অবাধ্য অনুভূতি পর্ব-০৬

0
2434

@অবাধ্য অনুভূতি
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_আমিশা_নূর

“সমুদ্র,আমি তোমাকে সব সত্যি বলার পর হয়তো তুমি আমাকে ঠকবাজ বলতে পারো।বাট সত্যিটা আমি আর লুকিয়ে রাখতে পারবো না।”
“কী সত্যি?আর তুমি যে মিথ্যা বলবে না তার কী গ্যারান্টি আছে?”
“সবটা শুনার পর তুমি নিজেই ডিসাইড করে নিও কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।”

সমুদ্র শীতল দৃষ্টিতে সূচনার দিকে তাকালো।কী এমন সত্যি বলবে সূচনা?

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কিছুটা সময় নিয়ে সূচনা বললো,”তোমার সাথে যেদিন দেখা হয় সেদিনই তোমাকে আমার ভালো লাগে।তাই আমি রোজ রোজ তোমার সাথে ঝগড়া করার জন্য উঠে পড়ে লাগতাম।আমার বান্ধবীদের দ্বারা তোমার নাম্বার খোঁজে পাই আমি।তারপর একদিন তোমাকে কল করতে গিয়ে দেখি নাম্বারটা আগে থেকে আমার মোবাইলে আছে।আর তোমার নাম্বার থেকে কলও এসেছে।সেই কলের ডেইট দেখে বুঝতে পারি ভূমিকা’র সাথে কথা হয়েছে তোমার।তোমার ব্যাপারে সবটা ভূমিকা’কে বলার পর ভূমিকা আমাকে তোমার নাম্বার কীভাবে পেলো তা বলে।তখন আমার কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়।

এরপর তোমাকে কল দিলাম।আর তুমি আমাকে ভূমিকা মনে করেই কথা বললে।তোমাকে ছন্দ,চিরকুট যা পাঠাতাম সবটা ভূমি’র লেখা ছিলো।আমি কোনোদিনও এসব লিখিনি।কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি ছন্দের মাধ্যমে আমাকে চাও।তাই বাধ্য হয়ে অন্যের জিনিস চুরি করতে হয়।কিন্তু আমি তখন জানতাম না যে ভূমিকাও তোমাকে ভালোবাসে।”

সূচনা চোখ ভর্তি জল নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো।এখনো মনে হয় সমুদ্র ঘোরের মধ্যে আছে।সমুদ্রকে সামলানোর জন্য সূচনা কিছুটা সময় দিলো।তারপর হাতে থাকা কালো রংয়ের ডায়েরি সমুদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“এটা ভূমির তৃতীয় ডায়েরি।যেটাতে তোমাকে নিয়ে লিখা ওর অবাধ্য অনুভূতি আছে।এক দিন না একদিন আমার সত্যিটা তুমি জানতে।তখন যদি আমরা ম্যারিডও হতাম তুমি কখনো আমাকে মানতে না।সমুদ্র তুমি আমাকে না আমার পাঠানোর কাগজে লিখা চিরকুট আর ভূমি’র কন্ঠস্বরকে ভালোবেসেছো।ওর মতো নরম মনের মেয়েকে তুমি ভালোবাসতে চাইতে তাই বারবার আমাকে নরম হতে বলতে।একবার তুমি ভূমিকা’কে ভালো”
ভাবে চিনো,দেখবে তুমি ও কে আবারো ভালোবেসে ফেলেছো।”

এসব শুনে সমুদ্র নির্বাক হয়ে গেলো।এই মুহুর্তে তার কী বলা উচিৎ সেটায় ভূলে গেলো।তবে সে একটা প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই পেলো।তা হলো সূচনার সাথে প্রেমের সম্পর্কে থাকা অবস্থাতে তার নিজের মধ্যে একরকম অসস্তি হতো,মনে হতো সূচনা তার জন্য রাইট পার্সন নয়,সমুদ্র তাকে ভালোবাসে না।কিন্তু যখন তার পাঠানো চিরকুট পড়তো মুহুর্তে সব প্রশ্ন ধোঁয়ায় মিলিয়ে যেতো।আজ সমুদ্র সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে।

সূচনা আবারো বললো,”ভূমি দেখতে আমার মতো হলেও ও আমার মতো সবার সাথে মিশতে পারে না।বকবক করে না,ওর লাইফে একমাত্র আমার সাথেই ও ফাজলামো করে,মারামারি করে,যত ইচ্ছে কথা বলে,আর আমিই ওর অনুভূতি বুঝিনি।তুমি প্লিজ ও কে কষ্ট দিও না।”


বৌভাতে অনুষ্ঠান’টা ভালোভাবেই মিটে গেলো।সময় গড়াতে লাগলো।রাত পেরিয়ে সূর্যি মামা’র দেখা মিললো।তাদের বিয়ের দশ’টা দিন পার হয়ে গেলো।কিন্তু সমুদ্র এখনো ভূমিকা’র সাথে নরমাল হতে পারেনি।আর না ভূমিকা চেষ্টা করেছে।সে তো সমুদ্রকে বাঘের মতো ভয় পাই।তবে বাড়ির বাকি সবার সাথে ভূমিকা’র সম্পর্ক বেশ জমে গেছে।সবাই তাকে পছন্দ করে।

আজ সকাল থেকে ভূমিকা’র মনটা বেশ ফুরফুরে।ভূমিকা আজ মনে মনে ঠিক করে রেখেছে তার শ্বশুরকে জব’র কথা বলবে।যার জন্য সে সাহায্য চাইতে এসেছে রাফিয়া,তিহান,মিহু আর অধরার কাছে।তখন সেই চারজন নাস্তার টেবিলে বসে ছিলো।তাদের অপরপাশে প্রেম বিজ্ঞদের মতো চেয়ে আছে।ভূমিকা প্রেমের পাশের চেয়ারে বসে চার মূর্তির উদ্দেশ্য বললো,

“আমাকে একটা হেল্প করতে পারবে তোমরা?”
“ইন্না-লিল্লাহ,ভাবি কী হেল্প?”(তিহান)
“আসলে তিহান ভাইয়া আমি চাইছিলাম যে ফ্যাশন ডিজাইনিং এর কাজ করতে।পড়াশোনা টাও আমি ডিজাইনিং নিয়ে পড়ি তাই আর কী…”
“যদি বউ সাজো গো,,তবে..” (মিহু)
“মিহু চুপ কর।বড় ভাবি ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলছে।” (অধরা)
“ইন্না-লিল্লাহ!ভাবি ফ্যাশন ডিজাইনিং?”[তিহান]
“হুম।”
“কিন্তু বাবা’-মা’রা কী রাজি হবে?” (রাফিয়া)
“ভাবার বিষয় তো সেটা।এমনি তে এখন আমাদের বিজনেস প্ল্যানিং-এ একজনের দরকার।আর বড় বাবা ভাবছিলো নতুন জন নিয়োগ দেওয়ার জন্য।”
“নিয়োগের কী দরকার বড় ভাবি থাকলে?” (অধরা)
“হ্যাঁ।” (মিহু)
“বড় ভাবি আছে সেটা না।বাড়ির বউকে বড়রা কাজ করতে দিবে কি’না সেটা কথা।” (রাফিয়া)

সবাই কিছুক্ষণ নখ কামড়িয়ে ভাবতে লাগলো কী করা যায়?তখন ভূমিকা বললো,”সবাই যখন নাস্তা করতে আসবে তখন তিহান ভাইয়া বিজনেসের টপিকটা তুলবেন,আর তখন আপনি বলবেন যে প্ল্যানিং-এর জন্য যে মানুষকে দরকার সেটা আমাকে নিতে।ব্যাস!তখন আমিও বলবো।”
“ইন্না-লিল্লাহ!ভাবি আমার মরার শখ জাগেনি।এখনো মাত্র একটা বাচ্চা জন্ম হলো।আমার তো ক্রিকেট টিম বানানোর ইচ্ছে আছে।আমার আশায় জল ঢেলে দিয়েন না ভাবি।”

তিহানের কথা শুনে রাফিয়া তার হাতে চিমটি দিলো।ব্যাথা পেয়ে তিহান বললো,”ভূল কী বললাম?বড় চাচা আর ভাইয়ের সামনে আমার মুখ থেকে টু শব্দও বের হয় না।আর আমি কি’না……বাদ দাও ভাবি।”
“তাহলে আর কী?বড়ভাবি তুমি বলবে জবে কথা আর আমরা সবাই সাপোর্ট করবো।ওকে?” (অধরা)

ভূমিকা মুখ গোমড়া করে বললো,”ওকে।”


“বাবা,ও আমি বলছিলাম যে…”
“কী বউমা?”
“ও বলছিলাম যে..”
“বলো..”

ভূমিকা তার দেবর ননদের দিকে তাকালো।সবাই ইশারায় বলতে বলছে।ভূমিকা কিছুটা সময় নিয়ে বললো,”বাবা আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে চাকরি করতে চাই।”

এক দমে চোখ বন্ধ করে কথাটি বলে ভূমিকা চোখ খুললো।বাড়ির সব বড়রা তার দিকে রসগোল্লা’র সাইজের চোখ করে তাকিয়ে আছে।এদের এমন চাহনি দেখে ভূমিকা ঢোক গিললো।সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেও সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভূমিকা আমতা আমতা করে বললো,”সস..সরি।”
“সরি কেনো বলছো বউমা?ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে তুমি পড়াশোনা করেছো।তাহলে তা নিয়ে চাকরি করতে আপত্তি কিসের?আমি তো ভাবছিলাম তোমাকে আপনাদের বিজনেসে এড করতে।কারণ তোমার শ্বাশুড়ি মায়েরা তো ঘরের কাজ করতে দিবে না তাহলে বাইরের কাজ’টা নাহয় করো।কী বলিস মাহফুজ?”
“হ্যা বড় ভাই।বড় বউমা’কে দিয়ে প্রথম সামান্য কাজ বুঝিয়ে দিলাম তা যদি ঠিক মতো করে তাহলে একদম আমাদের সাথে কাজ করবে।”

সমুদ্রের বাবা এবং মেজো চাচা’র কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেলো।ভূমিকা নিজেও কিছু বলতে পারছে না।সে কোনোদিন ভাবেনি যে তার শ্বশুর এতো জলদি রাজি হবে।

ভূমিকা খুশি হয়ে বললো,”তাহলে বাবা কখন জয়েন করবো?”
“আজ তো ২৫তারিখ।বৌভাতের পরও তোমাকে সমুদ্রের মা তোমার বাড়িতে যেতে দিলো না।আজ তোমার বিকেলের দিকে তুমি আর সমুদ্র যাও।কিছুদিন ঘুরে আসো।তারপর এসে নাহয় জয়েন দিও।কারণ আমাদের নিয়মে ছুটি মিলে না।”

ভূমিকা আকাশ ছোঁয়া পরিমাণ খুশি হলো।কতোদিন পর তার মা-বোনকে দেখবে!কিন্তু ভূমিকা’র আনন্দটা মনে হয় সমুদ্রের সহ্য হলো না।সে বিপত্তি ঘটিয়ে বললো,”আমার যাওয়ার কী দরকার?আমি অফিস গেলাম।তিহান তুই ও কে নামিয়ে দিস।”
“ইন্না-লিল্লাহ!আমি ক্যান নামিয়ে দিবো?তোমার বউ তুমি দেখো।”

তিহানের দিকে সমুদ্র অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো।সব কথায় খালি গাড়ত্যাড়ামি করে তিহান।আজ যদি খাবার টেবিলে বড়রা না থাকতো তাহলে নিশ্চিত তিহান মার খেতো।

কিন্তু উল্টা সমুদ্রকে ধমক দিয়ে নয়ন হক বললেন,”তুমি ভূমিকা’র সাথে যাচ্ছো সেটা ফাইনাল।নো মোর ওয়ার্ড।”

এবারে রাগান্বিত দৃষ্টিতে ভূমিকার দিকে তাকালো।কেনো যেনো এই দৃষ্টি’র অর্থ ভূমিকা’র মনে হলো এমনটা,”তোমাকে একা পায়,শায়েস্তা করবো।”ভূমিকা ঢুক গিললো।এতে তার কী দোষ আছে?সবটা তো বাবা করলো।


“কতো কাপড় নিচ্ছো?কদিনের জন্য থাকবে?”

সমুদ্রের কথা শুনে ভূমিকা হাবলার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।সে মাত্র তিনটা কাপড় নিয়েছে।আর ওমনি বেশি হয়ে গেলো?ভূমিকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।বিরক্ত হয়ে সমুদ্র আবারো বললো,”দাঁড়িয়ে আছো কেনো?এই কাপড় গুলাও নাও।আমার গুলাও নাও।”

সমুদ্রের কথা ভূমিকার বেশ একটা সুবিধা’র মনে হলো না।তাকে বেশ অসস্তিকর লাগছে।সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সমুদ্রকে খেয়াল করে ভূমিকা’ বললো,”কিছু বলবেন?”

ভূমিকা’র কথায় সমুদ্র হাত কচলানো থামায়ে বললো,”ও,তুমি ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর কাজ করতে চাও,এইটা আমাকে আগে বলোনি কেনো?”

এই প্রথম সমুদ্র রাগিভাব ছেড়ে শান্ত স্বরে কথা বলছে।তাই ভূমিকা ভয় না পেয়ে বললো,”আপনার সাথে কোনোদিন আমার সেভাবে কথা হয়নি তাই আর কী বলার সুযোগ হয়নি।”

কথাটা বলে ভূমিকা চোখ বন্ধ করে নিলো কিছু বকোনি শুনার জন্য।কিন্তু অনেকক্ষণ হওয়ার পরও কোনো শব্দ তার কানে আসলো না।ভূমিকা চোখ খুলে দেখলো সমুদ্র নেই।ভূমিকা ফুস করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।মনে মনে বললো,”যাক এই লাল জল্লাদ থেকে বাঁচা গেলো।”


“ডেম ইট,ঠিক টাইমে তেল ফুরাতে হলো।রহিম চাচা’কে বলেছিলাম তেল ভরে দিতে।ধ্যাৎ,”

রেগে গিয়ে সমুদ্র গাড়ির টায়ারে লাথি দিলো।রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।আর গাড়ির পাশে গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ভূমিকা ভয়ার্ত হয়ে আছে।হঠাৎ সমুদ্রের দৃষ্টি ভূমিকা’র দিকে গেলে সে তার অজান্তেই বলে বসলো,”তুমি সবসময় এভাবে ভয়ার্ত হয়ে থাকো কেনো?আমি বাঘ না ভাল্লুক? ”

সমুদ্রের কথায় ভূমিকা ছোট ছোট চোখ করে মনে মনে বললো,”বাঘ,ভাল্লুকও আপনার চেয়ে ভালো।”

“এখন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি কিছু বলবে?”
“কি বলবো?”
“তোমাদের বাড়ি পৌঁছবো কী করে এখন?রহিম চাচা মনে হয় গাড়িতে তেল ভরতে ভূলে গেছে।”
“ওও।”
“কী ওও?”

ভূমিকা ছোট করে বললো,”কিছু না।”

সমুদ্র মোবাইল ফোন বের করে কল করতে যাবে তখন একটা কালো রংয়ের গাড়ি এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।গাড়ি থেকে বের হলো একজন সুদর্শন পুরুষ।তাকে দেখে ভূমিকা বললো,”সুক্ষ্ম,তুমি?”

[চলবে]

[ভূলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে