অসম্ভবে অসঙ্গতে পর্ব-০১

0
620

#অসম্ভবে_অসঙ্গতে
লেখক: নবনীতা শেখ
|পর্ব ১|

বিদেশ থেকে আজ আমার স্বামীর লাশ এলো। স্তব্ধ আমিটা যখন প্রাণপ্রিয় স্বামীর চিরকালের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে চিৎকার করে কাঁদতে চাইলাম, ওমনিই আমারই স্বজনদের কথাগুলো আমার কানে এসে সুচারু তীরের মতো বিঁধতে লাগল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। কান্নারা আর এলো না।

আমার ভাসুর আর জায়েরা মিলে তখন জমি-জমার হিসেব কষতে ব্যস্ত। খালা আমাকে চুপিসারে জানিয়ে গেল,
-“বার বার বলছিলাম, জামাইয়ের থেকে তার পাওনা সব লিখ্যা নিতে। নিছোস? নেস নাই। এখন কী করবি? শ্বশুরবাড়ি থেকে এক আনাও পাবি না। জন্ম দিছোস মাইয়া, সব তো তোর দেবর-ভাসুরদের নামে হইয়া যাইবে।”

এখন কী হিসেব কষার সময়? আমি এক হাতে আমার পাশ থেকে কুহুকে আগলে নিই। মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। এসব কী হচ্ছে, ও বুঝতে পারছে না। বয়সই বা কত? সবে পাঁচ। ও শুধু বুঝতে পারছে, কিছু একটা ঘটেছে। যা ঘটেছে, তা ভালো কিছু নয়, তা মারাত্মক খারাপ।

আমার শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে নেই। যৌথ পরিবারের প্রায় অনেকটা খরচ আমার স্বামী বহন করত। তার মৃত্যুতে কেউ কষ্ট পাক বা না-পাক, টাকা-পয়সার চিন্তা করতে ভোলেনি। আমি আজ নতুন করে মানুষ চিনলাম। এরাই না বিদেশি পয়সার জন্য সব সময় আমায় মাথায় করে রাখত?

সারাটাদিন আমি আর কাঁদলাম না। চুপ হয়ে মেয়েকে নিয়ে মুহিবের নিথর শরীরটার পাশে বসে রইলাম। বিকেলে জানাজা হলো। বাড়িটা আস্তে-আস্তে খালি হচ্ছিল। আমি চুপ হয়ে বসার ঘরের এক কোণায় বসে বসে পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব কষছিলাম যখন, প্রতিবেশীদের টুকিটাকি কথা ফের কানে এলো। একজন বলছে,
-“অল্পবয়সে বিধবা হইলো, এখন তো ঠিকই বেশ্যাপনা করে বেড়াবে।”

আরেকজন বলল,
-“মেয়েটার কথা ভাবছো? ওইটুকুন বাচ্চা! মা ভেগে যাবে আরেকটার সাথে, সব কষ্ট এসে পড়বে বাচ্চা মেয়েটার ওপর।”

আমি তাদের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কোত্থেকে যেন মা হুট করে এসে তাড়া দিতে লাগল আমাকে,
-“ওঠ, অনু। ব্যাগ গোছা। বাসায় যাবি আমার সাথে।”

একবাক্যে বলে দিলাম মাকে,
-“বাড়ির পরিস্থিতি তো দেখছই। সবটা ঠিক হোক? কুহুকে নিয়ে দু-চারদিনের জন্য বেড়াতে যাবনি, হুঁ? তুমি কি আজ যাবে না-কি থাকতে চাইছো?”

মা কিছু বলার আগে আমি আবার বলে উঠলাম,
-“মা, আজ বরং চলে যাও। কাল এসো। বাড়িতে অনেক মানুষ। জায়গা হবে না থাকার।”

মা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে অন্যপাশে নিয়ে গিয়ে বলল,
-“এরা তোকে শান্তি দেবে না। বাঁচতে পারবি না।”

শক্ত চোখে তাকিয়ে সামান্য হাসলাম ভাগ্যকে পরিহাস করে,
-“ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে কীভাবে থাকি, বলো? মুহিব বেঁচে থাকতে আমাকে বেশিদিন বাপের বাড়ি থাকতে দিতে চাইত না। ও বার বার বলত, আমি যে ও-বাড়ি যাই, আমার ভাবি মনে মনে বিরক্ত হতে পারেন; হয়তো ভদ্রতার খাতিরে বলতে পারেন না। আচ্ছা মা? অন্যের বিরক্তির কারণ কেন হব?”

মা হয়তো আমাকে বুঝল। কিন্তু সেসব আরও কঠিন হয়ে বলল,
-“তোর বাপের বাড়ি আছে। তোর বাপের যতটুকু টাকা আছে, তুই আর কুহু তিনবেলা খেতে-পড়তে পারবি।”

অনড়ভাবে বললাম,
-“ওই টাকায় ভাইয়ার অধিকার। আমার সংসার আমি ছাড়ব না। মরলেও এখানেই মরব।”

মা দ্বিতীয়বার আর কিছু বলার সাহস পেল না। আস্তে-আস্তে আমার সংসারটা কেমন যেন হয়ে উঠতে লাগল। বড়ো জিদ করে তো বলেছিলাম, আমার সংসার আমি ছাড়ব না। কিন্তু..

পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন চারটি দিন কাটল আমার। আমি ভেঙে পড়িনি। বিয়েটা পারিবারিকভাবে হলেও, ভালোবাসায় আমাদের কোনো অংশেই কমতি ছিল না। তাই তো প্রতিবার দেশ ছাড়ার আগের রাতে আমি তার বুকে নির্ঘুম পড়ে থেকে ফোঁপাতাম। অসম্ভব ধৈর্যসম্পন্ন মুহিব আমাকে শান্ত করতে কত কী-ই না করত! ছেলেভোলানো সব কথা বলত। এক পর্যায়ে আমি বুঝদার বাচ্চাদের মতো কান্না থামিয়ে তার কথা শুনতে লাগলে, সে রসিকতা ছেড়ে আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরত নিজের বুকে। তারপর বলত,

-“অনিন্দিতা, আগামীকাল এই সময়টায় আমি তোমার থেকে কয়েকশত কিলো দূরে থাকব। তখন চাইলেও তুমি আর রাগ দেখাতে পারবে না, চাইলেও গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকতে পারবে না। কেননা তখন আমি এভাবে বুকে জড়িয়ে তোমার মান ভাঙাব না। এভাবে টুকটাক আদরে তোমায় নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে ভাবাব না। আগামীকাল মাঝরাতে যখন তোমার ঘুম ভাঙবে, তুমি অর্ধ অচেতনতায় বিছানা হাতড়ে আমায় খুঁজবে। বিনিময়ে এক বুক হাহাকার পাবে। আর কয়েক ঘন্টা আছি আমি। আমাকে নিয়ে তোমার পৃথিবীতে যত কথা আছে, আমাকে বলো। আমি শুনব। মৃত্যুর কাটা সেকেন্ডের চেয়েও দ্রুত এগোয়। আমি কাল যাব, এটা সত্য। দূরত্ব বাড়বে, সেটাও সত্য। অথচ দীর্ঘসময়ের এই দূরত্বটা ঘুচিয়ে আমি আবারও তোমার কাছে ফিরব—এই কথাটা অসত্য প্রমাণ হতে সময়ের প্রয়োজন পড়বে না। প্রতিবছর অসংখ্য প্রবাসী লাশ হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরছে। আমি তোমায় গ্যারান্টি দিতে পারব না যে, নেক্সট লাশটা তোমার স্বামীর হবে না। ওদের স্ত্রী/সন্তানরা শেষ বিদায় জানাতে পারে না। অসংখ্য না বলা কথা থেকে যায় ওদের। অসংখ্য পরিকল্পিত ভবিষ্যৎকে অতীত বানিয়ে রেখে যায় ওরা। আমি তোমায় পরিকল্পনা করতে বারণ করি। আমি তোমায় শেষ বিদায় জানানোর সুযোগ দিই। তাই প্রতিবার তুমি আমাকে বিদায় জানাবে, ঠিক যেমন ধরো আর এই বুকে আসতে পারবে না। অনিন্দিতা! আর কয়েক ঘন্টা আছে। আমাকে বিদায় জানাও।”

আমি তার কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। তারপর আস্তে-আস্তে মানিয়ে নিতে লাগলাম। প্রতি বিদায়ে তাকে আমি শেষবারের মতো বিদায় জানাতাম। তাকে নিয়ে যত ভাবনা-চিন্তা ছিল, যত রাগ-অভিমান ছিল, সব বলতাম। এই তো, পাঁচ মাস আগে যখন নিয়মমাফিক আবারও বিদায় জানানোর দিন, মুহিব আমার চুল আঁচড়ে বিনুনি গাঁথতে গাঁথতে বলেছিল,
-“আমি না থাকলেও, তুমি নিজের খেয়াল রাখতে কার্পণ্য করবে না। নিজের যত্নে খামতি রাখবে না। খাওয়া-দাওয়ায় হেলা করবে না। কুহুকে অযথা বকাবকি করবে না। রাগ উঠলে কাগজে লিখবে, এরপর পানিতে ভিজিয়ে ফেলবে কাগজটা। দেখবে, ঠিক শান্তি লাগছে। জীবন আমাদের প্রতিপদে জীবিকার শিক্ষা দেয়। তুমি হতাশ হবে না, শিক্ষা নেবে, এগিয়ে যাবে। জীবনের প্রতিকূলে যেতে চেয়ো না, স্রোতের টানে ভেসে যাবে। অনুকূলে তাল মেলাতে থেকো। বিশ্বাস করো, জীবনকে একবার নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে শিখে গেলে, এর চেয়ে সুন্দর কিছু আর খুঁজে পাবে না। অনিন্দিতা, তুমি অত্যন্ত বুঝদার একজন মেয়ে। আমার কথাগুলোকে মনে রেখো সর্বদা।”

আমি মনে রেখেছি সেসব। ভুলিনি কিছুই। ভুলতে পারিনি। সেজন্যই এতখানি স্বাভাবিক সম্ভবত!

_____
সকাল থেকে আমার মেয়েটা বেশ হেসেখেলে বেড়াচ্ছে। আমার ননদের ছেলে-মেয়েরা ওর সমবয়সী, ওদেরকে পেয়ে আনন্দ ধরছে না। কুহুর দিনগুলো এভাবেই আর রাতগুলো আমার বুকে শক্ত করে মিশে থেকে কাটছে। ছোট থেকেই বাবার সান্নিধ্য সেভাবে সে পায়নি বলে কোনো ধরনের শক্ত অনুভূতি মেয়েটা পাচ্ছে না। এখানে ওর দোষ নেই। ওর সাথে ওর বাবার তেমন কোনো স্মৃতি নেই। কিঞ্চিৎ যা-ও ছিল, বড়ো হতে হতে সে-সব আর মনে থাকবে না, এটা ধ্রুব সত্য।

মুহিবের মৃত্যুর চতুর্থ দিন আজ। আয়েশা ভাবি আর রিমা ভাবি মিলে দুদিন ধরে কথা শোনাচ্ছে। ওরা চেয়েছিল আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে খাওয়াতে। কিন্তু মৃত্যু উপলক্ষে লোক খাওয়ানোটা মুহিব ঠিক পছন্দ করত না, তাই কঠিনভাবে জানিয়েছি তাদের,
-“এসব কিছুর প্রয়োজন নেই।”

মুহিবের বড়ো ভাই আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন, এজন্য কেউ আর আমার ওপর উচ্চবাচ্য করতে পারেনি, মেনে নিয়েছে আমার কথা। মুহিবের রেখে যাওয়া কথাগুলোকে আদর্শ মেনে দিন চলতে শুরু করলাম। চাকরির চিন্তাটা যখন মাথায় এলো, তখন খুব মনে পড়ল মুহিবের জোর করে আমার পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার দিনগুলো। বিয়ের পর পড়াশোনা করার ইচ্ছেটা ছিল না, তবুও মুহিবের রোজ এক কথা, “বিয়ে মানে সংযুক্তি, নির্ভরশীলতা নয়। আগামীদিনটিতে আমি কর্মক্ষম হয়ে গেলে তুমি যেন সার্টিফিকেটের দোহায় দিয়ে আফসোস না করো, তার খেয়াল রাখাটাও আমার দায়িত্ব।”

আমি অকম্পিতভাবে সার্টিফিকেটগুলো ছুঁয়ে গেলাম। ছুঁয়ে গেলাম আমার নামটা, অনিন্দিতা অনু, অভিভাবক মুহিব আহসান। একাধারে ছোটখাটো যত জব সার্কুলার পেলাম, সবেতেই অ্যাপ্লাই করতে লাগলাম। বাছ-বিচার তেমন একটা করলাম না। সিভি দেখে তন্মধ্যে বেশ ভালো একটা কোম্পানি থেকে ডাকা হলো আমাকে। অল্পতেই ঘাবড়ে যাওয়া আমি প্রবল আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবলের দ্বারা ভাইবাতেও উত্তীর্ণ হলাম। জয়েনিং সোমবার।

এ নিয়ে বাড়িতে কম ঝামেলা হয়নি। বড়ো ভাই একবার বলেছেন,
-“অনু, তোমার এসব কাজ করা লাগবে না। আমরা মরে যাইনি।”

নিজের জায়গায় শক্ত থেকে আমি বলেছি,
-“মুহিব চাইতো না আমি কখনও কারোর ওপর নির্ভরশীল হই। আমি ওর চাওয়াকে সম্মান করি।”

বড়ো ভাই আর কিছু বলেননি। সেই সাথে জায়েদের আমার মুখের ওপর বলা “চাকরি করে দুনিয়া কিনে নেবে নাকি” কথাটা থেমে গেল সামনা-সামনি। গোপনে শুরু হলো এর ওর কাছে আমার নিন্দে। ব্যাপারটা ধরতে পারি আমি, তারপরও চুপ থাকি। তর্ক সুশিক্ষিতার শিক্ষা ধ্বংস করে অশিক্ষিতার পর্যায়ে নামিয়ে আনে। মুহিব না আমাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে উঠে-পড়ে লাগত?

বাড়িটায় আগের মতোই থাকার চেষ্টা করি। ওদের কারো কথাকে তোয়াক্কা করি না। সরাসরি কেউ অবশ্য কিছু বলার সাহসও পায় না। গতকাল বড়ো আপা বলেছিল, একটু হিসেব করে চলতে এখন।

আমি অবাক হয়ে তখন শুধিয়েছি,
-“কেন? সহানুভূতি দেখাচ্ছেন? না-কি আমার স্বামীর রেখে যাওয়া টাকার অভাব?”

মুখের ওপর এভাবে বলে ফেলাতে বড়ো আপা ঘাবড়ে গিয়েছেন, ইতস্তত করতে করতে বলেছেন,
-“তোর আর কুহুর ভালোর জন্যই বলেছিলাম, ছোট।”
-“আপা, এত ভালোর দরকার নেই। আল্লাহ যতদিন হাত-পায়ের জোর রেখেছেন, ইনশাআল্লাহ অভাব আসবে না আমার আর কুহুর লাইফে। জীবন চলার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, আমি করব। স্বামী বেঁচে আছে মানে নারী রানি। স্বামী নেই মানেই দুঃখিনী? এ কোন নিয়ম?”

কোত্থেকে যেন ছোট আপা এসে বললেন,
-“এই তোর দুঃখ লাগছে না, অনু? বর মরেছে মাস গেল মাত্র, বিন্দুমাত্র শোক নেই?”

আমি শক্ত চোখে তাকিয়ে বললাম,
-“শোক নেই, আপা। মৃতদের জন্য মনে শোক রাখা উচিত না, দুঃখ পাওয়া উচিত না। মৃত্যু কখনও অনাকাঙ্ক্ষিত হয় না। প্রতিটি মানুষের হায়াত সৃষ্টিকর্তা তার জন্মের সময়ই লিখে রেখেছেন। এর কিঞ্চিৎ বেশি বাঁচার সামর্থ্য কারোর নেই। তবে মৃত্যুর মতো এত সত্য বিষয়ের সাথে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দটা যোগ করে কেন শোক পালন করব?”ggg

ওরা আর কিছু বলেনি এরপর আমাকে। সম্ভবত ভেবে নিয়েছে স্বামী শোকে পাথর বনে গিয়েছি। ব্যাপারটা তা নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বিষয় হচ্ছে মৃত্যু, আর মুহিব আমাকে এই বিষয়টা সহজভাবে গ্রহণ করতে শিখিয়েছিল। যে মৃত্যুকে মেনে নিতে পারে, সে দুনিয়া জয় করতে পারে। সেদিন মুহিবের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আমি সামান্য নড়বড়ে হয়েছিলাম অবশ্য, তারপর নিজেকে শক্ত করতে আমার খুব একটা সময় লাগেনি।

দিনগুলো এভাবে কাটল। আস্তে-ধীরে সোমবার চলে এলো। একটা হালকা রঙের সুতির শাড়ি পরে নিলাম। চুলগুলোয় খোঁপা, হাতে ব্রেসলেট, গলায় একটা সরু চোকার্স। সাজসজ্জা এমনিতে পছন্দ না আমার, তবে সাজলে নাকি মেয়েদের আত্মবিশ্বাসের বাড়ে। এই কথাটাও আমাকে আমার সেই বিখ্যাত দার্শনিক মুহিব আহসান জানিয়েছিলেন। লোকটার কথায় জাদু ছিল! মনে পড়লেই ঠোঁটের ভাঁজে আপনা থেকেই কী মিষ্টি একটা হাসি চলে আসে..

অফিস যাওয়ার পথে কুহুকে বাড়িতে রেখে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই ওকে নিয়েই বেরোলাম। পথিমধ্যে মায়ের বাড়ি, ওকে সেখানে রেখে আমি ফের রওয়ানা হলাম। ঘন্টাখানেকের রাস্তা৷ বাসে গেলে আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে। কিন্তু প্রথম দিন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যেতে ইচ্ছে করল না। একটা ক্যাব বুক করে নিলাম। এরপর পৌঁছালাম আমার গন্তব্যে।

অফিসে প্রথমদিন আমিসহ আরও দু’জনের জয়েনিং হলো। সবাই ফুল দিয়ে আমাদের অভিবাদন জানাল। নতুন ছেলে-মেয়ে দু’জন অন্য টিমের। আমাদের টিমের লিডার আজ ছুটিতে আছেন। তাই তার অ্যাসিসটেন্ট আমাকে আমার কাজগুলো বুঝিয়ে দিলো। প্রথম দুটো দিন সাধারণভাবেই কাটল। সকালে কুহুকে মায়ের বাড়ি রেখে বের হওয়া, এরপর ৯-৫টা অফিস। তারপর মায়ের কাছ থেকে কুহুকে নিয়ে বাড়ি ফেরা। এই তো, এভাবেই যাচ্ছে।

অথচ বিপত্তি ঘটল যেন ঠিক ক’দিন পর! আমাদের টিম লিডারকে দেখে আমি ভড়কে গেলাম, পায়ের মাটি নড়বড়ে হয়ে উঠল। এতটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ব জানলে সম্ভবত এই শহরেই থাকতাম না। আমাকে দেখে তিনিও অবাক হয়েছেন। অবিশ্বাস্য গলায় ডেকেছেন,
-“অনিন্দা!”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে