অসম্ভবে অসঙ্গতে পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
158

#অসম্ভবে_অসঙ্গতে
লেখক: নবনীতা শেখ
|পর্ব ৪|

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতিটি হচ্ছে একাকিত্বকে উপভোগ করতে পারার অনুভূতি। আমি একা নই। আমার জন্য কুহু আছে। অনেক অনেক মাস পর যখন দু’জন একাকিত্বে অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম, একরাতে চুপিসারে কুহুকে শুধালাম,
-“আম্মাজান, আপনি বাবাইকে মিস করেন?”

কুহু ঘুম জড়ানো আওয়াজে উত্তর না দিয়ে উলটো জিজ্ঞেস করেছিল,
-“আপনি করেন?”

যারা প্রতিটি পদক্ষেপে উপলব্ধি হয়ে থাকে, তারা অনুপস্থিতির অনুভবে কী করে থাকবে? থাকে না তো। নিয়মানুসারে আমিও মুহিবকে মিস করি না। মৃদু হেসে বললাম,
-“করি না।”

কুহু ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে বলল,
-“আমিও করি না।”

আমরা দু’জনেই ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন কুহুকে একটা স্কুলে ভর্তি করে দিলাম। আবির প্রায়ই রাতে কল দিয়ে কুহুর খোঁজ নেয়, কুহুর সাথে কথা বলে। দু’জনের বেশ চমৎকার একটা বন্ডিং হয়েছে। আমার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরোতে চায়। যদি সেবার আবিরকে আমার কিশোরী উপলব্ধিটা জানাতাম, তবে গল্পটা আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো। একটা ছোট্ট সংসার হতো, একটা সুখী পরিবার আমারও হতো!

পরপর আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলা থেকে নিজেকে আটকে ফেলি। আমি কি প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যেতে চাইছি? আমি কি ভাগ্যের বিপরীতে গিয়ে, সাঁইসাঁই বাতাসে দমবন্ধ হয়ে মরতে চাইছি? মুহিব তো আমাকে তা করতে নিষেধ করে গেছে। মুহিব আমাকে কঠিন গলায় বলেছিল,
-“অনিন্দিতা! আফসোসের সুরে বিষ থাকে। তুমি কি আত্মহত্যা করতে চাও?”

আমার স্রষ্টার আমাকে নিয়ে যা পরিকল্পনা আছে, আমি তা সহাস্য চোখে দেখে যেতে চাই। সেভাবেই এগোতে লাগলাম। আমার জায়েরা আমাকে আর কিছু বলে না এখন। আগে মাঝে মাঝে খোঁটা দিত, এখন যা দেয় সব অগোচরে; সামনাসামনি কখনও না। আমার জব পার্মানেন্ট হয়ে গেল। প্রমোশনও পেয়ে গেলাম। এখন আর কুহুকে মায়ের বাড়ি রেখে যাই না। এখানেই থাকে। দিন কেটে যায় টিভিতে কার্টুন দেখে, বাচ্চাদের বই পড়ে, একাডেমিক পড়ে, একা একা খেলে। মাঝে মাঝে আঁকি-বুঁকিও করে। স্কুলে সকালে দিয়ে আসি, আসার সময় আরিফা ভাবি নিজের মেয়ের সাথে ওকেও নিয়ে আসে। তারপর একা একাই খাওয়া-গোসল করে। বাচ্চা আমার, কী গুছিয়ে চলে! এবার ছয় পড়ল। অথচ এখনই কী শান্ত!

মুহিবকে ছাড়া আমাদের প্রায় দের বছর পেরিয়েছে। ঠিক এরম এক সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখতে পাই বড়ো আপা আর ছোট আপা বসার ঘরে আমার মেয়েকে নিয়ে বসে আছে, বিভিন্ন কথা বলছে। টুকটাক কিছু কথা কানে এলো, আপা বলছে,
-“কুহু শোন, তোর মামনি তোরে ছেড়ে চলে যাবে।”

কুহু অবাক হয়,
-“কেন যাবে?”
-“কেন যাবে মানে? তোর ওই আঙ্কেল আছে না? ওই লোকের সাথে চলে যাবে।”

ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল কুহু। অনেকক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল,
-“মামনিরা চলে যায়?”
-“আর কারোর মামনি যায় না। তোর মামনি যাবে।”
-“কেন?”
-“ভালো থাকতে।”
-“এখন ভালো নেই?”
-“না।”
-“কেন ভালো নেই?”
-“কারণ তুই সবসময় তোর মামনিকে জ্বালাস, শান্তিতে থাকতে দেস না। এজন্য ছেড়ে চলে যাবে।”

কুহু দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল,
-“আমি আর জ্বালাব না।”
-“তাইলে শোন, আমি তোর জন্য নতুন বাবা খুঁজি। তোর মামনিকে বলিস, বাবা লাগবে। তখন তোর মামনির সাথে তোর একটা নতুন বাবার বিয়ে দিয়ে দেবো। তোরা একসাথে ভালো থাকবি।”

কুহু কী বুঝল জানি না, অবুঝ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
-“কিন্তু আমার তো বাবাইয়ের দরকার নেই।”

বুকের ভেতরটায় যেন কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিল, তা তুলো হয়ে উড়ে গেল ক্ষণিকেই। আমি তাদের সম্মুখে চলে এলাম। কুহু আমাকে দেখে বরাবরের মতো দৌড়ে কোলে চলে এলো। আমি ওকে কোলে নিয়ে দু’গালে চুমু খেয়ে বললাম,
-“দিন কেমন কাটল, প্রিন্সেস?”
-“খুউব ভালো।”

আমি হাসলাম। পরপর আপার দিকে তাকালাম। তীক্ষ্ণ চাহনি ও ধারালো আওয়াজে তাদের জানালাম,
-“ভিটে ভাগ হোক।”

আপারা স্তব্ধ হয়ে গেল। আমি বুঝতে পেরেছি, আমার বিয়ে অন্যত্র দিয়ে এ বাড়ি থেকে সরানোর ছকটাই তারা কষেছে। সে গুড়ে যেন বালি পড়ল। বোঝাতে চাইল নানান কিছু। আমি বুঝলাম না। রুমে গিয়ে আবিরকে কল লাগালাম। তিনি কল রিসিভ করেই বললেন,
-“অনিন্দা, কোনো সমস্যা? বাড়ি পৌঁছেছ? সব ঠিকঠাক?”

তার উত্তেজিত আওয়াজ। আমি স্থিরতায় বললাম,
-“ইমিডিয়েট একটা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিন অফিসের আশে-পাশে।”
-“সব ঠিক আছে তো?”
-“জি ঠিক আছে, আবির ভাই।”

আবির আর কিছু বললেন না আমাকে। পরদিনই মালিগঞ্জে একটা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দেন। আমি সপ্তাহ সময় নিয়ে সে ফ্ল্যাটে উঠলাম। জুনের মাঝামাঝি সময়, অর্থবছরের শেষের একটা বড়ো অ্যামাউন্টের বোনাস পেলাম, সেই সাথে স্যালারিও বাড়ল। পুরোটাসহ জমানো টাকার আংশিক নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে ফ্ল্যাটটা গুছিয়ে ফেললাম। বাড়িতে আবির একজন হেল্পিং হ্যান্ড এনে দেন কুহুকে দেখার জন্য। তিনি সবেতেই অনেক সহায়তা করেছেন। ফ্ল্যাটে ওঠার পরপরই তাণ্ডব শুরু করলাম।

শীঘ্রই বৈঠকে এলাম, আমার ভাগের অংশটুকুর বদলে আমি সমপরিমাণে টাকা নিলাম। এই টাকা দেওয়াতেও আপাদের ছিল নানান ছুকছুকানো কৌশল। কিন্তু লাভ হলো না ও বাড়িতে আমার না থাকায়।

ধীরে ধীরে সব কিছু থেকে বেরিয়ে এসে নিজের লাইফটা গুছিয়ে নিই। আর জমি-জমা থেকে নেওয়া টাকাগুলো দিয়ে মালিগঞ্জেই গৃহহীন নারীদের জন্য একটা বাড়ি তৈরি করি। বেশ বড়ো সড়ো একটা বাড়ি, বাড়ির নাম দিই “আশিয়ানা”। ধীরে ধীরে অসংখ্য মানুষ আমার আশিয়ানাতে থাকা শুরু করে। তাদের প্রত্যেকের গল্পগুলো আরও কুৎসিত। রুহ কেঁপে ওঠার মতো কুৎসিত।

আমি তাদের দায়িত্ব নিই, তাদের প্রত্যেকের ভালো থাকার দায়িত্ব নেই। আমার একার উপার্জনে তাদের চালানোর সামর্থ্যটা হয় না। এক্ষেত্রে আমি মুহিবের রেখে যাওয়া অর্থগুলো ব্যবহার করে নারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করি। আমি তাদের দক্ষ বানানোর জন্য উঠে-পড়ে লাগি। তাদেরকে বিভিন্ন হাতের কাজে প্রশিক্ষিত করি। এরপর তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করি।

তারপর একসময় দেখলাম, আশিয়ানার নারীদের জন্য আমার নিজ থেকে খরচ করতে হচ্ছে না আর, তারা নিজেরাই নিজেদের চালিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য রাখছে। বাড়তি যা আয় হচ্ছে, তাতে বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করলাম। আরও মানুষ বাড়তে লাগল। আশিয়ানার পাশের খালি জমিটুকুও কিনে নিলাম, বাড়িটাকে বড়ো করলাম। অসংখ্য নারীদেরকে বিদায়ও জানালাম, যখন তাঁরা সম্পূর্ণভাবে আত্মপ্রত্যয়ী হয়েছেন।

আমার জীবনের আরও নয়টা বছর এখানেই কেটে গেল। কুহু এবার দশম শ্রেণিতে পড়ছে। রোজ স্কুল, কোচিং শেষে বিকেল বেলায় এখানে চলে আসে। তারপর হেসে-খেলে পুরো বাড়ির সবার খোঁজ নিয়ে বেড়ায়। সবার সাথে তার কী দারুণ সখ্য! আশিয়ানাতে এখন পথশিশুদেরও থাকার ব্যবস্থা করেছি। কুহু তাদের সবার প্রিয় আপা। কুহু এলেই বাচ্চাদের হৈ-হুল্লোড় বেড়ে যায়। আশিয়ানাতে কী আনন্দ কী আনন্দ!

আমি জব ছেড়ে দিয়েছি বছর চার আগেই, আপাতত আশিয়ানাই আমার ধ্যান-জ্ঞান সব। সমাজের নারীদের জন্য আমি নিজেকে উৎসর্গ করলাম আমি। মুহিব আমাকে যে সকল আদর্শ দিয়ে গেছে, আমি সে সকল আদর্শে তৈরি করলাম হাজারো নারী।

জীবনটা কোনো যাচ্ছেতাই কিছু নয়, জীবন মানে একটি ঘর; কিছু মানুষ নিয়ে সাজানো গোছানো ঘর। মানুষ সব পারলেও, ঘর থেকে দূরে সরতে পারে না। ঘরটা অপছন্দ? সমস্যা কী? সাজিয়ে-গুছিয়ে নিলেই হয়। বলতে যতটা সহজ, করতে তারও অধিক সরল। কেবল প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছেশক্তি, পর্বত সমান আত্মবিশ্বাস ও ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্ব।

সময়টা শীতের। গায়ে চাদর জড়িয়ে আশিয়ানার ছাদে দাঁড়িয়ে রাত উপভোগ করছিলাম। হুট করেই কে যেন আমার সামনে এক মগ ধোঁয়া ওঠানো কফি এগিয়ে দিলো। আমি তাকালাম, আবির দাঁড়িয়ে আছেন। মগটা হাতে নিয়ে বললাম,
-“কখন এলেন?”
-“কিছুক্ষণ আগেই।”
-“আচ্ছা।”

আবির মগে চুমুক দিলেন। তারপর চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“দ্য মুন ইজ বিউটিফুল, ইজন’ট ইট?”

আমি হেসে ফেললাম। চাঁদের দিকে তাকালাম তারপর। আবির নিজেও হাসলেন। কফির মগ রেলিংয়ে রেখে তার গায়ের শাল ঠিক করলেন। সাদা পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে বললেন,
-“অনিন্দা, তোমার কাছে জীবন মানে কী?”

কোনোরূপ ভাবনা ছাড়াই বললাম,
-“আমার কাছে জীবন মানে অ্যাডভেঞ্চার। পদে পদে চমক। কখনও সুখে বুক কাঁপে, কখনও ভয়ে আত্মা ছলকে ওঠে। জীবন মানেই অকস্মাৎ থমকানোর এক গল্প।”

আবির হেসে হেসে রেলিং ঠেসে দাঁড়ালেন,
-“জীবন বিশ্রী। সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসটা নিয়ে ভাবি, সেটাই হারিয়ে যায়। যতবার সুখ খুঁজতে হাত বাড়াই, এক মুঠো দুঃখ পাই।”

আমি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললাম,
-“আপনার বয়স কত?”

বড়ো ভাব নিয়ে আবির বললেন,
-“ফেব্রুয়ারিতে ৪১ হবে।”
-“এখনও বিয়ের বয়স হয়নি?”
-“কী যে বলো না! বিয়ের বয়স শেষ, অনিন্দা। এখন আর মেয়েরা আমাকে চয়েজ করে না। সো ওসব বিয়ে-টিয়ে হোয়াট এভার, বাদ!”
-“ঢং করছেন কেন? খুলে বলবেন কেন বিয়ে করতে এত অনিচ্ছুক?”

আবির ভাই চাঁদের দিকে তাকালেন। আজ পূর্ণচাঁদের রাত। চাঁদের আলোয় চারপাশটা কী মোহময় লাগছে! আবির সেসব দেখতে দেখতে বললেন,
-“নারীরা নিজেদের স্বামীর কাছেও সেফ নয়। তাই নিজেকে এই ‘স্বামী’ ক্যাটাগরিতে ফেলতে ইচ্ছে করে না। আর কোনো প্রশ্ন কোরো না, অনিন্দা। তোমাকে মিথ্যে বলতে আমার কষ্ট হবে।”
-“ঠিক আছে।”

তারপর প্রায় ঘন্টাখানেক দুইজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। রাত বারোটার পর শীত বাড়তে লাগল। আমি তখন আবিরকে বললাম,
-“নিচে আসুন।”

আবির আমার দিকে তাকালেন না,
-“এখানে ভালো লাগছে, তুমি যাও।”

আমি চলে এলাম। আবির সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলেন। মানুষ যা চায়, সব কি সে পায়? যা পায়, আদতে কি তাই-ই চায়? কিছুটা ভাগ্য, বাকিটা কর্ম। চাওয়া দিয়ে পাওয়া হয় না, লাগে পরিশ্রম। আবির কি পরিশ্রম করেছিলেন? নির্বোধ পুরুষজাতি!

_____
রাতে ঘুমানোর সময় কুহু আমার রুমে চলে এলো। রাত তখন দেড়টার কাছাকাছি, জিজ্ঞেস করলাম ওকে,
-“কী ব্যাপার? ঘুমাননি?”

কুহু এগিয়ে এসে আমার কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে মাথা রাখল নিজের। মিষ্টি করে হেসে বলল,
-“আপনার সাথে ঘুমোতে ইচ্ছে করছে, মামনি। ঘুম পারিয়ে দিন।”

আমি কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললাম,
-“কুহেলি?”
-“জি, মামনি?”
-“আপনার কখনও আফসোস হয় না?”
-“কীসের আফসোস?”
-“আর বাকি দশটা মানুষের মতো স্বাভাবিক ও সুন্দর একটি জীবন না পাওয়ার আফসোস।”
-“হতে চায়, হতে দিই না।”
-“কীভাবে দেন না?”
-“আমরা ভালো আছি, মামনি। আরও ভালো থাকতে চাইছি, কেউ কেউ তো সামান্য এটুকু ভালো থাকার জন্য স্রষ্টার কাছে প্রতি ওয়াক্তে কান্না করছে। আমার মা আছে, কারো কারো বাবা-মা, কেউই নেই। আমাদের শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সব ঠিক আছে, কেউ বিকলাঙ্গ হয়েও তো বেঁচে থাকে। আমরা দুনিয়ার কুৎসিত রূপ দেখে হাহাকার করছি, কেউ দুনিয়াই দেখতে পাচ্ছে না। আমার স্রষ্টা আমাকে সেই কষ্ট দেননি, যা ওদের দিয়েছেন। আমি কেন আফসোস করব? কেন শুকরিয়া আদায় করব না?”

ঝুঁকে কুহুর কপালে চুমু খেলাম আমি। কুহু চোখ বন্ধ করে বলল,
-“মামনি, আবির আঙ্কেল বোধহয় আপনাকে ভালোবাসেন।”

কুহু আচমকা এ কথা বললেও, আমি চমকাইনি। সংক্ষিপ্ত উত্তরে বললাম,
-“জানি আমি।”

কুহুও অবাক হলো না। নড়েচড়ে ঠিক হয়ে শুয়ে বলল,
-“এ বিষয়ে আঙ্কেলের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন, মামনি?”
-“না। সম্পর্ক জটিল হয়ে যাবে।”

কুহু হেসে বলল,
-“মানে তিনি জানাতে চান না, আর আপনিও অবুঝ সেজে থাকবেন? ইন্ট্রেস্টিং।”
-“ইয়েস, প্রিন্সেস! লাইফ ইজ মোর ইন্ট্রেস্টিং দ্যান উই ক্যান ইম্যাজিন।”

কুহু উঠে বসে বলল,
-“মামনি, আপনি চাইলে কিন্তু পারতেনই আবির আঙ্কেলকে একটা সুযোগ দিতে।”
-“অবশ্যই পারতাম। তবে এতে আপনার বাবাইয়ের কথাগুলোয় ভাটা পড়ত, আমাদের আশিয়ানাও তৈরি হতো না।”

কুহু আবারও শুয়ে পড়ল, অনুত্তেজিত গলায় বলল,
-“আপনি এত সঠিক কেন সকল ক্ষেত্রে? পার্ফেকশন ইজ নট অ্যা ওয়েল থিং। মাঝে মাঝে কিছু ভুল করা দরকার!”
-“আমিও মানুষ, ভুলের ঊর্ধ্বে নই। কিছু সাংঘাতিক ভুল আমার দ্বারাও হয়েছে?”
-“কী?”
-“ঘুমান।”

কুহু আর প্রশ্ন করল না, আমিও জবাব দিলাম না। আমার ভুলগুলোর শৃঙ্গে স্থান নিয়েছে স্বার্থপরতা। স্বকীয় স্বার্থে দমে গিয়ে অন্যের ভালোবাসাকে সম্মান জানাতে আমার সে কী আলস্য!

|সমাপ্তি|
[এখন অনেকেই বলবেন, এটা কেমন সমাপ্তি? অনেক কথাই পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি, অনেক জায়গা জানানো হয়নি, আবির কেন বিয়ে করল না, অনিন্দিতা কেন আবিরকে সুযোগ দিলো না, অনিন্দিতা কী ভুল করেছে, অনিন্দিতা কী স্বার্থপরতা করেছে! এরম অসংখ্য প্রশ্ন আসবে এখন।
তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, একটা ছোট গল্পে কখনও পরিপূর্ণভাবে সবকিছুর ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। ছোট ছোট অনেক অংশেই, অনেক ক্লু দেওয়া থাকে। এক্ষেত্রে পাঠকদের মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে, বুঝে নিতে হবে, ভেবে নিতে হবে। প্রতিটি ছোট গল্প, এক একটি পাজল। এই পাজলটি তৈরি করা লেখকদের কাজ এবং পাঠকদের কাজ হলো তাদের গভীর চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে এর সমাধান করা। লেখা আমার কাজ, উত্তর মেলানো আপনাদের। ভালোবাসা সকলের জন্য! 🖤]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে