#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৪
#লেখিকা_লক্ষী_দেব
তোহা ক্লাসে গিয়ে রিয়ার সম্মুখীন হলো। রিয়া তার দিকে চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। তোহা অরিনকে নিয়ে গিয়ে বেঞ্চে বসেছে। তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করছে। ভার্সিটিতে আসার পর নাহিদের দেখা পায়নি সে। দুষ্টু বুদ্ধিরা মাথায় জেঁকে বসেছে।
তোহা অরিনের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
“এখানে না বসে আমার সাথে আয়।
তোহার মুখের দুষ্টু হাসি। চোখ মুখের ভ’ঙ্গি দেখে অরিন সন্দি’হান দৃষ্টিতে তাকাল। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কোথায় যাব? তুই কি করতে চাচ্ছিস?
তোহা অরিনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল। মুচকি হেসে বলল,
“কুল বেবি। এতো অ’স্থির হচ্ছো কেন? ধৈর্য’শীল হতে শিখ। কি করবো তা তো দেখতেই পাবে।
অরিন একই ভ’ঙ্গিতে বসে রইল। কিছুটা জেদ নিয়ে বলে উঠল,
“আমার এতো ধৈর্য নেই বাবা। তুই কি করবি না বলা পর্যন্ত আমি এখান থেকে উঠব না। তোর চোখ, মুখ, হাসি অন্য রকম দেখাচ্ছে। নিশ্চয়ই কোনো কুমত’লব আঁটছিস।
তোহার ঠোঁটের হাসিটা আরেকটু প্রসারিত হলো। অরিনকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলল,
“দেখেছিস একেই বলে বন্ধুত্ব। তুই কি সুন্দর আমার মুখ দেখে সব বুঝে গেছিস।
অরিন নিজেকে তোহার থেকে ছাড়িয়ে নিল। তোহার কথায় অমত করে বলল,
“আমি কোথাও যাচ্ছি না। তোদের তিন দিনের ঝগড়া দেখে আমি ক্লা’ন্ত। এবার এসব বাদ দে।
তোহা অরিনের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল। কোমরে দুহাত রেখে কড়া গলায় বলল,
“কি বলতে চাচ্ছিস তুই? তুই আমার সাথে যাবি না?
অরিন জে’দ ধরল। তোহার কড়া গলার স্বরকে পাত্তা দিল না। নিজের মতে ঠিক থেকে তোহাকে দৃঢ় গলায় বলল,
“উহু! আমি যাব না। তুই গিয়ে ঝগড়া কর যা। আমাকে এর মধ্যে একদম টানবি না।
তোহা দেখল অরিন নিজের কথায় অটুট রইল। তাই শীতল কন্ঠে বলল,
“তুই সত্যি যাবি না? এভাবে আমাকে একা করে দিবি? তুই না গেলে আমি ও তোর সাথে কথা বলবো না। এখন থেকে তোর সাথে আড়ি।
তোহার এমন বাচ্চামি কথায় অরিন হেসে উঠল। তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই বাচ্চাদের মতো কথা বলছিস না? আমরা কি এখনো প্রাইমারি স্কুলের স্টুডেন্ট? যে আড়ি করে কথা বলবো না।
তোহা অরিনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেল না। তাই মুখ ভেং’চি দিয়ে অরিনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। অরিন সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শেষ পর্যন্ত বলল,
“ঠিক আছে চল। তবে আমি কিছু করবো না। যা করার তুই করবি।
তোহা অরিনের দিকে তাকিয়ে অরিনের গাল টেনে দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে বেবি, চল।
অরিন তোহার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“ছি’হ! অ’শ্লীল কথাবার্তা।
তোহা মুখ ভেং’চি দিল। বি’দ্রুপ করে বলল,
“বুঝি বুঝি। আমি বলেছি বলে অ’শ্লীল কথাবার্তা। কিন্তু যখন জামাই বলবে তখন হবে রোমান্টিক কথাবার্তা। হুহ।
অরিন তোহার মাথায় গা’ট্টা মেরে বলল,
“তুই চুপ কর তো। খুব বেশি কথা বলছিস।
তোহা অরিনের কথায় হাসল। দুজনই ক্লাস থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াল। দরজার সামনে যাওয়া মাত্র তোহার মনে পড়ল রিয়ার কথা। চোখ বুলিয়ে নিল ক্লাসে। রিয়া একটা মেয়ের সাথে বসে আছে। তোহা অরিনকে আটকে দিল। চোখের ইশারায় রিয়াকে দেখাল।
অরিন ভ্রুঁ কুঁচকে জানতে চাইল ‘কী? তোহা মুচকি হাসল। অরিনকে নিয়ে রিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রিয়া তোহাকে দেখে অবাক হলো। তোহা রিয়ার কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“তোমার নাহিদকে একটু শা’য়েস্তা করে আসি।
রিয়া তোহার কথাটা বুঝতে পারল না। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“শায়েস্তা করবে মানে? কী করবে তুমি?
তোহা হেঁয়ালি করে হাসল। রিয়ার কথার জবাব দিল না। রিয়া উত্তরের আশায় চেয়ে রইল। তোহা জবাবে বলল,
“সেটা তোমার নাহিদের থেকে জেনে নিও।
তোহা অরিনকে নিয়ে চলে গেল। রিয়া অবাক চোখে চেয়ে রইল তোহার যাওয়ার পথে।
ভার্সিটির মাঠে আসতেই তোহা দেখতে পেল বাইকটিকে। বাইকের আশেপাশে নাহিদের চিহ্ন ও দেখতে পেল না। তোহার চোখ আনন্দে চিকচিক করে উঠল। অরিনের হাত ধরে বাইকটিকে ইশারা করে বলল,
“বাইকটার কাছে চল।
অরিন অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। তোহা চোখের ইশারায় আ’স্বস্ত করল। বাইক থেকে প্রায় দশ হাত দূরে থাকতে অরিনের হাত ছেড়ে দিল। অরিন তাকাতেই বলল,
“তুই এখানে দাঁড়া। ওই নাহিদ যদি আসে তাহলে আমাকে ডাক দিস।
অরিন হত’ভম্ব হয়ে মাথা নাড়ালো। তোহা বাইকের দিকে এগিয়ে গেল। বাইকের কাছাকাছি আসতেই মুখ থেকে সেন্টার ফ্রুট বের করল। বাইকের সিটের মধ্যে লাগিয়ে দিল। অরিন চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইল তোহার দিকে। কিছুটা ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“এই তোহা তুই কি করছিস?
তোহা অরিনের দিকে হাসি মুখে তাকাল। তারপর বলল,
“আরে দেখছিস না? এখানে বসলে মজা বুঝবে।
অরিন আর কথা বাড়ালো না। চুপ করে দেখল। আশেপাশে তাকাল নাহিদ আসছে কি-না দেখতে। তখনই দেখল নাহিদ, রনি, ফাহিম এই দিকে আসছে। তিনজনই কথা বলায় ম’গ্ন। অরিন তড়িৎ গতিতে বলল,
“এই তোহা তাড়াতাড়ি আয়। ওরা এসে পড়ছে।
তোহার বুকটা ধক করে উঠল। এক দৌড়ে অরিনের কাছে চলে এলো। বুকটা ধরফর করছে। দুজন দ্রুত গতিতে হাঁটতে লাগলো। কিছুটা পথ এগিয়ে যেতেই নাহিদের মুখমুখি হলো। তোহা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে নাহিদ সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তোহা কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। নাহিদ বলল,
“কী ব্যাপার বউ। ভয় পেয়েছো বুঝি?
তোহা নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রাখল। দৃঢ় গলায় বলল,
“ভয়? কেন? ভয় পাওয়ার মতো কিছু করেছি নাকি যে ভয় পাব? তাছাড়া আমি আপনাকে মোটেই ভয় পাই না।
নাহিদ আরেকটু এগিয়ে এল। তোহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওহ তাই নাকি?
“জি। এবার আপনি সরে দাঁড়ান তো। ক্লাসের সময় হয়েছে। ক্লাসে যেতে হবে।
নাহিদ সরে দাঁড়ালো। অরিন তোহার হাতটা ধরে এগিয়ে গেল। তার মুখটা একটুখানি হয়ে আছে। ওরা যেতেই রনি বলে উঠল,
“কি অদ্ভু’ত! এতো তাড়াহুড়ো করছে কেন?
নাহিদ হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিল,
“কি জানি? বলল তো ক্লাস আছে। তাই হয়তো তাড়াহুড়ো করে চলে গেল।
ওরা আর কথা বলল না। চুপচাপ এগিয়ে যেতে লাগল। বাইকের কাছে গিয়ে সিটে বসতে গেলেই ফাহিমের চোখ গেল সিটের মধ্যে লাগিয়ে রাখা সেন্টার ফ্রুটের দিকে। নাহিদকে আটকে দিয়ে বলল,
“এই দেখ এখানে কি?
নাহিদের বাইকের দিকে চোখ যেতেই রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। বাইকের এই বাজে অবস্থা কে করল? নাহিদ ফাহিম রনির দিকে তাকাল। সকলের চোখেই বি’স্ময়। রনি বলে উঠল,
“এই কাজটা কে করল?
নাহিদের মুখের সামনে তোহার থতমত খাওয়া মুখটা ভেসে উঠল। তবে কি ওই মেয়েটাই কাজটা করেছে? নাহিদের মুখে রাগ ফুটে উঠল। কিছুটা সময় পর মুখে হাসি ফুটে উঠল। মুখে বলল,
“বউ তোমার সাহস দেখে আমি মু’গ্ধ। আমার সাথে এই কাজ করলে?
নাহিদের কথা শুনে ফাহিম, রনি তার মুখের তাকাল। ফাহিম বলল,
“কি বলছিস এসব?
নাহিদ হেসে বলল,
“আরে বুঝতে পারছিস না? আমার পেয়ারের বউ এই কাজটা করেছে। তাইতো তাড়াহুড়ো করে চলে গেল।
রনি বলল,
“তাইতো ভাবছি এই কাজটা কে করতে পারে? তোর বউ ছাড়া কেউ এই কাজ করেনি। বাহ! তোর বউয়ের তো সেই সাহস।
নাহিদ কোনো জবাব দিল না। ক্ষানিক ক্ষন চুপ থেকে বলল,
“তোরা থাক আমি আসছি। বউকে রাঙাতে হবে। রাঙানোর সরঞ্জাম আনতে হবে।
ফাহিম, রনি নাহিদের কথার মানে কিছুই বুঝল না। ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে রইল নাহিদের যাওয়ার দিকে।
নাহিদ মিনিট দশেক পর ফিরে এলো। চোখ মুখে উচ্ছাস। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ১০ টা বেজে পঁচিশ মিনিট। তারমানে তোহা এখন ক্লাসে। নাহিদ ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
ছুটি হতেই নাহিদ তোহার ক্লাসের সামনে গেল। তোহা বের হতেই তোহার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে অন্য দিকে নিয়ে গেল। তোহা অবাক কন্ঠে বলল,
“আরে কি করছেন? হাত ছাড়ুন আমার।
নাহিদ হাত ছাড়ল না। তোহাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। তোহা হত’ভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। নাহিদ তার হাতে রঙ নিয়ে তোহার গালে লাগিয়ে দিল। তোহা চমকে গেল। নাহিদ তোহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“কি ভেবেছিলে বউ? তুমি একাই চালাক। আর আমরা সবাই বোকা?
তোহা তার হাতটা গালে লাগালো। তারপর হাতটা সামনে এনে দেখল লাল রঙ। তোহা ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“এটা কি করলেন আপনি?
“কেন? তুমি কি করেছো ভুলে গেলে?
তোহা জবাব দিল না। নাহিদ তোহার হাত ধরে নিয়ে গেল। ক্লাসের সামনে যেতেই অরিনের দেখা পেল তোহা। অরিন অবাক দৃষ্টিতে তোহার দিকে তাকিয়ে আছে। তোহার ডান গালটা লাল রঙে রাঙানো।
নাহিদ ভার্সিটির মাঠে গিয়ে তোহার হাতটা ছেড়ে দিল। সকলে তোহার দিকে তাকিয়ে রইল। রাগে তোহার শরীর কাঁপতে লাগলো। অরিন পাশে এসে দাঁড়াতেই অরিনের সাথে বেরিয়ে গেল ভার্সিটি থেকে।
(রিচেক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
#চলবে