আঁধার পর্ব-০৬

0
1849

আঁধার

৬.

” এতো নড়াচড়া করতেছ ক্যান, মিলা? ” রাসেল বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলল।

” ঘুম আসতেছে না আমার। ” ঘুম না আসলে কেমন লাগে এটা তাকে কে বোঝাবে?

” চুপচাপ শুয়ে থাকো নাহয় বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে বসে থাকো। আমাকে বিরক্ত করবেনা। ”

” আমি আপনাকে কীভাবে বিরক্ত করলাম? ”

” এইযে নড়াচড়া করতেছ। এটা কি বিরক্ত করা না? ”

” ঘুম না আসলে কী করবো আমি? আর নড়াচড়া করলে আপনার সমস্যা কোথায়? আমি তো আর শব্দ করছি না। ”

” আমার ঘুম খুব পাতলা। আর আমি তোমার মতো সারাদিন শুয়ে বসি থাকিনা। আমার সকাল হলেই স্কুলের দিকে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। সারাদিন ঘরে বসে ঝিমাই না যে রাত জেগে কাটাবো। তাই দয়া করে নড়াচড়া বন্ধ করো বা বারান্দায় গিয়ে বসে থাকো। ” রাসেল ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন।

” আমি সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে। আপনার রান্না করে কে? ”
রাসেল শোয়া থেকে উঠে আমার গালে একটা থাপ্পড় মারলেন। এতো জোরে থাপ্পড় বাবাও কখনো দেননি।

” আর একটা কথা বলবি লাথি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিব। বেয়াদব মেয়ে মানুষ। ”

বিছানা থেকে নেমে শাড়ীটা পরে নিলাম। তারপর বারান্দায় গেলাম৷ একটা থাপ্পড়েই গালে মনে হচ্ছে পাথর জমে আছে। কপালে শেষ অব্দি বউ পেটানো জামাই জুটলো। আমার নানী বলতেন, ” যে মাইয়ার বাপেরবাড়ি শান্তি নাই। তার শ্বশুরবাড়িও শান্তি হয়না। ”
কথা খারাপ বলেননি।
রেলিঙ ধরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে খারাপ লাগছেনা খুব একটা। গভীর রাত, পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়েছে। ভুল বললাম। পুরো বাংলাদেশ ঘুমিয়ে পড়েছে। এবারও ভুল। অনেকে রাত জাগেন বিনা কারণে, অনেকে কারণে জাগেন। বলা যায় আমি বাদে আমাদের ফ্ল্যাটের সবাই ঘুমে ব্যস্ত।
বিয়ের এক মাসও হয়নি এখনই স্বামীর হাতের মাইর খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিজের কাছেই হাস্যকর লাগলো। শালার কপাল নিয়ে আসছিলাম এই দুনিয়ায়।
রাসেল কখন যে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন খেয়াল করিনি। ঘাড়ের উপর তার হাতের উপস্থিতি বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলাম, ” এখন তো আপনার ঘুমে ডিস্টার্ব করছিনা। তাহলে কী করতে এখানে? ”

” বিছানায় আসো তারপর যত ইচ্ছা হয় নড়াচড়া কইরো। কিছুই বলবো না, মিলা। ” রাসেল শান্ত গলায় বললেন।

” আমার আসলে এখানে থাকতেই ভালো লাগতেছে। আর সকালে আপনার ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে। রাতে ঘুম না হলে ক্লাসে মন দিতে পারবেন না। ”

” মিলা, সরি। আমার ঠিক হয়নি তোমাকে থাপ্পড় মারা। ” রাসেলের হাত এখনো আমার ঘাড়ের উপর রাখা। অস্বস্তি লাগছে। হাত সরানোর চেষ্টাও করার সাহস নেই। দেখা যাবে অন্য গালে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বসলেন৷ এক গালে ব্যথা নিয়ে যাও থাকা যায়। দুই গালে…

” থাপ্পড় নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি এমনিতেই এখানে থাকতে চাচ্ছি। ”

” কী? থাপ্পড় নিয়ে তোমার সমস্যা নাই? বিয়ের এক মাসও হয়নি আর তুমি আমার থাপ্পড় হজম করে বসে আছো? ” রাসেলের কণ্ঠে হতভম্ব ভাব!

” থাপ্পড় হজম করতে আমি এক্সপার্ট। আর আপনি বউ পেটানো পুরুষ। তাই আমাকে হজম করার অসীম ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ” একটু হেসে বলার চেষ্টা করলাম।

” আমার ধারণাই ঠিক, মিলা। তুমি স্বাভাবিক নও। ” একটু থেমে রাসেল আবার বলতে শুরু করলেন। ” তোমাকে রাতে খাওয়ার জন্য ডাকতে এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তারপর ডাকাডাকি করলাম। কিছুক্ষণ পর তুমি লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে পাগলের মতো শরীর থেকে শাড়ী খুলতে শুরু করলা৷ তারপর আমি চেষ্টা করলাম তোমাকে শাড়ী পরানোর। কিন্তু তুমি কোনোমতে রাজিই হলে না। তারপর বললা, তোমার ক্ষুধা লাগছে। আমি রুমে খাবার এনে নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষ করে তুমি ঠিক যেভাবে লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠেছিলে। ঠিক সেভাবেই শুয়ে পড়লে। ”

” আপনি কি মজা করছেন? ” রাসেল এসব আবোলতাবোল কী বলে আমাকে?

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” না, আমি অবাক হয়েছি তোমার ওইরকম কাণ্ডে। তুমি শাড়ী খোলার সময় বিরবির করতেছিলা। আমি বুঝতে পারিনি আসলে কী বলেছিলা। ” রাসেল আমার হাত ধরলেন৷

” আমার তো কিছুই মনে নেই । ”

” হ্যাঁ, সেতো বুঝতেই পারতেছি। আমি আসলে এতো বেশি বিরক্ত হয়েছিলাম তোমার কাজে যে, মেজাজ বিগড়ে ছিল। আমিনা ভাবী আমাকে তোমার এই আচরণে নানান কথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শোনালেন। ”

” আমি ইচ্ছা করে করিনি। বিশ্বাস করুন। আমার নিজের কাছেই অদ্ভুত লাগছে। ”

” এখন ঘুমাবে চলো। এই নিয়ে পরে অনেক আলোচনা করা যাবে। ” রাসেল হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে গেলেন।

বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে রাসেল আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলেন৷ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ” ঘুমাও মিলা। ”

এখন কেনো যেন অসহ্য লাগছেনা৷ এমনকি কোনো অস্বস্তিও না!

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে