অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
2418

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৪
Writer:Shakif Arefin

নীল বলে_ যা এখন আমার সামনে থেকে ভালো করে আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।তাসু কাঁপতে কাঁপতে বলে__ জ্বি আপনি রুমে গিয়ে একটু বসুন আমি এখনই নিয়ে আসছি।

__তাসু কফি বানাতে থাকে আর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো। প্রতিদিন প্রিয় মানুষের অবহেলা আর মার খাওয়াটা তাসুর জন্য যেন পানির মতো হয়ে গেছে। এরপর তাসু চোখের পানি ওড়না দিয়ে মুছে কফি নিয়ে নীলের রুমে যায়।

__তাসু দেখে নীল কারো সাথে হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে। কথার ভাবভঙ্গি দেখে তাসুর আর বোঝতে বাকি রইলো না যে তার বর মাহিরার সাথে কথা বলছে। তাসুর বুকের ভিতর কষ্টের আগুন জ্বললেও ঠোঁটে হাসি টা অবিরাম। কারণ তার ভালোবাসা টা যে পবিত্র। তাসুর ভালোবাসার পরিমাণ বেশি না হলেও অল্প তো আছে.?? সেজন্যই যে কষ্ট টা বেশি পাচ্ছে।

__নীল এক পর্যায়ে কথার মাঝে দরজার দিকে তাকালে দেখে তাসু কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীল __রেগে বলে__ কিরে তুই..??কফি নিয়ে হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছিস। সমস্যা কি তোর বলবি আমাকে..??

__তাসু ভিতরে এসে কফি টা হাত বাড়িয়ে দিতে গেলে নীল বলে__ কফি টা টেবিলের উপর রাখ।নীল খেয়াল করে তাসুর মুখ টা কেমন ফেকাসে হয়ে আছে।প্রতি দিন এতো অত্যাচার করার পরেও কেমন অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। নীল ভাবে আজকে নিজের রাগ মেটাতে গিয়ে মেয়েটার গায়ে শুধু শুধু হাত তুললাম।

__ তাসু কফি টা রেখে চলে যেতে গেলে নীল বলে__ তাসু শুনতো…। তাসু পিছনে ফিরে বলে ___ জ্বি কিছু লাগবে…?? নীল বলে __আসলে আজকে অফিসে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছিল মিটিং টা শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। যার কারণে টায়ার্ড হয়ে পরি।আর বাসায় এসে কফির জন্য বারবার ডাকার পরও তোকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তাই অনেক টা রেগে তোর গায়ে হাত তুলেছি।

__তাসু বলে__সমস্যা নাই এসব তো আমার রুটিনে পরে গেছে। আপনার অবহেলা আর মার খাওয়া টা আমার জন্য খাবারের মতো হয়ে গেছে। প্রতিদিনই খেতে হবে। খুব কষ্ট নিয়ে তাসু কথা গুলো বলে।

__তাসু চলে যাওয়ার দিকে নীল তাকিয়ে আছে। নীল তাসুর সাথে কথা বলার সময় মাহিরার ফোন টা কাটে নাই। যার কারণে মাহিরা নীল আর তাসুর সব কথা শুনে ফেলে।

__নীল ফোন টা কানে দিয়ে হ্যালো বলার সাথে সাথে মাহিরা রেগে বলে__ এই তোমার কি এখন বউয়ের প্রতি দরদ উঠে গেলো নাকি..?? মায়া দেখাচ্ছো এখন তাই না.??নীল বলে __ আরে এসব কিছুই না।তুমি যা ভাবছো তা কিন্তু মোটেও না।

__ অফিস থেকে আসার পর বাসায় পায় নি তাই রেগে গিয়ে খুব মেরেছি। তাই একটু এই কথা গুলো বলছি। আর তুমি কি সব উল্টো পাল্টা ভেবে নিচ্ছো।মাহিরা বলে__এই জন্য তুমি ঐ ফকিন্নি মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইবা..?? নীল বলে__ আজব তো ক্ষমা চাইলাম কোথায়..??

মাহিরা বলে__ এই শুনো.. ঐ ফকিন্নি মেয়েটার কাছে তুমি এক মূহুর্তের জন্য যাবে না।সব সময় কাজের চাপে রাখবে। একটার পর একটা কাজ দিতেই থাকবে।তাহলে দেখবে ঐ ফকিন্নি মেয়েটা তোমার আর আমার রাস্তা ক্লিয়ার করে এমনেতেই চলে যাবে।

__নীল বলে __ মাহিরা এসব কি কথায় কথায় ফকিন্নি শব্দ টা ব্যবহার করো কেন..? ওও তো একজন মানুষ তাই না..??হোক সে গরীব তাতে কি..?? তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে একজন নারী।

__মাহিরা বলে__ ওও আচ্ছা এতো দিনে তাহলে বউয়ের প্রতি দরদ উতলে পড়ছে।আমার কথায় দোষ ধরা শুরু করলে তাই না.?

___নীল বলে__ মাহিরা আমি তোমার কথার ভুল ধরছি না শুধু বললাম। মাহিরা বলে__ নীল তুমি জানো আমি অতিরিক্ত কোন কথা পছন্দ করি না।নীল বলে__ মাহিরা তুমি মাথা ঠান্ডা করো প্লিজ। তুমি শুধু শুধু রেগে যাচ্ছো।আগে মাথা টা ঠান্ডা করো পরে কথা বলছি।

__মাহিরার সাথে কথা বলার পর নীল অফিসের কিছু কাজ করতে থাকে ল্যাপ্টপে। রাত প্রায় দশটার উপরে বাজে কিন্তু এখনো নীলের কাজ শেষ হয় নি।তাসু নীলের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে বলে__ আপনি খাবার খাবেন না..??

__নীল বলে__ হুম খাবো তুই টেবিলে খাবার দে আমি কাজ টা শেষ করে এখনই আসছি। তাসু টেবিলে খাবার দিতে দিতে নীলও চলে আসে।নীল চেয়ারে বসে বলে __পানির গ্লাস টা দে।তাসু সাথে সাথে নীলের কাছে গ্লাস টা এগিয়ে দেয়।

__ হাত ধুয়ার পর নীলের প্লেটে তাসু খাবার বেড়ে দেয়। নীল খেয়াল করে খাবার দেওয়ার সময় তাসুর হাত কাপছে। নীল এক লোকমা খাবার মুখে দিয়ে তাসুর দিকে তাকায়। নীল দেখে তাসু দাঁড়িয়ে আছে আর টুকটাক নড়াচড়া করছে।

__নীল বলে__দাঁড়িয়ে আছিস যে..?? তুই খেয়েছিস..??তাসু বলে __না,, পরে খেয়ে নিবো। নীল বলে__ পরে খাবি কেন..? এখন খেলে সমস্যা কি..??তাসু বলে__আপনি খেয়ে চলে যান,, আমি পরে খেয়ে টেবিল গুছিয়ে রাখবো।

__ এরপর আর নীল কিছুই বলে নি।চুপচাপ নিজের মতো খেতে শুরু করে। নীল জানে এখন তাসু কে হাজার বার বললেও এক টেবিলে বসে তার সাথে খাবে না।নীল খেয়ে রুমে চলে যায়।

__তাসু খেয়ে টেবিল পরিস্কার করে অতিরিক্ত খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে দেয়। পরের দিন সকালে নীল না খেয়ে অফিসে চলে যায়। অফিস শেষ করে রাতে বাসায় আসে।নীল কে আসতে দেখে তাসু দ্রুত গিয়ে অফিসের ব্যাগ টা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। তাসু বলে__ সকালে নাস্তা না করে অফিসে চলে গেলেন যে..??নীল বলে__ বস ফোন করেছিল যেন দ্রুত অফিসে যাই।তাই নাস্তা না করেই অফিসে যেতে হলো।তাসু বলে__ ওও

___রাতের খাবার খাওয়ার পর তাসু গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।হঠাৎ রাতে তাসুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। শরীর টা বেশি ভালো লাগছে না।পুরো শরীর টা জ্বরে গরম হয়ে গেছে। মাথা টা তো জ্বরে বিছানা থেকে উঠাতেই পারছে না তাসু।গলা টা একবারেই শুকিয়ে গেছে।তাসুর খুব পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই শুয়া থেকে উঠে বসে।

__রুমের লাইট টা জালিয়ে আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে পানির মগ টা হাতে নিয়ে দেখে মগে পানি নাই। তাই রুম থেকে বের হয়ে খাবার রুমের দিকে পা বাড়ায়।

__রুম থেকে বের হতেই তাসু খেয়াল করে নীলের রুমের দরজা টা কিছুটা খোলা তার মধ্যে রুমের লাইট টাও জলছে।তাই তাসু একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে নীল খাটে বসে ল্যপ্টপে কাজ করতেছে।

___তাসু পানি খেয়ে চলে যেতে যাবে তখনই গ্লাস টা নিচে পড়ে ভেঙ্গে যায়। কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে নীল ল্যাপ্টপ রেখে দ্রুত রুম থেকে বের হয়।নীল এসে দেখে তাসু দাঁড়িয়ে আছে।

___তাসু কে উদ্দেশ্য করে নীল বলে__কিরে তুই এতো রাতে এখানে কি করিস..??তাসু ভয় পেয়ে বলে __ পাপাপানি খেতে আসছিলাম।

__তাসু বলে__ এতো রাত হয়ে গেলো আপনি এখনো সজাগ যে ঘুমান নি…??নীল বলে__ না..অফিসের কাজ করতে ছিলাম।কাজ শেষ করে পেপার গুলো অফিসে ইমেইল করতে হবে।

__জ্বরের কারণে তাসুর কপাল টা ঘেমে যাচ্ছে। তাসুও ঠিক মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।কপাল টা যে জ্বরে পুরে যাচ্ছে। নীল বিষয় টা খেয়াল করে বলে_ কিরে কি হয়েছে তোর..?? এভাবে ঘামছিস কেন..?? তাসু নীল কে কিছু বোঝতে না দিয়ে বলে~না এমনিতেই।

__তাসু ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরো গুলো তুলতে গেলে নীল দেখে তাসুর হাত কাঁপতে থাকে। টুকরো গুলো ঠিক মতো তুলতে পারছে না।নীল বলে__ আরে ভালো করে তুল হাত কেটে যাবে তো..?

__তাসু নিচু হয়ে ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরো গুলো তুলার সময় নীল খেয়াল করে ঘাড়ের নিচে পিঠের জায়গায় কালো দাগ হয়ে আছে। কালকে গালে থাপ্পড় দেওয়াতে ঠোঁটের এক পাশটা কেটে যাওয়াতে চিহ্ন টা এখনো কিছু টা বোঝা যায়।

__তাসু টুকরো গুলো তুলে টেবিলে রাখে। নীল বলে– কালকের মার টা মনে হয় শুধু শুধু হয়ে গেলো ,,তাই না রে..??কি করবো..? তোকে রুমে না পেয়ে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।তাসু একটু কষ্ট নিয়ে বলে__আমাকে মেরে যদি আপনি খুশি হন তাতে আমার ক্ষতি কি..??আপনি যেন সব সময় খুশি থাকেন সেটাই আমি চাই।

__নীল এবার বলে__ এতো মার খাওয়ার পরেও কেন এখানে পড়ে আছিস..??কোথাও তো চলে যেতে পারিস..??তাসু বলে__ কোথায় যাবো..?? যাওয়ার মতো কোন যায়গা আছে..? বাবা মা তো আমাকে একা রেখেই চলে গেছে।গ্রামে গেলে চাচা কি আমাকে বসে রেখে খাওয়াবে বলেন..??

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে