রায়ান ভাইয়ের পাশের চেয়ারে বসলাম। তার ঘাড়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” কী খবর ভাই? এইভাবে মুখ ভার করে গোপাল ভার সেজে বসে থাকার কারণটা কী? ”
রায়ান ভাই আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আবার নিচু করে ফেললেন৷ তারপর কিছু একটা মনে করার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললেন, ” আপনার ভাবী ঘুরতে যেতে চায়। ”

” এটা কীভাবে মুখ ভার করে রাখার কারণ হয়? টাকাপয়সার সমস্যা? টাকাপয়সার সমস্যা হলে আমাকে মন খুলে বলতে পারেন। আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত। ”

” না ভাই টাকাপয়সার সমস্যা না। আপনার ভাবীর অদ্ভুত আবদারের জন্যই মুখ ভার করে রেখেছি৷ ”

” কী আবদার শুনি? ” কথাটা বলার সময় আমার বত্রিশ খানা দাঁত বের হয়ে গেল। ভুল বললাম আমার সাড়ে ঊনত্রিশটা দাঁত। বাকিগুলো আন্ডার কন্সট্রাকশন ।

” আপনাদের দু’জনকেও সাথে নিতে বলে। কিন্তু ভাবী তো স্বাভাবিক না। এটা ওর কানে গেলে পুরো ফরিদপুর ঢোল পিটিয়ে জানায় দিবে। বলবে, রাসেল ভাই পাগল বিয়ে করেছেন। ” রায়ান ভাই মুখ ভার করেই কথাটা বললেন। সে খারাপ ভেবে কথাটা বলেননি৷ কিন্তু আমার ইগোতে লাগলো। মনে হলো কেউ আমার প্রেস্টিজ পাঞ্চার করে দিয়েছে। আমারই ভুল।
” মিলা অস্বাভাবিক আচরণ করে ” এই কথাটা রায়ান ভাইকে বলা ঠিক হয়নি আমার।

” ভাবীকে বলবেন যে, মিলা বাবার বাড়ি যাচ্ছে এক সপ্তাহের জন্য। আর আমিও ঢাকা যাচ্ছি একটা কাজে। আমাদের সময় হবেনা। তাতেই হবে। ”

” আমি বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু ও যে পরিমাণ ঘাড়ত্যাড়া! ”

” আপনি না পারলে ফোনে আমাকে ধরিয়ে দিলেই হবে। আমি বুঝিয়ে বলবো। ”

” বাঁচালে রাসেল। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
আমার হাত কিড়মিড় করতেছে। হাতের কাছে আল্লাহর রহমতে কিছু নাই৷ তাহলে একটা খারাপ কিছু হয়ে যেত!

টিফিন টাইমে বাসায় এসে দেখি মিলা এখনো রান্নাঘরে। দরজার দিকে পেছন ফিরে কিছু একটা করতেছে৷ মেইন দরজা ভেজানো ছিলো বলেই কলিংবেলের ঝামেলায় যেতে হয়নি। আমিনা ভাবী, শাহেদ ভাই আশেপাশে নাই। মনে হয় তারা স্ব পরিবারে ছাদে গেছেন। এই ফাঁকে মিলাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। নরম তুলতুলে পেটে এক হাত দেয়ার সাথে সাথে মিলা প্রায় লাফিয়ে উঠলো। মেকি রাগ দেখিয়ে বলল, ” আমার কাতুকুতু লাগে। হাত সরান প্লিজ। ”

” এখনো তোমার কাতুকুতু কাটেনি? তাহলে মনে হয় ডোজ কম কম হয়ে যাচ্ছে। ”

” আমি রান্না করতেছি। এভাবে গল্প করলে তো রান্না শেষ হবেনা৷ ” মিলা খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল।

” আজকে এতো দেরি? প্রতিদিন তো এসে দেখি তোমার গোসলও হয়ে যায়। ” কানের কাছে মুখ এনে বললাম। মেয়েরা মেকি রাগ দেখালেও। এই কাজগুলো তারা পছন্দ করে। তাদের মনে এইধরনের চার পাঁচটা স্বপ্ন জমা থাকে। তারা স্বপ্ন দেখে, বিয়ের পরে স্বামী পেছন থেকে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরবে। আর ন্যাকামি করবে।

” আজকে আমিনা ভাবী গতকালের ঘটনা নিয়ে অনেক জেরা করেছেন আমাকে। যতই বলি আমার কাজ পরে আছে। ততই সে আমাকে প্রশ্নে প্রশ্নে মাখিয়ে ফেলেন। ” বিরক্তি আরো বাড়লো মিলার।

” কী কী রান্না হয়েছে? ”

” ভাত, মাছের ঝোল হয়ে গেছে। ভাজিটা বাকি। আপনি হাত মুখ ধুতে ধুতে হয়ে যাবে। ” খুন্তি আর মুখের বুলি একইসাথে কীভাবে নাড়াচ্ছে বুঝতে পারতেছি না৷

” ভাজি লাগবেনা আমার। আমার তোমাকে লাগবে এখন৷ ”

” ভাজি প্রায় হয়েই গেছে। আর জ্বালাযন্ত্রণা ভালো লাগেনা আমার এই দিনের বেলা। রাতে জ্বালান মানা যায়৷ এখন আপনি দিনের বেলাও শুরু করেছেন। আমি এতো মানতে পারবোনা। ”

” মানতে না চাইলে মানবা না৷ কিন্তু আমার এখনই তোমাকে লাগবে। ভাজি জাহান্নামে যাক। ”

মিলাকে ছেড়ে দিয়ে গ্যাসের চুলা নিভিয়ে দিলাম৷ তারপর পাজ কোলা করে মিলাকে বেডরুমে নিয়ে গেলাম৷ আমার উপরে কথা বলার সাহস করলেও লাভ নাই। আমি যা চাই তাই আদায় করে ছাড়ি।

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে