অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ১৪
Writer:Shakif Arefin
__নীল পুনরায় তাসুর জামার চেইন খুলে দেয়। এই অবস্থায় তাসু না পারছে নীল কে বাধা দিতে।না পারছে উঠে চলে যেতে না,, পারছে শুয়ে থাকতে।কিন্তু এভাবে তাসু যে আর শুয়ে থাকতে পারছে না।নীল তাসুর চেইন টা দুই পাশে সরিয়ে দেয়। চেইন টা খুলার পর নীলের চোখের সামনে তাসুর ধবধবে সাদা পিঠ উম্মুক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থা টা দেখে হয় তো নীলের তাসুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু নীলের এখানে সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটলো।
__তাসুর পিঠে এলোমেলো অনেক গুলো কালো দাগ হয়ে আছে। কিছু দাগ আসতে আসতে মিশে যাচ্ছে। আর কিছু দাগ গুলো এখনো স্পষ্ট কিছু বুঝা যাচ্ছে। এই দাগ গুলো দেখে নীলের মন টা ভিষণ খারাপ হয়ে গেল। বুঝতে একটুও দেরি হলো না যে এই গুলো তার অমানুষের মতো অত্যাচারের চিহ্ন।
__দাগ এমন কালো হয়ে গেছে যে,,যে কেউ দেখবে তার চোখে পানি চলে আসতে কয়েক সেকেন্ড সময়ও লাগবে না।নীলেরও তার বেতিক্রম হলো না।চোখ দিয়ে পানি বের না হলেও চোখে পানি জমে গেছে বেশ অনেকখানি। নীল তাসুর ব্রা এর হুক খুলে দেয়। তাসু তখন আরো ভয়ে হাত দুটো বালিশের সাথে চেপে ধরে। চোখ দুটি আরো শক্ত করে বন্ধ করে নেয়। তাসুর প্রিয় মানুষ আজ প্রথম বিয়ের পর তার এতো টা কাছে আসছে।এর আগে নীল কখনো এতো টা কাছে আসে নাই। হ্যাঁ এসেছে মারতে তবে আদর করতে না।
__তাসু ভাবে হয়তো আজ তার মনের চাহিদা পূরণ করতে এতো টা কাছে এসেছে। কিন্তু এটা হয়তো উনি বুঝে নি যে শারীরিক চাহিদা তো যে কোন মূহুর্তেই মেটাতে পারে কিন্তু শারীরিক চাহিদা থেকে প্রয়োজন মনের চাহিদা। যা একজন মানুষ কে অন্য একজন মানুষের প্রতি আকর্ষিত করে।এটা হয়তো উনি জানে না।নীলের চোখেও কিছু টা পানি জমে গেছে হয়তো চোখ দুটো টিপ দিলেই পানি পরতে থাকবে।তাসুর এই দৃশ্য দেখে নীলের মন টা খারাপ হয়ে যায়।
__নীল কিছু না ভেবে তাসুর পিঠে নিজের ঠোঁট দুটো মিশিয়ে দেয়। হালকা করে তাসুর পিঠে চুমুর পরশ একে দেয়। তাসু নীলের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে। শিহরণ উঠে যায় পুরো শরীরে। এই মূহুর্তে পুরো রুম জুড়ে শুধু নিরবতা। কারোই কোন শব্দ বা আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না।গভীর রাত হয়ে গেছে। বাহিরে চতুর্দিকে ঘোর অন্ধকার।নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় দেড়টা বেজে গেছে।
__নীলের মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে আছে,,তাই তাসুর ব্রা-এর হুক টা লাগিয়ে দিয়ে জামার চেইন টা লাগিয়ে দেয়। তারপর উঠে গিয়ে লাইট টা বন্ধ করে আবার তাসুর পাশে শুয়ে পরে।তাসু তখনও হাত বালিশের সাথে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।নীল তাসুর একেবারে কাছে চলে আসে।
__নীল বলে__ তাসু ঘুমিয়ে যাচ্ছো নাকি…?? তাসু বলে__হুম।নীল বলে__ আমার দিকে তাকাও একটু।তাসু বলে__আমার ঘুম আসছে।নীল খেয়াল করে তাসুর কণ্ঠ স্বর কেমন ভারি শুনা যাচ্ছে। হ্যা ঠিকই ভারি শুনছে নীল কারণ তাসু বালিশে মুখ লুকিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো কেঁদেছিল।নীল আবারও বলে__ তাসু আমার দিকে একটু তাকাও না..??তাসু বলে__ আমার ঘুম আসছে তো..??নীল এবার একটু রেগে বলে~ তোমাকে এই দিকে ফিরতে বলছি আমি।
__নীলের এই কথায় তাসু এবার তার দিকে তাকায়। ড্রীম লাইটের আলোতে কিছু টা দেখতে পারছে নীল তাসু কে।নীল দেখে তাসু কাঁদছে তাই জিজ্ঞেস করে__কাঁদছো যে..?তাসু চোখের পানি মুছে বলে~কোথায় না তো..??নীল এবার তাসুর ঘারের উপর হাত রেখে বলে__তোমাকে হয়তো বেশি_ই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না..??তাসু কিছুই বললো না।
__নীল বলে__ কিভাবে এমন অমানুষ হয়ে গেলাম তা নিজেও জানলাম না।এখন নিজের কাছেই নিজেকে অপদার্থ মনে হচ্ছে। আমাকে খুব ঘৃণা করো তাই না.?? তাসু বলে__ ঘৃণা করলে এতো অবহেলার পরেও আপনার কাছে পরে থাকতাম না। কবেই চোখ যেখানে যেতো চলে যেতাম। নীল বলে__তোমাকে আজ একটা সত্যি কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে..?তাসু বলে_ বলেন। নীল বলে__ আমাকে খুব ভালোবাসো. .?? তাসু বলে__ আমার জানা নেই। এমন উত্তর টা শুনে নীল বলে__ আমার উপর খুব রাগ করে আছো তাই না..??তাসু বলে__ কারো উপর রাগ করে থাকার মতো মেয়ে আমি না।
__নীলের আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে তাসুর ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে। এক হাত দিয়ে তাসুর কোমড়ে ধরে টান দেয় নীল। এতে তাসু নীলের অনেক টাই কাছে চলে আসে।একেবারেই মুখের কাছাকাছি চলে আসছে। তাসু কাঁপা কাঁপা চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। তাসুর তখন মনে পড়ে গেলো নীলের অবহেলার কথা গুলো।মনে পড়ে গেলো প্রতি দিনের মারের কথা।অন্য মেয়ের কথায় নিজের স্ত্রীর উপর হাত তুলা।তার ইশারায় মারধর করা।তাই তাসু ভাবতে থাকে __চাইলেই কি এমন স্বামী কে সব টা উজাড় করে দেওয়া যায়।ইচ্ছে থাকলেই কি এতো অবহেলা করার পর তাকে নিজের শরীর টা বিলিয়ে দেওয়া যায়। এসব কথা ভেবেই তাসু নীলের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
__তাসু বলে__ আমার ভালো লাগছে না আমি ঘুমাবো।আপনি লেট না করে ঘুমিয়ে পরেন।এটা বলে তাসু ওপাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নীল বলে__ আমার কাছ থেকে সরে গেলে তাই না..??তাসু বলে_ আপনার কাছ থেকে সরে যাওয়ার ক্ষমতা আমার নাই। এতো অবহেলা করার পর ভালোবাসতে আসছেন। কিন্তু আপনার এই ভালোবাসা টা কি মন থেকে নাকি বাহির থেকে আদৌও আমি বুঝতে পারছি না।হয়তো কাল এই ভালোবাসা আর থাকবে না।আবার সেই অবহেলা মারধর করতে শুরু করবেন।
__কথা টা শুনে নীলের রাগ উঠে যায়। তাই নীল তাসুর আরো কাছে চলে যায়। জড়িয়ে ধরে নীল তাসু কে।সত্যি সত্যি নীল আজ তাসু কে মন থেকে ভালোবাসতে চায়। নিজের করে পেতে চায় আজ তাসুকে। কিন্তু নীল এটা বুঝতে পারছে না এই মূহুর্তে তাসুর মনের অবস্থা টা কি।তাসু কোন উপায় না পেয়ে নিজেকে আলগা করে দেয়। তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।নীলের চোখ আজ অন্য কথা বলছে।
__নীল তার ঠোঁট তাসুর ঠোঁটের কাছে নিতেই তাসু মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে__আমার ভালো লাগছে না তারপরেও কেন আপনি এমন করতেছেন..?? আচ্ছা আপনি যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। আমি আজ বাধা দিবো না। আপনি আমার স্বামী আমার উপর আপনার অধিকার আছে। আমি আজ কোনই বাধা দিবো না।নীল তার হাত দিয়ে তাসুর মুখ টা তার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলে__ আমি তোমাকে জোর করে পেতে চাই না।তোমার সম্মতিতে আমি তোমাকে আমার করে নিতে চাই। তাসু বলে__ মন থেকে সম্মতি আসতেছে না।তবে বাধা দিবো না,,মন যা চায় করতে পারেন বাধা দিবো না।
__নীল আর সহ্য করতে পারে নি।দ্রুত রাগ দেখিয়ে উঠে বসে পরে। নীল রুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে চলে যায়। এই দিকে তাসু বালিশে মুখ চাপা দিয়ে কাঁদতে থাকে। তাসুর এই মূহুর্তে কোন উপায় ছিল না।যদি উপায় থাকতো তাহলে নীল কে আজ তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করতো না।ফিরিয়ে দিতো না নীল কে তার এতো কাছ থেকে। তবে তাসুর মনে হচ্ছে আজ নীল কে সে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছে। তাই তো নীলের কষ্টেও তাসুও যে খুব কষ্ট পাচ্ছে। তাসু ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। আর ঐদিকে নীল কিছুই ভাবতে না পেরে সোফায় এসে ঘুমিয়ে পরে।
__সকালে তাসু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নীলের জন্য নাস্তা বানিয়ে রাখে। তাসু টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে রাখছে।একটু পরই নীল রুম থেকে বের হয়ে নাস্তা না করে সোজা অফিসের জন্য বের হয়ে যায়। তাসুর দিকে এমন কি নাস্তার টেবিলের দিকেও একবারের জন্যও তাকায় নি নীল। নীল ভেবে নিয়েছে রাতে তাসু তাকে কথার দ্বারা কষ্ট দিয়েছে অপমান করেছে। তাই সে একবারের জন্যও তাসুর দিকে তাকায় নি।নীলের এভাবে চলে যাওয়া টা তাসুর সহ্য হয়নি।তাসুও বুঝতে পারে রাতের জন্যই নীল এখন না খেয়ে চলে গেছে। হয়তো রাগ আর অভিমান নিয়ে আমার উপর বসে আছে। কিন্তু এই মূহুর্তে তাসুর যে কিছু করার নাই সে যে অসহায় হয়ে পড়ে আছে।
___নীল অফিসে গিয়ে কাজ করতে থাকে তখনই নীলের ফোন বেজে উঠে।ফোনের স্কিনে তাকাতেই নীলের কলিজা টা কামড় দিয়ে উঠে ।মাহিরা ফোন করেছে কিন্তু নীলের ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না।মাহিরা বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে দেখে নীল তার ফোন টা সাইলেন্ট করে রাখে।নীল ফোন রিসিভ করছে না দেখে মাহিরা এবার ম্যাসেজ দেয়। ম্যাসেজ টা দেখে নীল ভয় পেয়ে যায়। ম্যাসেজ টা ছিল এই রকম _তুমি যদি আমার সাথে আজ দেখা না করো তাহলে আমি আত্মহত্যা করার পর পুরো দায়ভার তোমার নিতে হবে।
__ ম্যাসেজ টা দেখে নীল নিজেই এখন কলব্যাক করে।কারণ নীল জানে মাহিরা যা বলে তা করে ফেলে।এটাও করতে পারে একটু ভয় পাবে না।নীল ফোন করতেই মাহিরা সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে বলতে শুরু করে __ তোমার সমস্যা কি..? আমার ফোন তুমি রিসিভ করছো না কেন..?? দেখা করার জন্য ম্যাসেজ দেই তার পরেও আসছো না।কি হয়েছে তোমার…?? নীল বলে__ কি কারণে আমাদের দেখা হচ্ছে না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।মাহিরা বলে__ আমি এতো সব কিছু বোঝি না তুমি এখন আমার সাথে দেখা করবে।
__নীল বলে__ তোমার সাথে আমার এখন দেখা করা সম্ভব না। এখন আমি অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। মাহিরা বলে__ তাহলে কি তুমি এখন আমার সাথে দেখা করবে না..??নীল বলে__ আমি চাইনা আমাদের আর কখনো দেখা হোক।আমি তোমার কথায় অনেক অন্যায় করে ফেলেছি।অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি তাসুকে।তাসু কে আমি খুব সুখী দেখতে চাই। আর আমি এভাবেই খুব সুখে আছি।আমি আমার ভবিষ্যৎ খুব সুখে কাটাতে চাই। আশা করি আমাদের মাঝখানে আর তুমি আসবে না।
__নীলের কথা গুলো শুনে মাহিরা অনেক রেগে যায়। মাহিরা বলে__ তাহলে কি তুমি বলতে চাইছো আমি তোমাকে ভুলে যাই..?? নীল বলে__ হুম তুমি ঠিকই বুঝতে পারছো তুমি আমাকে ভুলে যাও।এটাই তোমার জন্য বেটার হবে।কারণ আমি তাসু কে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। মাহিরা বলে __কখনো না,, আমি আমার ভালোবাসা কখনো বুলতে পারবো না।আর আমি যদি তোমার ভালোবাসা না পাই তাহলে তোমাকেও তাসুর ভালোবাসা আমি পেতে দিবো না।তোমাদের মিলন হতে আমি দিবো না। আমি তোমাদের কে আলাদা করেই ছাড়বো বলে দিলাম।
__মাহিরার কথা শুনে নীল অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। কারণ মাহিরা তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যা ইচ্ছে করতে পারে। নীল বলে__ মাহিরা তুমি এমন কিছু করার চেষ্টা করবে না। যদি খারাপ কিছু করার চেষ্টা করো তাহলে ভালো হবে না তোমার। মাহিরা বলে__ তোমার ভালোবাসা আমি না পেলে কাউকেই পেতে দিবো না।আর এর জন্য আমি কাউকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করবো না।এটা বলে মাহিরা ফোন কেটে দেয়। মাহিরার এক কথা নীল তার না হলে নীলকেও কারোর হতে দিবে না।নীল মাহিরার শেষ কথা টা শুনে খুব ভয় পেয়ে যায়। মাহিরা তাসুর কোন ক্ষতি করবে না তো..??নীলের কাছে এখন কিছুই ভালো লাগছে না।
__কোনমতে অফিস টা শেষ করে বাসায় ফিরে। তাসু এসে দরজা খুলে দেয়।তাসু দরজা খুলার পর নীল চিন্তিত চোখে তাসুর দিকে তাকিয়ে আছে। তাসুকে হারানোর ভয় তার মনে ঢুকে গেছে। তাসুও বুঝতে পারে নীল কে আজ খুব চিন্তিত লাগছে। তাই তাসু জিজ্ঞেস করে _কি হয়েছে আপনার..?? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন..?? নীল এক ফালি হাসি দিয়ে বলে~ না কিছুই হয় নি।
চলবে….