#অবশেষে তুমি আমি~7(Last part )
# ?️Chhamina Begam,
ব্রাইডাল মেকআপে রোজাকে স্বর্গের অপ্সরী মনে হচ্ছে। শিউলি , মুক্তা খুশিতে থইথই করছে । কিন্তু তাদের খুশির ঝিলিকটা রোজাকে স্পর্শ করছে না । টিয়া মুখে একটা মেকি হাসি ঝুলিয়ে রোজার দিকে তাকিয়ে আছে । বাড়ির সবাই কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে গেছে । একটু পরেই রুবিনা মেয়েকে নিয়ে রওনা দেবেন । গাড়ি এসেছে শুনে শিউলি আর মুক্তা বেরিয়ে যায় । রুবিনা টিয়াকে বলেন রোজাকে নিয়ে গাড়িতে বসতে । তিনি ঘরে তালা দিয়ে আসছেন । এতক্ষণ পুতুলের মতো চুপচাপ থাকলেও নিজের ঘর থেকে বেরোবার মুখেই যেন সম্বিৎ ফেরে রোজার । সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিরোধিতা করতে শুরু করে । হঠাৎ করেই একরাশ জেদ এসে ভর করে রোজার মন-মস্তিষ্কে । কিছুতেই যাবে না সে । করবে না বিয়ে ওই লোকটাকে । তার থেকে সারাজীবন বিয়েই করবে না । শাওনের ওপর ও রাগ হয় প্রচুর । মানে রোজা আগে প্রোপোজ করেছিল বলে ভালোবাসার দায় কেবল রোজার ! নিজে কিচ্ছু করবে না ? বাবামায়ের ওপর একটা কথাও বলবে না । ঠিক আছে , বলতে হবে না । তুমি থাক তোমার নিজের মতো করে । রোজাও বিয়ে করবে না । না শাওনকে না মিরাজকে । নিজের পায়ে দাড়াবে রোজা , স্বাবলম্বী হবে । ওর কথা যখন কেউ ভাবছে না তাহলে ও কেন ভাববে যাবে ? একধরনের ছেলেমানুষি রোখ চেপে বসে রোজার মধ্যে ।
টিয়া আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল । পাশে রোজাকে না দেখে পেছন ফিরে তাকায় । দেখে রোজা দরজায় দাড়িয়ে আছে । এগিয়ে যেতে পা বাড়াতেই রোজা ‘ ঠাস ‘ শব্দে দরজা আটকে দেয় । টিয়া সহ রুবিনা ও আতঁকে ওঠে । দৌড়ে আসে দরজায় কাছে । অনেক কাকুতিমিনতি করেও রোজা দরজা খোলে না । রোজা দরজা বন্ধ করে যদি নিজের ক্ষতি করে বসে সেই ভয়ে রুবিনা ,টিয়ার আত্মা কেঁপে ওঠে । ততক্ষণে রুবিনা গলা ছেড়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে । বারবার অনুরোধ করছে রোজাকে দরজা খোলার জন্য । কিন্তু রোজা ততক্ষণে জেদের বশে অন্ধ হয়ে গেছে । ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে গয়নাগাটি খুলতে শুরু করেছে । হাতের চুড়ি খুলতে গিয়ে দাদাভাইয়ের কথাটা মনে পড়ে রোজার । হাত দুটো আটকে যায় । আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বন্ধী মনে হয় রোজার । যে নিজের আবেগের কাছে বন্ধী হয়েছে । বাইরে থেকে আম্মুর কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । রোজার চোখ দুটোও ভিজে ওঠে । এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে আসে দরজার কাছে । তারপর ধপ করে বসে পড়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে । দরজার অনবরত আঘাত করছে কেউ । সব কিছু ছাপিয়ে আম্মুর ভেজা স্বরটাই কানে রিনরিনে ঝংকার তোলে রোজার ,
-“রোজা ,সোনা মা আমার , প্লিজ দরজা খোল ।আমি তোর আব্বুর সাথে কথা বলব ।তবুও নিজেকে কষ্ট দিস না । দরজা খোল রোজা । ”
মায়ের বলা কথা গুলো সান্ত্বনার কথা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না রোজার । কারন এই তিনদিন রোজা অনেক বার আম্মুকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে । অথচ আম্মু আব্বুর মুখের ওপর একটা কথাও বলেনি। শুধু একটা কথাই বলেছে ‘তোর আব্বু যা করছে তা তোর ভালোর জন্যই করছে ‘। অথচ এখানে কি ভালো লুকিয়ে আছে তার হদিস পাচ্ছে না রোজা । একজনকে ভালোবেসে অন্য আর একজনকে বিয়ে করার মানেই তো নিজের সাথে সাথে অপরজনকেও ধোকা দেওয়া । যেখানে মনটা পড়ে থাকবে একজনের কাছে অথচ বাহ্যিক উপস্থিতি থাকবে অন্য কোথাও ।
-“আমাকে এমন সান্ত্বনার বানী না শোনালেও পারো আম্মু । আমি কচি খুকি নই । যাকে তুমি কিছু একটা হাতে ধরিয়ে দিয়েই ভুলিয়ে দিতে পারবে । আমি জানি এখান থেকে বেরলেই তোমরা আমাকে ওই লোকটার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে । আমার মতামতের এখন কোনো মূল্য নেই তোমাদের কাছে ! আমি বুঝতে পারছি সেটা । ”
-“রোজা ,পাগলামি করে না সোনা । এই যে আম্মু প্রমিজ করছি , তুমি যা চাইবে তাই হবে । প্লিজ সোনা , দরজাটা খোল এবার ”
স্টেজের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে শাওন । দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর । চেনা শহরে এসে এতক্ষণের চাপা কষ্টটা বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে । এত লোকের কোলাহলেও নিজেকে একা লাগছে শাওনের । মনটা পড়ে আছে রোজার কাছে । এতক্ষণে কি রোজার বিয়ে হয়ে গেছে ? নিজের ভেতর ভাঙণ টের পাচ্ছে শাওন । কত স্বপ্ন সাজিয়েছিল ওরা দুজন । কিন্তু আজ থেকে ওরা দুজন বিবাহিত তকমা পাবে , কিন্তু অন্য আর একজনের জীবনসঙ্গী হিসেবে । জোর করে বয়ে বেড়াতে হবে সম্পর্কটাকে । সঙ্গীকে ভালো রাখার সবোর্চ্চ প্রয়াস করতে হবে । হঠাৎ একটা চেনা কন্ঠস্বরে ভাবনার সুতো ছিড়ে যায় শাওনের। এত এত লোকের মাঝেও ওই একটি মাত্র স্বর সমস্ত কোলাহল ছাপিয়ে শাওনের কানে ঘন্টা ধ্বনির মতো বাজতে শুরু করে । মাথা তুলে তাকায় শাওন ।দেখে হলের সদর দরজার কাছে সামসুল সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে কিছু একটা বলছে ওর দাদু -আব্বুকে । পাশে ওর ছোটচাচা আর আরাব দাড়িয়ে আছে ।সবাই কিছু একটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। চিন্তা ভাবনা সব থমকে যায় শাওনের ।ওরা এখানে ? সব ঠিক আছে তো ? রোজার কথা মাথায় আসতেই শাওন দ্রুত এগিয়ে যায় দরজার দিকে ।
-” আব্বু তাড়াতাড়ি চলো ” আরাব তাড়া দেয় ।
– “তুমি গাড়ি বের করো । যাও । মেহেতাব সাহেব, যাবেন আপনারা ? ”
-” হ্যাঁ চলুন । দেরি করা ঠিক হবে না । “বলতে বলতেই সবাই সদর দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পিছন থেকে শাওন ডেকে ওঠে ,
-” আব্বু ?”
সবাই ফিরে তাকায় ।
-” শাওন ,দাড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি চল ” আবদুল্লাহ সাহেব অস্থির হয়ে বলেন ।
-” কিন্তু দাদু হয়েছে টা কি ? ” ..চলতে চলতেই প্রশ্ন করে শাওন।
-“আগে গাড়িতে বস । তার পর বলছি ”
ওদের গাড়ি দুটো ভীড় ঠেলে দ্রুত গতিতে ছুটছে । আগেরটায় রোজার চাচা আর আরাব বসেছে। আর পরেরটাতে শাওনের আব্বু, দাদু , রোজার আব্বু আর শাওন বসেছে। কমিউনিটি সেন্টার থেকে রোজাদের বাড়ির দুরত্ব মোটামুটি দশ মিনিটের । গাড়িতে যেতে যেতে আবদুল্লাহ সাহেব সবকিছু খুলে বলেন । সাথে দুঃখ প্রকাশ করেন এই বলে যে ছেলেমেয়েকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে এরকম কিছু ঘটতে পারে এটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি । রোজা নাকি দরজা বন্ধ করে নিজেকে ঘরে আটকে রেখেছে ? এটা মুক্তা কল করে আরাবকে জানিয়েছে । শাওন সব কিছু শুনে একেবারে থ হয়ে গেছে । একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছে আবার সেই সাথে ভয় জেকে বসছে হৃৎপিণ্ডে । না জানি ওদিকে কি ঘটছে ?রোজা যা জেদি মেয়ে !যদি নিজের ক্ষতি করে বসে ! সবাই একমনে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করছে ।
গাড়ি দুটো রোজাদের বাড়ি পৌছতেই শাওন দেখতে পায় গাড়ি থেকে নেমেই আরাব দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি ঢুকছে । শাওন অনুভব করতে পারছে গাড়িতে বসা প্রত্যেকটি মানুষের হৃৎ-স্পন্দন দ্রুত গতিতে চলছে । সবাই বিচলিত , বিভ্রান্ত ,আতঙ্কিত ।শেষ মুহুর্তে এসে রোজা এমন একটা কান্ড করে বসতে পারে এটা সবার ধারনার বাইরে । গাড়ি থামতেই সবাই হুরমুর করে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে ।ড্রয়িং রুমে পৌঁছেই সবাই শুনতে পায় রোজা বন্ধ দরজার ভেতর থেকেই ওর আম্মুকে বলছে ,
-“আম্মু , তুমি আব্বুকে এক্ষুনি বলো , আমি বিয়ে করব না । তোমরা কেউ আমাকে জোর করবে না কিন্তু।আর দাদাভাই , ও আমাকে শাসাচ্ছিল তাই না । এবার আমি বলছি শোনো,ও যদি আমাকে জোর করে তাহলে আমিই ওর এগেইস্টে এফ.আই.আর করব ,হুহ । ও সিভিলে আছে জন্য ওর জন্য সব মাফ হ্যাঁ । নিজে যে একজনকে পছন্দ করে বসে আছে । সেটা কোনো ব্যপার না । শুধু আমি করলেই দোষ । আর তুমিও দাদাভাইকে কেন সাপোর্ট করলে ? “নাক টেনে টেনে কথা গুলো বলল রোজা ।
-“আচ্ছা বাবা । ঠিক আছে । মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে । আমি বলব তোর আব্বুকে , ওকে। তার আগে দরজাটা খোল সোনা ”
-“না । তুমি আগে আব্বুকে বলো নাহলে আমি দরজা খুলব না । এখানেই বসে থাকব সারারাত “…
রোজার ভেজা কন্ঠে থেমে থেমে বলা কথা গুলো শুনে বাইরে দাড়ানো সবাই মুখ টিপে হাসে। সামসুল সাহেব একবার চোখ সরু করে তাকায় আরারের দিকে । আরাব মাথা নিচু করে লজ্জায় । রোজা যে এভাবে হাটে হাড়ি ভাঙবে কে জানত ?
-” তুমি সত্যিই বিয়ে করবে না!” বাইরে থেকে শামসুল সাহেবের গম্ভীর গমগমে আওয়াজটা শুনতে পেয়ে রোজার কান্নার মাত্রা বেড়ে যায় । টেনে জবাব দেয় ,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
-“নাআআআআ ”
-“ঠিক আছে । আমি কি ওদের ফিরে যেতে বলব ?”
-“হ্যাঁ আব্বু ,বলে দাও “..রোজা খুশিতে কলকলিয়ে ওঠে । ডান হাতে চোখের জল মুছে উঠে দাড়ায় । মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে যেন এইমাত্র যুদ্ধ জয় করে ফিরল ও । দরজায় কান লাগিয়ে আড়ি পেতে আব্বুর কথা শোনার চেষ্টা করে ।
-“আচ্ছা , কি আর করা যাবে। মেহেতাব সাহেব, আমাকে মাফ করে দেবেন ।”
-“না না , ঠিক আছে ”
-” বাবা শাওন, দেখো আমার একটিমাত্র মেয়ে । আমি ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে চাই না । তোমরা বরং ফিরে যাও । ”
-“ইট’স ওকে আংকেল । ” মন খারাপের ভান করে বলে শাওন ।
আড়ি পেতে শুনতে শুনতে বিস্ময়ে রোজার চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেছে। এসব কি শুনছে ও ? শাওন এখানে ! রোজার হাত দুটো আপনাআপনি মুখে চলে যায় । ও আল্লাহ!এটা কিভাবে সম্ভব ? রোজার কয়েক সেকেন্ড লাগে বুঝতে । একবার মনে হয় ও বুঝি স্বপ্ন দেখছে । নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখে । ব্যাথা পেয়ে চোখমুখ কুঁচকে যায় । ঠোঁটের হাসিটা এবার প্রসারিত হয় । সেই খুশির ঝিলিক নিজের শরীরের প্রতিটি শিরায়-উপশিরায় তরতরিয়ে বেয়ে চলে । শাওনকে চাক্ষুষ দেখার লোভ হয় রোজার। তিনদিন ধরে দেখে না ওকে । তাতেই মনে হচ্ছে কত যুগ বয়ে গেল । ধীরে ধীরে দরজা খুলে সামনে তাকায় রোজা । দেখে সবার মুখেই মুচকি হাঁসি । সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । এক এক করে সবার মুখের দিকেই চোখ বুলায় রোজা । দুটো পরিচিত মুখ দেখে দৃষ্টি থমকে যায় দৃষ্টি । আরে ,এরা তো ওই লোক দুটো না ?চিনতে পেরে একটু লজ্জা পায় রোজা । তারপর শাওনের দিকে তাকায় । গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানি পড়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে শান্ত চোখ দুটো । মুখে তার মিষ্টি হাসি । কিন্তু আজ ওই চোখ দুটো অনেক কথা বলছে । মুখে হাসি চোখে জল নিয়ে রোজা আব্বুর দিকে তাকায়। তারপর দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে ধরে আব্বুকে । চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু ঝরছে ওর ।
-“তুমি খুব খারাপ আব্বু। খুব খারাপ তুমি । তুমি এমন টা করতে পারলে আমার সঙ্গে ? আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছ তুমি ?”
-” এর জন্য এক্সট্রিমলি সরি। আমার আম্মুটা আমার কাছে একটা আবদার করেছে ,না দিয়ে কিভাবে পারতাম আমি? তবে তোমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে গিয়ে আমরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম ! ”
-“সরি আব্বু । আমি কি করতাম বলো ? তোমরা তো কেউ আমার কথা শুনছিলে না । ”
রোজা আব্বুর বুক থেকে মাথা তুলে সরে দাড়ায় ।
-“রোজা ,তুমি তো আমাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে । “..মুচকি হেসে বলেন আবদুল্লাহ সাহেব ।
-“সরি দাদু “..মাথা নিচু করে বলে রোজা ।
একে একে সবাই রোজার সাথে টুকটাক কথা বলে ।
-“ওকে ওকে ,এসব কথা পড়েও বলা যাবে । ওদিকে সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য । তাড়াতাড়ি চলো সবাই । “..রোজার চাচা তাড়া দেন ।
সবাই বেরোনোর উদ্যোগ নিলে রোজা শিউলি আর টিয়াকে টেনে ধরে । শিউলি প্রশ্ন করে ,
-“দাড়ালি কেন ?চল ..”
-“আপু ,এভাবে যাব নাকি আমি ? আগে আমার সাঁজটা ঠিক করে দাও ” আল্লাদি সুরে বলে রোজা ।
শিউলি ,টিয়া সহ সবাই হেসে ওঠে ।
–“আপনারা তাহলে যান । আমি ওদের নিয়ে আসছি “আরাব সবাইকে যেতে বলে । যাওয়ার আগে শাওন রোজাকে দেখে চোখের ইশারায় কিছু বলে । রোজা মুচকি হেসে অন্য দিকে ফিরে তাকায় ।
শাওনরা যাওয়ার পরেই আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গেছে । অনেকেই রোজার মামা, শাওনের চাচাদের এটা সেটা জিজ্ঞেস করে নাজেহাল করে দিচ্ছে ।কোনো রকমে ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ওরা । প্রায় আধঘণ্টা পর শাওনরা হলে পৌছায় । তার কিছুক্ষণের মধ্যেই রোজাকে নিয়ে আরাব কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে যায় । দুই পরিবারের উপস্থিতিতে নির্বিঘ্নে বিয়ে সম্পন্ন হয় ।
এখন রোজা শাওন স্টেজের উপর সিংহাসনে বসে আছে । দুজনেই চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই বিগত তিনদিন ওদের ওপর দিয়ে কি বয়ে গেছে । দুজনেই খুশিতে বাকবাকুম করছে । শাওন-রোজার কাজিনরা নাচগান করছে । অনেকেই এসে নব দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে । রোজা-শাওন দুজনেই হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছে । হঠাৎ করে রোজার কিছু মনে পড়তেই শাওনকে জিজ্ঞেস করে ,
-“এই , তুমি আগে থেকে জানতে না সব কিছু ? ”
-“উম হুহ, না । তোমাদের বাড়ি যাওয়ার সময় জেনেছি । সবাই যে এভাবে সারপ্রাইজ দিতে পারে কল্পনাতেও ছিল না । ”
-“সত্যি ?”রোজা ভ্রু কুচকে সন্দেহের চোখে তাকায় ।
-“সত্যি বলছি ”
-“আচ্ছা ছাড়ো এসব । আমার না খুব ক্ষিদে পেয়েছে । কেউ আমাদের খেতে ডাকছে না কেন ?”
-“আমিও সেটাই ভাবছি “..চিন্তিত মুখে বলে শাওন ।
ওর কথায় রোজা ফিক করছে হেসে দেয় । বলে,
-“তোমার ও ক্ষিদে পেয়েছে ?”
-“খুবববব”
-“আমাদের বিয়ে নিয়ে এত আয়োজন । অথচ কেউ আমাদেরই খোঁজ করছে না । এত দুঃখ কোথায় রাখি বলো তো ” গালে হাত দিয়ে রোজা চিন্তিত হয়ে বলে । রোজার এহেন কথায় শাওন হেসে ওঠে । ওকে হাসতে দেখে রোজাও হাসে ।
মেহেতাব সাহেবের সাথে কথা বলতে বলতে সামসুল সাহেব স্টেজের দিকে তাকান। আদরের মেয়েকে এত খুশি হতে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় ওনার । সামসুল সাহেবের দৃষ্টি অনুসরণ করে মেহেতাব সাহেব ও তাকায় । মৃদু হাসি ফুটে ওঠে ওনার ঠোঁটের কোণে ।
অতিথিরা একে একে সবাই বিদায় নিচ্ছে । সামসুল সাহেব মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেদের আদর আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । তখনি আরব এগিয়ে আসে বোনের দিকে ।
-“কংগ্ৰাচুলেশন বোথ ওফ ইউ ”
-“থ্যাংক ইউ ,দাদা ” শাওন হাসি মুখে বলে ।
-” থ্যাংক ইউ, তবে আমার গিফ্ট কোথায় দাদাভাই ? জানিস না , গিফ্ট ছাড়া কংগ্ৰাচুলেট করতে নেই ?”
-” আচ্ছা , এখন তোর গিফ্ট ও চাই ? তখন কে যেন বলছিল আমার এগেইস্টে নাকি এফ.আই.আর করবে ? হুহ ”
মুচকি হেসে জ্বীব কাটে রোজা । বলে,
-“ওসব তো পাস্ট হয়ে গেছে । পাস্টকে ধরে থাকতে নেই বুঝলি । তাই তুইও ভুলে যাও। এখন বল , আমার গিফ্ট কোথায় ? ”
-“এই তো , এত বড় জলজ্যান্ত একটা মানুষ গিফ্ট করলাম । তাতেও হল না !”
-“ইস , দাদাভাই । তুই এত কিপ্টুস কেন রে ? যা আমার তা তো আমি পাবই । মাঝখান থেকে তুই ওটা নিজের দেওয়া বলে চালিয়ে দিচ্ছিস কেন ? ”
-“তুই আজকেও আমার সাথে ঝগড়া করবি , রোজা । সামান্য একটা গিফ্টের জন্য এমন ব্যবহার করছিস ? বুঝলে শাওন , আজকাল কারো ভালো করে লাভ নেই । কাজ শেষ হয়ে গেলে উলটো তোমাকেই কথা শোনাবে ! হিউম্যানিটি বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না ”
-“দাদাভাই !!!” আরাবের কথায় গাল ফুলিয়ে থাকে রোজা । শাওন ওদের দুজনেই খুনসুটি দেখে মুচকি হাসে ।
আত্মীয় স্বজনরা অনেকেই চলে গেছে । শুধু মাত্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাই আছেন । শাওনরাও বিদায় নেওয়ার তোরজোড় করছে । তখনই শাওনের মেজচাচার পাঁচ বছরের মেয়ে সুমু আবদুল্লাহ সাহেবের পাঞ্জাবী টেনে ধরে বলে,
-“দাদু ,নতুন বউ যাবেনা আমাদের সাথে ?”
আবদুল্লাহ সাহেব নাতনিকে কোলে নিয়ে বলেন ,
-” না দাদুভাই , নতুন বউ এখন আমাদের সঙ্গে যাবে না । আমরা পরে আবার অনেক গুলো গাড়ি নিয়ে আসব । তখন নিয়ে যাব । বুঝেছ । ”
সুমু মাথা দুলিয়ে জানায় সে বুঝেছে ।
-” এই যে শাওন , তুই বুঝেছিস তো ?” হালকা রসিকতার সুরে বলেন আবদুল্লাহ সাহেব । শাওন মুচকি হেসে মাথা নাড়ায় । তারপর মেহেবুব সাহেব তার গম্ভীর স্বরে শাওন-রোজাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-” আমরা বড়োরা সবাই মিলে ঠিক করছি , পড়াশোনা কমপ্লিট না হওয়া অবধি তোমরা যে যার বাড়িতেই থাকবে । এরপর শাওন সেটেল হয়ে গেলে আমরা বড় করে অনুষ্ঠান করে বউ বাড়িতে তুলব । এই বিষয়ে তোমাদের কিছু বলার আছে ?”
শাওন রোজা দুজনেই লাজুক হেসে না জানায় । ওদের হাসতে দেখে মেহেবুব সাহেবও মৃদু হাসেন । শাওন আব্বুর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আচমকাই জড়িয়ে ধরে । ফিসফিস করে বলে “থ্যাংক ইউ, আব্বু “। মেহেতাব সাহেব ছেলের এহেন আচরণে খানিকটা অবাক হলেও পরক্ষণেই স্নেহের পরশ বুলিয়ে শাওনের চুল গুলো এলোমেলো করে দেন ।
★★★★ সমাপ্ত ★★★★