অবিবাহিত বউ পর্ব-০৩

0
811

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৩
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তোহার গভীর ঘুমটা হালকা হয়ে গেল মেসেজের টুং টাং আওয়াজে। একটার পর একটা মেসেজ এসেই চলেছে‌। তোহা আড়মোড়া ভে’ঙ্গে উঠে বসল। মেজাজটা প্রচ’ন্ড খারা’প। বি’রক্তি নিয়ে মোবাইলটা হাতে নিল। কে এতো মেসেজ দিচ্ছে?

মোবাইল হাতে নিয়ে তোহার ভ্রুঁ কুঁচকে এলো। মেসেঞ্জারে মেসেজ আসছে। কারো আইডি থেকে না। একটা গ্রুপ থেকে। তোহা গ্রুপে গেল। একটা মেয়ে অরিনকে গ্রুপে এড করেছে। অরিন তোহাকে এড করেছে।

গ্রুপে যাওয়া মাত্রই একটা মেসেজে তোহার চোখ আটকে গেল।‌ একটা মেয়ে তোহার আইডি মেনশন দিয়ে বলছে,
“আরে এই মেয়েটাকেই তো ভার্সিটিতে বউ বলে ডেকেছিল। ভাইয়া বুঝি তোমাকে অনেক ভালোবাসে? সকলের সামনে কেমন করে বউ বলে ডেকে উঠল।‌ একটুও দ্বি’ধা করল না।

তোহা অবাক চোখে চেয়ে রইল। কী অ’দ্ভুত! সে-কি ভেবেছিল ভার্সিটির প্রথম দিনে সবাই তাকে এমন বি’শ্রি ভাবে চিনবে? উহু! ভাবেনি। তাও এমন হলো। কতো আ’শ্চর্যময় জীবন আমাদের। নিত্যনতুন কতো জানা অজানা কাহিনি ঘটে যায়।

মেয়েটার মেসেজের রিপ্লাইয়ে আরেকটা মেয়ে বলল,
“কেমন কথা বলছো তুমি? ভালো না বাসলে কি কেউ এভাবে বউ বলে ডাকে? অবশ্যই ভালোবাসে। তাই তো বউ বলে ডাকার সাহস পেল। নাহলে বউ বলে ডাকতে দুবার ভাবতো।

এখন গ্রুপে কথা বলার মূল বিষয় তোহা আর নাহিদের ঘটনা। একেক জন একেক রকমের কথা বলছে। তোহার সর্বা’ঙ্গ রাগে জ্ব’লছে। সবতাই হয়েছে নাহিদের জন্য। শুধুই নাহিদের জন্য? এতে কি তার কোনো হস্ত’ক্ষেপ নেই? হয়তো বা আছে।

তোহা অরিনের মোবাইলে ফোন লাগালো। রিং হওয়ার কয়েক মুহূর্ত পরই অরিন ফোনটা ধরল। ওপাশ থেকে উ’দ্বিগ্ন কন্ঠে শুধাল,
“হ্যাঁ বল। কী হয়েছে?

তোহা কঠিন গলায় বলে উঠল,
“আমাকে গ্রুপে কেন এড দিয়েছিস? দেখছিস কি রকম কথা বলছে। আমার সারা শরীর রাগে জ্ব’লে উঠছে।

অনলাইনে না থাকার কারণে তোহার কথাটা বুঝতে পারল না অরিন। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“কি বলছিস? গ্রুপে এড দিয়েছি তো কি হয়েছে? এটা আমাদের ভার্সিটির গ্রুপ। একটা মেয়ে আমাকে এড দিয়েছে। আমি তোকে এড দিলাম। এতে রেগে যাওয়ার কি হলো?

তোহা আগের ন্যায় বলল,
“তুই দেখছিস না ওরা কি বলছে? নাকি কানা হয়ে গেছিস? যে যার ইচ্ছে মতো কথা বলে যাচ্ছে। নাহিদ আমায় কতো ভালোবাসে। ভালোবাসে বলেই সাহস করে বউ বলে ডাকতে পেরেছে। হেন তেন কতকিছু বলছে। ওরা জানে নাহিদ আমায় ভালোবাসে? না জেনে শুনে এমন গা জ্বা’লানো কথা বললে রেগে যাব না?

অরিন এবার বুঝতে পারল। লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,
“এখানে ওদের দো’ষ কোথায়? তোর আর নাহিদ ভাইয়া সম্পর্ক কেমন তা কি ওরা জানে? জানেনা তো। ওরা যা দেখেছে, শুনেছে তাই বলছে। আর মানুষের স্বভাবই তিলকে তাল বানানো। এখানে ওদের দো’ষ দিয়ে লাভ নেই।

“ওদের দো’ষ দিব না তো কার দো’ষ দিব? ওরা যখন আমাদের সম্পর্কে কিছু জানে না তাহলে নিজের মন মতো একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছে কেন?

একটানে কথাগুলো বলে নিঃশ্বাস নিল তোহা। পর’ক্ষনেই কিছু একটা মনে পড়ল। অরিনকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই উ’দ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠল,
“এই এক মিনিট, এক মিনিট। একটু আগে কি বললি তুই? নাহিদ ভাইয়া? ওই ছেলেটাকে তুই ভাইয়া বলছিস? ছেলেটা তোর মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শোনার যোগ্য?

অরিন জানে তোহা রেগে আছে। হয়তো তার কথাটা শুনে আরো রেগে যাবে। তাও মশকরা করে বলল,
“আমার মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শোনার যোগ্য না। তাহলে কি তোর বর হিসেবে দুলাভাই ডাকবো?

তোহা অরিনের কথাটা শুনে কয়েক সেকেন্ড কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। কয়েক সেকেন্ড নি’শ্চুপ রইল। অরিন? অরিনও তাকে নিয়ে মজা করছে? তোহা যেই চেঁচিয়ে বলল,
“অরিন তুই….

তোহার কথাটা শেষ হওয়ার আগেই কলটা কেটে গেল। না। অরিন কল কাটেনি। ফোনের ব্যালেন্স শেষ বিধায় নিজে নিজেই কল কেটে গেল। শেষ পর্যন্ত ফোনও তার সাথে বেই’মানি করছে? তোহা ফোনটা বিছানায় ছুড়ে বলে উঠল,
“ধ্যা’ৎ।
__________

তোহা অরিন ভার্সিটিতে এসেছে। গেইট পেরিয়েই তোহার দৃষ্টি এদিক-সেদিক ঘুরতে লাগলো। তার উদ্দেশ্য নাহিদকে খোঁজা। গতকালকে যেখান থেকে নাহিদ ডাক দিয়েছিল তোহা সেই দিকে তাকাল। হ্যাঁ। গাছের নিচে একটা বাইক আছে। সম্ভবত এটা নাহিদের বাইক। কিন্তু বাইকের আশেপাশে কোথাও নাহিদের দেখা পেল না। অরিন তোহাকে বলল,
“এখানে তো কোথাও দেখছি না। চল একবার কেন্টিনে আছে কি-না দেখে আসি।

তোহা নীরবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। অরিনের পিছু পিছু যেতে লাগল কেন্টিনে। কেন্টিনের কাছাকাছি আসতেই তোহা দেখতে পেল নাহিদকে। শুধু নাহিদই না। নাহিদের পাশে রনি ও ফাহিম আছে। তার চেয়ে বড় কথা কালকের সেই মেয়েটি আছে। তোহা দাঁড়াল না। দ্রুত পায়ে হেঁটে যেতে লাগল। কয়েক পা হাঁটার পর লক্ষ্য করল মেয়েটি সেখানে নেই। তোহাকে দেখা মাত্র সেখান থেকে চলে গেল।

তোহা সেই দিকে পাত্তা দিল না। সোজা গিয়ে দাঁড়াল নাহিদের মুখমুখি। তোহার পাশে অরিন দাঁড়াল। তোহাকে দেখা মাত্রই নাহিদ মুখ খুলতে চাইল। কিন্তু তোহা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“মিস্টার নাহিদ। আপনি কি ভাবেন নিজেকে? পুরো ভার্সিটির সবাই আমাকে আপনার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে চিনে? কেন? আমাকে বউ বলে ডাক না দিলে বুঝি আপনার পেটের ভাত হজম হতো না?

তোহার কথা শুনে নাহিদ নির্বি’কার ভ’ঙ্গিতে বসে রইল। টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেল। নাহিদের এমন ভাব ভ’ঙ্গি তোহাকে আরেকটু রাগিয়ে দিল। তোহা চাইছে নাহিদ যেন ঝগড়া করে। তাহলে আরো কয়েকটা কথা বলে নিজের রাগটা মেটানো যেত। কিন্তু না। নাহিদ তা করল না। উল্টো মুচকি হেসে বলল,
“মিসেস নাহিদ তো দেখছি সকাল সকাল রেগেমেগে আগুন হয়ে আছে। ব্যাপার কি?

নাহিদের ‘মিসেস নাহিদ’ বলা কথাটায় জ্ব’লে উঠল। রাগে শরীর কাঁপতে লাগলো। তোহা চোখ মুখ শ’ক্ত করে বলল,
“আপনি তো দিন দিন লিমিট ক্র’স করছেন। এতো সাহস কোথায় পান?

তোহার কথায় নাহিদ হু হা করে হেসে উঠল। ফাহিম আর রনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“দেখেছিস বন্ধু? আমার সাহস নিয়ে কথা বলছে।

নাহিদ আরেকবার হেসে তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমার সাহসের কী দেখেছো তুমি? উল্টো আমি তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। নাহিদের চোখে চোখ রেখে ঝগড়া করছো। একটু ও ভয় ভর করছো না।

তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। ভ্রুঁ কুঁচকে রেখেই বলল,
“আপনাকে ভয় পাব? কেন? আপনি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আপনাকে ভয় পাব? আমাকে খেয়ে তো ফেলবেন না।

নাহিদ খানিকটা এগিয়ে এলো। তোহার দিকে তাকিয়ে নিচু স্ব’রে বলল,
“কে বলতে পারে? বউ তো খেয়ে ও ফেলতে পারি। বিশ্বাস নেই।

নাহিদ কথাটা বলে চোখ টিপল। রনি নাহিদের মাথায় গা’ট্টা মেরে বলল,
“শা’লা দিন দিন লাগামহীন কথা বলছিস। এবার মুখে লাগাম টান।

নাহিদ রনির দিকে তাকাল। ঠোঁট উল্টে বলল,
“কি বলছিস মামা। চোখের সামনে ফুটফুটে সুন্দর একটা বউ থাকতে মুখে লাগাম টানবো? কখনোই না।তোদের ল’জ্জা লাগলে তোরা কানে তুলা গুঁজে বসে থাক। আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই।

নাহিদের সাথে তাল মিলিয়ে ফাহিম বলে উঠল,
“না বন্ধু। আমার কোনো ল’জ্জা করছে না। তুই বলতে থাক। আমি তোর পাশে আছি। কানে তুলা গুঁজে বসে থাকার কোন প্রশ্নই উঠে না।

অরিন নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“তুই কাদের সাথে কথা বলছিস তোহা? একেক জন বদের হা’ড্ডি। কিসব বলছে। লাজ-ল’জ্জা কিচ্ছু নেই।

রনি সাথে সাথে বলে উঠল,
“মেয়েরা কথায় কথায় ল’জ্জা পায়। আমরা কেন ল’জ্জা পাব? আমরা কি মেয়ে নাকি?

তোহা ওদের তিনজনের দিকে তাকাল। শীতল কন্ঠে বলল,
“আপনারা সবাই একই রকম হলেন কি করে? কি অ’দ্ভুত! সকলে কেমন নির্ল’জ্জের মতো কথা বলছেন। একটু তো ল’জ্জা থাকা উচিত।

তোহা আর সেখানে দাঁড়াল না। ওদের সাথে কথা বলাই ভুল। গটগট পায়ে চলে গেল ক্লাসের উদ্দেশ্যে।

ক্লাসে গিয়ে বসতেই তোহার সামনে কালকের মেয়েটা এলো। চোখ মুখে কালকের মতোই রাগ স্প’ষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তোহা মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা বলে উঠল,
“তুমি নাহিদের কাছে গিয়েছিলে কেন? কি দরকার নাহিদকে?

তোহা বিদ্রু’প করে বলল,
“কেন? নাহিদের দরকারটা কি তুমি মিটিয়ে দিবে? নাকি তোমার নাহিদের সাথে কথা বলা বারণ?

“অবশ্যই। তুমি কেন নাহিদের সাথে কথা বলবে? যেহেতু নাহিদকে পছন্দ করো না। সেহেতু নাহিদের সাথে কথা বলা দূরের কথা, নাহিদের থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।

“তাহলে তুমি একটা কাজ করো। তোমার..

কথাটা বলতে গিয়ে তোহা থেমে গেল। আচমকা বলে উঠল,
“তোমার নাম কি?

মেয়েটা থতমত খেল। পর’ক্ষনেই বলে উঠল,
“রিয়া।

তোহা মুচকি হেসে বলল,
“তুমি বরং নাহিদের গায়ে আঠা দিয়ে একটা কাগজ আটকে দাও। যেখানে লেখা থাকবে ‘রিয়া ছাড়া অন্য কোন মেয়ের নাহিদের সাথে কথা বলা বারণ ‘। তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। তোমার নাহিদের সাথে আর কথা বলতাম না।

মেয়েটা কড়া চোখে তাকাল। তোহা সেদিকে পাত্তা দিল না। নিজের মতো অরিনের সাথে কথা বলতে লাগলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে