#অবুঝ_দিনের_গল্প
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট_০৩
আদ্রিয়ান: খুব তো বলে গ্রাম উপভোগ করাবে।আর এখন এখানে বসে আম খাচ্ছো?
অরিন নদীর পাড়ে বসে আম খাচ্ছিল।আমার নিচের অংশে একটু ছিঁড়ে সেখান থেকে আমের রস খাচ্ছে।
আদ্রিয়ান: এভাবে আম খায় কেও?ছি! কি বাজে ওর খোসা দেখছো?
অরিন বিরক্তির সহিত তাকালো।এই লোকের বিদেশি হাব ভাব সহজে বদলাবে না।
অরিন: বসুন!
আদ্রিয়ান: এই মাটিতে?
অরিন: গ্রামে মাটি থাকবেই স্বাভাবিক!
আদ্রিয়ান: সরি আই কান্ট!
অরিন: ফার্স্ট অফ অল আপনার এই ইংরেজি বলা বন্ধ করুন।আর গ্রাম উপভোগের প্রথম লেসন এটা।এখন আমার কথা না শুনলে আর যেভাবে করতে বলি তা না করলে উপভোগের চিন্তা বাদ দিন। ব্যাগ পত্র নিন।বিকেলের ট্রেনে কেটে পড়ুন।এখন দুটো বাজে।পাঁচটার ট্রেন পেয়ে যাবেন।
আদ্রিয়ান: কি করতে হবে মেডাম?
অরিন: জিন্স হাঁটুর নিচ অব্দি গুটিয়ে নিন।
আদ্রিয়ান করলো।
অরিন: এবার আমার মতো পা ভিজিয়ে বসুন!
আদ্রিয়ান: এটা না করলে হয় না?
অরিন: উপভোগ করতে হলে একটু তো সইতে হবেই ইংরেজ বাবু!
আদ্রিয়ান বসলো।না তেমন খারাপ না।বরং অনেক ভালো।ঠান্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে বসে এই কড়া রোদ্দুরেও হিম শীতল বাতাস উপভোগ করা ,এক কথায় অসাধারণ।
অরিন: কেমন লাগছে?
আদ্রিয়ান: দারুন!
অরিন: এবার এটা নিন!
একটা আম এগিয়ে দিয়ে।
আদ্রিয়ান: কেটে আনতে পারোনি?
অরিন: উফ!আচ্ছা মানুষ তো আপনি।বিদেশি কালচার শিরায় শিরায়।এটার নিচের দিকে দাত দিয়ে খোসা চিরুন অল্প।আর আমার মতো খান।দেখবেন মনে হবে অমৃত!
আদ্রিয়ান: ইটস সো ডিজগাস্টিং!
অরিন: আপনি আবারও ইংলিশ বলছেন!
আদ্রিয়ান: ওকে ওকে!
অরিন: খান!
আদ্রিয়ান চোখ মুখ কুঁচকে আম হাতে নিলো।মূলত এভাবে ও খায়নি কখনো।ছোট থাকতে বিদেশেই ছিল।তাই কেটে কুটে খাওয়ার অভ্যাস।অরিনের দেখানো নিয়ম অনুসারে খেতে শুরু করলো।
অরিন: এবার নদীর স্রোত দেখুন আর খান।দেখবেন ফুরফুরে লাগছে।
আসলেই অসাধারণ লাগছে।গ্রামীণ প্রকৃতি কি সুন্দর।অরিনের কথায় ধ্যান ভাঙলো আদ্রিয়ান এর।
অরিন: আরো খাবেন?
আদ্রিয়ান: আছে নাকি?
অরিন: না তা নেই অবশ্য,কিন্তু..
আদ্রিয়ান: কিন্তু?
অরিন উঠে দাঁড়ালো।
অরিন: চলুন তাহলে!
আদ্রিয়ান: কোথায়?
অরিন: উপভোগের সেকেন্ড লেসনে!
আদ্রিয়ান উঠলো। জিন্স নামাতে নামাতে বলল,”তো মিস! এটার লেসন ঠিক কয়টি?”
অরিন: অফুরন্ত!
আম গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আর অরিন।অরিন আশে পাশে খুঁজে একটা পাথর নিয়ে আমে ঢিল ছুড়তে নিল!
আদ্রিয়ান: আরে আরে কি করছো!
অরিন: আম পারছি!
আদ্রিয়ান: তো এখানে কেনো?তোমাদের বাড়িতেই তো আছে!
অরিন: চুরি করার নিউ এক্সপেরিয়েন্স নিবেন তাই!
আদ্রিয়ান: হোয়াট?
অরিন: যেটা শুনছেন তাই।
বলেই ঢিল ছুড়লো।কয়েকটা মিস গেলেও ঢিল অনেক জায়গায় ঠিক ভাবে লেগেছে।তাই দুই তিনটে আম ও পড়ছে।
অরিন: আরে উঠাচ্ছেন না কেনো?
আদ্রিয়ান বিরক্ত সহিত উঠাচ্ছে সব।
অরিন: এবার আপনি ঢিল ছুরুন!
আদ্রিয়ান: আমি?
অরিন: হ্যাঁ!
অরিন আদ্রিয়ান কে যেভাবে বললো আদ্রিয়ান সেভাবে ছুড়লো।
অরিন: কেমন লাগলো?
আদ্রিয়ান: নট গুড বাট..
তখনই পিছনে কে চিল্লাচ্ছে চো’র চো’র বলে..
অরিন: এইরে, খবি’শ চাচা মনে হয় টের পেয়ে গেছে। পালান!
বলে আদ্রিয়ানের হাত ধরে দিলো দৌড়।কিছু দূর যাওয়ার পর থামলো।দুজনই হাপাচ্ছে।
আদ্রিয়ান: ছি!তুমি শেষ মেষ আমাকে দিয়ে চু’রি করালে?
অরিন: উফ!একটু আকটু করলে কিছু হয় না।
আদ্রিয়ান: তুমি..
অরিন: মজা পেয়েছেন না?
আদ্রিয়ান: তা ঠিক কিন্তু..
অরিন: নো কিন্তু! কাল থেকে রোজ আপনাকে নিয়ে চু’রি করতে যাবো!
বলেই হাঁটা লাগালো।আদ্রিয়ান চোখ বড় বড় করে বলল,”আবার চু’রি?”
বিকেলে সবাই মিলে উঠোনে পাটি পেতে বসেছে।আদ্রিয়ান রুমে থেকে বের হয়ে কাওকে খুঁজছে।সামনে সোহাকে পেয়ে ডাক লাগালো,”এই পিচ্ছি শুনো”
সোহা: আমি?
আদ্রিয়ান: হুমম তুমি!
সোহা কোমরে দুই হাত দিয়ে বললো,” আমাকে দেখে আপনার পিচ্ছি মনে হয়?”
আদ্রিয়ান: তো তুমি কি?
পিছন থেকে লামিয়া বলে উঠলো,”ও হচ্ছে পাকনা বুড়ি ভাইয়া!”
আদ্রিয়ান: তাই!
সোহা: ভালো হচ্ছে না কিন্তু লামিয়া আপু!
লামিয়া: বেশ হচ্ছে! যা নিজের কাজে!
সোহা গাল ফুলিয়ে চলে গেলো।
লামিয়া: কিছু লাগবে ভাইয়া?
আদ্রিয়ান: ইয়াহ!আচ্ছা এখানে কোনো শপ আছে যেটায় মিনারেল ওয়াটার পাওয়া যাবে?
লামিয়া: আশে পাশে নেই।তবে ঐযে বড় রাস্তার মোড় দিয়ে যে এলেন?ওখানের দোকানটায় পাবেন।
আদ্রিয়ান: ওহ! একচুয়ালি,আমার আনা পানি প্রায় শেষ।তাই আনতে হবে।
লামিয়া: আমি কাউকে দিয়ে তাহলে আনিয়ে দেই?
অরিন: না!
মৃদু চিৎকারে অরিন বলে উঠলো।
লামিয়া: তোর আবার কি হলো?
অরিন: কেনো আমাদের কি পানির অভাব পড়েছে?যে পানি কিনে এনে খেতে হবে?
লামিয়া: ভাইয়া এই পানি খেতে অভ্যস্ত না।
অরিন: অভ্যস্ত না মানে কি?দাড়ান!
অরিন ঘরে গেলো।এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে বললো,”এটা খান!”
আদ্রিয়ান: কাম অন অরিন!আমি সব তোমার মত করতে পারবো না।প্লিজ ডোন্ট রিকুয়েস্ট মি ফর দিস!
অরিনের মুখে উদাস ভাব ছেয়ে গেলো। আনা পানি টুকু নিজে খেয়ে ঘরে চলে গেল।
লামিয়া: এই অরিন! যা বাবা,এর আবার কি হলো?বুঝিনা বাপু!
বলে চলে গেলো।আদ্রিয়ান অরিনের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই অরিন দরজার কাছে আসলো।
অরিন: কালকে থেকে প্রকৃতি উপভোগ একাই করবেন।আমি আর কিছু বলবো না। হুহ!
বলেই দরজা আটকে দিল।আদ্রিয়ান বুঝলো ও রাগ করেছে।রাতে সবাই খেতে বসলে অনেকে অরিন কে ডাকলেও সে খাবে না বলে জানিয়েছে।আদ্রিয়ান সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে অরিনের রুমে আসলো।এসে গলা খাকারি দিল।কিন্তু অরিন তাকালোও না।
রুমে ঢুকে আদ্রিয়ান চুপ করে পাশে বসলো।
আদ্রিয়ান: গাল এমন টমেটোর মতো করে রেখেছো কেন?
অরিন নিরুত্তর!
আদ্রিয়ান: আরে ইয়ার!আমি এসবে অভ্যস্ত নই।আর কলের পানি!
অরিন: সময় পরিস্থিতি মানুষকে ভিন্ন পথে নেয়।এমন সময়ও তো আসতে পারে আপনি হয়তো আর বিদেশ বা শহরে আর না যেতে পারেন!তখন?তখন কি করবেন?তখনও কি এই কিনে এনে পানি খাবেন?নাকি মানিয়ে নিবেন?
আদ্রিয়ান: এরকম সময় আসবে না।
অরিন: আল্লাহ্ চাইলে কি না করতে পারে!
আদ্রিয়ান: তাও..
আদ্রিয়ানকে থামিয়ে ..
অরিন: থাক আপনার মানিয়ে নিতে হবে না।আপনি খেতে যান,আমি আসছি!
আদ্রিয়ান: রেগে আছো?
অরিন: না!কারোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করা উচিত না।আমি একদম রাগ করে নেই। যান আমি মুখে পানির ছিটা দিয়ে আসছি।
অরিনের মুখ ভার বুঝতে পারলো।কিছু না বলে উঠে গেলো।
গ্রামে রাত ১০ টা মানেই মধ্যরাত।খাওয়া দাওয়া করেই সব যে যার রুমে ঘুমাচ্ছে।এই সময় দরজায় কারোর টোকা পেয়ে খুলে দিল আদ্রিয়ান।সামনে অরিনকে দেখে অবাক হলো।
আদ্রিয়ান: তুমি এই রাতে?
অরিন মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বললো।ফিসফিসিয়ে বললো,”ইংরেজ বাবু, জোৎস্না বিলাস করবেন?নদীর পাড়ে?”
আদ্রিয়ানও ফিস ফিস করে বলল,
আদ্রিয়ান: এত রাতে?
অরিন: আরে রাত হয়েছে তো কি হয়েছে?আমি আর ভাইয়া কত গিয়েছি!
আদ্রিয়ান: গ্রামের লোক খারাপ ভাববে না?
অরিন: আমাদের গ্রামের মানুষ অনেক সরল।তাই কিছু ভাববেও না বলবেও না ।চলুন চলুন!
আদ্রিয়ান গেলো।
ঝিরিঝিরি বাতাস, নির্জন রাত। গ্রামের পথঘাটে কোথাও প্রাণের আভাস মাত্র নেই। বৌদ্ধপূর্ণিমার রাত। চাঁদ যেন তার অপূর্ব শুভ্র আলাে ঢেলে দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে। সমস্ত নিসর্গ যেন জোৎস্নার শুভ্রতায় আত্মলীন হয়ে গেছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলােয় প্রকৃতির এই শােভা দেখে আমি অভিভূত। মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের সেই গানের কলি—“আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে/বসন্তেরই মাতাল সমীরণে। বনের ভেতরে দাঁড়িয়ে জোৎস্নার প্রকৃতি অনুভব করা ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা।‘আয় আয় চাঁদ মামা’ বলে ছােটবেলা থেকে আমাদের সঙ্গে চাদের নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তােলা হয়। চাঁদ যেন জীবনে স্নিগ্ধতার আলাে ছড়ায়। কবি-সাহিত্যিকরা চাঁদকে নিয়ে লিখেছেন স্মরণীয় কত কবিতার পঙক্তি। এভাবে চাঁদ আর জ্যোৎস্না মানবজীবনে অমলিন হয়ে আছে।জ্যোস্না রাতে প্রকৃতিকে খুব মায়াবী দেখায়। চারদিকে জ্যোত্সার শুভ্রতা, নদীতীরে দিগন্তজোড়া প্রান্তরে দাঁড়ালে যে-কোনাে মানুষের মনে স্নিগ্ধতার বােধ জন্মে। আনন্দে ভরে যায় সারা মন।
অরিন: এবার বলুন তো কেমন লাগছে?
আদ্রিয়ান: সত্যি বলতে,চন্দ্রালােকিত রাতের অপরূপ শােভা দেখা ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। ঘটনাচক্রে এit রাতে জোৎস্নার রূপ-মাধুরী অবলােকন করে আমি বিস্মিত। জোৎস্না রাতের সৌন্দর্যের এমন অপূর্ব রূপ আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে আর কখনাে অনুভব করিনি।ধন্যবাদ অরিন!তোমার জন্য এই রাত কে উপভোগ করছি।
অরিন হাসলো..
অরিন: এখন ঘুমিয়ে পড়ুন!কালকে সকাল সকাল চুরি করতে যাবো!
আদ্রিয়ান অরিনের কিছুটা কাছে গেলো।অরিন এতে অনেক ভরকে গেলো আর ভয়ও পেলো।এত কাছে কাউকে দেখার বিশেষত পুরুষকে দেখার অভিজ্ঞতা অনেক কম।তাই ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো।
আদ্রিয়ান: একটা কথা জানো অরি?
অরিন চোখ খুললো।
আদ্রিয়ান: তোমার চেহারা ইনোসেন্ট মার্কা হলেও তুমি ..
অরিন ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো কি?
আদ্রিয়ান: বজ্জা’ত এর হাড্ডি!
অরিন ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।
অরিন: আপনি একটা ফা’জিল,অ’সভ্য,ব’জ্জাত..
অরিন উঠে গেলো।আদ্রিয়ান ওখানে বসেই হাসতে লাগলো।
আদ্রিয়ান হাসতে হাসতেই বলে উঠলো,”আরে অরিন দাড়াও!”
#চলবে…