#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-15
দেখতে দেখতে কেটে গেছে একটা বছর। বদলেছে সবকিছুই, শুধু একই রয়ে গেছে মেঘ আর বৃষ্টির ভালোবাসা। কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারেনা। মেঘের পাগলামি গুলো ভীষণ ভালোবাসে বৃষ্টি। কারন এগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে বৃষ্টির প্রতি কেয়ার, ভালোবাসা, শাসন, পসেসিভনেস। বৃষ্টিও এখন মেঘকে পাগলের মত ভালোবাসে।
রোজকার মত আজও জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আসা তির্যক আলোকরশ্মি মুখে পড়ায় ঘুম ভেংগে যায় বৃষ্টির। পাশে তাকাতেই কুচকানো ভ্রুযুগল প্রসারিত হয়ে যায়। কি সুন্দর ভাবে দুই হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে, যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে। বৃষ্টিও পরম আবেগে মেঘের বুকে চুপটি করে লেপ্টে আছে। মেঘের খোলা বুকের প্রতি ভীষন লোভ বৃষ্টির। সবথেকে শান্তির লাগে এই জায়গাটা। বুকে মাথা রেখে কান পেতে শোনে বাড়তে থাকা হৃদস্পন্দনের শব্দ। তারপর সময় নিয়ে গুটিকয়েকবার অধর ছোঁয়ায় মেঘের উষ্ণ বুকে। তারপর মাথাটা উঁচু করে কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো একহাতে সরিয়ে সেখানেও বেশ কয়েকটা চুমু দেয়। তারপর ঠোঁটে খুব সাবধানে আলতো করে চুমু দিয়ে সরে আসতে নিলে অপর পাশের মানুষটা বৃষ্টিকে নীচে ফেলে তার উপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দেয়। তারপর এক মুহূর্ত ব্যায় না করে নিজের শুষ্ক ঠোঁটটা চেপে ধরে বৃষ্টির নরম রসালো ঠোঁটে। এক হাত ঘাড়ের পিছনে আর এক হাত কোমরে দিয়ে আরো গভীরভাবে স্পর্শ করতে থাকে অধরযুগলে।
বেশ অনেকটা সময় নিয়ে আদর করে বৃষ্টির অধর যুগলে। তারপর বৃষ্টির কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে, সকাল সকাল রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে সেটা আমাকে আগে বলবে তো। তুমি তো জানো আদরে আমি কখনও কার্পন্য করিনা। মেঘের কথায় বৃষ্টি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়।
তুমি কি জানো আমার শার্ট পরে তোমাকে কতটা হ/ ট লাগে? আসলে এটা প্রতিদিনের অভ্যাস। গভীর রাতে নিজের জামাকাপড় আর পরতে ইচ্ছে করেনা তাই মেঘের শার্ট পরেই ঘুমিয়ে পড়ে বৃষ্টি।
মেঘ বৃষ্টিকে কোলে করে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে দুজনে একসাথে গোসুল সেরে নেয়। তারপর দুজনে রেডি হয়ে বেরোয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। হসপিটালে গিয়ে দুজনেই ভীষন ব্যাস্ত সময় পার করে। ফেরার পথে বৃষ্টির বায়নায় দুজনে যায় বৃষ্টির সেই পছন্দের জায়গায়। যেখানে প্রায়ই মন খারাপ হলে বৃষ্টি আসতো আগে। তবে এখন এখানে আসার সময় বা সুযোগ কোনোটাই হয়ে ওঠেনা। নদীর পাড়ের সেই পরিচিত জায়গাটায় দুজনে গিয়ে বসে। বৃষ্টি মেঘের একহাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রাখে আর ডুব দেয় অতীতে। এই জায়গাতে মেঘ বৃষ্টিকে প্রথম প্রোপোজ করেছিলো। প্রচুর দুষ্টু, মিষ্টি খুলসুটিতে মেতে থাকতো ওরা এই জায়গাটাতে। এইসব ভেবে আনমনেই হাসে বৃষ্টি। এসব ভাবনার মাঝে হটাত মনে পড়ে পরশু মেঘের জন্মদিন। তারপর কিছু একটা ভেবে ঠোঁট কামড়ে হাসে বৃষ্টি। মেঘ এতক্ষন বৃষ্টিকে দেখছিলো। বৃষ্টির এমন ক্ষণে ক্ষণে মুখের আদলের পরিবর্তনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে বৃষ্টির দিকে। মেঘকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে যে বৃষ্টি। তারপর মাথা নেড়ে কিছুনা বুঝিয়ে চুপচাপ সামনের দিয়ে তাকায়। মেঘও আর কিছু জিজ্ঞাসা করেনা। পরম আবেগে প্রিয়তমাকে বুকের মাঝে লেপ্টে নিয়ে সময়টা উপভোগ করতে থাকে। আর বৃষ্টিও মেঘের শরীর থেকে আসা পারফিউমের গন্ধ নাক টেনে নেয় নিজের মাঝে। এটা তার খুবই পছন্দের।
বেশ রত পর্যন্ত ওখানে সময় কাটানোর পর দুজনে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির কাছে আসে। কিন্তু মাঝপথে কিছু একটা দেখে সেদিকে এগিয়ে যায় বৃষ্টি। বৃষ্টি সেখানে গিয়ে দেখে একটা তারই বয়সি ছেলে, পরনে ছেড়া, ময়লা জমে আর প্যান্ট। হাতে কিছু কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে খেলা করছে। বৃষ্টির ছেলেটাকে ভীষণ চেনা চেনা মনে হয় কিন্তু চিনতে পারেনা। বৃষ্টি ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলে সে ফুলগুলো নিজের পিছনে লুকিয়ে নেয়। ভাবটা এমন যেনো কিছুতেই সে এইফুলগুলোকে নিজের থেকে আলাদা করবেনা। বৃষ্টির ব্রেইনে ভীষণ চাপ পরে এসব ভাবনায়। দুই হাতে মাথা চেপে করে পড়ে যেতে নিলে মেঘ এসে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয় বৃষ্টিকে। তারপর কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে পানির বোতল এগিয়ে দেয় বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টিও এক ঢোকে অনেকটা পানি খেয়ে নিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।
মেঘ যে ভয়টা পেয়েছিলো সেটাই হচ্ছে আজ। আজকের ঘটনার পর মেঘের মনে ভয়টা আরো জেঁকে বসে। আজ ফারহানকে দেখে বৃষ্টি যেভাবে রিয়েক্ট করলো সেটা নিয়ে একদিকে যেমন চিন্তা তেমনি ফারহানকে যদি আবার বৃষ্টির মনে পড়ে যায় তাহলে…..
নাহ আর এসব ভাবতে পারছেনা মেঘ। কোনও মূল্যেই আর হারাতে পারবেনা বৃষ্টিকে। অনেক কষ্টে নিজের করে পেয়েছে বৃষ্টিকে। আগে যদি বৃষ্টি ওকে না করতো তাহলে যদিও মানিয়ে নিতে পারতো, এখন আর সেটা সম্ভব নাহ। সম্ভব নাহ বৃষ্টির ভালোবাসা বিহীন বাঁচা। ভাবনার মাঝে বৃষ্টির ডাকে হুস ফেরে মেঘের।
মেঘ, আপনি কি অনেক চেনেন? জানেন আমার না ওনাকে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিনা। মনে করতে গেলে আমার মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিকে আবারো হাইপার হতে দেখে মেঘ নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে শান্তনা দিতে থাকে বৃষ্টিকে। তারপর বলে,
দেখো ওনাকে দেখে তো পাগল বলে মনে হচ্ছে। হয়তো রাস্তায় কখনও দেখেছিলে, তাই চেনা লাগছে। তুমি এত কেনো চিন্তা করছো ওনাকে নিয়ে। বাদ দাও তো।
মেঘের কথায় বৃষ্টি চুপ করে গেলেও মনের মধ্যে থেকে চিন্তাটা একেবারে গেলোনা। তারপর বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে মেঘ। গাড়িতে দুজনে কেউ কারোর সাথে আর একটা কথাও বলেনি। দুজনই নিজেদের চিন্তায় বিভোর। একজন প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে আর একজন পুরোনো কিছু ক্ষত তাজা করতে ব্যাস্ত। রাতটাও দুজনের অসস্তিতে কাটলো। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে আবারো সকালে একসাথে বেড়িয়ে পড়লো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। মাঝরাস্তায় এসে গাড়ি থামাতে বলে বৃষ্টি মেঘকে। তারপর গাড়ি থেকে নেমে কিছু কাজ আছে বলে নেমে পরে আর মেঘকে চলে যেতে বলে। বৃষ্টির এমন কথায় মেঘ ভীষন অবাক হয়, সাথে কষ্টও পায়। এতদিনে একবারও বৃষ্টি মেঘের সাথে এমন ব্যাবহার করেনি। আর কাল ফারহানকে দেখার পর থেকে বৃষ্টি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে আর আজ এভাবে ওকে রেখে চলে যেতে বলছে। বুকে মনে হয় কেউ চুরি দিয়ে আঘাত করে, তাও বৃষ্টিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে চলে যায় হসপিটালে। সেখানে গিয়ে জানতে পারে বৃষ্টি আজ ছুটি নিয়েছে। মেঘের চিন্তা যেনো এবার আকাশছুঁই হয়ে যায়।
পুরোটা দিন ভীষণ কষ্টে পার করে মেঘ। তারপর হটাত করে ঠিক হসপিটাল থেকে বেরোবার আগে জানতে পারে আজকে ওকে এক্সট্রা টাইম ডিউটিতে থাকতে হবে কয়েকজন ডক্টর না আসায়। মেঘ বিরক্ত হয়ে “চ” উচ্চারণ করে আবারো নিজের কেবিনে গিয়ে বসে। আর ভেবে রাখে আজ বৃষ্টিকে গিয়ে সবটা জিজ্ঞাসা করবে। কেনো মেঘকে অবহেলা করছে, সব উত্তর চাইবে।
রাত ঠিক সাড়ে এগারোটা তখন হসপিটাল থেকে বের হয় মেঘ। আজ সারাটা দিন যে কিভাবে কাটিয়েছে সেটা শুধু মেঘই যানে। বাড়ীতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বারোটা ছুঁইছুঁই। বিরক্ত হয়ে রুমের দরজায় এসে দেখে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। সামনে একটা কাগজ পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে উঠিয়ে নেয় কাগজটা। তারপর কাগজটা খুলে লেখাটা পরে অবাক হয়ে যায়। এটা কেমন শর্ত ভেবে পায়না মেঘ। তারপরো পাশের রুমে গিয়ে দেখে বেডের উপর একটা নীল রঙের পাঞ্জাবি রাখা। সাথে আরও একটা চিরকুট। তাতে লেখা, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয় এগুলো পড়ে রুমে আসুন। মেঘও কোনোকিছু চিন্তা না করে ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ভিজে চুল গুলো টাওয়াল দিয়ে ঝেড়ে পাঞ্জাবী পরে বেরিয়ে আসে।
রুমের সামনে এসে দেখে রুমটা অন্ধকার পুরো। মেঘের ভয় হতে শুরু করে এসব দেখে। তারপর জোরে জোরে বৃষ্টির নাম ধরে ডাকতে থাকে। হটাত করে রুমের সব লাইট জ্বলে ওঠে। আর দুটো হাত পিছন থেকে এসে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে, শুভ জন্মদিন মেঘ। মেঘ অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। বৃষ্টির কাছ থেকে এভাবে সারপ্রাইজ পাবে তা কখনও ভাবেনি মেঘ। আর আজ ওর জন্মদিন সেটা নিজেই ভুলে গেছিলো। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরা হাত দুটো ধরে বৃষ্টিতে সামনে সামনে আনতেই থ হয়ে যায় মেঘ। এ কাকে দেখছে ও।
চলবে?