অবিবাহিত বউ পর্ব-১৩+১৪

0
720

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৩
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

নাহিদ বাইকের উপর বসে গেইটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে তোহার জন্য। মনটা কেমন উরুউরু করছে। তোহাকে দেখার জন্য মনটা আনচান আনচান করছে। নাহিদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে গেইটের দিকে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। তোহা এসেছে। কিছু একটা নিয়ে হাসতে হাসতে অরিনের সাথে কথা বলছে। নাহিদ গালে হাত দিয়ে মিহি কন্ঠে বলল,
“বউটা এতো সুন্দর কেন?

তোহা অরিনের সাথে কথা বলতে বলতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। মূলত নাহিদকে খুঁজার জন্যই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বেশিক্ষণ তাকাতে হয়নি। সামনে তাকাতেই নাহিদের দেখা পেল। মুখে হাসি ঝুলিয়ে এইদিকেই আসছে। নাহিদকে দেখা মাত্রই তোহার গতকালের কথা মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সর্বা’ঙ্গ কেঁপে উঠলো।

নাহিদ তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। হাসি মুখে বলে উঠল,
“কেমন আছো বউ?

নাহিদ আবারো বউ বলে সম্বোধন করার তোহা তেঁতে উঠল। তবে নাহিদকে কোনো কিছু বলল না। নাহিদকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নাহিদের পাশ কেটে চলে যেতে চাইল।

তোহা চলে যেতে চাইলে নাহিদ মুচকি হাসল। ফট করে তোহার বাম হাতটা ধরে ফেলল। তোহা দাঁড়িয়ে পড়ল। নাহিদের দিকে তাকাতেই নাহিদ বলে উঠল,
“কালকে বলেছিলাম কথা বলা বাধ্যতামূলক। অথচ তুমি এড়িয়ে যাচ্ছো?

তোহা এক ঝটকায় নাহিদের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল। সোজা নাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“আপনি কথা বলতে বললেই আমাকে কথা বলতে হবে? কেন? আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি? যে ভয়ে আপত্তনার সব কথা মান্য করবো।

নাহিদ হেসে উঠল। তোহার ক্ষানিকটা কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে ভয় পাও না বলেই তো তোমাকে এতো ভালো লাগে। এই ভালোলাগাটা যদি হুট করে ভালোবাসায় রূপ নেয় আমি কি করবো বল তো?

নাহিদের কথার বিপরীতে তোহাও হেসে উঠল। নাহিদের মতো বলে উঠল,
“ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। তো মিস্টার? এক মন দিয়ে কয়জনকে ভালোবাসবেন আপনি? ভালোবাসা কি মুড়ির মোয়া? যাকে ইচ্ছে তাকেই দিবেন।

তোহার কথায় নাহিদ ক্ষানিকটা ভ্রুঁ কুঁচকালো। তখনই রিয়ার কথাটা মনে পড়ল। মনে মনে বড্ড আফসোস হলো নাহিদের। ধুর, রিয়া যে কেন এই ঝামেলাটা করতে গেল? নাহিদ হেসে বলল,
“তুমি বললে শুরু তোমাকেই দেব। অন্য কাউকে দিব না কিংবা দিলেও ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।

তোহা মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“আপনার মন আপনার কাছেই রাখেন। আমার এসবের দরকার নেই। তোহা অন্য কারো জিনিস নেয় না। যারটা তারই থাক।

তোহা নাহিদকে আর কথা বলার সুযোগ দিল না। অরিনকে নিয়ে ক্লাসে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। অরিন কিছুটা পথ যেতেই বলে উঠল,
“তোহা নাহিদ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে?

তোহা নি’ষ্প্রাণ ক’ন্ঠে বলল,
“উনি ভালোবাসলেই কি না বাসলেই কি? আমি তো উনাকে ভালোবাসি না। আর কখনো বাসবো ও না।

অরিন হেসে উঠল। তোহা আড়চোখে তাকাল। হাসির কি আছে এখানে? অরিন হাসি থামিয়ে বলল,
“এখনই বলছিস ভালোবাসবি না? কে বলতে পারে? হুট করে একদিন এসে বলবি, ‘অরিন আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ‘।

তোহা দ্বিমত করল। অরিনের কথাটাকে প্রতিবাদ করে বলল,
“কখনো না। আমি এমনটা কখনোই বলবো না।

অরিন তোহার চোখ এড়িয়ে মুচকি হাসল। বি’দ্রুপ করে বলল,
“সময় কখন কি করে কেউ বলতে পারে না। তুই কখন কি বলবি তা সময়ই বলে দিবে।

তোহা অরিনের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল,
“তোর কথাবার্তা কিন্তু আমার একটুও ভালো ঠেকছে না। তুই কি চাচ্ছিস বল তো? তুই কি চাচ্ছিস আমি ওই নাহিদকে ভালোবেসে ফেলি?

অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখন কিছু বললেই হয়তো তোহা বলে উঠবে ‘তুই নাহিদ পক্ষে কথা বলছিস ‘। অরিন আর কথা বাড়াতে চাইল না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
“আরে না। এসব কথা এখন বাদ দিয়ে চলে ক্লাসে যাই।

ক্লাসে গিয়ে তোহা দেখতে পেল রিয়াকে। দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে খাতায় কিছু লিখছে। তোহা রিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। রিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ইশ, তুমি যে ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেললে। মানুষটা মোটেই সুবিধার না। হঠাৎ একদিন দেখবে তোমাকে একা করে চলে যাবে।

তোহা হঠাৎ করে কথা বলায় রিয়া চমকে উঠল। মাথাটা বাম দিকে ঘুরিয়ে তোহাকে দেখে স্ব’স্তির শ্বাস ফেলল। তোহার কথাটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলল,
“ভালোবাসার মানুষটা যেহেতু আমার সেহেতু মানুষটা সুবিধার না অসুবিধার সেটা দেখার দায়িত্ব ও আমার। তুমি কেন এসব দেখতে যাচ্ছো?

“তোমার ভালোবাসার মানুষটা যদি আমায় ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে বি’ভ্রান্ত করে তাহলে কি করবো বল? সময় থাকতে আটতে রাখো।

তোহা আর দাঁড়াল না। নিজের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ল। রিয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো। বুকের ভেতর শুরু হয়েছে তোলপাড়। তোহার কথাটা কানে বাজল। ‘সময় থাকতে আটকে রাখো’। রিয়া নিজ মনে হাসল। তাচ্ছি’ল্য মাখা হাসি। বি’ষাক্ত শ্বাস ফেলে বলল,
“আটকে রাখবো? কাকে আটকে রাখবো? যে চোখের ভাষা বুঝে না, মনের গভীরতা জানে না তাকে আটকে রাখা যায়? সে যে তোমাতে আ’সক্ত, আমি তার কাছে বি’ষাক্ত।
__________

নাহিদ ফাহিম রনির কাছে গেল। দুজনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোহার নাম্বারটা কিভাবে পাব বল তো?

ফাহিম অকপটে বলে উঠল,
“কেন? সরাসরি ওর কাছে চাইলেই তো হয়।

নাহিদ ফাহিমের বাহুতে একটা থাপ্পড় দিল। আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“তোর কি মনে হয়? আমি নাম্বারটা চাইবো আর আমাকে দিয়ে দিবে? এতোই সোজা?

ফাহিম নাহিদের মতো করে নাহিদের বাহুতে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
“সেই কথাটা মুখে বললেই তো হয়। কথায় কথায় এতো হাত চলে কেন? শা’লা!

নাহিদ চোখ পাকিয়ে তাকাল। ফাহিম তা পাত্তাই দিল না। তখনই রনি বলে উঠল,
“তোরা এভাবে ঝগড়া না করে ভাব নাম্বার কীভাবে ম্যানেজ করা যায়।

ফাহিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। মুচকি হেসে বলে উঠল,
“আরে নাম্বার ম্যানেজ হয়ে যাবে। একটু বুদ্ধি খাটালেই হবে।

নাহিদ রনি দুজনই একসাথে বলে উঠল,
“কীভাবে?

“সেটা সময় হলেই দেখতে পাবি।
_______

ছুটি হতেই তোহা অরিন ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। মাঠে পা রাখতেই ওদের সামনে ফাহিম, রনি এসে দাঁড়াল। দুজনের মুখেই হাসি। ফাহিম অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোমার সাথে একটু কথা আছে। একটু সাইডে আসবে?

ফাহিম কি কথা বলবে অরিন বুঝতে পারল না। তোহার দিকে তাকাল। তোহার ও একই অবস্থা। ওরা ঠিক কি চাচ্ছে বুঝতে পারছে না। অরিন গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“কেন? সাইডে যাওয়ার কি দরকার? আপনি যা বলার এখানেই বলুন।

ফাহিম রনির দিকে তাকাল। চোখ দিয়ে আশ্বা’স দিল। তারপর অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“প্লিজ একটু সাইডে আসো। এখানে বলা যাবে না বলেই তো সাইডে আসতে বলছি।

অরিন তোহার দিকে তাকাল। তোহা চোখের ইশারায় যেতে বলল। অরিন তাই বলে উঠল,
“ঠিক আছে। চলুন।

ফাহিম, রনির চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল। তোহার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ফাহিম অরিনকে বলে উঠল,
“তোমার ফোনটা একটু দেবে?

ফাহিমের কথায় অরিন ভ্রুঁ কুঁচকালো। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“মানে? আমার ফোন কেন দেব? আমি শুধু শুধু আপনাকে কেন আমার ফোন দিতে যাব?

রনি তখন বলল,
“আসলে হয়েছে কি। ওর তো নতুন রিলেশন। তবে ওর গার্লফ্রেন্ডের ফোনটা ন’ষ্ট হয়ে গেছে। এখন আপনার নাম্বার থেকে ওর গার্লফ্রেন্ডের আম্মুর নাম্বারে কল দিবে। যদি ওর গার্লফ্রেন্ডের আম্মু কল রিসিভ করে তাহলে তুমি কথা বলবেন।

রনির কথাটা অরিনের কেন যেন বিশ্বাস হলো না। মনের মধ্যে খটকা লাগলো। তখনই ফাহিম বলে উঠল,
“প্লিজ, জাস্ট একবার কল করবো।

অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে লক খুলে ফাহিমের হাতে দিল। ফাহিম ফট করে কল লিস্টে চলে গেল। ভাগ্যক্রমে প্রথমেই তোহার নাম্বারটা পেয়ে গেল। রনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমার নাম্বারটা মুখস্থ আছে। তাও তুই দেখত মিলে কি-না। আমি নাম্বারটা বলছি।

রনি মাথা নাড়ালো। ফাহিম তখন তোহার নাম্বারটা বলতে শুরু করল। সাত ভিজিট বলতেই অরিনের নাম্বারটা চেনা মনে হলো। অরিন মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়ে গেল। এটা তোহার নাম্বার। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গেছে। রনি তার ফোনে তোহার নাম্বারটা তুলে নিয়েছে। অরিন রাগী গলায় বলল,
“আপনার এটা কি করলেন? আমাকে বোকা বানিয়ে তোহার নাম্বারটা নিয়ে নিলেন?

ফাহিম অরিনের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“কি করবো বল? বন্ধু হেল্প চেয়েছে। হেল্প তো করতেই হবে। তাই তোমাকে বোকা বানালাম।

অরিন ফাহিমের থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। তখনই ফাহিম, রনি এক ছুটে চলে গেল। অরিন তোহার কাছে যেতেই তোহা প্রশ্ন করল,
“কিরে? কি বলেছে তোকে?

অরিন জবাব দিল না। চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। তোহা আরো দুই বার জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু তাতেও লাভ হলো না। অরিন বলল না ওখানে ঠিক কি হয়েছে।

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৪
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

রাত বারোটার এপাড় কি ওপাড়। তোহা গভীর ঘুমে আ’চ্ছন্ন হয়ে আছে। তোহার ঘুমটাকে হালকা করতে এই রাতের বেলা তার ফোনটা বেজে উঠলো। তোহার কপালে বি’রক্তির ভাঁজ পড়ল। অসময় কে কল দিল? কল যখন দিবেই তখন আরো আগে কল দিত। এই রাত-বিরাতে কেউ কল দেয়?

তোহা চোখ খুলে তাকালো না। হাতড়ে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিল। একটা চোখ একটু মেলে কলটা রিসিভ করে কানে দিয়ে আবারো চোখটা বন্ধ করে নিল। তোহা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
“হ্যালো, কে?

ওপাশ থেকে কারো নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া ওপর পাশের মানুষটা কোনো কিছু বলার প্রয়াস করল না। তোহা প্রচ’ন্ড বি’রক্ত হয়ে বলল,
“আপনি কি জানেন আপনার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই? সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন মানুষ আপনি।

তোহা একটু চুপ করল। কিন্তু তখনো ওপর পাশ থেকে কেউ কিছু বলছে না। হয়তো বা বলবে ও না। ঘুমে তোহার চোখ দুটো জ্বা’লা করছে। অনেক ক’ষ্টে নিজেকে জাগিয়ে রেখেছে। যখন দেখল ওপাশের মানুষটা এখনো নি’শ্চুপ হয়ে আছে তখন আবারো বলল,
“এতো রাত করে কল দিয়ে আমার ঘুমের ব্যা’ঘাত ঘটিয়েছেন। সেই সাথে এখন আবার চুপ করে আছেন। চুপ করে থাকলে কল দেওয়ার দরকার কি ছিল? কলটা কেটে দিলেই তো হয়।

এবার ওপাশ থেকে কথা শোনা গেল। ওপাশের মানুষটা পুরুষেয়ালী ক’ন্ঠে বলে উঠল,
“কল কেটে দিলে তোমার বিরক্তি’কর কন্ঠ শুনতে পেতাম?

কন্ঠটা বড্ড চেনা মনে হলো তোহার। কোথাও একটা শুনেছে। কিন্তু কোথায় শুনেছে? ঘুমের ঘোরে ঠিক মনে করতে পারছে না। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কে আপনি?

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ কানে এলো। মানুষটা হাসছে। আ’শ্চর্য তো! এখানে হাসির কি আছে? হাসি থামিয়ে ধীরে সুস্থে বলল,
“চিনতে পারছো না বউ?

তোহার ঘুম একছুটে পালিয়ে যায়। দুচোখ মেলে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার। তবে কি এটা নাহিদের নাম্বার? তোহা কড়া গলায় বলল,
“আপনি কেন কল দিয়েছেন? আমার নাম্বার কোথায় পেলেন আপনি?

নাহিদ সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিল না। বরং হেঁয়ালি করে বলল,
“নাম্বার পাওয়া কোনো ব্যাপার হলো নাকি? তুমি যেমন করে আমার স্বপ্নে এসে হানা দিচ্ছো, তেমন করেই মনে মনে এসে নাম্বারটা দিয়ে গেছো।

তোহা বি’রক্তিকর ক’ন্ঠে বলল,
“আপনার এইসব আজগুবি কথা শোনার টাইম নেই আমার কাছে। আমি ঘুমাবো। আপনি রাখুন তো।

তোহা নাহিদকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কলটা কেটে দিল। মোবাইলটা সাই’লেন্ট করে বালিশের পাশে রেখে দিল।
________________

অরিন তোহার দিকে কাঁচুমাচু মুখ করে চেয়ে আছে। তোহা কখন থেকে কাল রাতের কথা বলে যাচ্ছে। নাহিদ কল দিয়ে কি কি বলেছে সেইসব বলছে। অরিন মনে মনে ভাবলো,
“কালকে যদি মোবাইলটা না দিতাম তাহলে তো নাম্বারটা পেত না।

অরিনের ভাবনার মাঝেই তোহা অবাক ক’ন্ঠে বলে উঠল,
“নাম্বারটা কোথায় পেল বল তো? তুই ছাড়া কারো কাছে তো আমার নাম্বার নেই।

অরিন চমকে উঠল। তোহা বুঝে ফেলবে না তো? অরিন আমতা-আমতা করে বলল,
“তো? আমার কাছে আছে বলে আমি দিয়েছি নাকি? তোর মনে হয় আমি ইচ্ছে করে তোর নাম্বার দিয়ে দিব?

তোহা মাথা নাড়ালো। অরিনের কথা পরিপ্রেক্ষিতে বলে উঠল,
“তুই তো দিবি না। তাহলে নাম্বারটা পেল কোথায়?

অরিন মনে মনে স্ব’স্তির শ্বাস ফেলল। যাক তোহা তাহলে সন্দেহ করছে না। অরিন মুখে হাসি ফুটিয়ে মশকরা করে বলল,
“আরে নাহিদ ভাইয়া বলল না ‘তুই মনে মনে উনাকে গিয়ে নাম্বারটা দিয়ে এসেছিস’। সত্যি সত্যি বোধহয় তাই করেছিস।

তোহা অরিনের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকাল। অরিনের কথায় প্রতিবাদ করে বলল,
“তুই ও উনার মতো আজাইরা কথা বলছিস। যত্ত’সব ফালতু কথা।

তোহার কথায় অরিন হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল,
“কিরে? আজকে ভার্সিটিতে আসার পর নাহিদ ভাইয়াকে দেখলাম না যে?

তোহা অরিনের দিকে চোড়াচোখে তাকাল। নাহিদের কথা বলায় কিছুটা বি’রক্ত হলো। তাইতো বি’দ্রুপ করে বলল,
“তোর নাহিদ ভাইয়ার নাম্বার আমার কাছে আছে। তুই ফোন দিয়ে বল ‘নাহিদ ভাইয়া আপনি কোথায়? আপনাকে দেখার জন্য আমি আকুল হয়ে আছি ‘। দেব নাম্বার?

তোহার কথায় অরিন মুখ ভেং’চি দিল। তখনই রিয়া এসে দাঁড়াল তোহার সামনে। তোহা অরিনকে অবাক করে দিয়ে তোহাকে বলল,
“তুমি কি জানো? আমার তোমাকে অনেক ভালোলাগে।

আক’স্মিক রিয়ার এমন কথায় তোহা, অরিন বি’স্মিত হলো। হতবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। অরিন শেষমেষ বলেই ফেলল,
“এইতো দেখছি ভুতের মুখে রাম নাম। থুক্কু রিয়ার মুখে তোহার নাম।

অরিনের কথাটা রিয়ার কানে গেল। তাইতো রিয়া মুচকি হাসল। তোহা অরিন আরেক ধাপ অবাক হলো রিয়াকে হাসতে দেখে। সব সময় গ’ম্ভীর রাগী মুখ করে থাকা মেয়েটাকে হঠাৎ করে হাসতে দেখলে অবাক তো হবেই। তোহা অরিন ও তার ব্যাতিক্রম নয়। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে ধীর গলায় বলল,
“হঠাৎ আমাকে এতো ভালোলাগার কারণ?

রিয়া দুর্বোধ্য হাসল। নিজ মনে বলল,
“ভালোলাগার হবে না? তুমি যে আমার ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা। দুনিয়ার সকলে তার ভালোবাসার মানুষটির পাশে অন্য কাউকে স’হ্য করতে পারে না। অথচ আমাকে দেখো। কতো অনায়াসে তোমায় বরণ করে নিচ্ছি। কারণ তোমার কারনে আমার ভালোবাসার মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। আর তার হাসিতেই আমি খুশি থাকবো।

রিয়া মনে মনে কথাগুলো বললে ও মুখে বলল,
“তোমাকে তো আমার আগে থেকেই ভালোলাগে। এতদিন তো তোমার সাথে নাটক করছিলাম।

রিয়ার কথায় তোহা অবাক হলো। বি’স্মিত নয়নে তাকিয়ে বলল,
“নাটক মানে?

রিয়া আবারো হাসল। তোহাকে শীতল কন্ঠে বলল,
“আমি নাহিদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড না। আমি উনার চাচাতো বোন। তোমার সাথে একটু নাটক করে বলেছিলাম আমি উনাকে পছন্দ করি।

তোহা ভ্রুঁ নাঁচালো। রিয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথা বললো না। রিয়া আবারো বলল,
“আজকাল জানতে পারলাম নাহিদ ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে ফেলেছে। শুধু ভালোবেসেই ক্ষা’ন্ত হননি। ইদানিং তোমায় নাকি স্বপ্নে ও দেখছে। তুমি ভাবতে পারছো? তোমাকে কিন্তু নাহিদ ভাইয়ার সাথে দারুণ মানাবে।

তোহা কেবল মুচকি হাসল। বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। তখনই ক্লাসে স্যার চলে এলো। রিয়া তার জায়গায় চলে গেল।
_____________

ক্লাস ছুটি হতেই তোহা অরিন বেরিয়ে এলো। মাঠে আসতেই নাহিদের দেখা পেল। মুখে হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তোহা বি’রক্তিকর দৃষ্টিতে তাকাতে চাইল। কিন্তু হঠাৎ করে খেয়াল করল বি’রক্তি আসছে না। কি হলো হঠাৎ?

নাহিদ তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তোহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইশ, সকালে বউটার দেখা পাইনি। আমার বুকটা হাহাকার করছিল। তোমাকে দেখার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছিল বউ।

তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কি আ’শ্চর্য! ছেলেটাকে যতই বউ বলতে মানা করে ছেলেটা ততই বউ বলে। তোহা কড়া গলায় বলল,
“আপনার এসব প্রেমিক প্রেমিক কথাবার্তা ছাড়ুন তো। আমার সামনে এসব একদম বলবেন না।

নাহিদ জিভে কামড় দিল। তোহা কথাটা বলে ঘোর অন্যা’য় করেছে এমন ভান করে বলল,
“এইটা তুমি কি বললে বউ? প্রেমিক হয়ে যদি প্রেমিকাকে প্রেমিক প্রেমিক কথাবার্তা না বলি তাহলে আমি কিসের প্রেমিক?

তোহা ভারী গ’ম্ভীর স্বরে বলল,
“আপনার যদি এতোই প্রেমিক প্রেমিক কথাবার্তা বলার ইচ্ছে হয় তাহলে আপনি আপনার প্রেমিকার কাছে গিয়ে বলুন। আমার সামনে একদম বলবেন না।

নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“কিন্তু আমার যে প্রেমিকা হিসেবে তোমাকেই চাই।

তোহা কড়া গলায় বলল,
“আপনি মানুষটাই অস’হ্য।

তোহা কথাটা বলে কয়েক পা এগিয়ে গেল। নাহিদ তখন পেছন থেকে ডেকে উঠল,
“এই তোহা, শোনো।

তোহা দাঁড়িয়ে পড়ল। পেছন ফিরে ভ্রুঁ নাচিয়ে ইশারায় বলল ‘কী’? নাহিদ মুচকি হেসে মোহনীয় স্বরে বলল,
“ভালোবাসি।

তোহা দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। চোখ খুলে বলল,
“ধুর।

সামনে তাকিয়ে আবারো নিজ গন্তব্যে পা বাড়াল।
______________

ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় রাত বারোটা বাজে। গত রাতের মতো আজকে ও তোহার ফোনটা বেজে উঠল। কিন্তু তোহার ঘুম ভাঙল না। মোবাইলটা বাজতে বাজতে কেটে গেল। মিনিট দুয়েক পর আবারো আগের মতোই বাজতে শুরু করলো। এবার তোহার ঘুম কিছুটা হালকা হলো। তখনই মনে হলো কালকে রাতে নাহিদ কল দিয়েছিল। এখনও কি তবে নাহিদই কল দিয়েছে?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে