অবাধ্য অনুভূতি পর্ব-০৩ | Bangla romantic love story

0
3904

অবাধ্য অনুভূতি
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_আমিশা_নূর

“রাফিয়া না মানে ছোট ভাবি আপনি খাবার টেবিলে মায়ের কথা শুনে হাসছিলেন কেনো?”
“আরে বড় ভাবি।বসো..”

রাফিয়া সোফাতে ভূমিকা’কে বসার জায়গা করে দিলো।সোফায় আরামে বসে রাফিয়া টিভি দেখছিলো।ভূমিকা তার কাছে সঙ্গের জন্য বসলো।ভূমিকা বসতেই রাফিয়া বললো,
“আমাকে রাফিয়া বলো ডাকো আর আপনি নয় তুমি।আমি তোমার ছোট।”
“ওহ”

কিছুটা সময় নিয়ে রাফিয়া বললো,”আমি আর তিহান পালিয়ে বিয়ে করি।দু’বছরের প্রেম ছিলো আমাদের।তিহানের বাড়ি থেকে সবাই মানলেও আমার বাড়িতে কেউ সম্পর্কটা মানছিলো না।তার কারণ আমাদের পরিবারে প্রেম করে বিয়ে করা বারণ।কিন্তু পরে ‘প্রেম’ জন্ম হওয়ার পর আমার বাড়িতেও সবাই মেনে নেয়।”
“প্রেম?”
“তুমি এখনো প্রেম’কে দেখোনি।ওর বয়স তিন বছর।প্রেম অনেক দুষ্টুমি করে।কাল রাতে জেদ ধরলো মামা’র কাছে যাবে।তাই রাতেই আমার ভাই মাহির এসে নিয়ে গেলো।”
“ওহ।”
“তো আমি যখন এ বাড়িতে প্রথম আসি তখন বড় চাচি আর মা কয়েকটা কটু কথা বলতো।যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠতে ধেরি হলে বলতো,কাজ করতে ধেরি হলে বলতো।কিন্তু আমাকে কোনো কাজ করতে দিতো না।”
“কেনো?”
“উনাদের স্বভাবটা এমন।তবে মনের দিক দিয়ে যথেষ্ট ভালো।কেউ যদি আমাদের নিয়ে খারাপ কথা বলে না?তাহলে তাদের উচিত কথা বলে আসে।তবে উনাদের বউমা হতে হয় শান্ত।চঞ্চল মেয়েদের তেমন পছন্দ করে না।”
“ওহ।”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রাফিয়া দৃষ্টি টিভির দিকে আছে।ভূমিকা মাথায় কিছু একটা খেললো।সে রাফিয়া’কে উদ্দেশ্য করে বললো,”ছোট চাচি কেমন?”
“ছোট চাচি দিল্লির মানুষ।তোমার সাথে এখনো উনার কথা হয়নি?”
“একটু হলো।”
“সন্ধ্যা সাতটা বাজলেই দেখবে বাড়ি’র কর্তা ছাড়া সবাই টিভির সামনে উপস্থিত।”
“ওহ।ছোট চাচিও?”
“সবাই।আর ছোট চাচির কথা অর্ধেক হিন্দি অর্ধেক বাংলা।আর উনার মেয়ে যে আছে মিহু ওর অভ্যাস কথায় কথায় গান করা।গানপ্রেমি!”
“আর অধরা?”
“অধরা ভাই প্রেমি।ওর কাছে ওর পরিবার আর ভাই সবকিছু।অন্যদিকে আমি,অধরা আর মিহু খুব ভালো ফ্রেন্ড।”
“কাল বলছিলে সমুদ্রে’র বড় বোন আছে।”
“ও তাঞ্জু আপু?উনি এবাড়ির সবার বড়।কাল তোমার রাতে উনার শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে।”
“ওহ।”
“আচ্ছা তুমি এমন কম কথা বলো?”
“হু।”
“এ বাড়ি সম্পর্কে আর কিছু জানো?”
“নাহ।”
“যাহ!কোনোকিছু না জেনে বিয়ে করলে?আমি বলছি।আমার তিন শ্বশুর মিলে বিজনেস করে।উনাদের বিজনেসে হেল্প করেন বড় ভাইয়া আর তিহান।”
“ওহ।কিসের বিজনেস?”
“ফ্যাশন ডিজাইনিং এর।সাথে ফ্যাক্টেরির দেখাশুনা।”
“ওহ।”

ফ্যাশন শব্দটা শুনে ভূমিকা’র ইচ্ছে হলো জব করার।ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতি তার ঝোকটাও বেশি তাই পড়াশোনাটাও ফ্যাশন নিয়ে পড়ে।তাই ভূমিকা মনে মনে ঠিক করলো আর যাই করুক ফ্যাশন ডিজাইন সে করবেই।

রাফিয়া আর ভূমিকা টিভি দেখছিলো।অবশ্য টিভি উপভোগ করছিলো রাফিয়া।খুব মনোযোগ দিয়ে “পোড়ামন ২” মুভিটা দেখছে।রাফিয়া’র মনোযোগ দেখে ভূমিকা বুঝলো মুভি শেষ হলে সে কান্না করবেই।তখন তাদের দু’জনের মাঝে এসে বসলো মিহু আর অধরা।সোফায় বসতে বসতে মিহু গান ধরলো,”ও হ্যা শ্যাম তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিবোও…”

মিহু গানে বিপত্তি ঘটিয়ে রাফিয়া বললো,”উফ!ফাটা বাঁশের মতো প্যা প্যা করিস না তো।মুভি দেখতে দেয়।”

রাফিয়া’র কথায় মিহু দ্বিগুন রেগে বললো,”তুমি না বাড়ির বউ?টিভি’র ঘরে কী করো?রান্না করো যাও।”

মিহুর কথায় রাফিয়া ভ্যাংচি কাটলো।তখন অধরা বললো,”প্রেম কোথায়?”

অধরা কথায় টিভির দিকে তাকিয়ে রাফিয়া বললো,”ভাই এসে রাতে নিয়ে গেছো।একটু আগে ফোন করেছিলাম বললো নিয়ে আসছে।”

রাফিয়া’র কথায় অতিরিক্ত উত্তেজনা দেখিয়ে মিহু বললো,”দিল লাগালিয়া মে তেরে ভাইকো পেয়ার কার কে..উসকো পেয়ার কার..কে”
“চুপ কর।আমার ভাই তোর সাথে প্রেম করবে না।”

মিহু আত্ম বিশ্বাস নিয়ে বললো,”করবে।”

তাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে অধরা বললো,”স্যাড মুভি উইথ চিপস বা পপকর্ন!ইশ জমে যেতো।আচ্ছা,পপকর্ন আছে মনে হয়।”

অধরা’র কথায় রাফিয়া আলসেমি’তে বললো,”ছিলো মনে হয়।রান্না ঘরের তাকে থাকবে।”
“মিহু যা না নিয়ে আয়।”

অধরার কথায় মিহু নড়চড় হলো না।তখন ভূমিকা বললো,”আমি নিয়ে আসি।”

।ভূমিকা রান্না ঘরে এসে দেখে ছোট চাচি আর মেজ চাচি কিছু একটা রান্না করছে।ভূমিকা বড়দের মাঝে আড়ষ্ট ভাব অনুভব করলো।সে বড়দের যথেষ্ট সম্মান করে।তাই তাদের মাঝে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে চায়।তখন ভূমিকা’কে দেখতে পেয়ে ছোট চাচি বললেন,”আরে বাহু,আসো..কুছ জারুরি হ্যা কেয়া?”

ছোট চাচি’র হিন্দি কথাটা ভূমিকা বুঝলো।আজকাল হিন্দি মুভি দেখে হিন্দি কথা বুঝা যায়।ভূমিকা মাথা নিচু করে বললো,”ও পপকর্ন খাবে বললো অধরা।তাই..”
“সুবর্ণা, ও কে পপকর্ন দে তো।”

ভূমিকা পেছন ফিরলো।কোমরে শাড়ি গুঁজে দিয়ে সুর্বণা নামের মেয়েটি তরকারি কাটছিলো।মেয়েটির পোশাক-আশাক দেখে ভূমিকা বুঝলো এবাড়ির কাজের মেয়ে।তিন তলা সমুদ্রের বাড়ি দেখে ভূমিকা’র মনে প্রশ্ন এসেছিলো এবাড়িতে কোনো চাকর আছে কি’না।আর এখন সুবর্ণা’কে পেয়ে গেলো।নামটা বেশ চমৎকার!

মেয়েটি মাথা উঁচু করতে ভূমিকা দৃষ্টি আটকে গেলো সূবর্ণার সিঁথি’তে থাকা সিঁদুরে।লম্বা করে চুলের অর্ধেক সিঁথিতে সিঁদুর।ভূমিকা বুঝতে পারলো মেয়েটি হিন্দু।একটা মুসলিম পরিবারে হিন্দু মেয়েকে কাজ করতে দেখে ভূমিকা অবাক হলো।

অথচ মেয়েটার মুখে আছে তৃপ্তি!অর্থাৎ একটা মুসলিম পরিবারে কাজ করতে তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।যদি সে এ কাজে খুশি না হতো তাহলে মুখে থাকতো বিরক্তি’র সাথে কষ্টের চাপ।

“বড় বৌদি,নেও।”

সুবর্ণার কথায় ভূমিকা’র হুস এলো।তাকিয়ে দেখলো একটা বড় বাটিতে পপকর্ন নিয়ে মুখে হাসির রেখা ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ভূমিকা বিপরীতে হেসে বাটি’টা নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হতে গেলে মেজ চাচি বললেন,”তোমাকে আমাদের মেয়েরা পাঠিয়েছে পপকর্নের জন্য। তাই না?”
“না না চাচি..”
“বুঝেছি আমি।তবে ওরা অন্যের উপর নির্ভরশীল।যেটা ওদের এ বয়সে প্রভাব একটু বেশি ফেলে।তাই ওদের কাজটা ওদের করতে দিয়ো।”
“আচ্ছা।”

ভূমিকা আরেক পা এগোতে ছোট চাচি বললেন,”সমুদ্র কোথায়?”

এ প্রশ্নের উত্তর ভূমিকা জানেনা।তাই সে মাথা নিচু করলো।তখন সুবর্ণা বললো,”সমুদ্রবাবু’কে বাইরে যাইতে দেহছি।”

ভূমিকা ভিতরে ভিতরে সস্তি পেলো।যাক এবারের মতো বাঁচা গেলো!

ছোট চাচি আবার বললেন,”সমুদ্র না অফিসের দায়িত্ব এক হাফ্তে কে লিয়ে অন্যের উপর দিলো।পার?”
“কে জানে ছোট।কোথায়ও বেরোলো হয়তো।”

ভূমিকা হালকা পায়ে হেটে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ো এলো।সত্যি তো,সমুদ্র কোথায় গেলো সকাল বেলা?সূচনা’র সাথে দেখা করতে গেলো না তো?


“সূচি,কেমন আছিস?”
“ভালো ভূমি।তুই?”
“হুম ভালো।মা কোথায়?”
“মেডিসিন খেয়ে ঘুমাতে গেলো।”
“ওহ।”
“হুর।এতো গম্ভীর ভাবে কথা বলছিস ক্যান?বিয়ে গেছে দেখে?”

সূচনার কথায় ভূমিকা কিছু বললো না।ভূমিকা মূলত ফোন করেছে সমুদ্রের খোঁজ নিতে।কিন্তু এখন নিজের মাঝে অসস্তি হচ্ছে নিজের স্বামীর কথা অন্য কারো থেকে জিজ্ঞেস করতে।ভূমিকা এপাশে চুপচাপই রইলো।তখন কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে সূচনা বললো,”তুই কী কিছু বলবি?”

সূচনা তার কথা ধরতে পারায় ভূমিকা থতমত খেলো।সূচনা বরাবরই এমন।ভূমিকা কিছু বলতে চাইলে আগে থেকে বুঝতে পারে।এমনটা কী তারা জমজ বলে জানতে পারে?

“কী হলো বল ভূমি?সমুদ্র কিছু বলেছে তোকে?”
“না।সূচি তুই কী উনার সাথে কথা বলেছিস?”
“নাতো।ওর সাথে তো আমার কথা হলো না।”
“ওহ।”
“সব ঠিক আছে ভূমি?”
“হু।”

ভূমিকা’র সাথে কথা বলতে বলতে সূচনা খেয়াল করলো তার মোবাইলে একটি আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে।নাম্বার টার নিচে “Unknown” ভেসে উঠলেও সূচনা সেই নাম্বার খুব ভালো করে চিনে।সে তাড়াতাড়ি ভূমিকা’র সাথে কথা শেষ করে এই কলটি রিসিভ করলো।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলা হলো,

“গ্রেট সূচন!।আমি তো ভাবতেই পারিনি তুমি সত্যি সত্যি কাজটা এতো সহজে করবে।”
“কেনো কল করেছেন?”
“হাহাহা!মেইন পয়েন্টে আসি কেনো কল করলাম।”

কিছুক্ষণ নিরব থেকে ওপাশের ব্যাক্তি বললো,”সমুদ্র’কে তোমার সব সত্যি বলতে হবে।”
“কোন সত্যি?”
“তুমি যে ভূমিকা সেঁজে সমুদ্রের সাথে মেসেজ করতে সেই সত্যি।”
“আমি কোনোদিনই ভূমিকা সাজিনি।”
“আহা ভূমিকা সাজোনি।কিন্তু ওর ডায়েরি থেকে চিরকুট চুরি করে সমুদ্র’কে পঠিয়েছো তো?”

সূচনা তার চোখের পাতা জোড়া বন্ধ করে নিলো।তার চোখ ভিজে আসছে।
সমুদ্র’কে তো সে সত্যি ভালোবাসতো!

“কী হলো চটপটি?”

[চলবে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে