#অবুঝ_দিনের_গল্প
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট_০৫
অরিন: তুমি পাগল রামু দা!
রামু: ও মা ,মুই পাগল হমু কিয়ারতে?লামিয়া আফা কইলো তো।এই দেহো তোমারে দেখলে মুই হাসি।তোমার লগে কথা কইতে মোর ভালা লাগে।
বলেই পান খাওয়া লাল দাত বের করে হাসলো। দুম করে উঠে দাড়ালো অরিন।
অরিন: আরে এই ভালোবাসা তো বোনের ভালোবাসা।
রামু লজ্জিত পাওয়ার ভঙ্গিমা করে বললো,”মুই তোয়ারে ভালা বাসি অরিন আফা!”
বিথী: লে একদিকে ভালোবাসি কয় আরেকদিকে আফা ডাকে।
অরিন দাত কির মির করে তাকালো লামিয়ার দিকে ।এদিকে লামিয়া এখনও শকে। ও বললো কি আর বেটা বুঝলো কি।
রামু: ও অরিন আফা কিছু কও না দেহি!
অরিন: আরে..বললাম তো!তুমি তো ভাইয়া লাগো আমার।
রামু এবার অরিনের হাত ধরলো।
রামু: ওই কিট্রিনা মোরে ছাইড়া ভিরাট খোলি রে বিয়া করছে। তয়ারে মুই ছাড়ুম না।
অরিন: আরে.. ওটা কিট্রিনা না ক্যাটরিনা।আর ভিরাট খোলী না ভিকি। আর খোলিও না কোহলি। ধুর তোমায় এগুলো বলছি কেন হাত ছাড়ো।
রামু নিজের মতো বক বক করেই যাচ্ছে।অরিন এবার অসহায় চোখে হৃদির দিকে তাকালো।হৃদি আশে পাশে খুঁজে কিছু লতা পাতা নিয়ে এলো।ওগুলো আস্তে করে রামুর গায়ের উপর ছাড়লো।আর তনয়া ভয় পাওয়ার ভঙ্গিমা করে বললো,”ওরে বাবা রে, সা’প।”
রামু অরিনের হাত ছেড়ে গায়ে থেকে লতা পাতা ফেলতে লাগলো।
রামু: ও মা গো।
বলে পিট থাপরাতে থাপরাতে দৌড় দিল।
পিছন থেকে করো হুহা হাসির শব্দে সবাই তাকালো।আরিফা আর আদ্রিয়ান হাসতেছে।মূলত আরিফার সাথে এসেছিল পিছনদিকে ঘুরতে।এসে এই কাণ্ড।
অরিন রেগে বলল,”হাসছো কেন তোমরা?”
হৃদি ,বিথী এক পলক তাকিয়ে ওরাও হাসি শুরু করলো।সেই সাথে যোগ দিলো তনয়া,সোহা,লামিয়া।
অরিন এবার কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,” তোমরাও?”
সোহা: বাহ বাহ,এত দিন অবাস্তব মেয়ের জন্য কল্পনা জল্পনা করে রেখেছিল।এখন অরিন আপুর জন্য।
বলেই এক দফা হাসলো।
অরিন: লামুর বাচ্চা! ওকে এসব ফা’লতু কথা কে বুঝাতে বলছে?
লামিয়া: আরে আমি কি জানি নাকি ও উল্টো বুঝবে।তবে যাই বল!রামু আর তুই!হেব্বি হবে।
অরিন: ধ্যাত ছাতার মাথা!
বলেই ওখান থেকে চলে আসলো।সবাই আরেক দফা হাসলো।
বিকেলে মন খারাপ করে নদীর পারে বসে আছে অরিন।আদ্রিয়ান তখন পাশে বসলো।
আদ্রিয়ান: কি ব্যাপার?মন খারাপ?
অরিন: হুমম!
আদ্রিয়ান: দুপুরের ঘটনার জন্য?
অরিন: উহু!
আদ্রিয়ান: তাহলে?
অরিন: কালকে বিথী আর হৃদি চলে যাবে!
আদ্রিয়ান: কোথায় যাবে?
অরিন: আরে ওরা তো ঢাকায় কলেজে পড়বে।তাই এক্সাম দিবে।তো ওরা বিথীর মামার বাসায় থেকে এক্সাম দিবে।আর টিকলে ওখানের হোস্টেলে উঠে পড়বে।
আদ্রিয়ান: আর তুমি?
অরিন: আমাদের কি আর এত সামর্থ্য আছে?তিন বেলা খেতে পাই এই অনেক।বাবার শরীর ইদানিং ভালো না। ক্ষেতেও তেমন ফসল হয় না।ভাইয়া কিছুটা রোজগার করে শহরে।আর মাসে মাসে টাকা পাঠায়।কাজের জন্য গত কয়েক বছরেও আসে নী এ মুখো।তার উপর আমি শহরে এত বড় কলেজে ওদের সাথে গেলে টাকা পাবো কই আর হোস্টেল এই বা উঠবো কিভাবে!
আদ্রিয়ান: তোমার রেজাল্ট কি এসএসসি এর?
অরিন: এ+..শুধু..
আদ্রিয়ান: গুড..
অরিন: আপনারাও তো পরশু দিন চলে যাবেন তাই না?
আদ্রিয়ান: হুমম..আরিফার পড়া নষ্ট হচ্ছে।বাবার আর আমার কাজও তাই।
অরিন: সবাই চলে গেলে কেমন একা হয়ে যাবো !
আদ্রিয়ান: সন্ধ্যা হয়ে আসছে।বাড়ি চলো।
_____
বিথী আর হৃদি চলে গেছে ।যাওয়ার সময় অরিনকে বিদায় দিতে গিয়ে দুইজন ই কেঁদে উঠলো।এত দিন একসাথে ছিল তাই।স্টেশন অব্দি আদ্রিয়ান এর সাথে অরিন গিয়ে এগিয়ে দিল।ওদের ট্রেনে উঠানোর পর ওরা চলে যাচ্ছিলো।
অরিন: জানেন,আমি এই ট্রেনে কখনো উঠিনি।
আদ্রিয়ান: কেনো?
অরিন: আরে আমি তো গ্রামের বাইরেই পা রাখিনি এখন অব্দি।
আদ্রিয়ান: বুঝলাম ব্যাপার!খুব জলদি এটাতেও উঠবে!
অরিন: কিভাবে?
আদ্রিয়ান: ভাগ্য!
গ্রামের মেঠো পথে হেঁটে যাচ্ছে আদ্রিয়ান আর অরিন।চাইলে ভ্যান গাড়ি ই নিতে পারতো।কিন্তু আদ্রিয়ান স্টেশন এর আশে পাশটা দেখতে চাচ্ছিল।
আদ্রিয়ান: অরিন..তুমি না থাকলে হয়তো গ্রাম সম্পর্কে এত অজানা কথা জানতেই পারতাম না।
অরিন: গ্রাম মানেই একটা মিষ্টি অনুভূতি।এই জন্য তো কখনো এটা ছেড়ে যেতে মন চায় না।
আদ্রিয়ান: মন ঠিক করে নেও।কে বলতে পারে?ভাগ্য তোমায় শহরে নিয়েও ফেলতে পারে!
অরিন: মোটেও না।
আদ্রিয়ান: মোটেও হ্যাঁ।ধরো তোমার কোনো শহরের ছেলের সাথে বিয়ে হলে?
অরিন: আমি বিয়েই করবো না।
আদ্রিয়ান: বলাটা সহজ।কিন্তু তখন পরিস্থিতি এক থাকে না পাগলী।
অরিন অবুঝ চোখে তাকালো।
কিছু দূর যেতেই ভ্যান নিলো।এত খানি পথ হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। আরেকটু দূর যেতেই ভ্যান এ আরেক যাত্রী উঠলো।অরিন মুখে বিরক্তির ভাব বজায় রেখে বসে আছে।এখন ওর মনে হচ্ছে হেঁটে যাওয়া এর থেকে অনেক ভালো ছিল।পাশেই সেই যাত্রী লাজুক ভঙ্গিতে অরিন কে দেখছে তো হাসছে। সেই যাত্রী আর কেও নয়।রামু!
অরিন: তুমি দাত কেলানো বন্ধ করবে?
রামু: কেমন আছো অরিন আফা!
অরিন: ধুর!
আদ্রিয়ান বেশ মজা নিচ্ছে অরিনের এই বিরক্তি।
রামু: তোমার লেইগা মুই একখান কবিতা বানাইছি।
আদ্রিয়ান: আচ্ছা! তা ভাই আমাকেও শোনাও তো।
রামু: আইচ্ছা! জ্বীন রিন আন্ডা,
কলের পানি ঠান্ডা..
আছে কত ঋণ,
আই তোয়ারে ভালবাসি অরিন!
অরিন টুকুস করে ওরে ভ্যান থেকে ধাক্কা দিলো ।
অরিন: তোর কবিতা দিয়ে পিন্ডি চটকা তুই।যত্তসব।
আদ্রিয়ান জোড়ে জোড়ে হেসে উঠলো।অরিন রেগে বুম হয়ে আছে।
আকা বাঁকা পথের কারণে ভ্যান এ কিছুটা ঝাঁকি দিচ্ছে।ঝাকির জন্য অরিন পরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওকে বাহুডোরে আটকে নেয়।মুহূর্তেই শিহরণ বয়ে যায় অরিনের মনে।এই অনুভুতির কারণ অরিনের অবুঝ মন জানে না।
আকাশের অবস্থা ভালো না।যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে।বৈশাখ মাসে এমন একটু আকটু ঝড় বৃষ্টি হয়।এর মাঝেই ভ্যান এর চাকা পাঞ্চার।
অজ্ঞতা ওদের হাঁটা শুরু করতে হলো।কিন্তু রক্ষা হলো না ।বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।অরিন হাঁটা থামালো।মাঠ পেরোলেই বাড়ি। বৃষ্টির আবেশে চোখ বন্ধ করে ভিজতে লাগলো।আদ্রিয়ান কিছুদূর যাওয়ার পর যখন বুঝলো অরিন সাথে নেই তখন পিছে ঘুরে দেখলো বৃষ্টিতে ভিজছে ও।অদ্ভুত লাগতে শুরু হলো আদ্রিয়ান এর। ঘোরে চলে যাচ্ছে ও।হুট করে এগিয়ে গেলো।অরিনের কিছু কাছে গিয়ে ওকে ছুঁতে যাবে সেই মুহূর্তে ওর হাত থামলো।নিজেকে দূরে সরিয়ে আনলো। মাথার চুল মুঠো করে ধরে বলতে লাগলো,”নিষিদ্ধ ও!”
নিজেকে ধাতস্থ করে অরিন কে ডাক দিল।
আদ্রিয়ান: অরিন!
অরিন চোখ মেলে তাকালো।
আদ্রিয়ান: বাড়ি চলো।এখনকার বৃষ্টি ভালো না।ভিজতে ভিজতে দুজনে বাড়ি গেলো।
রাতে অরিন বিছানা গুছাচ্ছে,এমন সময় জানালায় কারো অবয়ব দেখে বেশ ভয় পেলো।পরক্ষণে রামু কে দেখে মেজাজ আসমানে।
কোমরে দুই হাত রেখে বলল,”কি চাই?”
রামু লাজুক হাসি দিয়ে বললো,”আরে সিনেমাতে দেহো না,রাতে প্রেমিকরা প্রেমিকাগো দেখতে আহে।”
অরিন: তোর কোন দিনের প্রেমিকা আমি তখনের কাহিনী ভুলে গেলি?
রামু আবারও লাজুক হাসি দিয়ে বললো,”চম্পায় কইছে,ভালাবাসার মানুষ একটু ব্যাথা দিলে কিচ্ছু হইতো না”
অরিন খাটের নিচ থেকে লম্বা লাঠি বের করলো।
অরিন: হয় তুই যাবি,নয় তোর লা’শ।বের হ!
রামু: আগে মাইনষে কইতো মাইয়া মানুষের রাইতে জ্বীনে ধরে।আজকে দেহিও লইলাম।
অরিন: তোরে রে…
রামু: লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!!
বলেই দৌড়।
অরিন: যত্তসব!
সকালে অরিন ঘুমাচ্ছে।বাইরে ওর মা ডাকছে।
অরিন: আজ এত সকাল সকাল কেন ডাকছো! পাঁচটাও বাজে নী।
মা: কথা কম বল!ব্যাগ পত্র গুছা।সব নিয়ে নে।যেগুলো প্রয়োজন।
মায়ের গলা কেমন ভার ভার শুনাচ্ছে।
অরিন: হটাৎ ?
মা পরম আদরে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”তুই শহরে যাচ্ছিস”
অরিন: মানে?
মা: তোর মামার বাসায় থেকে তুই কলেজে পড়বি।
অরিন: মজা করছো?
মা: না রে মা।তুই পড়াশুনাটা কর।যাতে কখনও কোনো সমস্যায় পড়লে পড়াশুনার মাধ্যমে কিছু করতে পারিস।
অরিন: আমি থাকবো কিভাবে মা?আর টাকা?
মা: অভ্যাস কর মা!আর টাকার চিন্তা করতে হবে না!
মা চলে যেতেই নিলেই
অরিন: মা!
অরিনের মা ফিরে দেখল অরিনের চোখ ছলছল করছে।
মা মুচকি হাসলো।
মা: ছুটি পেলেই আসবি কেমন?
অরিন মাকে জড়িয়ে ধরলো।
গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে অরিন,তনয়া,সোহা আর মা মামী।তনয়া আর সোহা ছুটি পেয়েছে।তাই কয়েকদিন ঘুরে আসবে।আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে আসলো।
আদ্রিয়ান: মা বাবা তোমরা গাড়ি নিয়ে চলে যাও ।
মা: আর তোরা?
আদ্রিয়ান অরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,”ট্রেনে!”
অরিন চমকে তাকালো।
অরিন: রিয়েলি!
#চলবে