#অবেলার_মেঘ
#পর্ব_২
#জীহানুর
ও সাথে সাথে চোখ খুলে উঠে বসে।এদিকওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার শুয়ে পড়ে। সকাল হতেই ফ্রেশ হয়ে বাড়িটা ঘুরে দেখতে থাকে ও। করিডোরে হাটছিল। ডানপাশের দেয়ালে একধারে বিভিন্ন রকম পেইন্টিং টাঙানো আছে। দেশের অনেক নামীদামী আর্টিস্টদের পেইন্টিং এই দেয়ালে শোভা পেয়েছে। মাইকেলেঞ্জেলোর পিয়েটা, মোজেস আর পাবলো পিকাসোর গুয়ের্নিকাও আছে। দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা চিত্রকর্মের সামনে গিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মার্জিয়া।
-সত্যিই কি যেন একটা আছে এই ছবিটায়। এই হাসির কারণ আজও কেউ জানতে পারলো না!সবাইকে আকৃষ্ট করে মোনালিসার রহস্যময় হাসি..
আপনমনে কথাগুলো বলছিল ও।পিছন থেকে সায়লার ডাকে ধ্যান ভাঙে-
-আপামণি, আপনেরে ডাকতাছে হিরক ভাই।জলদি চলেন।
-হ্যা চলো। তার সাথে কথা বলার ছিল।
নিচে নেমে এসে দেখে সোফার পাশে হিরক দাঁড়িয়ে আছে।সোফার দিকে ইশারা করে ওকে বসতে বলে।মার্জিয়া গিয়ে বসে পড়ে। হিরক তার সামনের সোফায় বসে-
-আপনি এখানে থাকতে পারেন।আপনাকে কোনো পেমেন্ট দিতে হবে না।
-পেমেন্ট না দিয়ে কিভাবে..
-আপনাকে পেমেন্টার বদলে একটা কাজ করে দিতে হবে।
-কি কাজ?(সংকোচিত গলায়)
-বাড়ির যে বাগান টা আছে সেই বাগানের যত্ন নিতে হবে আপনাকে। প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে। সেজন্য আপনার যা যা প্রয়োজন সেই সবকিছুই আপনি পেয়ে যাবেন।
-এইটুকু কাজ!?
-হ্যা,তাছাড়া আপনি এখানে আপনার সুবিধা মতো থাকতে পারেন।
-আচ্ছা আঙ্কেল, এখানে আর কেউ থাকেনা কেন?
-থাকে, কিন্তু সবসময় না।ইচ্ছে হলে আসে আবার ইচ্ছে হলেই চলে যায়।
-কে সে??
-আপনি এতো কিছু ভাববেন না। পরে বুঝে যাবেন।সময় হলে বাগান টা গিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন।
হিরক চলে গেলো আর মার্জিয়া সেই আরেকজনের কথা ভাবতে থাকে যে এই বাড়িতে ইচ্ছামত থাকে। ব্রেকফাস্ট সেরে ভার্সিটিতে যায় ও।যে চারজন ওর রুমমেট ছিল তাদের মধ্যে দুইজন ওর ক্লাসমেটও।ক্লাসে যেতেই অবনী আর ইশা ওর কাছে আসে।এসে জিজ্ঞেস করে রাতে কোথায় গিয়েছিল, কি করেছিল! ওদের সব বলে মার্জিয়া। ইশা বলে-
-জানিস কাল তুই যাওয়ার পর বাড়িওয়ালী আন্টি এসেছিল রাতে।তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল, কোথাও থাকার জায়গা পেয়েছিস কি না!
-বলিস কি রে!
-হ্যা ও সত্যি বলছে।সকালেও এসেছিল। তুই কোনো কল করেছিস কি না জানতে চাচ্ছিল। (অবনী)
-আন্টি তো তোকে যথেষ্ট স্নেহ করতো, তাইলে কাল এমনটা কেন করলো!(ইশা)
-সেটা তো আমারও প্রশ্ন। প্রথমদিন থেকেই বেশ আদর করতো আমাকে।কিন্তু হঠাৎ কেন এভাবে রিয়েক্ট করলো কি জানি! তবে অবেলা ম্যানশনও খারাপ না। কিছুদিনেই হয়ত মানিয়ে নিতে পারবো। তোরা চিন্তা করিস না।
ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে আসে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাগানে ঘুরতে যায়।অনেক বড় জায়গা জুড়ে বাগান।অনেক ফুল গাছ লাগানো আছে ঠিক ই, কিন্তু কেমন যেন প্রাণহীন মনে হচ্ছে। কি যেন একটা নেই! কিছুদূর এগিয়ে যেতে দেখে বাগানের শেষ প্রান্তে একটা সিঁড়ি বাধানো পুকুর আছে। সেদিকে এগিয়ে যায় ও।দুইপাশে বসার জায়গা আছে।সিঁড়িগুলো দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিনের পুরনো। কালচে সবুজ শ্যাওলা জমে আছে। দুইপাশের বসার জায়গায়ও শিকড় গজিয়েছে।আর ভিতরের পানি গাঢ় সবুজ রঙের।ও সিঁড়ি বেয়ে ঘাটের দিকে গিয়ে বসে-
-তুই আমাদের ছেড়ে কিভাবে একা একা থাকবি?কখনো কি এইভাবে থাকছিস কোথাও?এখনো ঠিকমতো নিজের কাজগুলোও করতে পারিস না। অচেনা জায়গায় কিভাবে কি করবি!
চার মাস আগে যখন বাড়ি ছেড়ে এখানে আসতে হচ্ছিল তখন মা এভাবেই কথাগুলো বলেছিল। কি সুন্দর ছিল আগের জীবন টা, যখন কোনোকিছুর চিন্তাই ছিল না মাথায়।পড়াশুনা নিয়েও তেমন একটা আগ্রহ কাজ করতো না। যেমন ইচ্ছা তেমন থাকতাম।কিন্তু বাবা প্যারালাইজড হওয়ার পরে সবকিছু পালটে যায়।এখন আর আগের মতো উড়ুউড়ু ভাবটা নেই। ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়।এখানেও তো পরিবারের কথা ভেবেই আসা। মা আর ছোট বোনকে একটা ভালো স্বচ্ছল জীবন দিতে হবে।আর তার জন্য আমার স্টাডি শেষ করা খুব জরুরী। থেমে গেলে চলবে না। অনেক পথ হাটা বাকি এখনো।
মনে মনে এসব কথা ভাবছিল মার্জিয়া। হঠাৎ কানে দূর থেকে ভেসে আসা গিটারের সূক্ষ্ম আওয়াজ এসে লাগে। ও পিছন ফিরে উঠে দাঁড়ায়। গিটার কে বাজাচ্ছে তা দেখার জন্য পুকুরপাড় থেকে বাড়ির দিকে আসতে থাকে। বাগান থেকে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ দিকে একটা ঘরের জানালায় সাদা পর্দা হাওয়ায় ভাসছে। ও একটু অবাক হলো। কারণ কাল রাত থেকে আজ বিকাল পর্যন্ত বাড়ির যেসব জানালা দরজা দেখেছে সবগুলোয় খয়েরী রঙের মোটা কাপড়ের পর্দা। কিন্তু এখানে ভিন্ন। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। তাই ও সদর দরজা দিয়ে ভিতরে চলে যায়। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে সেই ঘরটার দিকে যায়। গিটারের শব্দ স্পষ্ট ওর কানে আসছে, সেই শব্দ অনুসরণ করে ঘরের সামনে এসে যায়। বন্ধ দরজার উপরে কাঠের নেমপ্লেটে লেখা “মেঘ বসতী”…
#জীহানূর