#অবুঝ_দিনের_গল্প
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট_০৪
পাখির কিচির মিচির আর বাইরের হট্টগোলে ঘুম ভাঙলো আদ্রিয়ান এর।পাশে হাতড়ে মোবাইলে টাইম দেখে নিলো ভোর পাঁচটা বাজে।গ্রামে সবাই সকাল সকাল জেগে যায়।তাই বাইরে এত হট্টগোল।বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে এলো। পাশ থেকে আরেক বালিশ নিয়ে মাথার উপরে রাখলো।আগে আগে শুয়ে পড়লেও ,অভ্যাসের কারণে রাত বারোটা অবধি জেগে ছিল।দরজায় কখন থেকে কেও নক দিয়েই যাচ্ছে।এবার ঘুম ঘুম চোখেই দরজা খুলে আবারও শুয়ে পড়লো।
অরিন: আরে আরে, ও ইংরেজ বাবু!
আদ্রিয়ান: হু
অরিন: আরে,উঠবেন না?সবাই উঠে গেছে তো।
আদ্রিয়ান: অরিন প্লিজ, আই নীড স্লিপ। ডোন্ট ডিসটার্ব মি।
অরিন: লে হালুয়া,ঘুমেও ইংলিশ বলা ছাড়ে না।আরে ও ইংরেজ বাবু।
অরিন আদ্রিয়ানকে ধাক্কাতে লাগলো।এবার আদ্রিয়ান যথেষ্ট বিরক্ত হলো।রেগে বসলো।
আদ্রিয়ান: সমস্যা কি তোমার?একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো না?
অরিনের মুখ মলিন হয়ে গেলো।আদ্রিয়ান খেয়াল করলো।কিছুক্ষণ নিজেকে শান্ত করে উঠে গিয়ে তোয়ালে নিলো।
আদ্রিয়ান: ফ্রেশ হয়ে আসি?
অরিন মুচকি হাসলো।
ভোরের বেলায় এই সময়ে নদীর পারে হাঁটার মজাই আলাদা।অরিন এই সময় না আনলে হয়তো এই সময়টাকে অনুভব করা যেতো না।তনয়া আর সোহাও আছে সাথে।চারজন মিলে সকালের এই মিষ্টি,দূষণমুক্ত বাতাস উপভোগ করছে।
আদ্রিয়ান কি ভেবে অরিনের দিকে তাকালো। মোটামুটি ফর্সা দেহে সাদা গোল জামায় দারুন লাগছে।মেয়েটার চোখ গুলো সুন্দর বেশ।যখন হাসে বা মন খারাপ করে চোখ গুলোই জানান দিয়ে দেয়।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান।কিছু একটা মনে পড়তেই চোখে সরিয়ে নিলো।মনে মনে নিজেকে বকলো।নিজেই নিজেকে বললো,”নিষিদ্ধ কাজে সায় দিস না।তোর জন্য নিষিদ্ধ ও!নিষিদ্ধ!”
খাবার ঘরটা মোটামুটি রকমের।সবাই এক সাথে বসেছে।লোকজন বেশি হওয়ায় ভুনা খিচুড়ি আর ভর্তা করেছে ।বেশ আরাম করেই খাচ্ছে।যদিও আদ্রিয়ান অভ্যস্ত না সকালে এত ভারী খাবার খেতে।কিন্তু নতুন কিছুতে দোষ কি?খাবার গলায় আটকে গেলে নিজের পাশে রাখা বোতল থেকে পানি নিতে গিয়েও নিলো না।পাশে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢাললো। তাই দেখে আদ্রিয়ান এর মা বাবা খাওয়া থামিয়ে তাকালেন। অরিনও খেয়াল করলো।আদ্রিয়ান গ্লাসের পানি খেলো।
কেমন মিষ্টি স্বাদ,যদিও মিনারেল ওয়াটারের মত না।তবে ভিন্ন রকমের স্বাদ।অরিন আর মা বাবা মুচকি হেসে খেতে লাগলো।
নির্জন দুপুর!স্তন্ধ সময়ের এই বিশেষ ক্ষণে মানুষ নিজের মধ্যে এক ধরনের আড়ষ্টতা খুঁজে পায়। মানুরে জীবনে
নেমে আসে মন্থরতা। অফিস-আদালত ব্যস্ততার স্থান হলেও এ সময় মানুষ শান্তিতে শরীরে মন্থরতা আবিষ্কার করে। গ্রামের ফসলের জমিতে কৃষকের এ সময় কোনাে কাজ নেই; অলস ওই ক্ষণে তার দু’চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে। আগুনের হলকার মতাে সূর্যের তাপ শরীর স্পর্শ করে । কাজ ফেলে গাছের নিচে তখন অবস্থান নেয় কৃষক। মধ্যাহ্নের এ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কবি বলেন- “রৌদ্রময়ী রাতি/ঝা ঝা করে চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম ।”মধ্যাহ্নে পল্পিপ্রকৃতিতে মানুষের মধ্যে আনন্দময় কিছু মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। মনের ভালােলাগার বােধ। কাটে আর ঝড়ের আভাস পেলে হাজির হয় আমগাছের নিচে। শহরে অবশ্য এ রকম চিত্র দেখা যায় না। কর্মময় ব্যস্ত শহরে। দুপুর যেন একরকম উপেক্ষিত; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আভিজাত্য তাদের এরকম দুপুর উপভােগের খুব বেশি সুযােগ দেয় না। বাস্তবিক কোনাে সিক্ততা। কিন্তু ওই রকম দুপুরে প্রকৃতিও বিমুখ হয় মানুষের মানসিক চাহিদার কাছে। তাই চারিদিকে শূন্যতা হাহাকার রূঢ়তা যেন মানুষের মনকে গ্রাস করে ফেলে।গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নের ওই ক্ষণও প্রকৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এক সময় সূর্য ঢলে পড়ে শান্ত হয়ে আসে প্রকৃতির রুদ্ররূপ। গােধূলিলগ্ন থেকে পাখির ঘরে ফেরা শুরু হয়। সূর্যতাপ রহিত প্রকৃতি একটু হলেও ঠান্ডা হয়ে আসে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা শেষে রাত নামে প্রকৃতিতে। তবে দীর্ঘ মধ্যাহ্ন প্রকৃতির বুকে যে স্মৃতি এঁকে দেয় তা মানুষের মধ্যেও স্থায়ী কল্পনার উৎসারণ করে । অলস মানুষ বিশ্রামে পার করে গ্রীষের এ রকম প্রতিটি মুহূর্ত আর কল্পনার শক্তিতে শিল্পী গড়ে তােলেন অপূর্ব নির্মাণসৌধ।
দুপুরে বাড়ির পিছনে আম গাছের নিচে বসে গল্প করছে বিথী,হৃদি,তনয়া, সোহা,লামিয়া আর অরিন। মোট কথা মেয়ে আড্ডা।লামিয়া ওদের থেকে অনেকটা বড়।গ্রামেরই নরমাল ভার্সিটি তে পড়ছে।লামিয়া আর সোহা আর আকাশ তিন ভাই বোন।অপরদিকে এদের কাকার ছেলে মেয়ে অর্থাৎ অরিন ,তনয়া আর আদিব তিন ভাই বোন।
বিথী: ওই অরিন!সে কবে আসবে?
অরিন: তাতো জানি না।কাজের ছুটি পেলে।এমনি তো শহরেই থাকবে।
লামিয়া: বিথী!এত উতলা হস না। ও যদি বেকার থাকে তোর বাবা মাও তোকে ওর সাথে বিয়ে দিতে চাইবে না।
হৃদি: এই আপু!তুমি বিয়ে করবে কবে গো?
লামিয়া ভরকে গেলো।এই মুহূর্তে এই প্রশ্ন আশা করেনি।অরিন মুখ চেপে হাসলো।
অরিন: আদিব ভাইয়া যখন মত দিবে তখন।
লামিয়া অরিনের কান মলা দিয়ে বললো,”খুব পেঁকে গেছিস তাই না?”
অরিন: আহ,আপু লাগছে।ভুল কি বললাম।তুমি তো তার অপেক্ষায় দিন গুণছো।
লামিয়া আরেকটু জোড়ে ধরে বললো,”তুই অনেক পেকে গেছিস”
অরিন: আচ্ছা আচ্ছা,আর বলবো না। ছাড়ো।
তনয়া: অরিন আপু !
অরিন: হুমম!
তনয়া: ওই দেখো!
আম গাছ থেকে একটু দূরে কোনায় রামু বসে আছে।উদাস মনে।
হৃদি: বেচারা এখনও শোক কাঁটিয়ে উঠতে পারলো না।
বিথী: আহারে!
দুইজনই ফিক করে হেসে দিল।
অরিনরা ওর কাছে গেলো।ওর পাশে বসে বললো,”কি গো রামুদা,এভাবে দেবদাস হয়ে বসে আছো কেন?”
রামু: হেয় আমায় থুইয়া কেমনে বিয়া করলো অরিন আফা?
অরিনের আফসোস হলো।বেচারাকে এভাবে বোকা বানানো উচিত হয়নি।
লামিয়া অপর পাশে বসে বললো,”একজন গেছে তাতে কি?নতুন আসবে!”
রামু কিছু বললো না।
লামিয়া: রামুদা!একটা উপদেশ দেই।পৃথিবীতে এমনই হয়।একজন আসবে তো যাবে।কিন্তু ভালোবাসা থাকলে তাকে কোনো দিন হারাবেন না।
রামু: ভালা বাসা?
তনয়া: আরে না ,ভালোবাসা!
রামু: হেয়া আবার কিতা?
লামিয়া: রামু দা ভালোবাসা মিষ্টি একটা অনুভুতি।যেখানে দুজন দুজনকে বোঝে,কেয়ার করে। এক কথায় প্রকৃত প্রেম, যা পাওয়া আজকাল দুস্কর হয়ে উঠেছে। একজন দুটো তিনটে করে প্রেম শুরু করে দিয়েছে। আজকালকার প্রেম বড়ই অদ্ভুত হয়ে উঠেছে।আজকাল কার প্রেমে, প্রেম ছাড়া বাকি সব কিছুই দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃত প্রেমকে বোঝা খুব দরকার। কারণ মানুষ একজনার সঙ্গে কিছু বছর সম্পর্কে লিপ্ত থাকার পর সেই মানুষটি ধোকা দিলে তার দুঃখের কোন শেষ থাকেনা।”আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তোমাকে ছাড়া আমার কোন অস্তিত্ব নেই।” এই সমস্ত কথা একজন আরেকজনকে খুব সহজেই বলে দেয়।কারণ এই সমস্ত কথা বলতে কোন ট্যাক্স লাগে না। কিন্তু কিছু মাস বা কিছু বছর পর তারাই তাদের আসল রূপ দেখায়।কিন্তু তখন আর উপায় কী দুঃখ ছাড়া?তুমি যাকে ভালোবাসবে দেখবে সে তোমাকে কতটা পরোয়া করে! কারণ যে তোমাকে প্রকৃত ভালোবাসে সে সব থেকে বেশি তোমার পরোয়া করবে।তুমি তার সাথে থাকলে সুখ অনুভব করো,নাকি দুঃখ অনুভব করো! তার সাথে থাকার সময় তোমার হালকা বোধ হয় ,নাকি ভারী ভারী অনুভব হয়।এসব খেয়াল করবে।
রামু: তো মুই বুঝুম কেমনে মুই ভালাবাসি কাউরে?
লামিয়া: যখন কাউকে ভালোবাসবে ,চোখ বুঁজে তাকে বিশ্বাস করবে।তার সাথে কথা বললে নিজেকে হালকা অনুভব করবে।তার মন খারাপ দেখলে ভালো করতে চাইবে।তার কোনো অনুরোধ ফেলতে পারবে না।
রামু: তাইলে তো মুই অরিন আফা রে ভালা বাসি!
কিছু না খেয়েও অরিনের কাশি উঠে গেলো।পিছনে আদ্রিয়ান চোখ বড় বড় করে রইলো।শুরু থেকেই ছিল ও।
লামিয়া,সোহা,তনয়া,বিথী আর হৃদি একসাথে বলে উঠল,”কীহ?”
অরিন: লে হালুয়া!!
#চলবে