#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্বঃ১৩
আরিয়ানকে বেধড়ক মারধর করছেন রিয়াজুল করিম। রিমু একপাশে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে আর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মেঝেতে খোঁচাচ্ছে।
রূপম সোফায় বসে আপেলে কামড় দিচ্ছে। বাসার কেউ কিছু বুঝতে পারছেনা। সবাই শুধু চুপচাপ কী হচ্ছে তা দেখা নিয়েই ব্যাস্ত।
রিয়াজুল করিম আরিয়ানকে মারতে মারতে বললেন, ” তা এটা নিয়ে কজন মেয়ে কে টার্গেট করলে বাবা? ”
আরিয়ান কী বলবে বুঝতে পারছিলো না। চুপচাপ সে মার খেতে লাগলো।
রিয়াজুল করিম বললেন, ” এই আরিয়ান তার বাবার পলিটিকাল পাওয়ার ইউস করে অসংখ্য মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি করেছে। সে যখন দশম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকে রিমুকে ফলো করতো। রিমু তখন ক্লাস সেভেনে। এই কথা আমার কানে আসে। আরিয়ান রূপমের পাশের স্কুলে পড়তো বলে আমি রূপমকে বলেছিলাম এই ছেলের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে। কারণ আমার মেয়ের পিছনে কেউ চিপকে লেগে থাকুক এটা আমি কখনোই চাইতাম না । রূপম খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে আরিয়ান একজন পলিটিকাল লিডারের ছেলে। খোঁজখবর আমিও নিতে পারতাম কিন্তু ভেবেছিলাম রূপমও যেহেতু আরিয়ানের ইয়ার মেট তাই রূপম খোঁজখবর নিলেই ভালো হবে। রিমু ছোট থেকে মারাত্মক সুন্দরী হওয়ায় আরিয়ানের নজর পড়ে রিমুর উপর। কিন্তু সবসময় ইন্ট্রোভার্ট হওয়ায় আরিয়ান কখনো সুযোগ পায়নি রিমুকে নিজের প্রেমের ফাঁদে ফেলার।
তবে রিমুর পিছু ছাড়েনি সে। রিমুকে ফলো করার পাশাপাশি সে অন্য মেয়েদের সাথেও সম্পর্কে থাকতো। তাদের সাথে কয়েকমাস সম্পর্ক রেখেই ছেড়ে দিতো। শারীরিক সম্পর্কও ছিলো তার অনেকের সাথে। ইদানীং সুযোগ বুঝে রিমুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু যেই ছেলে এতগুলো মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি করতে পারে সে কী আসলেও রিমুকে ভালোবাসে?
সবটা শুনে সবাই থমকে গিয়েছে। রিমুর চোখ দিয়ে অবাধ্য নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। সে কিছু ভাবতেই পারছেনা। তার সাথেই কেন এমন হয় বারবার?
এদিকে আরিয়ানের বাবা মা পুলিশকে ফোন করার জন্য উদ্যত হতেই রূপম বলে ফোনটা তাহলে আপনিই করুন। নিজের ছেলের জন্য নিয়েই পুলিশ আনুন। আরিয়ানের বহু কুকীর্তির প্রমাণ অনেক সযত্নে রেখেছি আমি। যাদের সাথে আরিয়ান অন্যায় করেছে তারা আরিয়ানের চেয়ে অনেক কম পাওয়ারফুল। আর বাকি যেসব গার্লফ্রেণ্ডদের সাথে কুকাজ করেছে সবারই সম্মতি ছিলো। ক্ষমতার দাপট ওই মেয়েগুলোর ছিলোনা তাই তারা আরিয়ানের বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিতে পারেনি। কিন্তু এবার আমি নেবো।
পরিস্থিতি নিজের বিপক্ষে দেখে আরিয়ান তার বাবা মা কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। সবাই সবার কাজে লেগে পড়ে।
রিমু উপরে নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। কী হবে ভেবেছিলো আর কী হলো। রিমু মনে মনে বলতে থাকে, ” আল্লাহ এতো কষ্ট কেন দিচ্ছে আমাকে। সুখ জিনিসটা কী আমার কপালে নেই? বিয়ে করে এই জীবন থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম অথচ কী হয়ে গেলো। আসলে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ব্যাতীত গাছের একটা পাতাও নড়ে না। খানিক আগেই তো সবটা ঠিকঠাক ছিলো। রিয়াজুল করিম বাসায় এসে বললেন, ” রিমুকে যারা দেখতে এসেছে তাদের সঙ্গে ইমিডিয়েটলি কথা বলতে চায় তিনি। সেই অনুয়ায়ী আরিয়ানকে ফোন করে রিমু বলে, ” বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আসলে আপনারা যখন আমাকে দেখতে এসেছিলেন তখন আমার বাবা বাসায় ছিলেন না। তিনি আপনাদের সাথে কিছু জরুরি কথা বলতে চান। আমি জানি আপনারা সবাই ভীষণ ব্যাস্ত মানুষ। তারপরও যদি একটু সময় দিতেন। ”
রিমুর ফোন পেয়ে উচ্ছসিত আরিয়ান চলে আসে রিমুদের বাসায়। আরিয়ান আসার পরপরই রিয়াজুল করিম এক কথায় দু কথায় রহস্যময়ী হাসি হেসে জিজ্ঞেস করেন বাবা তোমার চরিত্র ঠিক আছে তো?
এ ধরনের প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় আরিয়ান। সাথে প্রচন্ড রকম বিব্রতও হয়। সে বলে দায়সারা একটা হাসি দিয়ে বলে জি আঙ্কেল। আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।
আর এই কথা শুনেই রেগে গিয়ে ইচ্ছে মতো আরিয়ানকে পিটাতে থাকে রিয়াজুল করিম।
তারপরই এলোমেলো হয়ে যায় সব।
রিমু তার ফোন হাতে নিয়ে সাদিয়াকে ফোন দেয়। এমন পরিস্থিতিতে কী করা ভালো হবে সাদিয়া তা খুব সহজেই বলতে পারবে। এই মেয়েটা অনেক বেশি বুদ্ধিমতী, স্মার্ট আর এক্সট্রোভার্ট৷ সব সমস্যার সমাধান যেন তারই কাছে। রিমু সবার উপকার করে, আগলে রাখে। কিন্তু সে ততটা চালাক চতুর নয় সাদিয়ার মতো। রিমু সবার জীবনের সমস্যা সমাধান করতে পারলেও নিজের জীবনের সমস্যায় ডুবে থাকে। আর এই সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য ভালো পরামর্শ দাতা সাদিয়াই হতে পারে।
রিমুর কাছে সবটা শুনে সাদিয়া রেগে যায় রিমুর প্রতি। সে বলতে থাকে, ” তুইও গতানুগতিক ধারার চিন্তা নিজের ভেতরে পোষণ করিস রিমু! এটা ভীষণ হতাশাজনক।
বিয়ে করেই কেন মুক্তির পথ বেছে নিতে হবে? বিয়ে করলেই যে তুই মুক্তি পাবি এটা বলছিস কী করে? এমনও তো হতে পারে এক জেলখানা থেকে অন্য জেলখানায় ঢুকে পড়লি? তখন কীসে মুক্তি খুঁজবি? আমার কথা মন দিয়ে শোন রিমু! নিজের মুক্তির উপায় নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। তুই নিজের পায়ে দাঁড়া। নিজের আইডেন্টিটি তৈরি কর। আর বিয়ের মাধ্যমে মুক্তি এসব আজাইরা চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেল৷ তোকে নিয়ে কী যে করবো আমি। ”
সাদিয়ার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো রিমু। প্রচন্ড গরমে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে রইলো।
রূপম বাইরে থেকে কড়া নাড়ছে রিমুর দরজায়। রিমু ভেতরে আসার অনুমতি দিলো।
রূপম ভেতরে এসে বললো, ” কী রে রিমু? মুখটা ওরকম পেঁচির মতো করে রেখেছিস কেন? আরিয়ানকে বুঝে মনে ধরে গিয়েছিলো
ইশ রে! প্রেম না করেই ছ্যাঁকা খেলি!”
রূপমের কথা অন্য রকম লাগছে রিমুর কাছে। রূপম কখনো এতো বেশি ফ্রি হয়নি রিমুর সাথে। তবে আজ কেন যেন বন্ধুর মতো আচরণ করছে। রিমু কিছু বুঝলোনা।
রূপম আবার বললো, ” দ্যাখ যা হয় তা ভালোর জন্যই হয়। তোর যদি ওই লুচুটার সাথে বিয়ে হতো তাহলে কী হতো ভাবতো। না জানি শরীরে কোন রোগ বাঁধিয়ে বসতি। ইউ নো না কি বুঝাচ্ছি আমি? উ উ ( এক ভ্রু উচিয়ে) ”
রিমু শুরুতে না বুঝলেও পরে যখন বুঝলো তখন ভীষণ লজ্জা পেলো। বালিশে মুখ গুঁজে সে হেসে ফেললো। তারপর বললো, ” রূপম ভাই আপনি যান! ”
রূপম বললো কী বললি? আমি তোর জান?
রিমু রেগে বললো, আমি কখন বলেছি আপনি আমার জান? আমি বলেছি এখন থেকে চলে যেতে!
রূপম বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো, ইশ আমি আরো ভাবলাম তুই আমাকে তোর জান বললি। আচ্ছা চলে যেতে বলছিস চলে যাচ্ছি। কিন্তু আবার ফিরে আসবো।
রিমু বুঝছেনা তার সাথে ঠিক কী হচ্ছে! রূপম তার সাথে এমন আচরণ করবে এটা তো অবিশ্বাস্য। আর এতো ফ্রি হয়ে তো অসম্ভবই।
রিমুর কিছু ভাবতে ইচ্ছে হলোনা। সে এসি অন করে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
ঋষি সাদিয়ার নম্বরে ভয়ে ভয়ে ফোন করলো। না জানি এই মেয়ে কখন কী রিয়্যাক্ট করে। ঋষি সাদিয়াকে বললো, ” আপনি আজ রূপমদের বাসায় আসবেন। কিনা প্রয়োজন ছিলো।”
সাদিয়া খানিকটা রেগে বললো আমি আপনার কথায় কেন রূপম ভাইদের বাড়িতে যাবো? আর তার জন্য কেন যাবো? ওই বাড়িতে যাওয়ার কারণ তো রিমু। সে যখন আমাকে যেতে বলেনি তাহলে কেন আমি যাবো?”
সাদিয়া একনাগাড়ে অনেকগুলো কথা বললো। ঋষি তাকে থামিয়ে যতটা শর্টকাটে সবটা বলা যায় বললো।
সাদিয়া হতভম্ব হয়ে গেলো। এতো কিছু হতে পারে তা সাদিয়ার ধারণাতীত। তার মনে এখন একটাই ভয় সে রিমুকে এতো জ্ঞান দিলো সেই যদি এখন রিমুকে প্রপোজ করতে রূপমকে সাহায্য করে তবে কীভাবে সেটা নেবে রিমু?
চলবে,,,